মেমোরি কাকে বলে? মেমোরি কত প্রকার ও কি কি?

মেমোরি হচ্ছে কম্পিউটারের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মেমোরি লক্ষ লক্ষ স্মৃতি কোষ নিয়ে গঠিত, যেখানে একটি বিট ০ বা ১ সংরক্ষণ করা যায়। প্রক্রিয়াকরণের সুবিধার জন্য মেমরিতে তথ্য জমা রাখা হয় এবং প্রয়োজনে কাজে লাগানো যায়।

মেমোরি কাকে বলে :-

কম্পিউটারের অভ্যন্তরে যে অংশে তথ্যসমূহ স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে জমা থাকে তাকে কম্পিউটারের মেমরি বা মেমোরি বলা হয়।

কম্পিউটারে ডেটা, তথ্য, প্রোগ্রাম ইত্যাদি স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত ডিভাইসকে বলা হয় কম্পিউটার মেমোরি বা স্মৃতি।

কম্পিউটার ক্রিয়াশীল অবস্থায় প্রোগ্রাম ও ডেটাসমূহ অস্থায়ীভাবে সংরক্ষণের জন্য এবং প্রক্রিয়াকরণের কাজে ব্যবহৃত মেমোরি হলো প্রধান মেমোরি। যেমন র‍্যাম হলো প্রধান মেমোরির উদাহরণ। প্রধান মেমোরি অর্ধপরিবাহী বস্তু বা সেমিকন্ডাক্টরের সাহায্যে তৈরি।

অন্যদিকে অধিক পরিমাণে তথ্য, নির্দেশাবলি, অডিও, ভিডিও ইমেজ স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করার জন্য ব্যবহৃত মেমোরি হলো সেকেন্ডারি বা সহায়ক মেমোরি। সচরাচর সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত সেকেন্ডারি মেমোরি হলো ম্যাগনেটিক ডিস্ক ও অপটিক্যাল ডিস্ক।

আরও পড়ুন :- স্টোরেজ ডিভাইস কাকে বলে?

মেমোরি কত প্রকার ও কি কি :-


কম্পিউটার সিস্টেমে ব্যবহৃত মেমোরিকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
  1. প্রধান মেমোরি বা মুখ্য মেমোরি (Main Memory or Primary Memory )
  2. সহায়ক মেমোরি বা গৌণ মেমোরি (Secondary Memory or Mass Memory) ও
  3. ইন্টারনাল মেমোরি (Internal Memory)
মেমরি কাকে বলে

প্রধান মেমোরি বা মুখ্য মেমরি :-

কম্পিউটারের কর্ম এরিয়া হিসেবে প্রধান মেমরি পরিচিত। কম্পিউটারের কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশের (CPU) সঙ্গে প্রধান মেমরির সরাসরি সংযোগ থাকে। এ ধরনের মেমরিতে তথ্য ও নির্দেশাবলি অস্থায়ীভাবে সংরক্ষিত থাকে।

কম্পিউটার ক্রিয়াশীল অবস্থায় প্রোগ্রাম ও ডেটাসমূহ অস্থায়ীভাবে সংরক্ষণের জন্য এবং প্রক্রিয়াকরণের কাজে ব্যবহৃত মেমরিকে প্রধান মেমোরি বলে।

প্রধান মেমরিকে মেইন বা প্রাথমিক মেমরিও বলা হয়। এটি অত্যন্ত দ্রুতগতির হয়ে থাকে। মূলত প্রোগ্রাম চলাকালীন সময়ে কম্পিউটারের প্রোগ্রামের বিভিন্ন তথ্য ও ফলাফলকে অস্থায়ীভাবে প্রধান মেমরি সংগ্রহ করে রাখে।

প্রধান মেমরিতে সর্বদা প্রয়োজন হয় এমন তথ্য ও নির্দেশ জমা থাকে। কাজ শেষে তাদের আবার সহায়ক মেমরিতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। সাধারণত প্রধান মেমরি ধারণক্ষমতা বেশি হলে কম্পিউটারের কাজের গতি বৃদ্ধি পায়।

প্রধান মেমরির অ্যাকসেস সময় ন্যানোসেকেন্ড বা তার কম সময় হয়ে থাকে। র‍্যাম (RAM) ও রম (ROM) হলো এ ধরনের মেমরি উদাহরণ।
 

প্রধান মেমোরি বা মুখ্য মেমরি :-

এ ধরনের মেমোরি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো

১. কম্পিউটার চালু করার পর অপারেটিং সিস্টেমের একটি অংশ সহায়ক মেমরি হতে প্রধান মেমরিতে সংরক্ষিত হয়ে কম্পিউটারকে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে।

২. কম্পিউটারের কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ থাকে।

৩. এটি চলমান প্রোগ্রাম, ডেটা, হিসাব-নিকাশের ফলাফল ইত্যাদি সংরক্ষণ করে।

৪. কম্পিউটার বন্ধ করলে বা বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ হলে প্রধান মেমরিতে সংরক্ষিত তথ্যসমূহ সাধারণত মুছে যায়।

৫. এটি অত্যন্ত দ্রুতগতির হয়ে থাকে।

৬. এটি এক ধরনের পঠন ও লিখন স্মৃতি।

৭. প্রধান মেমরি অনেকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মেমরি সেল নিয়ে গঠিত।

সহায়ক মেমোরি কাকে বলে :-

কম্পিউটারের যে মেমরিতে বিভিন্ন তথ্য, নির্দেশাবলি, অডিও, ভিডিও, ইমেজ স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা যায় তাকে সহায়ক মেমরি বলা হয়।

এ ধরনের মেমরির কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশের (CPU) সঙ্গে সরাসরি সংযোগ থাকে না বিধায় ধীরগতি সম্পন্ন হয়। এতে বিপুল পরিমাণ তথ্য বা প্রোগ্রাম সংরক্ষণ করা যায়।

বিদ্যুৎ চলে গেলে বা কম্পিউটার বন্ধ করলেও তথ্য বা প্রোগ্রাম হারিয়ে বা মুছে যায় না। হার্ডডিস্ক, সিডি, ডিভিডি, পেনড্রাইভ, জিপ ড্রাইভ, ম্যাগনেটিক টেপ ইত্যাদি এ ধরনের সহায়ক মেমরির উদাহরণ।

এ ধরনের মেমরিকে নন-ভোলাটাইল মেমরিও (Non-Volatile Memory) বলা হয়।

আরও পড়ুন :- কম্পিউটার বাস কাকে বলে?

সহায়ক মেমোরি বৈশিষ্ট্য :-

এ ধরনের মেমরির উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো

১. কেন্দ্রীয় প্রক্রিয়াকরণ অংশের (CPU) সঙ্গে সরাসরি সংযোগ থাকে না।

২. যেকোনো তথ্য বা প্রোগ্রাম স্থায়ীভাবে সংরক্ষণ করা যায়।

৩. ধারণক্ষমতা অত্যধিক।

৪. সহজে পরিবহন করা যায়।

৫. পুরাতন তথ্য মুছা যায় এবং নতুন তথ্য সংরক্ষণ করা যায়।

৬. কম্পিউটার বন্ধ করলে বা বিদ্যুৎ প্রবাহ বন্ধ হলে সংরক্ষিত তথ্যসমূহ সাধারণত মুছে যায় না।

ইন্টারনাল মেমরি কাকে বলে :-

কম্পিউটারের ইন্টারনাল মেমরি বলতে রেজিস্টার ও ক্যাশ মেমরিকে বোঝানো হয়।

রেজিস্টার (Register) :-

মূলত মাইক্রোপ্রসেসরের অস্থায়ী মেমরি রেজিস্টার হিসেবে কাজ করে। রেজিস্টার তৈরি হয় ফ্লিপ ফ্লপের সাহায্যে। এগুলোর কাজ করার ক্ষমতা অত্যন্ত দ্রুত। মাইক্রোপ্রসেসরের কার্যাবলি সম্পাদানের জন্য এর অভ্যন্তরে বিভিন্ন ধরনের রেজিস্টার ব্যবহৃত হয়।

যেমন- অ্যাকুমুলেটর, ইনস্ট্রাকশন রেজিস্টার প্রোগ্রাম কাউন্টার ইত্যাদি। মাইক্রোপ্রসেসর যখন হিসাব-নিকাশের কার্যাবলি সম্পাদন করে তখন ডেটাকে সাময়িকভাবে জমা রাখার জন্য রেজিস্টারসমূহ ব্যবহৃত হয়।

ক্যাশ মেমোরি (Cache Memory) :-

এটি এক ধরনের বিশেষ উচ্চগতির মেমরিব্যবস্থা। মাইক্রোপ্রসেসর ও প্রধান স্মৃতির মাঝে অতি উচ্চগতির এবং কম ধারণক্ষমতাসম্পন্ন যে মেমরি ব্যবহার করা হয় তাকে ক্যাশ মেমরি বলা হয়।

কম্পিউটারের ডেটা স্থানান্তরের গতি বৃদ্ধি তথা মাইক্রোপ্রসেসরের প্রক্রিয়াকরণের গতি বৃদ্ধির জন্য ক্যাশ মেমরি ব্যবহৃত হয়। এটি এক ধরনের স্ট্যাটিক স্মৃতি, যা উচ্চগতি সম্পূর্ণ ও তুলনামূলক দামি মেমরি।

যেসব নির্দেশ ও ডেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তাদেরকে ক্যাশ মেমরিতে রাখা হয়। এর ধারণক্ষমতা ২৫৬ কিলোবাইট হতে কয়েক মেগাবাইট পর্যন্ত হয়ে থাকে। এ ধরনের পদ্ধতিতে সিপিইউয়ের কোনো নির্দেশ প্রয়োজন হলে প্রথমে ক্যাশ মেমরি পরীক্ষা করে, সেখানে না পেলে পরে প্রধান মেমরিতে খোঁজ করে। সেখানেও না পেলে সহায়ক মেমরিতে খোঁজ করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ