ভাষণ কাকে বলে? ভাষণ কত প্রকার ও কি কি? ভাষণের প্রয়োজনীয়তা ও বৈশিষ্ট্য?

ভাষণ শব্দটির প্রচলিত অর্থ বক্তৃতা। ভাষণ সাধারণ পূর্ব নির্ধারিত হয়। তাই এর সুচিহ্নিত খসড়া আগে থেকে রচনা করা যায়। তবে ভাষণ যুক্তিপূর্ণ ও তথ্যবহুল হলেই হয় না, বক্তার উপস্থাপনা কৌশলে বক্তব্য/ভাষণ প্রাণবন্ত ও জীবন্ত হয়ে ওঠে।

বিভিন্ন প্রয়োজনে সভা-সমিতিতে, নানা অনুষ্ঠানে কিংবা আয়োজনে বা কোনো আলোচনায় অনেককে বক্তব্য প্রদান করতে হয়। ভাষণে কোনো বিষয় সম্পর্কে বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা করতে হয়। ভাষণ মাধুর্যমণ্ডিত ও সাবলীল হওয়া উচিত।

প্রাচীন গ্রিস ও রোমে বক্তৃতাবিদ্যা বা বাগ্মিতার চর্চা করা হতো। বাগ্মিতার জন্য গ্রিক দার্শনিক সক্রেটিস স্মরণীয়। এডমন্ড বার্ক ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে অভিভূত করেছিলেন তাঁর বাগ্মিতা দ্বারা। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ ইতিহাসে চিরস্মরণীয়।

যিনি ভাষণ দেন তাকে বলে বক্তা এবং যারা সেই বক্তব্য শোনেন তাকে বলা হয় শ্রোতা। ভাষণে কোনো একটি বিষয়কে সাবলীল ও আকর্ষণীয়ভাবে শ্রোতাদের সামনে উপস্থাপন করতে হয়। এখন প্রশ্ন হলো ভাষণ কাকে বলে? তা জানা।

ভাষণ কাকে বলে :-

কোনো সভা-সমাবেশ বা অনুষ্ঠানে বক্তা যা বলেন অর্থাৎ তার বক্তব্যকে সাধারণত ভাষণ বলা হয়। বাচন বা বাকশিল্পের একটি বিষয় হলো ভাষণ।

বিশেষ কোন উপলক্ষ্যে আয়োজিত জনসমাবেশে বা অনুষ্ঠানে উপস্থিত জনগণকে সম্বোধন করতে যে বক্তব্য প্রকাশ করেন, তকেই ভাষণ বলে।

আরও পড়ুন :- অনুবাদ কি? এর কাজ?

ভাষণের বিভিন্ন অংশ :-

ভাষণকে বিশ্লেষণ করলে এর ৫টি অংশ লক্ষ্য করা যায়। এগুলো হচ্ছে

(১) সম্ভাষণ বা সম্বোধন

(২) প্রস্তাবনা বা বিষয় পরিচিতি

(৩) মূল বক্তব্য বিষয়

(৪) বক্তব্যের সারাংশ এবং

(৫) উপসংহার।

ভাষণের প্রয়োজনীয়তা :-

সাধারণত কোনো একটি বিষয় শ্রোতা-দর্শকদের কাছে বোধগম্য ও গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য ভাষণের গুরুত্ব অনেক। কোনো বিষয়ে জনমত গঠনে অথবা কোনো পদক্ষেপ বা ব্যবস্থা গ্রহণের সমর্থনে ভাষণ খুব কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে। ভাষণের উদ্দেশ্য হলো কোনো একটি বিষয় সম্পর্কে মানুষকে বুঝিয়ে বলা।
ভাষণ কাকে বলে

ভাষণের বৈশিষ্ট্য :

১. বিষয়বস্তু সম্পর্কে বক্তার স্পষ্ট ধারণা থাকতে হবে।

২. বক্তব্যে যুক্তি ও ধারাবাহিকতা থাকতে হবে। এলোমেলো বক্তব্য শ্রোতাকে আকৃষ্ট করতে পারে না।

৩. বক্তব্যে আবেগ-আন্তরিকতা ও বক্তার গভীর বিশ্বাসের ছাপ থাকতে হবে যাতে শ্রোতারা মনে না করে যে, তিনি কৃত্রিম কথা বলছেন।

৪. ভাষণে শুধু চলিত ভাষা ব্যবহার করতে হবে এবং সাধুভাষা গ্রহণযোগ্য নয়।

৫. উচ্চারণ ও বাচনভঙ্গি সুন্দর হলে ভাষণ শুনতে ভালো লাগে।

৬. ভাষণে আঞ্চলিকতা ও অন্যান্য মুদ্রাদোষ পরিহার করা উচিত।

আরও পড়ুন :- প্রতিবেদন লেখার নিয়ম

ভাষণের উদাহরণ :-

'নবীনবরণ' অনুষ্ঠানে নবাগতদেরকে স্বাগত জানাতে ভাষণ -

আজকের এই নবীনবরণ অনুষ্ঠানের সম্মানিত অধ্যক্ষ মহোদয়, শ্রদ্ধেয় শিক্ষকবৃন্দ এবং যাদের জন্য এই আয়োজন সেই নবাগত শিক্ষার্থী ভাইবোনেরা- প্রথমেই সবার প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা ও অভিনন্দন।

স্কুল জীবনের গণ্ডি পেরিয়ে তোমরা আজ কলেজ জীবনে প্রবেশ করতে যাচ্ছ। তোমানের চোখেমুখে উচ্ছ্বাস আর আনন্দ। নতুন জীবনের স্বপ্ন তোমাদের চোখে। নিয়ম আর ঐতিহ্য মেনে আমরা একাদশ শ্রেণির নবাগত ছাত্রছাত্রীদের বরণ করে নিষ্ট প্রতিবছর। এবছরও তার ব্যতিক্রম নয়। এই কলেজের সুন্দর পরিবেশে তোমাদের সবাইকে প্রাণঢালা শুভেচ্ছা ও সাদর সম্ভাষণ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ