ইন্টারনেট কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি? সুযোগ-সুবিধা?

ইন্টারনেট কি বা কাকে বলে :- 

ইন্টারনেট কথার অর্থ হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কম্পিউটারগুলোর নেটওয়ার্কের নেটওয়ার্ক। 

অর্থাৎ ইন্টারনেট কাকে বলে? এর উত্তরে আমারা বলতে পারি, ইন্টারনেট হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অবস্থিত কম্পিউটারগুলোর নেটওয়ার্ক। বিশ্বের বিভিন্ন নেটওয়ার্ককে সংযুক্ত করলে যে নেটওয়ার্ক গড়ে ওঠে তাকে ইন্টারনেট বলে। এটি বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত একটি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক।

প্রথম দিকে ইন্টারনেটের নাম ছিল ARPANET। ১৯৬৮ সালের ARPANET ছিল ইন্টারনেটের প্রাথমিক পর্যায়। এ প্রযুক্তির উন্নয়ন সাধিত হয় আমেরিকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে। তবে চারটি কম্পিউটারের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপিত হয় ১৯৬৯ সালের ৫ ডিসেম্বর ARPANET এর মাধ্যমে। প্রথম যে চারটি কম্পিউটারের মধ্যে যোগাযোগ স্থাপিত হয় সে কম্পিউটারগুলো লস এঞ্জেলেস, মেনলোপার্ক, সান্তা বারবার (U.C. Santa Barbara) এবং ইউটাহ বিশ্ববিদ্যালয় (The University of Utah) -তে অবস্থিত ছিল।

১৯৮২ সালে বিভিন্ন নেটওয়ার্কের মধ্যে সংযোগের জন্য TCP/IP উদ্ভাবনের মাধ্যমে ইন্টারনেটের প্রাথমিক যাত্রা শুরু। ১৯৯২ সালে ইন্টারনেট সোসাইটি (ISOC) প্রতিষ্ঠিত হয়।

আরও পড়ুন :- মেমরি কাকে বলে?

ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হলে ব্যবহারকারীকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় হার্ডওয়্যার সম্পর্কে অবহিত হতে হবে। ব্যবহারকারীকে কোনো সার্ভারের সাথে কম্পিউটার সংযোগ গ্রহণ করে ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হয়। এজন্য অত্যাবশ্যকীয় কতকগুলো হার্ডওয়্যার প্রয়োজন। হার্ডওয়্যারগুলো হলো- কম্পিউটার, মডেম, টেলিফোন লাইন ইত্যাদি। অনেক সময় প্রিন্টার এ স্ক্যানারের প্রয়োজন হতে পারে।
কম্পিউটার নেটওয়ার্কিং কার্যাবলি সম্পাদনের জন্য হার্ডওয়্যারসামগ্রীর পাশাপাশি সফটওয়্যারের গুরুত্ব অপরিসীম। কম্পিউটার নেটওয়ার্কিংয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

নেটওয়ার্ক ম্যানেজমেন্টের জন্য সিস্টেম সফটওয়্যার হিসেবে Microsoft Windows, NT, XP ইত্যাদি।

কেবলমাত্র ই-মেইল প্রেরণ বা গ্রহণের জন্য ব্যবহৃত সফটওয়্যার হচ্ছে gmail, আউটলুক এক্সপ্রেস, ইউডোরা প্রো ইত্যাদি।

Web pages ব্রাউজ করার সফটওয়্যার হচ্ছে Internet Explorer, Netscape, Google Chrome, Firefox ইত্যাদি। এছাড়া FTP, Ghaper, Telnet ইত্যাদি সফটওয়্যারও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
ইন্টারনেট কি বা কাকে বলে

ইন্টারনেট কীভাবে কাজ করে :-

১. ইন্টারনেটের সকল কম্পিউটার কমান্ড এবং ডাটা আদান-প্রদানের TCP/IP প্রোটোকল ব্যবহার করে।

২. ইন্টারনেটে যেকোনো কম্পিউটার আরেকটি কম্পিউটারে সাথে সহজেই সংযোজিত হতে পারে।

৩. একটি কম্পিউটার প্রথমে লোকাল বা স্থানীয় নেটওয়ার্কের সাথে সংযোজিত হয়, অতঃপর ইন্টারনেট ব্যাকবোনের মাধ্যমে সারা বিশ্বের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে সক্ষম হয়।

৪. একটি কম্পিউটার সরাসরি ইন্টারনেটের সাথে সংযোজিত হতে পারে, অথবা আরেকটি কম্পিউটারের রিমোট টার্মিনালের সাথে অথবা নেটওয়ার্কের গেটওয়ের মাধ্যমে, যা কোনো TCP/IP ব্যবহার করে।

৫. ইন্টারনেটের সকল কম্পিউটারেরই একটি IP অ্যাড্রেস থাকে এবং প্রায় সকলের একটি ঠিকানা থাকে, যা ডোমেইন নেম সিস্টেম ব্যবহার করে।

৬. বেশির ভাগ ইন্টারনেট অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামই ক্লায়েন্ট-সার্ভার মডেম ব্যবহার করে। ব্যবহারকারী ক্লায়েন্ট প্রোগ্রাম রান করে, যা সার্ভারের কাছ থেকে ডাটা এবং সেবা গ্রহণ করে।

ইন্টারনেটের সুযোগ-সুবিধা :-

প্রতিনিয়তই ইন্টারনেটের আওতায় কম্পিউটারের সংখ্যা বেড়ে চলছে, বেড়ে চলছে ইন্টারনেটের গুরুত্ব এবং ব্যবহার। শিক্ষা, গবেষণা, যোগাযোগ, ব্যবসায়-বাণিজ্য ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই ইন্টারনেটের গুরুত্ব দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

সারা বিশ্বকে 'গ্লোবাল ভিলেজ'-এর ধারণায় ধাবিত করছে ইন্টারনেট। ইন্টারনেট হচ্ছে একটি কম্পিউটারনির্ভর নেটওয়ার্কিং সিস্টেম, তাই কম্পিউটারের বহুমুখী ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে ইন্টারনেটের সুযোগ-সুবিধা বা ব্যবহার।

নিম্নে ইন্টারনেটের সুযোগ-সুবিধা বা ব্যবহার নিম্নে উল্লেখ করা হলো

তথ্যের আদান-প্রদান :-

তথ্যপ্রবাহের এক অবাধ বিরামহীন বিশাল উত্স হচ্ছে ইন্টারনেট। বর্তমানে ইন্টারনেট তথ্যের আদান-প্রদানের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তাই ইন্টারনেট টেলিফোন, ফ্যাক্সের বিকল্প নিজের স্থান করে নিচ্ছে।

আরও পড়ুন :- প্রসেসর কাকে বলে?

তথ্য আহরণ :-

পৃথিবীর যেকোনো বিষয়ের ওপর চলতি তথ্যাবলি বর্তমানে ইন্টারনেটে ধারণ করার প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। কোনো বিষয়ের ওপর তথ্যাবলি আহরণ করতে চাইলে সার্চ ইঞ্জিনের সহায়তা নেওয়া যায়।

ই-মেইল :-

ই-মেইল আবিষ্কারের পর যোগাযোগব্যবস্থায় যে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে তা আর কোনোটিতে হয়নি। ইলেকট্রনিক উপায়ে বা ইন্টারনেট ব্যবহার করে ডিজিটাল মেসেজ বা বার্তা আদান প্রদান করাকে ই-মেইল বলা হয়। ধরনের পদ্ধতির সাহায্যে যেকোনো ইন্টারনেট ব্যবহারকারী যেকোনো তথ্য অন্য ইন্টারনেট ব্যবহারকারীকে পাঠাতে পারে।

ই-মেইলের মাধ্যমে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে পৃথিবীর যেকোনো প্রাঙ্গের প্রাপকের কাছে ই-মেইল পাঠানো যায়।

ভিডিও কনফারেন্সিং :-

ভিডিও কনফারেন্সিং হলো এক ধরনের টেলিকনফারেন্সিং যেখানে ছবি দেখা যায় এবং কথা বলা যায়। যার ফলে অংশগ্রহণকারীরা পরস্পরের সম্মুখীন হয়ে কথোপকথন করতে পারেন। বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ভিডিও কনফারেন্সিং করা যাচ্ছে।

আবার বর্তমানে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ভিডিও কারেন্সিংয়ের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে ইমো বা মেসেঞ্জার। এই ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের উল্লেখযোগ্য ব্যবহার হলো টেলিমেডিসিন সার্ভিস, যেখানে ডাক্তার ও বিভিন্ন জায়গার রোগী পরস্পরের সম্মুখীন হতে পারেন। এতে করে ডাক্তারদের জন্য চিকিৎসাপদ্ধতি সহজ হয় এবং রোগীরা উন্নত চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করতে পারেন।

তাছাড়া অপারেশনের মতো জটিল কাজেও ভিডিও কনফারেন্সিং প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।

সফটওয়্যার :-

সফটওয়্যার মূলত তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির হার্ডওয়্যারকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে। ইন্টারনেট বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় একটি সফটওয়্যার সংগ্রহের মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত। ইন্টারনেট থেকে বিনা খরচে অজস্র ইউটিলিটি সফটওয়্যার ডাউনলোড করা যায়।

আরও পড়ুন :- সফটওয়্যার কাকে বলে?

শিক্ষার ক্ষেত্রে :-

আজকাল ইন্টারনেট জ্ঞান অর্জনের মহাসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। জীবনের যেকোনো প্রয়োজনীয় শিক্ষামূলক তথ্য ইন্টারনেট থেকে আহরণ করে জ্ঞানার্জন করা যায়।

অনলাইনে যে কোনো লাইব্রেরী থেকে কিংবা অনলাইনে অবস্থিত যেকোনো পুস্তক অধ্যয়ন করা যায়। ইন্টারনেটের মাধ্যমে পড়ে যেকোনো প্রয়োজনীয় কোর্স করা যায়।

অনলাইন মিডিয়া :-

আজকাল পত্রপত্রিকা কাগছে প্রকাশনার পাশাপাশি অন-লাইনেও প্রকাশ করা হয়। ফলে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী সহজেই বিশ্বের খবরাখবর পেয়ে থাকে। তাছাড়া অনলাইনে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল দেখারও সুযোগ রয়েছে।

বিনোদন :-

বিনোদনের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আজকাল অনেকেই অনলাইনে রেডিও, টেলিভিশন, সিনেমা, ম্যাগাজিন ইত্যাদি থেকে বিনোদন গ্রহণ করে থাকেন। আর বিভিন্ন রকম ইন্টারনেট মাধ্যম থেকে বিনোদনের স্বাদ গ্রহণ করার অবকাশ রয়েছে।

বাণিজ্যিক :-

ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ইন্টারনেট একদিকে যেমন ব্যবসায়িক যোগাযোগ । করসপন্ডেন্সের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে, অন্যদিকে পণ্যের বিপণন ও বিজ্ঞাপনের জন্য ওয়েব পেজ বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে।

এছাড়া নিত্যনতুন উদ্ভাবন এবং যুগের চাহিদার সাথে পাল্লা দিয়ে দিন দিন ইন্টারনেটের সুযোগ-সুবিধা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে। কম্পিউটারের ব্যবহারের বহুমুখিতা যত বৃদ্ধি পাবে, ইন্টারনেটের সুযোগ-সুবিধাও তত বৃদ্ধি পাবে।

ইন্টারনেটের সংযোগ পদ্ধতি :-

বর্তমানে ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে অনেক ধরনের পদ্ধতি আছে। বহুল প্রচলিত পদ্ধতিগুলো হলো
  • ডায়াল আপ সিস্টেম (Dial Up System)
  • আইএসডিএন (ISON)
  • ব্রডব্যান্ড (Broadband)
  • ওয়াই-ফাই (Wi-Fi)
  •  অ্যাইম্যাক্স (WiMax)

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ