নেফ্রন কাকে বলে? নেফ্রনের গঠন ও মূত্র সৃষ্টিতে নেফ্রনের ভূমিকা?

নেফ্রন কাকে বলে :-

বৃক্কের ইউরিনিফেরাস নালিকার ক্ষরণকারী অংশ ও কার্যকরী একককে নেফ্রন (Nephron) বলে।

ম্যালপিজিয়ান করপাসল ও বৃক্কীয় নালিকা নিয়ে গঠিত বৃক্কের গঠনমূলক ও কার্যমূলক একককে নেফ্রন বলে।

মানবদেহের প্রতিটি বৃক্কে প্রায় ১০ লক্ষ নেফ্রন থাকে। প্রতিটি নেফ্রনে একটি রেনাল করপাসল (Renal corpuscle) বা মালপিজিয়ান অঙ্গ এবং রেনাল টিউব্যুল (Renal tubule) থাকে।

প্রতিটি রেনাল করপাসল আবার গ্লোমেরুলাস (Glomerulus) এবং বোম্যান্স ক্যাপসুল এ দুটি অংশে বিভক্ত। বোম্যান্স ক্যাপসুল গ্লোমেরুলাসকে বেষ্টন করে থাকে।

আরও পড়ুন :- করোটিক স্নায়ু কাকে বলে?

গ্লোমেরুলাস ছাঁকনির ন্যায় কাজ করে রক্ত থেকে পরিসুত তরল (Bilaterate) উৎপন্ন করে। রোম্যান্স ক্যাপসুলের পেছন থেকে সৃষ্টি হয়ে সংগ্রাহী নালিকা পর্যন্ত বিস্তৃত চওড়া নালিকাটিকে রেনাল টিউব্যুল বলে।

দুটি বৃত্তে মোট ২০ লক্ষ রেনাল টিউব্যুল থাকে। প্রতিটি রেনাল টিউব্যুল এর ৩টি অংশ। যথা- গোড়াদেশীয় প্যাঁচানো নালিকা, হেনলির লুপ এবং প্রান্তীয় প্যাঁচানো নালিকা।

নেফ্রনের গঠন :-

বৃক্কের লম্বচ্ছেদ অনুবীক্ষণ যন্ত্রে পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে, এর ভেতরে অসংখ্য কুণ্ডলীকৃত সূক্ষ্ম নালিকা দেখা যায়। এদেরকে নেফ্রন (nephron) বলে।

নেফ্রন হলো বৃক্কের গাঠনিক ও কাজের একক। প্রচুর রক্তনালি ও কিছু যোজক কলাসহ প্রতিটি বৃক্কে প্রায় ১০ লক্ষ নেফ্রন থাকে। প্রতিটি নেফ্রনের দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ সে.মি.। প্রতিটি নেফ্রনকে ৬টি অঞ্চলে ভাগ করা যায়। যথা-

১. রেনাল করপাসল (Renal corpuscle)

২. নিকটবর্তী প্যাচানো নালিকা (Proximal convoluted tubule)

৩. হেনলির লুপের অবরোহন বাহু (Descending limb of Henle's loop)

৪. হেনলির লুপের আরোহন বাহু (Ascending limb of Henle's loop)

৫. দূরবর্তী প্যাচানো নালিকা (Distal convoluted tubule) ও

৬. সংগ্রাহী নালিকা ( Collecting tubule)

আরও পড়ুন :- ট্যিসু কালচার কাকে বলে?
নেফ্রন কাকে বলে

১. রেনাল করপাসল :

নেফ্রনের সম্মুখ ভাগকে রেনাল করপাসল বা মালপিজিয়ান বডি বলে। কর্টেক্স অঞ্চলে অবস্থিত এটি প্রায় ২ মি.মি. ব্যাসের একটি গোলাকার অংশ। বোম্যান্‌স ক্যাপসুল এবং গ্লোমেরুলাস সমন্বয়ে মালপিজিয়ান বডি গঠিত। নিকটবর্তী প্যাচানো নালিকার স্ফীত ফানেল আকৃতির দ্বিস্তরী প্রাচীরযুক্ত বদ্ধপ্রান্তকে বোম্যান্‌স ক্যাপসুল বলে। রেনাল বা বৃক্কীয় ধমনীর একটি অ্যাফারেন্ট ধমনিকা বোম্যান্স ক্যাপসুলে প্রবেশের পর ৫০-৬০টি কৈশিক জালিকায় বিভক্ত হয়ে গ্লোমেরুলাস গঠন করে।

গ্লোমেরুলাসের শাখাগুলো পুনরায় পরস্পর যুক্ত হয়ে ইফারেন্ট ধর্মনিকা সৃষ্টির পর গ্লোমেরুলাস ত্যাগ করে। অ্যাফারেন্ট ধর্মনিকার চেয়ে ইফারেন্ট ধমনিকার ব্যাস কম হওয়ায় গ্লোমেরুলাসে সর্বদা উচ্চ রক্তচাপ বজায় থাকে। রেনাল করপাসলে অতিসূক্ষ্ম ছাঁকন (ultrafiltration) ঘটে এবং রক্ত থেকে পানি, রেচন্দ্রব্য ও অন্যান্য দ্রব্য পরিশ্রুত হয়ে গ্লোমেরুলাস ফিলট্রেট হিসেবে বোম্যানস্ ক্যাপসুলে জমা হয়।

২. নিকটবর্তী প্যাচানো নালিকা :

বোম্যান্‌স (Bowman's) ক্যাপসুলের সাথে সংযুক্ত প্রায় ১৪ মি.মি. দীর্ঘ নালিকাকে নিটকবর্তী প্যাচানো নালিকা বলে।

নেফ্রনের এ অংশটি বৃক্কের কর্টেক্স এ অবস্থিত। এর প্রাচীর একস্তর এপিথেলিয়াল কোষ দিয়ে গঠিত। কোষগুলোর প্রান্তে অসংখ্য মাইক্রোভিলাই থাকে।

৩. হেনলির লুপের অবরোহন বাহু :

নিকটবর্তী প্যাচানো নালিকার শেষ প্রাস্ত সোজা হয়ে বৃক্কের মেডুলা অঞ্চলে প্রবেশ করে এবং একটি U আকৃতির ফাস বা লুপ গঠন করে পুনরায় কর্টেক্স অঞ্চলে ফিরে আসে একে হেনলির লুপ বলে। নিম্নগামী নালিকাকে অবরোহন বাহু বলে। এ অংশে পানি পুনঃশোষণ ঘটে।

আরও পড়ুন :- প্রস্বেদন কাকে বলে?

৪. হেনলির লুপের আরোহন বাহু :

U আকৃতি লুপের ঊর্ধ্বগামী নালিকাকে আরোহন বাহু বলে। এ অংশে Na+ ও Ci- আয়নের পুনঃশোষণ ঘটে।

৫. দূরবর্তী প্যাচানো নালিকা :

এটি হেনলির লুপের পরবর্তী প্যাচানো নালিকা। এটি ৫ মি.মি. লম্বা এবং কর্টেক্সে অবস্থান করে। এর প্রাচীর একস্তর বিশিষ্ট এপিথেলিয়াল কোষ দিয়ে গঠিত এবং শেষ প্রান্ত সংগ্রাহী নালিকার সাথে যুক্ত। এখানে পানি পুনঃশোষণ ঘটে।

৬. সংগ্রাহী নালিকা :

প্রতিটি নেফ্রনের দূরবর্তী প্যাচানো নালিকা একটি অপেক্ষাকৃত মোটা সোজা নালির সাথে যুক্ত থাকে যাকে সংগ্রাহী নালি বলে।

এর প্রাচীর কিউবয়ডাল কোষ দ্বারা গঠিত। কিছু সংগ্রাহী নালি একত্রিত হয়ে বেলিনির নালি গঠন করে। অনেকগুলো বেলিনির নালি একত্রে মেডুলার প্যাপিলারী নালীর মাধ্যমে শেষ পর্যন্ত পেলভিসে উন্মুক্ত হয়।

সংগ্রাহী নালি পরিশ্রুত তরলকে আইসোটনিক তরলে পরিণত করে যা রক্তরসের সমতুল্য। এ নালি পরিশ্রুত ও পুনঃশোষিত তরল সংগ্রহ করে গবিনীতে প্রেরণ করে।

মূত্র সৃষ্টিতে নেফ্রনের বিভিন্ন অংশের ভূমিকা :-

1. অন্তর্মুখী ধমনিকার ব্যাস বহির্মুখী ধমনিকার ব্যাস অপেক্ষা বেশি হওয়ায় গ্লোমেরুলাসের রক্তচাপ বাড়ে। ফলে রক্তের পরিশ্রুতকরণ সহজ হয়।

2. ল্যাসিস কোশগুলি সংকোচনশীল হওয়ায় গ্লোমেরুলাসের রক্তবাহের ব্যাস কমিয়ে রক্তচাপকে বাড়ানো যায়। রক্তচাপ বেড়ে যাওয়ার ফলে পরিশ্রুতকরণ ঘটে।

3. ব্যোওম্যান ক্যাপসুলের পোডোসাইট কোশে মাঝে মাঝে ছিদ্র থাকায় পরিস্রাবণ ক্রিয়া সহজে ঘটে।

4. গ্লোমেরুলাসের অন্তঃআবরণী ছিদ্রাল হওয়ায় পরিস্রাবণ সহজ হয়।

5. বোওম্যানের ক্যাপসুলের গহ্বর প্রসারিত হওয়ায় পরিভূত তরল সংগ্রহ সহজ হয় এবং এই তরলের উদ্‌স্থৈতিক চাপ কার্যকারী পরিস্রাবক চাপকে নিয়ন্ত্রণ করে।

6. পরাসংবর্ত নালিকা কুণ্ডলীকৃত থাকায় শোষণতল বৃদ্ধি পায় এবং দূরসংবর্ত নালিকা কুণ্ডলীকৃত হওয়ার জন্য পুনঃশোষণ সহজ হয়।

আরও পড়ুন :- ধূমপান কি?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ