মুক্তবাজার অর্থনীতি কি? বাজার অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য?

মুক্তবাজার অর্থনীতি এবং উদার গণতান্ত্রিক পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থার মধ্যে অঙ্গাঙ্গী সম্পর্ক রয়েছে। মুক্ত বাজার অর্থনীতি হচ্ছে সেই অর্থনীতি যেখানে ব্যক্তি মালিকানা এবং ব্যক্তি স্বাতন্ত্র্যবাদকে স্বীকার করা হয়। মুক্ত বাজারের ধারণা একদিনে গড়ে উঠে নি। বিভিন্ন দার্শনিক এবং অর্থনীতিবিদের চিন্তা ভাবনার মধ্য দিয়েই এই ধারণা পরিপুষ্টি লাভ করেছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে- দার্শনিক জনলকের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বিষয়ক তত্ত্ব, সমাজ বিজ্ঞানী হারবার্ট স্পেনসারের ব্যক্তি স্বাতন্ত্রবাদ দর্শন, গণতন্ত্রী জন স্টুয়ার্ট মিলের অর্থনীতি ক্ষেত্রে ব্যক্তির ভূমিকাই প্রধান শীর্ষক দর্শন এবং এড্যাম স্মিথের অবাধ বাণিজ্য (Laissez faire) নীতি ।

মুক্তবাজার অর্থনীতির ধারণায়, মনে করা হয় সামাজিক কল্যাণের জন্য রাষ্ট্র নয় বরং মুক্ত মানুষই অধিক উপযুক্ত। বাজার অর্থনীতিতে জিনিষের মূল্য, উৎপাদনের পরিমাণ এবং ব্যক্তির উপার্জন নির্ধারিত হয় এমনভাবে যাতে ব্যক্তি বিশেষের একক ভূমিকা এবং রাষ্ট্রীয় নিয়ন্ত্রণ থাকে না বরং বাজার ব্যবস্থাই মূল ভূমিকা পালন করে।

চাহিদা এবং যোগান এ দুটি শক্তির মাধ্যমে বাজার প্রভাবিত হয়। মুক্ত বাজার অর্থনীতিতে ব্যক্তির উপযোগ বা সন্তুষ্টিকে সর্বোচ্চ গুরত্ব দেয়া হয়। ১৯৮০'র দশক থেকে মূলত: বিশ্বব্যাংক এবং আই.এম.এফ.-এর উদ্যোগে তৃতীয় বিশ্বজুড়ে অবাধ বাজার অর্থনীতি প্রতিষ্ঠার বিষয়টি গুরুত্ব লাভ করে। ৯০'র দশকে সমাজতান্ত্রিক মতাদর্শের পতন তথা রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতির ব্যর্থতার পরিপ্রেক্ষিতে কয়েকটি সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র ব্যতীত সমগ্র বিশ্বব্যাপী মুক্ত বাজার অর্থনীতির প্রসার ঘটেছে।


বাজার অর্থনীতির বৈশিষ্ট্য :-

বাজার অর্থনীতি বা মুক্ত বাজার অর্থনীতির কতগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। নিম্নে এগুলো আলোচনা করা হলো:

১. সম্পদ ব্যবহার ও উৎপাদন সিদ্ধান্ত :

মুক্ত বাজার ব্যবস্থায় উৎপাদক সেখানেই উৎপাদন করবে যেখানে তার মুনাফা হয়। যেসকল ক্ষেত্রে ক্ষতির আশংকা রয়েছে সেখানে উৎপাদক উৎপাদন করবে না। কাজেই যেখানে সম্পদ ব্যবহার করলে লাভ হবে সেখানে উৎপাদক তার সম্পদ নিয়োগ বা ব্যবহার করবে।

২. ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ :


ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ বলতে বুঝায় ব্যাক্তির অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। অর্থাৎ ব্যক্তি যেমন একজন ভোক্তা হওয়ার স্বাধীনতা রাখবে আবার একজন উৎপাদক হওয়ারও স্বাধীনতা রাখতে পারে।

৩. প্রতিযোগিতা :

বাজার অর্থনীতিতে দরকষাকষির সুযোগ রয়েছে। এখানে দ্রব্যের চাহিদা ও যোগানের মাধ্যমে দাম নির্ধারিত হয় যেখানে পূর্ণপ্রতিযোগিতা বর্তমান থাকে।

৪. মালিকানা ও মুনাফা :

বাজার অর্থনীতিতে দেশের সম্পদ ব্যক্তি মালিকানায় থাকে। এখানে ব্যক্তিমালিকানার অধীনে উৎপাদন এবং উৎপাদন ব্যবস্থাপনা পরিচালিত হয়। এখানে বিক্রেতা পণ্যের যোগান মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে পণ্য বিক্রয় করলে তার লোকসান হয় আর বিপরীত অবস্থায় মুনাফা হয়।

৫. সীমিত সরকারি কার্যক্রম :

বাজার অর্থনীতিতে সরকার দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অযথা হস্তক্ষেপ করে না। সরকার সাধারণত প্রতিরক্ষাসহ বিভিন্ন জনগুরুত্বপূর্ণ কাজে তার কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ