বিশেষ্য পদ কি বা কাকে বলে | বিশেষ্য পদ কত প্রকার ও কি কি

আমরা এর আগে একটি পোস্টে পদ সম্পর্কে আলোচনা করেছি। আর আজ আমরা বিশেষ্য পদ কাকে বলে? এসম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব। পদের আলোচনা করতে গিয়ে দেখেছি বিভিন্ন প্রকার পদের মধ্যে বিশেষ্য পদ হলো অন্যতম একটি পদ।

তাহলে এখন স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন আসে বিশেষ্য পদ কাকে বলে? এবং এটি কয় প্রকার ও কি কি?

বিশেষ্য পদ কাকে :-

বিশেষ্য পদ কি? তা এককথায় বললে, যে পদের দ্বারা কোনো কিছুর নাম বোঝায় তাকে বিশেষ্য পদ বলে।

যেমন- শ্যামল, গোরু, বায়ু, সভা, দয়া, শমন, হিমালয় প্রভৃতি।


অথবা আমরা বলতে পারি, বাক্যের মধ্যে ব্যবহৃত যে কোন ব্যক্তি, বস্তু, গুণ, স্থান, কাল, ভাব ও ক্রিয়া ইত্যাদির নামকে বিশেষ্য পদ বা নাম পদ বলে।

আচ্ছা বিশেষ্য পদকে নাম-পদও বলা হয় অর্থাৎ বিশেষ্য পদের অপর নাম নাম পদ।
বিশেষ্য পদ কি বা কাকে বলে | বিশেষ্য পদ কয় প্রকার ও কি কি

বিশেষ্য পদের প্রকারভেদ :-

বিশেষ্য পদকে ছয়টি শ্রেনীতে ভাগ করা যায় যথা -

১ - সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্য। যেমন- রবীন্দ্রনাথ, সুভাষ, বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ, গঙ্গা, রামায়ণ, কোরান, বাইবেল।

২ - বস্তুবাচক বিশেষ্য। উদাহরণ - তামা, রূপা, পাথর, মাটি, জল, দুধ, বই, কাগজ।

৩ - জাতিবাচক বিশেষ্য। যেমন - বৌদ্ধ, হিন্দু, খ্রিস্টান, মুসলমান, বাঙালি, বিহারি।

৪ - সমষ্টিবাচক বিশেষ্য। যেমন - দল, সভা, সমিতি, জনতা, বাহিনী।

৫ - গুণবাচক বিশেষ্য। যেমন - ভালো, দয়া, সাধুতা, সততা, মমতা, মহত্ব।

আরও পড়ুন :- ক্রিয়াপদ কি? উদাহরণ দাও?

৬ - ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য। যেমন - ভ্রমণ, দর্শন, ভোজন, শয়ন, চলন, গমন।

নিন্মে এই সব বিশেষ্য পদের সংজ্ঞা আলোচনা করা হলো -

১ - সংজ্ঞাবাচক বা নামবাচক বিশেষ্য পদ কাকে বলে :-

যে বিশেষ্য দ্বারা ব্যক্তি, স্থান, পর্বত, নদী, গ্রন্থ প্রভৃতির নাম বোঝায় তাকেই সংজ্ঞাবাচক বা নামবাচক বিশেষ্য বলে।

যেমন– বঙ্কিমচন্দ্র, শরৎচন্দ্র, কলকাতা, মুম্বাই, দিল্লি, গঙ্গা, কাবেরী, কৃষ্ণা, মহানদী, হিমালয়, আন্দিজ, আত্মস, রকি, বাইবেল, রামায়ণ, মহাভারত ইত্যাদি।

নামবাচক বিশেষ্য বা সংজ্ঞাবাচক বিশেষ্যের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:

1. নামবাচক বিশেষ্য ব্যক্তি, স্থান, পর্বত, নদী, গ্রন্থ প্রভৃতির নাম বোঝায়। যেমন: কাজী নজরুল ইসলাম, ঢাকা, কাঞ্চনজঙ্ঘা, গঙ্গা, মেঘনাদ প্রভৃতি।

2. নামবাচক বিশেষ্যপদ সাধারণত একবচন বাগধারায় ব্যবহৃত হয় এবং এর সাথে 'এর' প্রত্যয় যুক্ত হয়। যেমন: কাজীর, ঢাকার, গঙ্গার ইত্যাদি।

3. নামবাচক বিশেষ্যপদের সাথে 'এর' ছাড়াও 'কে' প্রত্যয় বসে। যেমন: কাজীকে, ঢাকাকে ইত্যাদি।

4. নামবাচক বিশেষ্যপদ উপসর্গ-প্রত্যয় গ্রহণ করে না।

5. এসব শব্দ বাক্যে সাধারণত পূর্ণ অর্থবোধক হয়।

6. নামবাচক শব্দগুলি হচ্ছে বাক্যের অপরিহার্য অংশ, যা ছাড়া বাক্যটি অর্থহীন হয়ে পড়ে।

7. নামবাচক বিশেষ্যের বিপরীতে বিশেষণ, ক্রিয়া প্রভৃতি অনেকগুলি শব্দ থাকতে পারে।

এগুলো হচ্ছে নামবাচক বিশেষ্যের কিছু প্রধান বৈশিষ্ট্য।

২ - বস্তুবাচক বিশেষ্য পদ কাকে বলে :-

যে বিশেষ্য দ্বারা যে সমস্ত বস্তুর নামকে বোঝায় তাকে বস্তুবাচক বিশেষ্য বলে।

এখানে একটি বিষয় বস্তুবাচক বিশেষ্য দ্বারা কেবলমাত্র সেই বস্তুকেই বোঝায় যার পরিমাপ করা হয়, তবে সংখ্যাকে বোঝায় না।

যেমন - পাথর, গাছ, লোহা, তামা, জল, তেল, চাপাতি, মশলা, বই, পেন ইত্যাদি।

বস্তুবাচক বিশেষ্য বা পদার্থবাচক বিশেষ্যের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:

1. বস্তুবাচক বিশেষ্য দ্বারা যে কোন জিনিস, বস্তু, সামগ্রীর নামকে বোঝানো হয়। যেমন: চাল, ডাল, মাছ, মাংস, গরু ইত্যাদি।

2. বস্তুবাচক শব্দগুলি সাধারণত বহুবচন বাগধারায় ব্যবহৃত হয়। যেমন: চালগুলি, ডালগুলি, মাছগুলি ইত্যাদি।

3. বস্তুবাচক বিশেষ্যের সাথে 'গুলি/রা' পদপ্রত্যয় বসে থাকে।

4. বস্তুবাচক শব্দগুলি বাক্যে সাধারণত অর্ধপূর্ণ অর্থবোধক হয়।

5. এর বিপরীতে নামবাচক বিশেষ্য সাধারণত পূর্ণ অর্থবোধক হয়।

6. বস্তুবাচক শব্দ ব্যতীত বাক্যে আরও অনেক শব্দ থাকতে পারে।

7. বস্তুবাচক বিশেষ্যের সাথে সাধারণত সংখ্যাবাচক বিশেষ্যও ব্যবহৃত হয়।

এগুলো হচ্ছে বস্তুবাচক বিশেষ্যের কিছু প্রধান বৈশিষ্ট্য।

৩ - জাতিবাচক বিশেষ্য পদ কাকে বলে :-

যে বিশেষ্য দ্বারা এক জাতীয় সব প্রাণী বা বস্তুকে বোঝায় তাকে জাতিবাচক বিশেষ্য বলে।

যেমন - বাঘ, মহিষ, হাতি, জেব্রা, চিতা, হরিণ, বাঙালি, হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পারসিক, ইহুদি ইত্যাদি।

জাতিবাচক বিশেষ্য বা জাতিগত বিশেষ্যের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:

1. জাতিবাচক বিশেষ্য দ্বারা কোন একটি নির্দিষ্ট জাতির সব প্রাণী বা বস্তুকে বুঝানো হয়। যেমন: হাতি, বাঘ, ঘোড়া, মৎস্য ইত্যাদি।

2. জাতিবাচক বিশেষ্য সাধারণত বহুবচন অবস্থায় ব্যবহৃত হয়। যেমন: হাতিগুলো, ঘোড়াগুলো, মৎস্যগুলো ইত্যাদি।

3. জাতি বা প্রজাতি বোঝাতে এর সাথে 'গুলি/রা’ এই প্রত্যয়টি বসে থাকে।

4. জাতি বা প্রজাতি বোঝাতে 'বাচক' শব্দটিও ব্যবহার হয়ে থাকে। যেমন: হাতিবাচক, বাঘবাচক, ঘোড়াবাচক ইত্যাদি।

5. জাতিবাচক বিশেষ্যের অর্থগত পূর্ণতার পরিমাণ বস্তুবাচক বিশেষ্যের চেয়ে বেশি।

6. কিন্তু নামবাচক বিশেষ্যের তুলনায় জাতিবাচক বিশেষ্যের অর্থগত সম্পূর্ণতা কম।

এগুলো হচ্ছে জাতিবাচক বিশেষ্যের কিছু প্রধান বৈশিষ্ট্য।

৪ - সমষ্টিবাচক বিশষ্য পদ কাকে বলে :-

যে বিশেষ্য দ্বারা কোনো কিছুর সমষ্টিকে বোঝায় তাকে সমষ্টিবাচক বিশেষ্য বলে।

যেমন—সভা, সমিতি, শ্রেণি, দল, ঝাঁক, জনতা বাহিনী, সম্প্রদায় প্রভৃতি।

সমষ্টিবাচক বিশেষ্য বা সমূহবাচক বিশেষ্যের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:

1. সমষ্টিবাচক বিশেষ্য দ্বারা কোন একটি জিনিসের সমষ্টি বা সমূহকে বুঝানো হয়। যেমন: জনগণ, মানুষ, দল, পরিবার ইত্যাদি।

2. সমষ্টিবাচক বিশেষ্য সাধারণত বহুবচন অবস্থায় ব্যবহৃত হয়।

3. এর সাথে 'গণ/গোষ্ঠী/দল/মন্ডলী' ইত্যাদি প্রত্যয় বসে থাকে।

4. সমষ্টিবাচক বিশেষ্যের অর্থগত সম্পূর্ণতা সাধারণত অংশীজনক।

5. এর সাথে ব্যবহৃত হওয়া অন্যান্য শব্দের ওপর নির্ভরশীল।

6. সমষ্টিবাচক বিশেষ্য ছাড়াও বাক্যে অন্যান্য শব্দ থেকে থাকতে পারে।

7. সংখ্যাবাচক বিশেষ্যের সাথে এর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

এগুলো হচ্ছে সমষ্টিবাচক বিশেষ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্যাবলী।

আরও পড়ুন :- অব্যয় পদ কত প্রকার ও কি কি

৫ - গুণবাচক বিশেষ্য পদ কাকে বলে :-

যে বিশেষ্য দ্বারা কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর দোষ, গুণ, অবস্থা ও ভাবের নাম বোঝায় তাকে গুণবাচক বিশেষ্য বলে।

যেমন - মমতা, কাতর, সাধুতা, দয়া, সততা, বিনয়, মহত্ব, রোগ, শোক, শৈশব, যৌবন, বৃদ্ধ, বিদ্যা ইত্যাদি।

গুণবাচক বিশেষ্য বা গুণাবলী বোঝানো বিশেষ্যের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:

1. গুণবাচক বিশেষ্য দ্বারা কোন ব্যক্তি বা বস্তুর গুণ, দোষ, অবস্থা বা মানসিক অবস্থাকে বোঝানো হয়। যেমন: দুঃখী, দুর্বল, দৃঢ়, দারুণ ইত্যাদি।

2. গুণবাচক বিশেষ্য সাধারণত একবচন অবস্থায় ব্যবহৃত হয়।

3. গুণবাচক শব্দের সাথে 'তা' প্রত্যয় ব্যবহার হয়। যেমন: দুঃখিতা, দারুনতা ইত্যাদি।

4. গুণবাচক বিশেষ্যের অর্থগত সম্পূর্ণতা আংশিক বা পূর্ণ হতে পারে।

5. বাক্যে অন্যান্য শব্দের উপর ভিত্তি করে এর অর্থ নির্ধারিত হয়।

6. বিভিন্ন ধরনের বিশেষণের সাথে এর মিশ্রণ ঘটে।

এগুলো হচ্ছে গুণবাচক বিশেষ্যের কিছু প্রধান বৈশিষ্ট্য।
 

৬ - ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য পদ কাকে বলে :-

যে বিশেষ্য দ্বারা কোনো কাজ বা কর্মের নামকে বোঝায় তাকে ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য বলে।

যেমন - ভ্রমণ, দর্শন, ভোজন, শয়ন, গমন, পঠন, লিখন ইত্যাদি।

ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য বা ক্রিয়া বোঝানো বিশেষ্যের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:

1. ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য দ্বারা কোন কাজ, কর্ম বা ক্রিয়াকলাপের নামকে বোঝানো হয়। যেমন: চলা, খেলা, পাঠ, গান ইত্যাদি।

2. ক্রিয়াবাচক বিশেষ্য সাধারণত বহুবচন অবস্থায় ব্যবহৃত হয় এবং এর সাথে 'গুলি/রা' প্রত্যয় যুক্ত হয়।

3. ক্রিয়ার ধরণ অনুযায়ী এর অর্থগত পূর্ণতা ভিন্ন হয়ে থাকে।

4. ক্রিয়াবাচক বিশেষ্যের পূর্ণতা সাধারণত নামবাচক, বস্তুবাচক বিশেষ্য থেকে কম।

5. এর সাথে সংখ্যাবাচক বিশেষ্যও ব্যবহৃত হয়।

6. বাক্যে এর ব্যতীত অন্যান্য পদ থেকে থাকতে পারে।

এগুলো হচ্ছে ক্রিয়াবাচক বিশেষ্যের কিছু প্রধান বৈশিষ্ট্য।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ