অনুচ্ছেদ কি বা কাকে বলে? অনুচ্ছেদ রচনার বৈশিষ্ট্য ও প্রকারভেদ

ইংরেজি paragraph-এর বাংলা পারিভাষিক শব্দ অনুচ্ছেদ। কম কথায় ও কম লেখায় কোনো বিষয়কে অনুচ্ছেদ আকারে প্রকাশ করা হয়। মূল বক্তব্যকে সহজ-সুন্দর ও সংক্ষিপ্ত আকারে প্রকাশ করাই অনুচ্ছেদ রচনার উদ্দেশ্য। অনুচ্ছেদ অর্থ হলো ছোট আকারের গদ্য রচনা। অল্প সময়ে কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে পরিপূর্ণভাবে আলোচনা করতে হয় বলেই অনুচ্ছেদ আকারে ছোট হয়।

অনুচ্ছেদ আকৃতি ও প্রকৃতিতে ছোট হলেও এর কাঠামোর মধ্যে তিনটি ভাগ অঘোষিতভাবে রয়েই যায়। এগুলো হলো সূচনা, মূল বক্তব্য ও সমাপ্তি। এই তিনটি বিষয় রচনা বা প্রবন্ধে দেখা গেলেও অনুচ্ছেদ লেখার সময় এই তিনটি বিভাজন মাথার মধ্যে রাখতে হয়।

অনুচ্ছেদ কি বা কাকে বলে :-

কোনো একটি বিষয়কে শিরোনাম করে সে বিষয়ে মোটামুটি পরিপূর্ণভাবে ছোট আকারের যে রচনা তাকে অনুচ্ছেদ বলা হয়।

অন্যভাবে বলা যায়, কোনো একটি বিষয়ের বক্তব্য প্রকাশের জন্য পরস্পর সম্পর্কিত কিছু বাক্যের সমষ্টিকে অনুচ্ছেদ বলা হয়।

আরও পড়ুন :-  সারমর্ম ও সারাংশ কি? উদাহরণ দাও?

অনুচ্ছেদের প্রকারভেদ :-

অনুচ্ছেদকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা ত

১. বস্তুনিষ্ঠ অনুচ্ছেদ এবং
২. ব্যক্তিনিষ্ঠ অনুচ্ছেদ।

অনুচ্ছেদ রচনার প্রয়োজনীয়তা :-

অনুচ্ছেদে অল্প কথায় পূর্ণাঙ্গ একটি বিষয়কে প্রকাশ করা যায় বলে একে উৎকষ্ট শিল্পকর্ম বলে মনে করা হয়। বক্তব্যকে সুন্দরভাবে গুছিয়ে উপস্থাপনের জন্য অনুচ্ছেদ রচনার বাস্তব ধারণা থাকা প্রয়োজন। অনুচ্ছেদে মূল কথাগুলোকে আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরা হয় বলে সবার কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়।

অনুচ্ছেদ রচনার নিয়ম :-

  • সহজ-সরল ও ছোট আকারে বক্তব্য প্রকাশই অনুচ্ছেদ রচনার মূল প্রতিপাদ্য।
  • অনুচ্ছেদ একটি প্যারাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে।
  • শুরুতে শিরোনাম দিয়ে একটি প্যারার মধ্যে সুচনা, মূল বক্তব্য ও মস্তব্যকে উপস্থাপন করতে হবে।
  • অনুচ্ছেদে উপমা-অলংকারের ব্যবহার না করাই সমীচীন।
  • সাধু ও চলতি ভাষা একসঙ্গে প্রয়োগ করা যাবে না।
  • অনুচ্ছেদ আকারে ছোট হলেও বক্তব্য হবে স্বয়ংসম্পূর্ণ।
অনুচ্ছেদ কি বা কাকে বলে

অনুচ্ছেদ রচনার বৈশিষ্ট্য :-

১. অনুচ্ছেদে কেবলমাত্র একটি প্যারা বা স্তবকে সীমাবদ্ধতা থাকে।

২. অনুচ্ছেদের প্রতিটি বাক্য গুরুত্বপূর্ণ।

৩. অনুচ্ছেদের প্রতিটি বাক্য পরস্পর সম্পর্কিত থাকে।

আরও পড়ুন :- পদাশ্রিত নির্দেশক কি?

অনুচ্ছেদের উদাহরণ :-

ইন্টারনেট

একুশ শতক বিজ্ঞানের চরম উন্নতির শতক। বিজ্ঞানের সাহায্যে মানুষ বিশ্বকে হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছে। ইন্টারনেট তার দৃষ্টান্ত। বর্তমান যুগ হলো তথ্য-প্রযুক্তির যুগ। ইন্টারনেট একটি বিশ্বব্যাপী যোগাযোগ নেটওয়ার্ক। ১৯৬০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বাহিনী সর্বপ্রথম ইন্টারনেট ব্যবহার করে। সফটওয়ার এর মূল উপকরণ। বর্তমানে এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে ইন্টারনেটের ছোঁয়া লাগেনি। যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে ইন্টারনেট নতুন দিগন্তের দ্বার খুলে দিয়েছে। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সহজেই ই-মেইল পাঠিয়ে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পত্রিকা, ম্যাগাজিন পড়া যায়। লাইব্রেরিতে লেখাপড়া করা যায়, ক্যাটালগ দেখে ইচ্ছেমত বই বাছাই করা যায়। প্রয়োজনীয় তথ্য প্রিন্টও করা যায়। ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপন দেখে কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। ইন্টারনেটে দেশে বিদেশের ডাক্তারদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। ইন্টারনেটে ফেসবুক ও টুইটারের মাধ্যমে সমস্ত রকম সামাজিক যোগাযোগ রক্ষা করা যায়। ইন্টারনেটের বিরাট সুফলের পাশাপাশি কিছু কুফলও রয়েছে। ইন্টারনেট আধুনিক প্রযুক্তির বিস্ময়কর সৃষ্টি। এর বহুমুখী ব্যবহার মানুষের জীবনে আমূল পরিবর্তন এনে দিয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ