আমরা অন্য একটি পোস্টে ধ্বনি কাকে বলে ও স্বরধ্বনির প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করেছি। কিন্তু এখানে প্রশ্ন আসে ব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে এবং এর প্রকারভেদ কি কি? তা আমরা এই পোস্টে জানবো।
ব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে :-
যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় মুখের ভেতরে কোথাও না কোথাও বাধা পায় এবং যা স্বরধ্বনির সাহায্য ছাড়া স্পষ্টরূপে উচ্চারিত হতে পারে না তাকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে।অথবা আমরা এটাও বলতে পারি, যেসব ধ্বনি স্বরধ্বনির সাহায্য নিয়ে উচ্চারণ করা হয় সেই সব ধ্বনিকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে।
আরও পড়ুন :- ধ্বনি কতপ্রকার ও কি কি
ব্যঞ্জনধ্বনির উদাহরণ স্বরূপ বলা যায় - ক (ক+অ), ম (ম+অ), শ (শ+অ) প্রভৃতি।
এই ধ্বনিগুলিকে বর্গীয় ধ্বনিও বলা হয়। প্রথম ধ্বনির নাম অনুসারে বর্গের নাম নির্দেশ করা হয়। পাঁচটি বর্গ হল –
স্পর্শব্যাঞ্জনধ্বনি আবার ৪ প্রকার। যথা –
ক) ঘোষ ধ্বনি –
যে স্পর্শ ধ্বনি গুলি উচ্চারণের সময় ঘোষ অর্থাৎ কন্ঠস্বরে গাম্ভীর্যভা থাকে সেগুলিকে ঘোষ ধ্বনি বলে। বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম ধ্বনি অর্থাৎ গ-ঘ-ঙ, জ-ঝ-ঞ, ড-ঢ-ণ, দ-ধ-ন, ব-ভ-ম – হল ঘোষধ্বনি ।
খ) অঘোষ ধ্বনি –
যে স্পর্শধ্বনি গুলি উচ্চারণের সময় কণ্ঠস্বরে মৃদুভাব থাকে সেগুলিকে অঘোষধ্বনি বলে । বর্গের প্রথম ও দ্বিতীয় ধ্বনি অর্থাৎ ক-খ, চ-ছ, ট-ঠ, ত-থ, প-ফ হল অঘোষ ধ্বনি।
ঘ) মহাপ্রাণ ধ্বনি -
বর্গের দ্বিতীয় ও চতুর্থ ধ্বনির উচ্চারণের সময় শ্বাসবায়ু জোরে বের হয় বলে, এইসব ধ্বনি গুলোকে মহাপ্রাণ ধ্বনি বলে। এগুলি হল – খ- ঘ, ছ- ঝ, ঠ-ঢ, থ-ধ, ফ-ভ। এছাড়া হ-কেও মহাপ্রাণ ধ্বনি বলে।
একটি মজার বিষয় হলো শ, ষ, স এই তিনটি ধ্বনিকে শিস ধ্বনিও বলা হয়। কারণ শিস দেওয়ার সঙ্গে এ ধ্বনিগুলোর সাদৃশ্য রয়েছে।
অযোগবাহ ধ্বনি— এ বর্ণ দুটিকে অযোগবাহ বর্ণ বা অযোগবাহ ধ্বনি বলে, কারণ এরা নিজে নিজে কোন শব্দ তৈরি করতে পারে না, অন্যের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তবে উচ্চারিত হয় বলে এদের অযোগবাহ বলে।
পার্শ্বিক ব্যঞ্জন ধ্বনি – ল' কে পার্শ্বিক ব্যঞ্জন ধ্বনি বলে।
তাড়নজাত ব্যঞ্জন ধ্বনি – ড় এবং ঢ় কে তাড়নজাত ব্যঞ্জন ধ্বনি বলে। কারণ ধ্বনি দুটি উচ্চারণকালে জিডের অগ্রভাগ উলটে দিয়ে দন্তমূলে আঘাত করে। তাই এদের বলা হয় তাড়নজাত বঞ্জন ধ্বনি।
কম্পনজাত ধ্বনি – র, ন, ল, কে কম্পনজাত ধ্বনি বলে।
নাসিক্য ধ্বনি – ন, ম ধ্বনি গুলি উচ্চারণের সময় শ্বাসবায় নাসিকার ভিতর দিয়ে নির্গত হয় বলে এদের নাসিকা ধ্বনি বলে।
ব্যঞ্জনধ্বনির শ্রেণীবিভাগ বা প্রকারভেদ :-
ব্যঞ্জনধ্বনির প্রকারভেদ প্রধানত তিন ভাগে বিভক্ত। যথা :-
- স্পর্শধ্বনি,
- অন্তঃস্থ ধ্বনি এবং
- উষ্মধ্বনি।
উচ্চারণ স্থান অনুযায়ী ব্যঞ্জন ধ্বনির শ্রেণীবিভাগ :-
আবার অন্যদিকে উচ্চারণস্থান অনুসারে ব্যঞ্জনধ্বনির শ্রেনীবিভাগকে পাঁচটি বিভাগে বিভক্ত করা যায়। যেমন -
- কণ্ঠ্য বা জিহ্বামূলীয় ধ্বনি
- তালব্যধ্বনি
- মূর্ধন্যধ্বনি
- দন্ত্যধ্বনি
- ওষ্ঠ্যধ্বনি
বিভিন্ন প্রকার ব্যঞ্জনধ্বনির সংজ্ঞা :-
১ - স্পর্শধ্বনি :-
যেসব ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণে জিভ মুখের ভেতরে কণ্ঠ, তালু, মূর্ধা, দত্ত, ওষ্ঠ প্রভৃতি কোনো না কোনো স্থান স্পর্শ করে উচ্চারিত হয়, তাদেরকে স্পর্শধ্বনি বলে। ক থেকে ম পর্যন্ত এই পঁচিশটি ধ্বনিকে স্পর্শধ্বনি বলা হয়।এই ধ্বনিগুলিকে বর্গীয় ধ্বনিও বলা হয়। প্রথম ধ্বনির নাম অনুসারে বর্গের নাম নির্দেশ করা হয়। পাঁচটি বর্গ হল –
ক বর্গ | ক খ গ ঘ ঙ |
চ বর্গ | চ ছ জ ঝ ঞ |
ট বর্গ | ট ঠ ড ঢ ণ |
ত বর্গ | ত থ দ ধ ন |
প বর্গ | প ফ ব ভ ম |
ক) ঘোষ ধ্বনি –
যে স্পর্শ ধ্বনি গুলি উচ্চারণের সময় ঘোষ অর্থাৎ কন্ঠস্বরে গাম্ভীর্যভা থাকে সেগুলিকে ঘোষ ধ্বনি বলে। বর্গের তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম ধ্বনি অর্থাৎ গ-ঘ-ঙ, জ-ঝ-ঞ, ড-ঢ-ণ, দ-ধ-ন, ব-ভ-ম – হল ঘোষধ্বনি ।
খ) অঘোষ ধ্বনি –
যে স্পর্শধ্বনি গুলি উচ্চারণের সময় কণ্ঠস্বরে মৃদুভাব থাকে সেগুলিকে অঘোষধ্বনি বলে । বর্গের প্রথম ও দ্বিতীয় ধ্বনি অর্থাৎ ক-খ, চ-ছ, ট-ঠ, ত-থ, প-ফ হল অঘোষ ধ্বনি।
আরও পড়ুন :- দ্বিশ্বর ধ্বনি কি ও কয়টি
গ) অল্পপ্রাণ ধ্বনি -
বর্গের প্রথম ও তৃতীয় ধ্বনির উচ্চারণের সময় প্রাণ অর্থাৎ শ্বাসবায়ু জোরে বার হয় না বলে এদের অল্পপ্রাণ ধ্বনি বলে। অল্পপ্রাণ ধ্বনিগুলি হল – ক-গ, চ-জ, ট-ড. ত-দ, প-ব।
গ) অল্পপ্রাণ ধ্বনি -
বর্গের প্রথম ও তৃতীয় ধ্বনির উচ্চারণের সময় প্রাণ অর্থাৎ শ্বাসবায়ু জোরে বার হয় না বলে এদের অল্পপ্রাণ ধ্বনি বলে। অল্পপ্রাণ ধ্বনিগুলি হল – ক-গ, চ-জ, ট-ড. ত-দ, প-ব।
ঘ) মহাপ্রাণ ধ্বনি -
বর্গের দ্বিতীয় ও চতুর্থ ধ্বনির উচ্চারণের সময় শ্বাসবায়ু জোরে বের হয় বলে, এইসব ধ্বনি গুলোকে মহাপ্রাণ ধ্বনি বলে। এগুলি হল – খ- ঘ, ছ- ঝ, ঠ-ঢ, থ-ধ, ফ-ভ। এছাড়া হ-কেও মহাপ্রাণ ধ্বনি বলে।
২ - অন্তঃস্থ ধ্বনি :-
য, য়, র, ল এবং অন্তঃস্থ-ব এই ধ্বনিগুলোর অবস্থান স্পর্শধ্বনি ও উষ্মধ্বনির মাঝামাঝি বলে এদেরকে অন্তঃস্থ ধ্বনি বলে।৩ - উষ্মধ্বনি :-
যেসব ব্যঞ্জনধ্বনির উচ্চারণে ধ্বনিগুলোর রেশ টেনে রাখা যায়, তাদেরকে উষ্মধ্বনি বলে। শ, ষ, স, হ উষ্মধ্বনি।একটি মজার বিষয় হলো শ, ষ, স এই তিনটি ধ্বনিকে শিস ধ্বনিও বলা হয়। কারণ শিস দেওয়ার সঙ্গে এ ধ্বনিগুলোর সাদৃশ্য রয়েছে।
৪ - কণ্ঠ্যধ্বনি :-
যেসব ধ্বনির উচ্চারণস্থান কণ্ঠনালির উপরিভাগ বা জিহ্বামূল, তাদের কণ্ঠ্যধ্বনি বলে। ক, খ, গ, ঘ, উ, হ কণ্ঠ্যধ্বনি।৫ - তালব্যধ্বনি :-
যেসব ধ্বনির উচ্চারণস্থান তালু, তাদের তালব্যধ্বনি বলে। চ, ছ, জ, ঝ, ঞ, য়, শ ভালব্যধ্বনি।৬ - মূর্ধন্যধ্বনি :-
যেসব ধ্বনির উচ্চারণস্থান মূর্ধা বা তালুর অগ্রভাগ, তাদের মূর্ধন্যধ্বনি বলে। ট, ঠ, ড, ঢ, ণ, র, ড়, ঢ়, মূর্ধন্যধ্বনি ।বিস্তারিত জানুন :- মূর্ধন্য ধ্বনি বলতে কী বোঝো ? এর উদাহরণ
৭ - দন্ত্যধ্বনি :-
যেসব ধ্বনির উচ্চারণস্থান দন্তমূল, তাদের দন্ত্যধ্বনি বলে। ত, থ, দ, ধ, ন, ল, স দন্ত্যধ্বনি ।৮ - ওষ্ঠ্যধ্বনি :-
যেসব ধ্বনির উচ্চারণস্থান ওষ্ঠ, তাদের ওষ্ঠ্যধ্বনি বলে। প, ফ, ব, ভ, ম ওষ্ঠ্যধ্বনি ।অযোগবাহ ধ্বনি— এ বর্ণ দুটিকে অযোগবাহ বর্ণ বা অযোগবাহ ধ্বনি বলে, কারণ এরা নিজে নিজে কোন শব্দ তৈরি করতে পারে না, অন্যের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তবে উচ্চারিত হয় বলে এদের অযোগবাহ বলে।
পার্শ্বিক ব্যঞ্জন ধ্বনি – ল' কে পার্শ্বিক ব্যঞ্জন ধ্বনি বলে।
তাড়নজাত ব্যঞ্জন ধ্বনি – ড় এবং ঢ় কে তাড়নজাত ব্যঞ্জন ধ্বনি বলে। কারণ ধ্বনি দুটি উচ্চারণকালে জিডের অগ্রভাগ উলটে দিয়ে দন্তমূলে আঘাত করে। তাই এদের বলা হয় তাড়নজাত বঞ্জন ধ্বনি।
কম্পনজাত ধ্বনি – র, ন, ল, কে কম্পনজাত ধ্বনি বলে।
নাসিক্য ধ্বনি – ন, ম ধ্বনি গুলি উচ্চারণের সময় শ্বাসবায় নাসিকার ভিতর দিয়ে নির্গত হয় বলে এদের নাসিকা ধ্বনি বলে।
আরও পড়ুন :- পদ কাকে বলে ও কত প্রকার?
2 মন্তব্যসমূহ
Thank you for my comming exam
উত্তরমুছুনHi
মুছুনPlease do not enter any spam link in the comment box.