বিভাগীয় হিসাব কাকে বলে? বিভাগীয় হিসাবের বৈশিষ্ট্য, সুবিধা ও অসুবিধা?

বিভাগীয় হিসাব কাকে বলে :-

যখন একটি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত করে পরিচালনা করা হয়, তখন প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগের দক্ষতা যাচাই করাও সহজ হয়।

কোনো প্রতিষ্ঠান তার উৎপাদিত বিক্রয়যোগ্য পণ্যের বিক্রয় সর্বাধিকরণ করে মুনাফা অর্জন, ব্যবসাদের পরিধি বৃদ্ধি, ব্যবসায়ের ধরন বৃদ্ধি, ক্রেতার মনসন্তুষ্টি ইত্যাদি লক্ষ্যে পণ্যের গুণ ও মান বৃদ্ধি করতে যখন বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে একই ছাদের নিচে বিভিন্ন স্টল বা বিপণি খোলে, তখন সে ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে বিভাগীয় প্রতিষ্ঠান বলে।

ক্রেতার সময় ও ব্যয় বাঁচিয়ে সামাজিক কল্যাণ সাধন করতে এটি এক অনন্য প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠান চালু করে একজন ব্যবসায়ী বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসায়ের মাধ্যমে একটি পণ্যের উপর সৃষ্ট ক্ষতি অন্য পণ্যের লাভ দ্বারা ব্যবসায়িক ঝুঁকি কমাতে পারে। উন্নত বিশ্বের সকল বড় শহরে বিভাগীয় বিপনী চালু থাকলেও বাংলাদেশে ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম ও সিলেট শহরে সাম্প্রতিক কিছু বিভাগীয় বিপণি গড়ে উঠেছে।

সাধারণতঃ নগর ভিত্তিক ব্যস্ত জীবনযাপনের সুবিধার্থে শহরেই এগুলো গড়ে উঠে। পৃথক পৃথক পণ্যভিত্তিক বিভাগসমূহের আর্থিক ফলাফল নির্ণয়, তাদের কর্মদক্ষতার মূল্যায়ন, তুলনামূলক বিশ্লেষণ, অপচয় চিহ্নিতকরণ, সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও দক্ষতা বৃদ্ধিকরণের লক্ষ্যে বিভাগ ভিত্তিক পৃথক পৃথক হিসাব প্রস্তুতকরণের নামই বিভাগীয় হিসাব (departmental accounts)।
বিভাগীয় হিসাব কাকে বলে

বিভাগীয় হিসাবের বৈশিষ্ট্য :-

বড় প্রতিষ্ঠানের কার্য পরিধি বেশ বিস্তৃত। তাই তাদের কাজের সুবিধার্থে বা সহজ ভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে তাদেরকে বিভিন্ন বিভাগে বিভক্ত করা হয়। এ বিভাগীয় প্রতিষ্ঠানের নানা রকম বৈশিষ্ট্য রয়েছে, নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হলো

১. যে সকল ব্যয় যৌথভাবে নির্বাহ করা হয়, সেগুলো বিভাগীয় হিসাব ব্যবস্থায় বিভাগ ভিত্তিক বণ্টন করা হয়।

২. বিভাগীয় হিসাব ব্যবস্থার আওতায় এর ফেরত এবং বিক্রয় ফেরত রেজিস্টার পৃথকভাবে সংরক্ষণ করা হয়।

৩. বণ্টন অযোগ্য ব্যয়সমূহ প্রতিষ্ঠানের সাধারণ লাভ-লোকসান হিসাবের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

৪. বিভাগীয় হিসাব ব্যবস্থায় বিভাগ ভিত্তিক লাভ-লোকসান হিসাব তৈরি করা হয়।

৫. বিভাগীয় হিসাব ব্যবস্থায় পৃথকভাবে বিবরণী তৈরি করে প্রত্যেক বিভাগের আলাদা কার্য দক্ষতা যাচাই করা হয়।

৬. বিভাগীয় হিসাব ব্যবস্থায় আন্তঃলেনদেনসমূহ হিসাবভুক্ত করা হয়।

৭. প্রতিটি বিভাগের পণ্যের লাভজনকতা আলাদাভাবে নির্ণয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

৮. এ ব্যবস্থায় বিভিন্ন স্টল বা পণ্যভিত্তিক বিভাগের নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার জন্য একজন করে ব্যবস্থাপক থাকে।

আরও পড়ুন :- হিসাববিজ্ঞানের পরিধি লিখ?

বিভাগীয় হিসাবের সুবিধা :-

মুনাফা অর্জনের সকল পণ্য সমভাবে সফল হয় না। তুলনামূলক অধিক মুনাফা অর্জনকারী পণ্যগুলোর গুণ ও মান বজায় রাখতে এবং অপেক্ষাকৃত দূর্বল পণ্যগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার লক্ষ্যে বিভাগীয় হিসাবের কোনো বিকল্প নেই। পৃথকভাবে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগের দক্ষতা যাচাই করা এবং প্রত্যেকের আলাদা লাভ-লোকসানের পরিমাণ নির্ণয় করার সুবিধার্থে বিভাগীয় হিসাব সংরক্ষণ করা হয়। নিম্নে বিভাগীয় হিসাবের সুবিধাসমূহ উল্লেখ করা হলো :

১. আর্থিক ফলাফল নির্ণয় :

বিভাগীয় হিসাবের মাধ্যমে বিভিন্ন বিভাগ হতে প্রাপ্ত ফলাফল বা লাভ-ক্ষতির মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা যায়। ফলে, কোন বিভাগ কতটুকু লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে তা বোঝা যায়।

২. নিয়ন্ত্রণে সহায়ক :

প্রতিটি বিভাগ তাদের কার্যক্রমের তথ্য পৃথকভাবে ব্যবস্থাপকের নিকট উপস্থাপন করে, ফলে ব্যবস্থাপকের পক্ষে ব্যবসায় নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়।

৩. ভবিষ্যত পরিকল্পনা :

বিভাগীয় হিসাবের মাধ্যমে পরিচালকমন্ডলী বিগত বছরের কার্যক্রমের সাথে চলতি বছরের কার্যক্রম তুলনা করে সহজেই ভবিষ্যত কর্ম পরিকল্পনা নির্ধারণ করতে পারেন।

৪. অপচয় রোধ :

মালিক ও ব্যবস্থাপনা কর্তৃক বিভাগীয় হিসাবের মাধ্যমে অর্থ ও পণ্যের যথাযথ নিয়ন্ত্রণ এর মাধ্যমে এ বিষয়ে অপচয় রোধ করা সম্ভব হয়।

৫. আর্থিক ফলাফলের তুলনা :

কোনো প্রতিষ্ঠানের বিভাগ ভিত্তিক আয়-ব্যয় নির্ণয় করা হলে উক্ত প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিভাগের আর্থিক অবস্থা পৃথকভাবে জানা যায়। ফলে বিভাগের কোথায় দুর্বলতা আছে তা সহজেই নির্ণয় করা

৬. নীতি নির্ধারণ :

বিভাগীয় হিসাব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠানের মালিক এবং পরিচালকবৃন্দকে পণ্য সারিতে নতুন পণ্যের সংযোজন বা পুরাতন পণ্যের বিয়োজনের ক্ষেত্রে নীতি নির্ধারণে সহায়তা করে থাকে।

৭. কর্মীদের দক্ষতা মূল্যায়ন :

বিভাগীয় হিসাবের মাধ্যমে প্রত্যেক বিভাগের কর্মচারী বা কর্মকর্তাদের কর্মদক্ষতা পৃথকভাবে মূল্যায়ন করা।

৮. মজুত নিয়ন্ত্রণ :

পৃথক পণ্যের বিভাগ ভিত্তিক ব্যবসায় ও হিসাব সংরক্ষণ হওয়ার কারণে বিভিন্ন প্রকার পণ্যের মজুদ আলাদাভাবে জানা যায়। ফলে মজুদ পণ্যের চুরি বা আত্মসাৎ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে।

৯. পূর্বাভাসে সহায়তা :

কোনো বিভাগে ক্ষতির সম্ভাবনা থাকলে বিভাগীয় হিসাবের মাধ্যমে পূর্বে তার আভাস পাওয়া যায় এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়।


বিভাগীয় হিসাবের অসুবিধা :-

বিভাগীয় হিসাবের বহুবিধ সুবিধার কারণে বিভাগীয় প্রতিষ্ঠানে এরূপ হিসাবের প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। তবে সুবিধার পাশাপাশি কিছু অসুবিধা বা সীমান্ধতাও রয়েছে। নিজে এদের কয়েকটি উল্লেখ করা হলো :

১. ব্যয়বহুল :

বিভাগ ভিত্তিক আয় ব্যয়ের অনেক খাতা আছে। প্রতিটি খাতের হিসাবরক্ষণ জটিল ও ব্যয়বহুল।

২. অলাভজনক বিভাগ :

ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অলাভজনক বিভাগ বন্ধ করা সম্ভব হয় না, কারণ এতে প্রতিষ্ঠানের চেকার সংখ্যা হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

৩. আয়-ব্যয় বন্টনের ভিত্তি :

বিভাগীয় হিসাব ব্যবস্থার ক্ষেত্রে প্রত্যেক বিভাগের পৃথকভাবে আয় ব্যয় নির্ণয় করতে হয়। এক্ষেত্রে কিছু খরচ আছে যেগুলো স্ব স্ব বিভাগে বন্ঠন করার উপযুক্ত ভিত্তি পাওয়া যায় না।

৪. ব্যয় বৃদ্ধি :

বিভাগীয় হিসাব ব্যবস্থায় ব্যবস্থাপক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত বা বৃদ্ধি পায়।

৫. আন্তঃবিভাগীয় লেনদেন :

অনেক সময় বিভাগগুলো প্রয়োজনে নিজেদের মধ্যে পণ্য আদান-প্রদান করে থাকে, যা হিসাবরক্ষণ প্রক্রিয়ায় জটিলতার সৃষ্টি করে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ