বাংলাদেশ স্টক এক্সচেঞ্জ? ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ

বাংলাদেশ স্টক এক্সচেঞ্জ :-

স্টক এক্সচেঞ্জ হচ্ছে বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও সুগঠিত মূলধন বাজার। সাম্প্রতিক সময়ে এটি এক আলোচিত আর্থিক বাজার হিসেবে বিবেচিত।

দেশ বিভক্তির পূর্বে এ অঞ্চলের শেয়ার ক্রয়বিক্রয়ের স্থান ছিল কলতাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। ১৯৫৪ সালে এর নামকরণ করা হয় ইস্ট পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জ এসোসিয়েশন লিমিটেড। পরবর্তীতে এর নাম পরিবর্তন করে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ করা হয়।

১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীন হবার পর রাষ্ট্রীয় পট পরিবর্তনের কারণে স্টক এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম দীর্ঘদিন বন্ধ থাকে। ১৯৭৬ সালে পুনরায় এর কার্যক্রম শুরু হয়। এরপর থেকে বাংলাদেশে স্টক এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম অব্যাহত থাকে।

বাংলাদেশের মূলধন বাজারের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে সরকার ১৯৯৩ সালে সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (SEC) গঠন করে। শেয়ার বাজারকে প্রতিযোগিতাপূর্ণ ও গতিশীল করার লক্ষ্যে ১৯৯৫ সালে সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের অনুমোদন সাপেক্ষে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ গঠিত হয়।

বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ এ দুটি স্টক এক্সচেঞ্জে শেয়ার, ঋণপত্র ইত্যাদি ক্রয়-বিক্রয় কার্য চলে। বাংলাদেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ নগরীতে আরও স্টক এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, মূলধন বাজারের সম্প্রসারণ ও উন্নয়নের লক্ষ্যে জাতীয় শেয়ার বাজার প্রতিষ্ঠা করারও চিন্তাভাবনা চলছে। আসুন, বাংলাদেশের এ দুটি স্টক এক্সচেঞ্জ সম্পর্কে জেনে নিই।
বাংলাদেশ স্টক এক্সচেঞ্জ

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ :-

বাংলাদেশের প্রথম ও বৃহৎ স্টক এক্সচেঞ্জ হচ্ছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ। দেশের মূলধন বাজারকে সুগঠিত ও গতিশীল করার লক্ষ্যে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের ভূমিকা অপরিসীম। এ শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানসমূহের শেয়ার, ঋণপত্র, সিকিউরিটিজ ইত্যাদি ক্রয়বিক্রয় করা হয়।

১৯৫৪ সালে সর্বপ্রথম এদেশে পূর্ব পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জ এসোসিয়েশন লিমিটেড নামে একটি স্টক এক্সচেঞ্জ গঠিত হয়। এর নিবন্ধিত কার্যালয় ছিল নারায়ণগঞ্জে। এ কার্যালয়টি ১৯৫৯ সালে ঢাকাস্থ মতিঝিলে স্থানান্তরিত হয়। এটি ১৯৬২ সালে ইস্ট পাকিস্তান স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড ও ১৯৬৪ সালে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড নামে নামকরণকৃত হয়। স্বাধীনতার প্রাক্কালে এর সদস্য সংখ্যা ছিল ১৯৫ জন এবং তালিকাভুক্ত কোম্পানির সংখ্যা ছিল ১৯৬ টি। এসব কোম্পানির পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ছিল ৪০০ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন:- স্টক কাকে বলে?

সরকারি নীতিগত কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ১৯৭৬ সালে পুনরায় এর কার্যক্রম শুরু হয়। তখন এর তালিকাভুক্ত কোম্পানি ছিল মাত্র ৯টি এবং পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ছিল প্রায় ১৩,৭৫,৪০,০০০ টাকা। বর্তমানে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এর সদস্য সংখ্যা ২৩৬, এর মধ্যে ২১৮ জন সদস্য সক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে সম্পৃক্ত রয়েছেন। অবশ্য সংঘস্বারক অনুযায়ী বাকি ১৪টি সদস্যপদ বর্তমানে বিক্রয়ের প্রক্রিয়ায় আছে। এদের মধ্যে মোট কোম্পানির সংখ্যা ৫৬৩টি।

সাধারণত শেয়ারবাজারের গতি বা সার্বিক অবস্থা বুঝার জন্য সূচক ব্যবহার করা হয়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে তিনটি সূচক ব্যবহার করা হয়, যেমন- ডিএসই ব্রড সূচক, ডিএসইএস সূচক এবং ডিএসই ৩০ সূচক। ৩ জানুয়ারি ২০১৮ এর হিসাব অনুযায়ী ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন ছিল প্রায় ৪,২৮৫,০৯৫ মিলিয়ন টাকা এবং বর্তমানে এর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স (DSEX) ৫৫৮৩ পয়েন্ট।

২৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিচালনা বোর্ড ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড (ডিএসই) এর প্রশাসনিক ও অন্যান্য সকল কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এর মধ্যে ১২ জন সদস্য ব্রোকারদের মধ্য থেকে নির্বাচিত হন এবং ১২ জন সদস্য এসইসি (সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন) এর অনুমোদনক্রমে এক্সচেঞ্জের বাইরে থেকে বাছাই করা হয়। পরিচালনা বোর্ডের অপর সদস্য হচ্ছেন এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। তাঁর কোনো ভোটদানের ক্ষমতা নাই। পরিচালনা বোর্ড তিন বৎসর মেয়াদের জন্য গঠন করা হয়। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে ডিএসইর মালিকানায় যুক্ত হয় চীনের সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ ও সাংহাই স্টক এক্সচেঞ্জ।

চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (CSE) :-

বাংলাদেশের আর্থিক বাজারের উন্নয়ন সম্প্রসারণ ও বিনিয়োগে আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে ১৯৯৫ সালে দেশের দ্বিতীয় শেয়ার বাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) প্রতিষ্ঠা করা হয়।

আরও পড়ুন:- শেয়ার কাকে বলে?

একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে এটি ১৯৯৪ সালের কোম্পানি আইন অনুসারে নিবন্ধিত হয়। এর কার্যক্রম শুরু হয় ১৯৯৫ সালের ১০ অক্টোবর। সিএসই এর প্রশাসনিক ও ব্যবসায়িক কার্যক্রম কমবেশি ডিএসই এর অনুরূপ। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিশেষ করে লেনদেন প্রশাসন ও ব্যবসা পদ্ধতিতে সংস্কার সাধন এবং উৎকর্যের বিষয়ে সিএসই ডিএসই এর চেয়ে এগিয়ে গিয়েছে।

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে অবস্থিত চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ ১৮ সদস্যবিশিষ্ট একটি নীতি নির্ধারণী কমিটি নিয়ে গঠিত কমিটির ১৮ সদস্যের মধ্যে ৬ জন সিকিউরিটি ও এক্সচেঞ্জ কমিশন কর্তৃক মনোনীত এবং ১২ জন সাধারণ সদস্যদের থেকে নির্বাচিত। বোর্ড প্রেসিডেন্ট ও ৩ জন ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করে থাকে।

শুরুতে এর তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের সংখ্যা ছিল ৩০ টি এবং পরিশোধিত শেয়ার মূলধন ও ডিবেঞ্চারসহ এর মোট মূলধনের পরিমাণ ছিল ২১৫.৪ কোটি টাকা।

৩১ ডিসেম্বর ২০০৯ শেষে সিএসই ২৪৫ টি কোম্পানি, ১৭ টি মিউচুয়াল ফান্ড, ১ টি ডিবেঞ্চারে উন্নীত হয়। ৩১ ডিসেম্বর ২০০৯ পর্যন্ত চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের তালিকাভুক্ত সকল সিকিউরিটিজের পরিশোধিত মূলধনের পরিমাণ ৩০,৪২০ মিলিয়ন কোটি টাকা।

সিএসই এর সকল সিকিউরিটিজের মোট বাজার মূলধনের পরিমাণ ৭,১৭,৯৩৩ মিলিয়ন টাকা ছিল। ২০১৫ সালে এর তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজের সংখ্যা ছিল ২৮৯ এবং বাজার মূলধনের পরিমাণ ছিল ২.৫৭,১৪৬ কোটি টাকা। বর্তমানে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ এর কোম্পানি সংখ্যা হলো ২৯৬ টি। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এর মতো এটিতেও তিনটি সূচক ব্যবহার হয়।

ঢাকা ও চট্টগ্রাম এক্সচেঞ্জে শুধুমাত্র সদস্য বা সদস্যদের নিযুক্ত সহযোগীরা শেয়ার সিকিউরিটি ক্রয়-বিক্রয়ে অংশগ্রহণ করতে পারে। তবে সদস্য বহির্ভূত কেহ শেয়ার, সিকিউরিটি ডিবেঞ্চার ইত্যাদি ক্রয়-বিক্রয় করতে আগ্রহী হলে সদস্যদের মাধ্যমে করতে হয়। শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে চার ধরনের মার্কেটের ব্যবস্থা রয়েছে যথাঃ পাবলিক মার্কেট, ব্লক মার্কেট, স্পট মার্কেট এবং অডলট মার্কেট।

ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে ১০.৩০ টা থেকে ৩.৩০ পর্যন্ত লেনদেন চলে। এ সময়ে শেয়ার, স্টক, ডিবেঞ্চার, সিকিউরিটির ডাক বলতে থাকে। সদস্যরা বা তাদের সহযোগীরা তাতে অংশ গ্রহণ করে। সর্বোচ্চ ডাক প্রদানকারীকে শেয়ার বা ডিবেঞ্চার ইত্যাদি হস্তান্তর করা হয়। প্রতিদিন সম্পাদিত লেনদেন পরবর্তী ৫ দিনের মাঝে স্টক এক্সচেঞ্জের কিয়ারিং হাউজের মাধ্যমে নিত্তি করা হয়।

উল্লেখ্য যে ঢাকা এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে একই পদ্ধতিতে লেনদেন সম্পাদিত হয়। তবে ১৯৯৮ সালের ১০ই আগস্ট থেকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ স্বয়ংক্রিয় অন-লাইন পদ্ধতিতে ব্যবসায় কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে।

আরও পড়ুন:- ক্রেতা ও ভোক্তার মধ্যে পার্থক্য?

ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জকে সঠিকভাবে পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৯৯৩ সালের ৮ই জুন সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। এই কমিশন শেয়ার সিকিউরিটি ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নাম তালিকাভুক্ত করে এবং তাদের কার্যাবলি নিয়ন্ত্রণ করে। এই সংস্থার কাজ হলো শেয়ার বাজারের সদস্যদের সাহায্য সহযোগিতা করা। স্বার্থরক্ষা করা এবং ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনার নীতি নির্ধারণ করা। স্টক এক্সচেঞ্জ নিয়ম-বহির্ভূত লেনদেন এবং জালিয়াতি বন্ধেও এই সংস্থা বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ