সর্বনাম পদ কাকে বলে। সর্বনাম পদের উদাহরণ। সর্বনাম পদ কত প্রকার ও কি কি

সর্বনাম পদ কাকে বলে :-

বিশেষ্য পদের পরিবর্তে যে পদ ব্যবহৃত হয় তাকে সর্বনাম পদ বলে।

আসলে একই বিশেষ্য পদ বাং বার ব্যবহার না করে তার পরিবর্তে যে পদ ব্যবহৃত হয় তাই সর্বনাম পদ

সর্বনাম কাকে বলে এ সম্পর্কে আমরা জানলাম, এবার আমরা সর্বনামের উদাহরণ ও প্রকারভেদ সম্পর্কে আলোচনা করব।

সর্বনাম পদের উদাহরণ :-

বর্ষা সকালবেলা পড়াশোনা করে। বর্ষা দুপুরবেলায় স্কুলে যায়। বর্ষা বিকালবেলায় টেনিস খেলে। বর্ষা সন্ধ্যাবেলা পড়তে বসে।

উপরে কথিত বাক্যগুলিতে বর্ষা শব্দটি চারবার ব্যবহৃত হয়েছে। তার ফলে একটা একঘেঁয়েমি এসেছে তাই বাক্যগুলিকে যদি এইভাবে লেখা যায় -

বর্ষা সকালবেলায় পড়াশোনা করে। সে দুপুরবেলায় স্কুলে যায়।সে বিকালে টেনিস খেলে। সে সন্ধ্যেবেলা পড়তে বসে।

এখানে বর্ষার পরিবর্তে 'সে' শব্দটি ব্যবহার করা। হয়েছে। তাই ‘সেসর্বনাম পদ

আরও সহজ করে বললে, রাহাত ভালো ছেলে। সে নিয়মিত স্কুলে যায়। উপর্যুক্ত উদাহরণের দ্বিতীয় বাক্যটিতে 'সে' শব্দটি রাহাতের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়েছে। 'সে' হলো সর্বনাম।
সর্বনাম পদ কাকে বলে। সর্বনাম পদ কত প্রকার ও কি কি

সর্বনাম পদ কত প্রকার ও কি কি :-

সর্বনাম পদ প্রধানত দুইপ্রকার -

১ - সাপেক্ষ সর্বনাম,
২ - নিরপেক্ষ সর্বনাম।

আরও পড়ুন :- বিশেষণ পদ কি? উদাহরণ দাও?

উপরোক্ত এই দুটি ভাগ ছাড়াও সর্বনামকে আরও আটটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
  • ব্যক্তিবাচক সর্বনাম,
  • নির্দেশক সর্বনাম,
  • অনির্দেশক সর্বনাম,
  • প্রশ্নবাচক সর্বনাম,
  • আত্মবাচক সর্বনাম,
  • সম্বন্ধসূচক সর্বনাম,
  • সমষ্টিবাচক সর্বনাম,
  • সাপেক্ষ সর্বনাম।

বিভিন্ন প্রকার সর্বনাম এর সংজ্ঞা :-

সাপেক্ষ সর্বনাম :-

তিনি, সে. উনি, তাহাকে, তাঁহাকে, তাহাদের, তাহার, তাঁহার, এটি, এইটি প্রভৃতি শব্দগুলি বিশেষ্য পদের পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়। এদের প্রকৃত অর্থ বোঝাবার জন্য বিশেষ্য পদের অপেক্ষা করতে হয়। আর এ কারণেই এদের সাপেক্ষ সর্বনাম পদ বলা হয়।

নিরপেক্ষ সর্বনাম :-

তুমি, আপনি, আমি, আমরা প্রভৃতি শব্দগুলি কোনো বিশেষ নাম নয়। কিন্তু কোনো না কোনো ব্যক্তির পরিবর্তে বাসে বলে এগুলিও সর্বনাম। এরা বিশেষ্য পদের অপেক্ষা না রেখেই বাক্যে ব্যবহৃত হতে পারে বলে এরা নিরপেক্ষ সর্বনাম পদ।

ব্যক্তিবাচক সর্বনাম :-

আমি, তুমি, সে আমাদের প্রভৃতি শব্দগুলি কোনো না কোনো ব্যক্তির পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়েছে। তাই এরা ব্যক্তিবাচক সর্বনাম।

আরও পড়ুন :- বিশেষ্য কাকে বলে? উদাহরণ দাও?

নির্দেশক সর্বনাম :-

ইনি, উনি, এটি, সেটি, ওটা, এই, ওই প্রভৃতি শব্দগুলি কোনো না কোনো বস্তু বা ব্যক্তিকে নির্দেশ করে। তাই এদের নির্দেশক সর্বনাম বলে।

অনির্দেশক সর্বনাম :-

কেউ, কেহ, কেউ কেউ প্রভৃতি শব্দগুলি কোনো নির্দিষ্ট কিছু নির্দেশ করে না। তাই এদের অনির্দেশক সর্বনাম বলে।


প্রশ্নবাচক সর্বনাম :-

কে, কী কোনো, কারা প্রভৃতি শব্দগুলির দ্বারা কোনো প্রশ্ন করা যায়—তাই এগুলি প্রশ্নবাচক সর্বনাম।

আত্মবাচক সর্বনাম :-

নিজে নিজে, স্বয়ং আপনি প্রভৃতি শব্দগুলির দ্বারা কোনো ব্যক্তি নিজেকে প্রকাশ করে সে কারণেই এগুলিকে আত্মবাচক সর্বনাম বলে।

সম্বন্ধসূচক সর্বনাম :-

তাঁর, তাঁহার, নিজের প্রভৃতি শব্দগুলির দ্বারা অন্য পদের সঙ্গে সম্বন্ধ প্রকাশ করে এ কারণেই এদের সম্বন্ধসূচক সর্বনাম বলে।

সমষ্টিবাচক বা সাকল্যবাচক সর্বনাম :-

সকলের, সকলে, সমস্ত উভয়, উভয়কে প্রভৃতি শব্দের দ্বারা সকল বা সমস্ত বোঝায়। তাই এদের সমষ্টিবাচক সর্বনাম বলে।


সাপেক্ষ সর্বনাম :-

যে-সে, যার-তার, যিনি তিনি, যা-তা প্রভৃতি সর্বনাম পদগুলি একে অন্যের সঙ্গে যুগ্মভাবে ব্যবহৃত হয়, একারণে এদের সাপেক্ষ সর্বনাম বলে।

সর্বনাম পদ চেনার উপায় :-

সর্বনাম পদ চেনার কিছু উপায় নিম্নে দেওয়া হল:

1. ব্যক্তি, সংখ্যা, সময় ইত্যাদি বোঝায় যে শব্দগুলো সর্বনাম পদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। যেমন: আমি, তুমি, সে, তিনি, আপনি, আমরা, তোমরা, তাঁরা, কে, কারো, কাদের, কোন, এই, ঐ, সেই, কয়েক, অনেক ইত্যাদি।

2. সর্বনাম পদের সঙ্গে বিভিন্ন প্রশ্নবোধক শব্দ যুক্ত হয়, যেমন: কার, কাদের, কি, কোন, কত, কয় ইত্যাদি।

3. সর্বনাম পরিবর্তনশীল হয়, অর্থাৎ বাক্যের প্রয়োজনে পরিবর্তিত হয়। যেমন: আমি-তোমার, তুমি-তাঁর, সে-আমাদের ইত্যাদি।

4. সর্বনাম বা প্রত্যয় দিয়ে প্রতিস্থাপিত হয় না, যেমন রাম এলো, সে এলো, রবি এলো ইত্যাদি।

5. ক্রিয়ার সঙ্গে সর্বনামের সংখ্যা ও ব্যক্তি মিলে থাকে। যেমন: আমরা গেলাম, তুমি এলে, তারা খেলছে ইত্যাদি।

এভাবে বাক্য বিশ্লেষণ করে ও ব্যবহারের উপর নজর দিয়ে সর্বনাম পদগুলো শনাক্ত করা যায়।

সর্বনামের পুরুষ :-

'পুরুষ' একটি পারিভাষিক শব্দ। বিশেষ্য, সর্বনাম ও ক্রিয়ারই পুরুষ আছে। বিশেষণ ও অব্যয়ের পুরুষ নেই। ব্যাকরণে পুরুষ তিন প্রকার। যথা- উত্তম পুরুষ (স্বয়ং বক্তাই উত্তম পুরুষ), মধ্যম পুরুষ (প্রত্যক্ষভাবে উদ্দীষ্ট ব্যক্তি বা শ্রোতাই মধ্যম পরুষ) ও নাম পুরুষ (অনুপস্থিত অথবা পরোভাবে উদ্দিষ্ট ব্যক্তি, বস্তু বা প্রাণীই নাম পুরুষ)।

পুরুষভেদে ব্যক্তিবাচক সর্বনামগুলোর রূপ-

উত্তম পুরুষ :

আমি, আমরা, আমাকে, আমাদিগকে, আমার, আমাদের, মোর, মোরা ইত্যাদি।

মধ্যম পুরুষ :

তুমি, তোমরা, তোমাকে, তোমাদিগকে, তোমার, তোমাদের, আপনি, আপনারা, আপনাকে, আপনার, আপনাদের ইত্যাদি।

নাম পুরুষ:

সে, তারা, তাহারা, তাকে, তাহাকে, তিনি, তাঁরা, তাঁহারা, তাঁদের, তাঁহাদের, তাঁহাকে, তাঁকে, ইনি, এঁর, এঁরা, ইঁহাদের, এঁদের, ইঁহাকে, এঁকে, উনি, ওঁর, ওঁরা, ওঁদের, ইহা, ইহারা, এই, এ, এরা, উহা, উহারা, ও, ওরা, ওদের ইত্যাদি।

সর্বনামের বিশিষ্ট প্রয়োগ :-

১. বিনয় প্রকাশে উত্তম পুরুষের এক বচনে দীন, অধম, বান্দা, সেবক, দাস প্রভৃতি শব্দ ব্যবহৃত হয়, যথা- 'আজ্ঞা কর দাসে, শাস্তি নরাধমে'। 'দীনের আরজ'।

২. ছন্দবদ্ধ কবিতায় সাধারণত 'আমার' স্থানে মম, 'আমাদের' স্থানে মোদের এবং 'আমার' স্থানে মোর ব্যবহৃত হয়। যেমন- 'কে বুঝিবে ব্যথা মম'। 'মোদের গরব, মোদের আশা, আ মরি! বাংলা ভাষা'। 'ক্ষুদ্র শিশু মোরা, করি তোমারি বন্দনা'।

৩. উপাস্যের প্রতি সাধারণত 'আপনি' স্থানে তুমি প্রযুক্ত হয়। যেমন- (উপাস্যের প্রতি ভক্ত) 'প্রভু, তুমি রক্ষা কর এ দীন সেবকে।'

৪. অভিনন্দনপত্র রচনায়ও অনেক সময় সম্মানিত ব্যক্তিকে 'তুমি' সম্বোধন করা হয়।

৫. তুমি: ঘনিষ্ঠজন, আপনজন বা সমবয়স্ক সাথীদের প্রতি ব্যবহার্য। তুই: তুচ্ছার্থে ব্যবহৃত হয়, ঘনিষ্ঠতা বোঝাতেও আমরা তাই ব্যবহার করি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ