ক্রেতা ও ভোক্তার মধ্যে পার্থক্য

সাধারণ দৃষ্টিতে ক্রেতা ও ভাক্তাকে আমরা একই দৃষ্টিতে দেখি। কিন্তু পণ্য ক্রয়ের উদ্দেশ্য, ব্যবহার করার ধরণ ইত্যাদি বিবেচনা করলে ক্রেতা ও ভোক্তাকে পৃথকভাবে চিহ্নিত করা যায়। নিম্নের আলোচনার দ্বারা আমরা ক্রেতা ও ভোক্তাকে পৃথকভাবে চিহ্নিত করতে পারব।

ক্রেতা (customer) :-

সাধারণ অর্থে যে বা যারা পন্য, সেবা বা ধারণা ক্রয় করে সে বা তারাই ক্রেতা। কিন্তু ব্যবসায় বাণিজ্যে যাদের ক্রয় করার ক্ষমতার ইচ্ছা আছে তাদেরকে ক্রেতা বলে।

Manser এর মতে ক্রেতা হলো পণ্য ও সেবা ক্রয়কারীর একজন তো তিন ধরনের উদ্দেশ্যে সাধারণত পণ্য ক্রয় করে। যথা-

(১) বিক্রয় করে লাভবান হওয়ার উদ্দেশ্যে

(2) মুনাফা অর্জনের লক্ষ্য দিয়ে পরবর্তী উৎপাদনের কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে এবং

(৩) ব্যক্তিক বা পারিবারিক যোগ ও ব্যবহারের উদ্দেশ্যে।

সুতরাং যে উদ্দেশ্য নিয়েই হোক না কেন কেউ অর্থ বা স্বার্থের বিনিময়ে কোন পণ্য বা সেবা অন্যের নিকট থেকে ক্রয় করালে তাকে ক্রেতা বলে।
ক্রেতা ও ভোক্তার মধ্যে পার্থক্য

ভোক্তা (Consumer) :-

সাধারণ অর্থে ভোক্তা হলো তিনি পণ্যদ্রব্য বা সেবা ভোগ করেন বা ব্যবহার করেন। অর্থাৎ ভোক্তা হলো ঐ সব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যারা ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবহার বা ভোগের জন্য দ্রব্য ক্রয় করেন। এরূপ ভোগ বা ব্যবহারের ফলে পণ্য দ্রব্যের উপযোগ ঐ ভোক্তার নিকট নিঃশেষ হয়ে যায়।

যেমনঃ আমরা আমাদের প্রয়োজনে খাদ্য-দ্রব্য, জামা-কাপড়, কাগজ-কলম ইত্যাদি দ্রব্য ব্যবহহার বা ভোগ করে থাকি। এসব পণ্য ক্রয়ের পেছনে পুনঃ বিক্রয় বা প্রক্রিয়াজাতকরণ অথবা মুনাফা অর্জন করার কোন উদ্দেশ্য নেই। তাই এসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ভোক্তা হিসেবে গণ্য হবে।

আরও পড়ুন:- পন্য কাকে বলে?

এ সম্পর্কে Newman বলেন, "ভোক্তা হলো ব্যক্তি ঐ যিনি নিজ সন্তুষ্টি বা সুবিধার জন্য পন্য বা সেবা ব্যবহার করেন।"

Webstar's New world Dictionary অনুযায়ী, “ভোক্তা হলো ঐ ব্যক্তি যিনি ব্যক্তিগত প্রয়োজনে পণ্য অথবা সেবা ক্রয় করে কিন্তু পুনঃ বিক্রয় বা পুনঃ বিক্রয়যোগ্য পণ্য উৎপাদনের উদ্দেশ্যে নয়।"

সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, যে পণ্য সামগ্রী বা সেবা ক্রয় করে তাকে ক্রেতা বলে। অপরদিকে যে ভোগের উদ্দেশ্যে ক্রয় করে তাকে ভোক্তা বলে। এক্ষেত্রে একজন ভোক্তা একজন ক্রেতা বটে কিন্তু একজন ক্রেতা একজন ভোক্তা নাও হতে পারে।

ক্রেতা ও ভোক্তার মধ্যে পার্থক্য :-

ক্রেতা :-
  1. ক্রেতা হলো এমন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যে পরবর্তীতে বিক্রয়, ব্যবহার বা ভোগের জন্য পণ্য ক্রয় করে থাকে।
  2. ক্রেতা বিভিন্ন উদ্দেশ্যে পণ্য ক্রয় করে থাকে। তার পণ্য ক্রয়ের উদ্দেশ্য হতে পারে সরাসরি ক্রেতা মূল্য পরিশোধ করে পণ্য ক্রয় করে।
  3. ব্যবহার বা পুনঃবিক্রয় বা নতুন পণ্য উৎপাদন।
  4. ক্রেতা রূপগত, স্থানগত, সময়গত ও প্রচারগত উপযোগ সৃষ্টি করতে পারে ।
  5. ক্রেতা পণ্যের বণ্টনপ্রণালির সর্বস্তরে বিরাজ করে।
আরও পড়ুন:- রপ্তানি কাকে বলে?

ভোক্তা :-
  1. ভোক্তা বলতে এমন ব্যক্তিকে বোঝায় যে পণ্য বা সেবা চূড়ান্তভাবে ভোগ বা ব্যবহার করে থাকে।
  2. ভোক্তার একমাত্র উদ্দেশ্য পণ্য বা সেবা সরাসরি ভোগ বা ব্যবহার করা।
  3. ভোক্তাকে পণ্য বা সেবা ভোগ করার জন্য মূল্য পরিশোধ করতেই হবে এমন নয়। দান, উপহার বা অন্যের ক্রয়কৃত পণ্য পেয়ে ভোক্তা ভোগ করতে পারে।
  4. ভোক্তা উপযোগ সৃষ্টি করার পরিবর্তে পণ্যের উপযোগ নিঃশেষ করে।
  5. ভোক্তা পণ্যের বণ্টন প্রণালির সর্বশেষ স্তরে বিরাজ করে।

ক্রেতা বা ভোক্তার সন্তুষ্টি বলতে কী বোঝায় :-

আধুনিক প্রতিযোগিতাপূর্ণ উৎপাদন ও বিপণন প্রক্রিয়ায় একজন বিক্রেতা বা উৎপাদক কেবল ক্রেতা বা ভোক্তার সন্তুষ্টি বিধানের মাধ্যমেই সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হয়। এখানে ক্রেতার সন্তুষ্টি বলতে ক্রেতার ক্রয়কৃত পণ্য হতে প্রাপ্ত উপযোগকে বোঝায়। আর তাই বাজারজাতকরণের ক্ষেত্রে ক্রেতার সন্তুষ্টি বিধান যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে। এ উদ্দেশ্যে উৎপাদন পণ্য উৎপাদনে ক্রেতা বা ভোক্তার চাহিদা ও রুচি, আয় ইত্যাদি বিবেচনা করে থাকে। তবে ক্রেতার চাহিদা ও রুচি সর্বদাই পরিবর্তনশীল। এ পরিবর্তনের দিকে দৃষ্টি রেখে পণ্য উৎপাদন করলে উৎপাদনকারীর উক্ত পণ্যটিই বাজারে স্থান দখল করে নেয়।

ক্রেতার সন্তুষ্টি বিধান প্রসঙ্গে W. J. Stanton বলেছেন, “আধুনিক প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বের কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষে বাজারে দিকে থাকার ক্ষেত্রে ক্রেতা সন্তুষ্টি মুখ্য ভূমিকা পালন করে।"

বর্তমান উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ ব্যবস্থায় ক্রেতার সন্তুষ্টি বিধান একদিকে যেমন জটিল অন্যদিকে তেমনি গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক সময়ে সঠিক স্থানে, সঠিক মূল্যে এবং মানে ক্রেতার নিকট কাঙ্ক্ষিত পণ্যটি পৌঁছে দেওয়ার মাধ্যমে ক্রেতার সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়।

ক্রেতা বা ভোক্তার সন্তুষ্টি বিধানে কতকগুলো বিষয় বিবেচনা করতে হয় পণ্যের ন্যায্যমূল্য, মানসম্মত পণ্য, ক্রেতাদের পছন্দ বিবেচনা, পণ্য সরবরাহ নিশ্চিতকরণ, সহজে পণ্য সংগ্রহের ব্যবস্থাকরণ, উৎকৃষ্ট ও আকষর্ণীয় মোড়কিকরণ, উন্নত ডিজাইন এবং প্রমিতকরণ পর্যায়িতকরণ।

আরও পড়ুন:-  সংগঠন কাকে বলে?

এ বিষয়গুলো বিবেচনা করে বাজারজাতকরণ কার্যক্রম গ্রহণ করা হলে তা ক্রেতা বা ভোক্তাদের কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশা পূরণ করবে। ফলে ক্রেতা ও ভোক্তাদের সন্তুষ্টি বিধান সহজতর হবে।
এ আলোচনা থেকে বলা যায়, পণ্য শুধু উৎপাদন করলেই চলে না, উৎপাদিত পণ্য বা সেবা ভোক্তা বা ক্রেতার নিকট সঠিক সময়ে সঠিক স্থানে ও সঠিক মূল্যে এবং মানে পৌঁছে দিতে পারলে ক্রেতার সন্তুষ্টি বিধান সম্ভব হয়। আর ক্রেতার সন্তুষ্টি বিধানেই উৎপাদকের সফলতা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ