ই কমার্স কাকে বলে? ই-কমার্সের প্রকারভেদ? ই-কমার্স এর বৈশিষ্ট্য এবং সুবিধা ও অসুবিধা?

ই কমার্স একটি আধুনিক ব্যবসায় পদ্ধতি। E-Commerce -এর পূর্ণ অর্থ হচ্ছে Electronic Commerce। বর্তমানে ব্যবসায়িক জগতে ইলেকট্রনিক কমার্স বা ই-কমার্স ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি করেছে।

ই কমার্স কাকে বলে :- 

বর্তমান যুগের ইন্টারনেট প্রযুক্তিতে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে পণ্য, সেবা ও তথ্য ক্রয়-বিক্রয়, হস্তান্তর বা বিনিময় কার্যকেই ই কমার্স বলে।

অর্থাৎ ই কমার্স কাকে বলে? এর উত্তরে বলা যায়, ডিজিটাল পদ্ধতিতে প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিদের নিজেদের সাথে বা একে অপরের সাথে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা ক্রয়-বিক্রয় কার্যক্রম সম্পন্ন করাকে ই-কমার্স বলা হয়।

ইন্টারনেট ব্রাউজ করে ক্রেতাগণ ঘরে বসেই দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পণ্যের মান, মূল্য ইত্যাদি জানতে পারছে। আবার বিক্রেতাগণও তাদের পণ্যের বিপিণন সারা বিশ্ব জুড়ে করতে পারছে। এতে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই লাভবান হচ্ছে।

আরও পড়ুন :- ওয়ার্ড প্রসেসিং কি?

ই-কমার্সের প্রকারভেদ :-

বস্তুত ই-কমার্স হচ্ছে ডিজিটাল উপাত্ত প্রক্রিয়াকরণ এবং সঞ্চারণের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বাসাসংক্রান্ত আদান-প্রদান। সাধারণত এ কাজটি সম্পাদন করা হয় উন্মুক্ত একশটি নেটওয়ার্কব্যবস্থা তথা ইন্টারনেটের মাধ্যমে।

অর্থাৎ ই-কমার্সের মাধ্যমে ইন্টারনেট, এক্সট্রানেট এবং ইন্ট্রানেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যবসায়, ভোক্তা এবং অন্যান্য সহযোগী সংস্থার মধ্যে সংযোগ সাধন করা হয়। সেবা ও পণ্য লেনদেনের ভিত্তিতে ই-কমার্সকে সাধারণত চারটি ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করা যায়। যথা-

১। ব্যবসা থেকে ব্যবসা (Business to Business B2B)
২। ব্যবসা থেকে ভোক্তা (Business to Consumer B2C)
৩। ভোক্তা থেকে ব্যবসা (Consumer to Business C2B)
৪। ভোক্তা থেকে ভোক্তা (Consumer to Consumer C2C)

উপরের শ্রেণিবিভাগ ছাড়াও নন-বিজনেস নামে একটি ই-কমার্স দেখা যায়।
ই-কমার্স কাকে বলে

ব্যবসা থেকে ব্যবসা :-

ব্যবসা থেকে ব্যবসাসংক্রান্ত ই-কমার্স একাধিক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সংঘটিত হতে পারে। গতানুগতিক পদ্ধতিতে দুটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে পাইকারি কেনাবেচাকে বিজনেস টু বিজনেস (B2B) বলা হয়।

এ ধরনের ই-কমার্স সিস্টেমে পক্ষগুলোর মধ্যে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, সরবরাহকারী কিংবা পণ্য উৎপাদনকারী হতে পারে। B2B ই-কমার্সে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো ইন্টারনেট এবং ওয়েবসাইট ব্যবহার করে সহজে এবং দ্রুতগতিতে ব্যবসায়িক সম্পর্ক তৈরি করে থাকে।

আর ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যবসা করার সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় প্রতিনিয়তই B2B এর পরিরিধি বাড়ছে। তাই বর্তমানে অধিকাংশ ই-কমার্স আইওএস (IOS: Inter Organizational Information System) এবং ইলেকট্রনিক মার্কেটের লেনদেনসমূহ বিজনেস টু বিজনেস (B2B)-এর আওতার মধ্যে পড়ে। উদাহরণ alibaba.com

ব্যবসা থেকে ভোক্তা :-

এক বা একাধিক ক্রেতা ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের মধ্য খুচরা বা পাইকারি লেনদেনসমূহ বিজনেস টু কনজিউমার (B2C) এর অন্তর্গত।

ইন্টারনেটে ব্যবসা-সংক্রান্ত কাজ শুরু হওয়ার পর থেকেই বিজনেস টু কনজিউমার (B2C) সংক্রান্ত ব্যবসা দ্রুতগতিতে বাড়ছে। ব্যবসা থেকে ভোক্তা ই-কমার্স সিস্টেমে কোনো ভোক্তা সরাসরি কোনো ব্যবসায়ী বা উৎপাদনকারী থেকে পণ্য ক্রয় করে থাকে।

অর্থাৎ ভোক্তাগণ ই-কমার্স সিস্টেমে কোনো পণ্য ক্রয় করলে তা এ জাতীয় লেনদেনের আওতায় পড়ে। তবে এ ধরনের ই-কমার্সের মাধ্যমে ভোক্তার নিকট পণ্য বিক্রয়ের জন্য ব্যবসায়কে অবশ্যই ইলেকট্রনিকস বাজারব্যবস্থা উন্নয়ন করতে হবে। উদাহরণ amazon.com

ভোক্তা থেকে ব্যবসা :-

কিছু কিছু ব্যবসা আছে যা সরাসরি ভোক্তা শ্রেণির কাছ থেকে ব্যবসায়ীরা গ্রহণ করে। এ জাতীয় লেনদেন ভোক্তা থেকে বাসায় ই-কমার্সের আওতাভুক্ত।

অর্থাৎ যখন কোনো ভোক্তা এককভাবে অন্য কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাথে সরাসরি লেনদেন করে তখন তাকে ভোক্তা থেকে ব্যবসা বা কনজিউমার বিজনেস বলা হয়। উদাহরণ monster.com

আরও পড়ুন :- ইমেইল কি? এর কাজ?


ভোক্তা থেকে ভোক্তা :-

এ জাতীয় ব্যবসায়ে কোনো ব্যবহারকারী থেকে অন্য কোনো ব্যবহারকারীর মধ্যে লেনদেন সম্পাদিত হয়।

অর্থাৎ অন্য কোনো ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের যোগাযোগ ছাড়াই ভোক্তা থেকে ভোক্তার লেনদেনকে ভোক্তা থেকে ভোক্তা বা কনজিউমার টু কনজিউমার (C2C) বলা হয়। জাতীয় ব্যবসায়ে কোনো বিজনেস মিডলম্যান থাকে না। যেমন- এক শ্রেণির গাড়ি জন্য বিক্রয় প্রতিষ্ঠান আছে যারা পুরাতন গাড়ি কেনাবেচা করে।

অর্থাৎ যদি প্রতিষ্ঠানটি একটি ওয়েবসাইট তৈরি করে তাতে ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে পুরাতন গাড়ি ক্রয় করা একটি ব্যবস্থ রাখে এবং জয় করে পুনরায় বিক্রয় করেন তাহলে এ ধরনের ই-কমার্সকে কনজিউমার টু কনজিউমার বলা হয়। উদাহরণ: ebay.com

নন-বিজনেস ই-কমার্স :-

বর্তমানে অনেক অব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে যেমন- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অলাভজনক প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, সরকারি এজেন্সিসমূহ ব্যয় কমানোর জন্য এবং সেবার মান বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের ই-কমার্স ব্যবহার করছে। এ সকল লেনদেনের ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য না থাকায় নন-বিজনেস ই-কমার্স বলা হয়।

ই-কমার্স এর বৈশিষ্ট্য :-

বর্তমানে বিশ্বকে অনলাইন বাজারে পরিণত করার প্রক্রিয়া অনেক আগেই চালু হয়েছে, যার দরুন ভৌগোলিক গণ্ডি পেরিয়ে খুব সহজে আন্তর্জাতিক বাজারে এখন অনলাইন বাজারের রূপ নিয়ে ব্যবসায় কার্যক্রম আরো সহজ ও দ্রুত করে চলেছে।

ই-কমার্সের প্রভাবে বর্তমান বিশ্ব এখন আর একটি নির্দিষ্ট ভৌগোলিক গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সারা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের কার্যক্রমকে আরো সম্প্রসারিত করে বহুগুণ। তবে নিজস্ব কিছু বৈশিষ্ট্যের কারণেই দিন দিন ই-কমার্সের জনপ্রিয়তাবৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ধরনের ই-কমার্স এর বৈশিষ্ট্যগুলো নিম্নরূপ-

১. ই-কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসায়িক ফলাফল যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানই ভোগ করতে পারে।

২. ই-কমার্স পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্র সর্বজনীন।

৩. ই-কমার্সের মাধ্যমে ব্যবসায় শুরু করার জন্য কোনো আইনগত জটিলতা নেই।

৪. আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন, সঠিক মূল্য এবং সময়ের সাথে মানানসই।

৫. মূলত ই কমার্স ইন্টারনেটের মাধ্যমে তার কার্যক্রম পরিচালনা করে।

৬. ই-কমার্সে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় তার খরচ অনেক কম। ফলে সুবিধা গ্রহণ করতে পারছে।

৭. ই-কমার্স বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনাতেও জটিলতা অনেকাংশে কমায়। যেমন দ্রব্য ও সেবা বিজ্ঞ ভাড়া ও সরবরাহসংক্রান্ত ব্যবসায় ই-কমার্স বিশেষ সুবিধা ও সুযোগ সৃষ্টি করছে।

৮. ই-কমার্সের মাধ্যমে সারা বিশ্বে ব্যবসায় পরিচালনা করা সম্ভব।

আরও পড়ুন :- প্রিন্টার কি? এর কাজ কি?

ই-কমার্সের সুবিধা :-

১. ব্যবসার মান বিশেষভাবে উন্নয়ন করা যায়।

২. ই কমার্সের সাহায্যে যেকোনো প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়কে জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক বাজারে করানো যায়।

৩. তথ্যের বিনিময় ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম দ্রুত সম্পন্ন করা যায়।

৪. ব্যবসায়িক কার্যক্রমের খরচ ব্যাপকভাবে কমায়।

৫. ক্রেতা বিক্রেতার মধ্যে সহজে সুসম্পর্ক তৈরি করে।

৬. তথ্যের নির্ভুলতা ও গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়।

৭. দ্রুত পণ্য ভোডার কাছে পৌঁছায়।

৮. পণ্য ও সেবার মান উন্নয়ন করা যায় ইত্যাদি।

ই-কমার্সের অসুবিধা :-

১. যান্ত্রিক সমস্যা দেখা দিলে পুরো প্রক্রিয়ার ওপর ব্যাপক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

২. বিজ্ঞ প্রতিষ্ঠান অনেক ক্ষেত্রে বিশেষ ওয়েব সার্ভার ব্যবহার করে থাকে, যা সব সময় পাওয়া যায় না।

৩. আর্থিক লেনেদেনে নিরাপত্তার অভাব পরিলক্ষিত হয়।

৪. ই-কমার্স পরিচালনায় দক্ষ লোকের অভাব দেখা যায়।

৫. ক্রেতা বা বিক্রেতা অনেক সময় ই-কমার্সের কার্যক্রমের ওপর বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে না।

৬. পণ্যের মানের ক্ষেত্রে গ্যারান্টি প্রদান করা হয় না ইত্যাদি।

আরও পড়ুন :- স্প্রেডশিট কি?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ