প্রস্বেদন কাকে বলে? প্রস্বেদন কত প্রকার ও কি?

প্রস্বেদন কাকে বলে :-

উদ্ভিদ মাটি থেকে যে পরিমাণ পানি শোষণ করে তার কিছু অংশ বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক ক্রিয়ায় ব্যবহৃত হয়। অধিকাংশ পানি বাষ্পাকারে বের হয়। তবে কিছু পানি উদ্ভিদদেহ থেকে পানি হিসেবেই বের হয়। উদ্ভিদদেহ থেকে যে প্রক্রিয়ায় পানি বাষ্পাকারে বের হয় তাকে প্রস্বেদন বলা হয়।

প্রস্বেদনের প্রধান অঙ্গ উদ্ভিদের পাতা। এছাড়া কাজ এবং শাখা-প্রশাখা থেকেও প্রস্বেদন হয়ে থাকে।

প্রস্বেদনের প্রকারভেদ :-

প্রস্বেদন তিন প্রকার। যথা-

(ক) পত্ররন্ধ্রীয় প্রস্বেদন,

(খ) কিউটিকুলার প্রস্বেদন এবং

(গ) লেস্টিকুলার প্রস্বেদন।


পত্ররন্ধ্রীয় প্রস্বেদন :

পত্ররন্ধ্র প্রধানত পাতার নিচের পৃষ্ঠে দেখা যায়। এছাড়া কচি কান্ডেও অনেক পত্ররন্ধ্র থাকে। পত্ররন্ধ্রের মধ্য দিয়েই বেশির ভাগ প্রস্বেদন ঘটে।

উদ্ভিদের মোট প্রস্বেদনের ১০-১৫% পত্ররন্ধ্রের মাধ্যমে ঘটে। শিরা ও উপশিরার মধ্য দিয়ে পানি প্যারিসেড প্যারেনকাইমা এবং স্পঞ্জি প্যারেনকাইমা কোষ সমূহে পৌঁছায়।

স্পঞ্জি প্যারেনকাইমা টিস্যুর কোষগুলো আলগাভাবে সাজান থাকে। কোষগুলোর মাঝে অনেক আন্তঃকোষীয় ফাঁকা স্থান থাকে। উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষণের জন্য প্রয়োজনীয় কার্বন ডাইঅক্সাইড স্পন্ডি প্যারেনকাইমা অঞ্চলেই শোষিত হয়। উদ্ভিদ বায়ুর কার্বন ডাইঅক্সাইড ব্যাপন প্রক্রিয়ায় শোষণ করে।

পত্ররন্ধ্রের মধ্যদিয়ে বায়ু প্রথমে পত্ররন্ধ্রীয় প্রকোষ্ঠে প্রবেশ করে। এখান থেকে বায়ু প্যালিসেড প্যারেনকাইমা টিস্যুর কোষগুলোর আন্তঃকোষীয় ফাঁকাস্থানে ছড়িয়ে পড়ে।

প্যালিসেড প্যারেনকাইমা টিস্যুর কোষগুলোর বহিঃপৃষ্ঠ সব সময় ভেজা থাকে এবং এজন্য ব্যাপন প্রক্রিয়ায় সুবিধা হয়। এ রকম অবস্থায় উদ্ভিদ যেমন বায়ু থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রহণ করে, বায়ুও তেমন উদ্ভিদ কোষের ভেজা পৃষ্ঠদেশ থেকে পানি জলীয় বাষ্পরূপে গ্রহণ করে।


উদ্ভিদ কোষ থেকে নেয়া পানি জলীয় বাষ্পরূপে ব্যাপন প্রক্রিয়ায় পরারন্ধের মধ্য দিয়ে বাইরের বায়ুতে ছড়িয়ে পড়ে। পত্ররন্ধের মধ্যদিয়ে সংঘটিত হয় বলে এ ধরনের প্রস্বেদনকে পত্ররন্ধ্রীয় প্রস্বেদন বলা হয়।

কিউটিকুলার প্রস্বেদন :

উদ্ভিদের কান্ড এবং পাতার বহিঃত্বকের উপর কিউটিন এর আবরণকে কিউটিকল বলা হয়।

উদ্ভিদকে শুদ্ধতার হাত থেকে রক্ষা করাই এর কাজ। কিউটিকল পাতলা হলে কিউটিকল ভেদ করে কিছু পানি বাষ্পাকারে বের হয়ে আসে। এটাই কিউটিকুলার প্রস্বেদন।

লেন্টিকুলার প্রস্বেদন :

উদ্ভিদদেহে সেকেন্ডারি বৃদ্ধির ফলে কান্ডের বাইরের আবরণ (বহিঃত্বক অথবা কর) কোন কোন জায়গায় ফেঁটে যায়। এতে কান্ডের ভেতরের কোষ বাইরের পরিবেশে উন্মুক্ত হয়। এ উন্মুক্ত জায়গাগুলোকে লেন্টিসেল বলা হয়। লেন্টিসেলের মধ্য দিয়ে ভেতরের টিস্যু থেকে পানি বাষ্পাকারে বের হয়ে আসে। এটাই লেন্টিকুলার প্রস্বেদন ।

পত্ররন্ধ্র :-

পাতার ঊর্ধ্ব ও নিম্নতলের বহিঃত্বকে অবস্থিত দুটি রক্ষীকোষ দিয়ে পরিবেষ্টিত সূক্ষ্ম ছিদ্রকে বলা হয় পত্ররন্ধ্র।

এটি শুধু বিশেষ আকৃতির ছিদ্র নয় একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষুদ্রাঙ্গও বটে। এ অঙ্গের মাধ্যমে কয়েকটি শারীরতাত্ত্বিক প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রিত হয়। এর মাধ্যমে প্রস্বেদন এবং সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়। এর সাথে পত্ররন্ধ খোলা অথবা বন্ধ হওয়ার বিষয়টিও নিয়ন্ত্রিত হয়।

আরও পড়ুন :- টেন্‌ডন ও লিগামেন্ট কি?

প্রজাতির উপর নির্ভর করে পাতার প্রতি এক বর্গ সেন্টিমিটার এলাকায় ১,০০০- ৬০,০০০ পত্ররন্ধ্র থাকতে পারে।

একটি পত্ররন্ধ্রের গঠন :-

পত্ররন্ধ্র পাতার উপরিতলে অবস্থিত দুটি অর্ধচন্দ্রাকৃতির রক্ষী কোষ এবং এদের দিয়ে বেষ্টিত রন্ধ্র নিয়ে গঠিত।

পত্ররন্ধ্রের রক্ষী কোষে একটি সুস্পষ্ট নিউক্লিয়াস, বহু ক্লোরোপ্লাস্ট এবং ঘন সাইটোপ্লাজম থাকে। রক্ষী কোষের চারদিকে অবস্থিত সাধারণ তুর্কীয় কোষ হতে একটু ভিন্ন আকার আকৃতির তুর্কীয় সহকারি কোষ থাকে। পত্ররন্ধ্রের নিচে একটি বড় বায়ুকুঠুরী (গহবর) থাকে।

অধিকাংশ উদ্ভিদের পত্রবন্ধ সকাল ১০-১১ টা এবং বিকাল ২-৩ টায় সম্পূর্ণ খোলা থাকে। অন্যান্য সময় আংশিক খোলা থাকে এবং রাত্রে বন্ধ থাকে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ