হস্তান্তরযোগ্য ঋণ দলিল কি? হস্তান্তরযোগ্য ঋণ দলিলের বৈশিষ্ট্য?

হস্তান্তরযোগ্য ঋণ দলিল কি :-

যে লিখিত দলিল প্রস্তুতকারী কর্তৃক স্বাক্ষরিত এবং বারবার অবাধে হস্তান্তর করে সংশ্লিষ্ট পক্ষসমূহের দেনা-পানা নিষ্পত্তির কাজে ব্যবহার করা যায় তাকে হস্তান্তর দলিল বলে।

বিনিময় বিল, অঙ্গীকার পাত্র ও চেক হস্তান্তরযোগ ঋণ দলিলের উদাহরণ। এছাড়াও আছে ব্যাংক নোট, সরকারী নোট, ব্যাংকের আজাপর, ছড়ি, ভ্রমণকারীর চেক, ডিবেঞ্চার, লভ্যাংশ ওয়ারেন্ট, গ্রাহক বন্ড ইত্যাদি।

বাংলাদেশে প্রচলিত ১৮৮১ সালের হস্তান্তর যোগ্য ঋণ দলিল আইনের ১৩(১) ধারায় বলা হয়েছে যে, “A negotiable instrument means a promissory note, bill of exchange or cheque payable either to order or to bearer" অর্থাৎ প্রাপকের নির্দেশে কোন ব্যক্তি বা বাহককে পরিশোষ্য অঙ্গীকার পত্র, বিনিময় বিল অথবা চেককে হস্তান্তরযোগ্য অশ দলিল বলে।

আরও পড়ুন :- দরপত্র কাকে বলে?

নগদ টাকার পরিবর্তে অবাধে বিনিময়যোগ্য বলে এরূপ ঋণ দলিল বাকীতে পণ্য না বিনা সংক্রান্ত দেনা-পাওনা নিষ্পত্তি এবং ক্ষণ পরিশোধের জন্য ব্যবহার করা হয়।

আধুনিক বিশ্বায়নের যুগে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত দেনা-পাওনা এবং পরিশোধের ক্ষেত্রে হস্তান্তরযোগ্য ঋণ দক্ষিণ ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, যে দলিলে ভবিষ্যতে কোন নির্দিষ্ট অথবা নির্ধারণযোগ্য তারিখে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ কোন নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা বাহককে পরিশোধ করার শর্তহীন আদেশ বা প্রতিশ্রুতি লিখিত থাকে, তাকে ডোন্তরযোগ্য ঋণ দলিল বলা হয়।
হস্তান্তরযোগ্য ঋণ দলিল কি

হস্তান্তরযোগ্য ঋণ দলিলের বৈশিষ্ট্য :-

বর্তমান বিশ্বের সকল দেশেই নগদ টাকার বিকল্প বা সহায়ক হিসাবে বিভিন্ন হস্তান্তরযোগ্য দলি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ সব ঋণ দলিলে সাধারণতঃ যে বৈশিষ্ট্যগুলি পরিলক্ষিত হয় তা নীচে বর্ণনা করা হল।

১. লিখিত দলিল (Written Document) :

হস্তান্তরযোগ্য দলিল নিয়মানুযায়ী লিখিত একটি দলিল অঙ্গীকারপত্র দেনাদার কর্তৃক ও বিনিময় বিল পাওনাদার কর্তৃক সাদা কাগজে লেখা হয়। আর ব্যাংকের ছাপানো পাতায় আমানতকারী চেক লিখে থাকে।

২. স্বাক্ষরিত (Signed) :

এ দলিলে অবশ্যই প্রতকারী বা তার আইনানুগ প্রতিনিধির স্বাক্ষর থাকতে হবে। স্বাক্ষরের সাথে তারিখ ও থাকা আবশ্যক অন্যায় দলিলের কোন মূল্য থাকে না বা আইন সম্মত হয় না।

৩. পক্ষসমূহ (Parties) :

হস্তান্তরযোগ্য ঋণ দলিলে অবশ্যই একাধিক পক্ষ থাকবে। অঙ্গীকার পরে দুটি পক্ষ থাকে, অঙ্গীকার পাতা ও অঙ্গীকার গ্রহীতা। আর বিনিময় বিল ও ঢেকে তিনটি পক্ষ থাকে, আদেষ্টা, আদিষ্ট ও প্রাপক।

৪. শর্তহীন (Unconditional) :

এতে মূল্য প্রদানের শর্তহীন নির্দেশ বা প্রতিশ্রুতি লিখিত থাকে। অঙ্গীকার পরে টাকা প্রদানের শর্তহীন অঙ্গীকার থাকে বিনিময় বিলে আদেষ্টা বা পাওনাদার আদিষ্ট বা দেনাদারকে অর্থ প্রদানের শর্তহীন নির্দেশ দেয়। আর চেকের ক্ষেত্রে আমানতকারী ব্যাংককে অর্থপ্রদানের শর্তহীন নির্দেশ দিয়ে থাকে।

আরও পড়ুন :- অভিগমন কাকে বলে? 

৫. হস্তান্তরযোগ্যতা (Transferability) :

এরূপ দলিল বিনিময়ের মাধ্যম হিসাবে নগদ টাকার মত ব্যবহার ও হস্তান্তর করা যায়। বাহককে প্রদেয় দলিলের ক্ষেত্রে শুধু অর্পনের দ্বারা হস্তান্তর করা যায় এবং এতে হস্তান্তর সঙ্গীতা স্বত্ব লাভ করে। আদেশে প্রদেয় দলিলের ক্ষেত্রে হস্তান্তরের জন্য পৃষ্ঠাংকন করতে হয়।

৬. টাকার পরিমাণ (Amount of Money) :

যোগ্য ঋণ দলিলে নির্দিষ্ট টাকার পরিমাণ অংকে ৬ কমায় উল্লেখ থাকে।

৭. প্রাপাকের নাম (Name of Payee) :

এরূপ দলিলে প্রাপকের নাম উল্লেখ থাকে। কোন ব্যক্তির নাম উল্লেখ না করে আদেষ্টা 'নির্জা' শব্দ লিখতে পারেন। অঙ্গীকার পত্রের ক্ষেত্রে অঙ্গীকারদাতা কার নিকট অর্থ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে তার নাম উল্লেখ করতে হয়।

৮. মেয়াদ (Maturity):

বিনিময় বিল ও অঙ্গীকারপত্র সাধারণতঃ বিভিন্ন মেয়াদের হয় এবং দলিলে তা লেখা থাকে। এসব দলিল চাহিবামাত্র পরিশোধ্য ও হতে পারে। চেক চাহিবামাত্র পরিশোধ্য হয়ে থাকে।

৯. উপস্থাপন (Presentation) :

হস্তান্তরযোগ্য বা দলিলের অর্থ আদায়ের জন্য ধারককে মেয়াদান্তে উপস্থাপন করতে হয়। মেয়াদী বিনিময় বিল অনিষ্টের নিকট প্রথমে স্বীকৃতির জন্য এবং মেয়াদান্তে পরিশোধের জন্য উপস্থাপন করা হ্যা তেকের অর্থ সপ্তাহের জন্য ব্যাংকে এবং অধীকার পত্রের ক্ষেত্রে মেয়াদান্তে প্রতিশ্রুতিদাতার নিকট উপস্থাপন করতে হয়।

১০. ঋণের প্রমাণ (Proof of Debt) :

সকল প্রকার হস্তান্তরযোগ্য দলিল ১৮৮১ সালের আইন অনুযায়ী পরিচালিত হয় বলে আদালতে ঋণের দলিল হিসাবে গৃহীত হয়।

আরও পড়ুন :- সুনাম কাকে বলে?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ