উন্মুক্ত প্রশ্ন বা মুক্ত প্রশ্ন কাকে বলে? উন্মুক্ত প্রশ্নের প্রকারভেদ ও বৈশিষ্ট্য?

উন্মুক্ত প্রশ্ন বা মুক্ত প্রশ্ন কাকে বলে :-

যে প্রশ্ন শিক্ষার্থীর উচ্চতর ও জটিল চিন্তন বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করে তাকে উন্মুক্ত প্রশ্ন বা মুক্ত প্রশ্ন বলে।

এ ধরনের প্রশ্নের মাধ্যমে অনুসন্ধান কাজ জোরালো করা হয়। উন্মুক্ত প্রশ্নের মাধ্যমে বিষয়বস্তুর গভীরে প্রবেশ করে নতুন কিছু খুঁজে বের করার প্রচেষ্টা চালানো হয়। ইংরেজিতে এই প্রকারের প্রশ্নকে Open ended প্রশ্ন বলা হয়।

শিক্ষার্থী যখন কোন বিষয়বস্তু ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করে, তখন তাকে জটিল প্রকৃতির চিন্তা করতে হয়। বিষয়বস্তুর গভীরে প্রবেশ করে শিক্ষার্থী বিক্ষিপ্ত তথ্যসমূহ সংগ্রহ করে, সেগুলোর পারস্পারিক সম্মন্ধ অনুযায়ী মিল করে এবং এভাবে সংশ্লেষণ, বিশ্লেষণ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে গিয়ে সে উচ্চতর চিন্তা করার দক্ষতা অর্জন করে ও সুনির্দিষ্ট কাঠামোয় উত্তর প্রস্তুত করে।

আরও পড়ুন :- বদ্ধ প্রশ্ন পদ্ধতি কি?

উন্মুক্ত প্রকৃতির প্রশ্নের মাধ্যমে তথ্য সঞ্চিত হয়, অনেক বেশি ব্যক্তিগত উত্তরের ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। এর ফলে আলোচনা বা প্রশ্নোত্তরের সুযোগ বৃদ্ধি পায়। পাঠ আরম্ভ করতে পাঠের প্রতি শিক্ষার্থীর মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য শিক্ষক উন্মুক্ত প্রকৃতির প্রশ্ন করতে পারেন। এ সময় তিনি শিক্ষার্থীদের নিকট কোন সুনির্দিষ্ট উত্তর প্রত্যাশা করেন না। এ ধরনের প্রশ্নের মূল উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীদের মধ্যে গভীর উৎসাহ সঞ্চার করা, তাদের মধ্যে পাঠ সংক্রান্ত তথ্যের প্রতি চাহিদা ও আগ্রহ সৃষ্টি করা।
উন্মুক্ত প্রশ্ন বা মুক্ত প্রশ্ন কাকে বলে

উন্মুক্ত প্রশ্নের বৈশিষ্ট্য :-

  • উত্তরদাতা নিজস্ব শব্দ ব্যবহার করে উত্তর প্রদান করতে পারে।
  • একাধিক সম্ভাব্য / সঠিক উত্তর হতে পারে।
  • উত্তরদাতার দৃষ্টিভঙ্গি ও মতামত বিস্তৃতভাবে প্রকাশ করতে পারে।
  • উত্তরদাতা ইচ্ছামত উত্তরকে গুণান্বিত ও পরিশীলিত করতে পারে।
  • আবেগ উপভোগের বিষয়গুলোতে অনুভূতি প্রকাশের সুযোগ থাকে।
  • বিক্ষিপ্ত উত্তর পাওয়া যেতে পারে।
  • শিক্ষার্থীর চিন্তাশক্তির গভীরতা ও স্বচ্ছতার প্রকাশ ঘটে।
  • শিক্ষার্থীভেদে উত্তরের গভীরতা ভিন্ন হতে পারে।
  • উত্তর প্রস্তুত করতে অধিক সময় ও প্রচেষ্টার প্রয়োজন হয়।
  • যুক্তিহীন উত্তর আসার সম্ভাবনা থাকে।
  • অমনোযোগী বা অলস প্রকৃতির শিক্ষার্থী এই ধরনের প্রশ্নে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে না।
  • অন্তর্মুখী শিক্ষার্থীরা উত্তর দিতে সংকোচবোধ পারে।

উন্মুক্ত প্রশ্ন কত প্রকার ও কি কি :-

উন্মুক্ত প্রশ্ন দুই ধরনের। যথা-

ক. কেন্দ্ৰচ্যুতি প্রশ্ন (Divergent Question) কাকে বলে :- 

যে প্রশ্নের উত্তর সুনির্দিষ্ট নয়, শিক্ষার্থী চিন্তা ভাবনা করে ও নিজের মত অনুসারে উত্তর দিতে পারে তাকে কেন্দ্ৰচ্যুতি প্রশ্ন বলে।

এ প্রশ্নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সৃজনশীল প্রতিভা বিকশিত হয়। যেমন-দুর্যোগ মোকাবেলায় তোমার এলাকায় কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পার? বন্যা সমস্যা মোকাবেলায় সহপাঠীদের সমন্বয়ে তোমরা কী ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করতে পার? বিদ্যালয়ে বৃক্ষরোপণ কার্যক্রমে তোমার ভূমিকা কা হবে?

খ. মূল্যায়নমূলক প্রশ্ন (Evaluative Question) কাকে বলে :-

যে প্রশ্নের মাধ্যমে শিক্ষার্থী কোন বিষয়ের মূল্যায়ন করতে শেখে তাকে মূল্যায়নমূলক প্রশ্ন বলে।

এ প্রশ্নের ক্ষেত্রে মতামত প্রদান, যুক্তি প্রদান, সিদ্ধান্ত দেওয়া, সুপারিশ করা প্রভৃতি শব্দ ব্যবহার করা হয়, যা শিক্ষার্থীর সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশ ঘটানোর পরিপূরক।

যেমন- 'জলবায়ুর ওপর কৃষিজ সম্পদ নির্ভরশীল' মূল্যায়ন করুন। অর্থনৈতিক উন্নয়নে জনসংখ্যা সমস্যাকে প্রধান অন্তরায় ধরা হয় কেন ? আমাদের দেশের শিল্পোন্নয়নে বিদ্যুতের ভূমিকা কী?

আরও পড়ুন :- আরোহী পদ্ধতি কি?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ