ধাতু কাকে বলে? এর উদাহরণ। ধাতু কয় প্রকার ও কি কি

ধাতু কাকে বলে :-

এককথায় ধাতু কাকে বলে তা বললে, ক্রিয়ার মূল অংশকে ধাতু বলে।

বাংলা ভাষায় বা ব্যাকরণে অনেক ক্রিয়াপদ আছে। সেই সব ক্রিয়াপদের প্রধান অংশকে ধাতু বা ক্রিয়ামূল বলা হয়।

অন্যকথায় ক্রিয়াপদকে বিশ্লেষণ করলে দুটো অংশ পাওয়া যায়:

১. ধাতু বা ক্রিয়ামূল : কর, যা, খা, পা, বল, দেখ, খেলু, দে ইত্যাদি।
২. ক্রিয়াবিভক্তি : আ, ই, ছি, ছে, বে, তে, গে, লাম ইত্যাদি।

ক্রিয়াপদ থেকে ক্রিয়া বিভক্তি ছেঁটে দিলে যা অবশিষ্ট থাকে তাই ধাতু।

যেমন- 'করে' একটি ক্রিয়াপদ। এতে দুটো অংশ রয়েছে কর্+এ; এখানে 'কর' ধাতু এবং 'এ' বিভক্তি। সুতরাং 'করে' ক্রিয়ার মূল বা ধাতু হলো 'ক' আর ক্রিয়া বিভক্তি হলো 'এ'।

অন্যকথায় 'কর' ধাতু বা ক্রিয়ামূলের সঙ্গে 'এ' বিভক্তি যুক্ত হয়ে 'করে' ক্রিয়াপদটি গঠিত হয়েছে।
ধাতু কাকে বলে

ধাতু চেনার উপায় :-

প্রচলিত বেশকিছু ধাতু বা ক্রিয়ামূল চেনার একটা উপায় হলো বর্তমান কালের অনুজ্ঞায় তুচ্ছার্থক মধ্যম পুরুষের ক্রিয়ার রূপ লক্ষ করা। কারণ, এই রূপ আর ধাতুরূপ এক।

যেমন – কর্, ডাক্‌, যা, খা, তুই, দেখ, লেখ্ প্রভৃতি। এগুলো যেমন ধাতুও, তেমনি মধ্যম পুরুষের তুচ্ছার্থক বর্তমান কালের অনুজ্ঞার ক্রিয়াপদও বটে।

আরও পড়ুন :- ব্যাকরণ কাকে বলে?

ধাতু কত প্রকার ও কি কি :-

প্রধানত ধাতু তিন প্রকার। যথা:

১. মৌলিক ধাতু
২. সাধিত ধাতু
৩. যৌগিক বা সংযোগমূলক ধাতু।

১. মৌলিক ধাতু কাকে বলে :-

যেসব ধাতুকে বিশ্লেষণ করা সম্ভব নয়, সেই সব ধাতুকে মৌলিক ধাতু বলে। যেমন - পা, যা, দে, খা, কর্, চল্, পড়্, বস্তু, ইত্যাদি।

মৌলিক ধাতুকে সাধারণত ভাঙা বা বিশ্লেষণ করা যায় না। এজন্য এগুলোকে সিদ্ধ বা স্বয়ংসিদ্ধ ধাতুও বলা হয়ে থাকে।

মৌলিক ধাতু কত প্রকার ও কি :-

বাংলা ভাষায় মৌলিক ধাতু তিন প্রকার। যথা :

ক. সংস্কৃত ধাতু,
খ. বাংলা ধাতু এবং
গ. বিদেশাগত ধাতু।

ক. সংস্কৃত ধাতু কাকে বলে :-

তৎসম ক্রিয়াপদের ধাতুকে সংস্কৃত খাতু বলে।

অথবা আমরা বলতে পারি, বাংলা ভাষায় যেসব তৎসম ক্রিয়াপদের ধাতু প্রচলিত রয়েছে তাদের সংস্কৃত ধাতু বলে।

যেমন -
  • অঙ্ক + অন = অঙ্কন : ছোটদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় কিছু প্রথম হয়েছে।
  • দৃশ + য = দৃশ্য : দুর্ঘটনার মর্মান্তিক দৃশ্য বর্ণনা করা যায় না।
  • কৃ + তব্য = কর্তব্য : ছাত্রদের কর্তব্য লেখাপড়া করা।
  • হস্ + য = হাস্য: অকারণ হাস্য-পরিহাস ত্যাগ কর।

খ. বাংলা ধাতু কাকে বলে :-

যেসব ধাতু সংস্কৃত থেকে প্রাকৃতের মাধ্যমে পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হয়, তাকে বাংলা ধাতু বলে।

আরও পড়ুন :- উচ্চারণ কাকে বলে?

যেসব ধাতু বা ক্রিয়ামূল সংস্কৃত ভাষা থেকে সোজাসুজি বাংলা ভাষায় আসেনি সেগুলো হলো বাংলা ধাতু।

যেমন -
  • আঁক্ + আ = আঁকা - কী সব আঁকাআঁকি করছ? 
  • দেখ্‌ + আ = দেখা - জাদুঘর আমার কয়েকবার দেখা।
  • কক্ + অ = কর - তুমি কী কর?
  • হাস + ই = হাসি - তোমার হাসিটি খুব সুন্দর।

গ. বিদেশাগত ধাতু কাকে বলে :-

বিদেশি ভাষা থেকে যেসব ধাতু বাংলা ভাষায় প্রয়োগ হয় , তাকে বিদেশাগত ধাতু বা বিদেশি ধাতু বলে।

প্রধানত হিন্দি এবং আরবি-ফারসি ভাষা থেকে যেসব ধাতু বা ক্রিয়ামূল বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সেগুলোকে বিদেশাগত ধাতু বা ক্রিয়ামূল বলা হয়।

যেমন -
  • খাট্ + বে = খাটবে - যত বেশি খাটবে ততই সুফল পাবে।
  • বিগড় + আনো  = বিগড়ানো - তোমার বিগড়ানো ছেলেকে ভালো করার সাধ্য আমার নেই। 
  • টান্ + আ = টানা - আমাকে নিয়ে টানাটানি করো না, আমি যাব না।
  • জম্ + আট = জমাট - অন্ধকার বেশ জমাট বেঁধেছে।

২. সাধিত ধাতু কাকে বলে :-

মৌলিক ধাতু বা নাম শব্দের পরে আ-প্রত্যয়যোগে যে ধাতু গঠিত হয়ে থাকে, তাকেই সাধিত ধাতু বলে।

যেমন - দেখ্‌ + আ = দেখা, পড়+আ = পড়া, বল+আ = বলা।

সাধিত ধাতুর সঙ্গে কাল ও পুরুষসূচক বিভক্তি যুক্ত করে ক্রিয়াপদ গঠিত হয়। যেমন মা শিশুকে চাঁদ দেখায়। (এখানে দেখ্‌+আ+বর্তমান কালের সাধারণ নামপুরুষের ক্রিয়া বিভক্তি 'য়' দেখায়)। এরূপ শোনায়, বসায় ইত্যাদি।

সাধিত ধাতুর কয় প্রকার ও কি কি :-

সাধিত ধাতু তিন প্রকার। যথা:

ক. প্রযোজক ধাতু,
খ. নাম ধাতু এবং
গ. কর্মবাচ্যের ধাতু।

ক. যোজক ধাতু কাকে বলে :-

মৌলিক ধাতুর পরে আ-প্রত্যয়যোগে যে ধাতু গঠিত হয়, তাকে প্রযোজক ধাতু বা ণিজন্ত ধাতু বলে।

যেমন -
  • পড়্ + আ = পড়া : শিক্ষক ছাত্রদের পড়াচ্ছেন।
  • কর্ + আ = করা : সে নিজে করে না, অন্যকে দিয়ে করায়।
  • নাচ্ + আ = নাচা : 'ওরে ভোঁদড় ফিরে চা, খুকুর নাচন দেখে যা।

খ. নাম ধাতু কাকে বলে :-

বিশেষ্য, বিশেষণ ও অনুকার অব্যয়ের পরে আ-প্রত্যয়যোগে যে ধাতু গঠিত হয় তাকে নাম ধাতু বলে।

যেমন -
  • ঘুম্ + আ = ঘুমা : বাবা ঘুমাচ্ছেন।
  • ধমক্ + আ = ধমকা : আমাকে যতই ধমকাও, আমি কাজ করব না।
  • হাত্‌ + আ = হাতা : অন্যের পকেট হাতানো আমার স্বভাব নয়।

গ. কর্মবাচ্যের ধাতু কাকে বলে :-

বাক্যে কর্তার চেয়ে কর্মের সাথে যখন ক্রিয়ার সম্পর্ক প্রধান হয়ে ওঠে, তখন সে ক্রিয়াকে কর্মবাচ্যের ক্রিয়া বলে। কর্মবাচ্যের ক্রিয়ার মূলকে কর্মবাচ্যের ধাতু বলে।

মৌলিক ধাতুর সাথে আ-প্রত্যয়যোগে যে ধাতু গঠিত হয় তা কর্মবাচ্যের ধাতু। যেমন :
  • কর্ + আ = করা : আমি তোমাকে অঙ্কটি করতে বলেছি।
  • হার্ + আ = হারা : বইটি হারিয়ে ফেলেছি।
  • খা + ওয়া = খাওয়া : তোমার খাওয়া হলে আমাকে বলো।

৩. সংযোগমূলক ধাতু কাকে বলে :-

বিশেষ্য, বিশেষণ বা ধ্বন্যাত্মক অব্যয়ের সঙ্গে কর্, দে, পা, খা, ছাড় ইত্যা মৌলিক ধাতু সংযুক্ত হয়ে যে নতুন ধাতু গঠিত হয়, তা-ই সংযোগমূলক ধাতু।


যেমন -

যোগ (বিশেষ্য পদ) + কর (ধাতু) = ‘যোগ কর' (সংযোগমূলক ধাতু)। বাক্য - তিনের সঙ্গে পাঁচ যোগ করো।

সাবধান (বিশেষ্য) + হ (ধাতু) = সাবধান হ (সংযোগমূলক ধাতু)। বাক্য - এখনও সাবধান হও, নতুবা পরিনতি খারাপ হবে।

সংযোগ মূলক ধাতুর ক্রিয়া সকর্মক ও অকর্মক দুই-ই হতে পারে।

বাংলা ব্যাকরণে ধাতুর প্রয়োজনীয়তা :-

ধাতু বাংলা ব্যাকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ধাতু হলো শব্দের মূল অংশ যার থেকে বিভিন্ন প্রকারের শব্দ গঠিত হয়। ধাতুর প্রয়োজনীয়তা নিম্নরূপ:

১. ধাতু থেকেই বিভিন্ন শব্দ গঠিত হয়:

উদাহরণ:

ধাতু: 'পড়'

ধাতুগত শব্দসমূহ: পড়া, পড়ি, পড়ে, পড়ত, পড়ব, পড়ানো ইত্যাদি।

২. বাক্যের কার্যকলাপ বোঝার জন্য ধাতু প্রয়োজন:

উদাহরণ:

'রাহুল বইটি পড়ে'

এখানে 'পড়ে' ধাতুটি বোঝায় যে রাহুল বইটি পড়ার কাজ করছে।

৩. ধাতু থেকেই ক্রিয়া সম্পাদিত হয় এবং ক্রিয়ার মাধ্যমেই বাক্যের অর্থ প্রকাশ পায়।

সংক্ষেপে, ধাতু বাংলা ভাষায় বিভিন্ন শব্দ, বাক্য এবং তাদের অর্থ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলা ব্যাকরণ গঠন, বাক্য বিশ্লেষণ বা শব্দ গঠনে ধাতুর সঠিক ব্যবহার অপরিহার্য।

বাংলা ব্যাকরণে ধাতুর বৈশিষ্ট্য :-

বাংলা ব্যাকরণে ধাতুর কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যেগুলো নিম্নে উদাহরণসহ বর্ণনা করা হল:

১. অপরিবর্তনীয়তা: ধাতুর মূল রূপ অপরিবর্তনীয় থাকে। যেমন:

ধাতু: ‘খা’
বাক্য: সে খায়/খেয়েছে/খাবে ইত্যাদি।

২. একই রূপে বহুব্যবহার: একই ধাতু বিভিন্ন শব্দ ও বাক্য গঠনে ব্যবহৃত হয়। যেমন:

ধাতু: 'বস'
বাক্য: সে বসে/বসবে/বসায়/বসায় ইত্যাদি।

৩.সংজ্ঞা বা নামজাত শব্দ হিসেবে ব্যবহার:

ধাতুকে সংজ্ঞা বা নামজাত শব্দ হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। যেমন: হাসি, কাঁদন, চলন ইত্যাদি।

৪. অব্যয় হওয়া:

কোন শব্দে যদি ধাতু দৃষ্টিগোচর না হয় তাহলে সেটি অব্যয় বলে। যেমন: আমি, তুমি, সে ইত্যাদি।

এসব বৈশিষ্ট্য ধাতুকে বাংলা ব্যাকরণে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।

বাংলা ভাষার ধাতুর রূপ কয়টি?

বাংলা ব্যাকরণে ধাতুর মূলত ২ রূপ রয়েছে:

১. সাধারণ ধাতু
২. দ্বিতীয়ার্থক ধাতু

১. সাধারণ ধাতু:

যে ধাতু শুধুমাত্র একটি অর্থে ব্যবহৃত হয় সেটিকে বলা হয় সাধারণ ধাতু। 

যেমন: পড়, লেখ, খা, যা ইত্যাদি।

২. দ্বিতীয়ার্থক ধাতু:

যে ধাতু দুটি ভিন্ন অর্থে ব্যবহৃত হয়, সেটিকে বলা হয় দ্বিতীয়ার্থক ধাতু। এর দুটি অর্থ থাকে - মূল অর্থ এবং পরিবর্তিত অর্থ। 

যেমন: উঠ (মূল অর্থ: স্থান পরিবর্তন করা, পরিবর্তিত অর্থ: ঘুম থেকে উঠা)

মোট কথায়, ধাতুর মূল দুটি রূপ সাধারণ এবং দ্বিতীয়ার্থক। বাংলা ধাতুগুলো এই দুই রূপেই বিভক্ত করা যেতে পারে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ