খনিজ কাকে বলে? খনিজের প্রকারভেদ? খনিজের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব?

খনিজ কাকে বলে :-

কতগুলো মৌলিক উপাদান প্রাকৃতিক উপায়ে মিলিত হয়ে যে যৌগিক পদার্থের সৃষ্টি করে তাকে খনিজ বলে। ‌অর্থাৎ খনিজ হলো দুই বা ততোধিক মৌলের সমন্বয়।

অন্যভাবে বলা যায়, ভূ-পৃষ্ঠে নানা প্রকার রাসায়নিক মৌলিক উপাদান একত্রে মিলিত হয়ে যে যৌগিক পদার্থের সৃষ্টি করে, এগুলো খনিজ ।

তবে কিছু কিছু খনিজ একটি মাত্র মৌল দ্বারাও গঠিত হতে পারে। যেমন- হীরা, সোনা, তামা, রূপা, পারদ ও গন্ধক। এর মধ্যে হীরার কাঠিন্য (Hardness) সবচেয়ে বেশি এবং টেলক এর কাঠিন্য সর্বনিম্ন।

খনিজের প্রকারভেদ :-

ভৌত অবস্থা বিবেচনা করে খনিজকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:

১. কঠিন

২. তরল এবং

৩. বায়বীয়।
খনিজ কাকে বলে

খনিজের বৈশিষ্ট্য :-

১. প্রত্যেকটি খনিজের রাসায়নিক সংকেত ও সংস্থিতি আছে। এটি খনিজের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য।

২. খনিজের সুনির্দিষ্ট ভৌত ধর্ম আছে।

৩. খনিজ প্রাকৃতিকভাবে গঠিত একটি অজৈব পদার্থ বিশেষ।

৪. প্রতিটি খনিজের সুনির্দিষ্ট গুণাবলী বিদ্যমান।

আরও পড়ুন :- পাললিক শিলা কাকে বলে?

৫. খনিজের গায়ে দাগ বা আঁচড় প্রতিরোধক ক্ষমতা হলো কাঠিন্য। খনিজের বৈশিষ্ট্য নিরূপণে কাঠিন্যেও ভূমিকা রয়েছে।

৬. খনিজের আপেক্ষিক গুরুত্ব হলো খনিজের ওজনের তুলনায় একই আয়তনের পানির ওজনের অনুপাত। বেশিরভাগ খনিজের আপেক্ষিক গুরুত্বের মান ২.৫৬ ৩.৩৭।

৭. খনিজের ফাটল খনিজ নির্ণয়ে খুবই উপযোগী। ফাটলের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে সূক্ষ্ম, অসম, দাঁতাল, বন্ধুর ইত্যাদি।

৮. খনিজের পৃষ্ঠ থেকে আলোর প্রতিফলন মাত্রার উপর উজ্জ্বল্য নির্ভর করে।

৯. খনিজ ভেঙ্গে সমভঙ্গুর, ভাঁজভঙ্গুর, সঙ্কাকৃতি ইত্যাদি ধরনের হয়ে থাকে।

১০. বেশিরভাগ খনিজের আকার স্ফটিকাকার।

১১. খনিজের স্বাদ ও গন্ধ আছে। সেটা লবণের মত অথবা রসুনের মত গন্ধযুক্ত হতে পারে।

১২. কেলাস রূপ হচ্ছে খনিজের বাহ্যিকরূপ, যা মূলত পরমাণুর ভিতরের সুবিন্যস্ত আয়োজন প্রকাশ করে।

১৩. খনিজ সহজেই রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে।

১৪. খনিজ সহজে ক্ষয়প্রাপ্ত হয় না।

খনিজের গুরুত্ব :-

১. মৃত্তিকার প্রাথমিক উৎস হচ্ছে খনিজ।

২. কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় পলির উৎস।

৩. খনিজ পদার্থ মৃত্তিকার উর্বরতা ও পুষ্টির ভান্ডার হিসাবে কাজ করে।

৪. বায়ুমন্ডলের গ্যাসীয় পদার্থের প্রধান উৎস।

আরও পড়ুন :- খনিজ সম্পদ কাকে বলে?

খনিজের উপাদান :-

বিভিন্ন খনিজের সংস্পর্শে গঠিত হয় শিলা। আর খনিজ হচ্ছে একটি যৌগিক পদার্থ যা সৃষ্টি হয়েছে ভুত্বকে প্রাপ্ত প্রায় ১০টি স্বাভাবিক মৌলিক উপাদানের দুই বা ততোধিকের রাসায়নিক সংযোগে। যেমন- হেমাটাইট খনিজটি একটি যৌগিক পদার্থ, যা লোহা (Fe) এবং অক্সিজেন (O2) মৌলেরসমন্বয়ে গঠিত।

অনেক খনিজ আছে যা একটি মাত্র মৌলিক পদার্থ দ্বারা গঠিত। যেমন সোনা, হীরা, গন্ধক মৌলিক পদার্থ ৬টিই ভূগর্তে মৌল হিসাবে পাওয়া যায়। অর্থাৎ এরাও খনিজ পদার্থ।

খনিজের উৎস :-

প্রকৃতিতে খনিজ সাধারণত দু'প্রকারের স্থানে পাওয়া যায়। খনিজের দুটি উৎস হল

১. ভূ-গর্ভ :

খনিজের প্রধান উৎস হল ভূ-গর্ত। অধিকাংশ খনিজ আহরণের জন্য ভূ-ত্বকের গভীরে খাঁজ কেটে বা গর্ত খুঁড়ে নিচে নামতে হয়। অনেক সময় শিলাস্তরের মধ্যে স্তরে স্তরে খনিজ সঞ্চিত থাকে। খনিজের এ উৎসকে বলা হয় ভূ-গর্ভস্থ খনি। উদাহরণ দক্ষিণ আফ্রিকায় সোনার খনি ভূ-ত্বকের প্রায় ৩ কিলোমিটার গভীরে এবং আমেরিকায় এগুলো প্রায় ১৬০ মিটার গভীরে অবস্থিত।

২. ভূ-পৃষ্ঠ :

পূর্বে ধারনা করা হত খনিজের উৎস কেবলই ভূ-গর্ভ। কিন্তু এ ধারণা সঠিক নয়। ভূ-ত্বকেও কিছু কিছু খনিজ দ্রব্য দৃষ্ট হয়। এ ধরনের খনিজ উৎসকে বলা হয় ভূ-পৃষ্ঠ খনিজ।

উদাহরণ লৌহজাত খনিজ (হেমাটাইট), অ্যালুমিনিয়াম জাত খনিজ (বক্সাইট)। এমন কি কয়লার মত মুল্যবান খনিজও অনেক সময় ভূ-পৃষ্ঠের উপরেই পাওয়া যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ