প্রাপ্য হিসাব কাকে বলে? প্রাপ্য হিসাব কত প্রকার ও কি কি?

আমরা জানি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য অর্থ প্রয়োজন। অর্থ হলো ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মূল চালিকা শক্তি। এ অর্থের বিভিন্ন উৎসের মধ্যে একটি উৎস হলো প্রাপ্য টাকা। এটি সাধারণত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ধারে পণ্য বিক্রয়ের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। একটি প্রতিষ্ঠানের নগদ প্রবাহ ঠিক রেখে নগদ টাকা আদায় ও নতুন প্রাপ্য হিসাব সৃষ্টির জন্য একটি কার্যকর ক্রেডিট পলিসি আবশ্যক।

প্রাপ্য শব্দ দ্বারা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট হতে পাওনার পরিমাণকে বুঝায়। এটি সাধারণত প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ধারে পণ্য বিক্রয়ের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়। এসব প্রাপ্য হিসাব ব্যবসায়ের স্বাভাবিক কার্যাবলির কারণেই হয়ে থাকে। এর দ্বারা কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট দাবীকে বুঝায় যা পরবর্তী যে কোনো সময় নগদে আদায় করা হবে।

প্রাপ্য হিসাব আদায়কাল বিভিন্ন মেয়াদি হয় যেমন ৩০ দিন, ৬০ দিন ইত্যাদি। উদাহরণস্বরূপ রীতা ট্রেডার্স ৫০,০০০ টাকায় পণ্য নেত্র ট্রেডার্সের নিকট ধারে বিক্রয় করল। নেত্র ট্রেডার্স ৬০ দিন পরে এ ক্রীত পণ্যের পাওনা অর্থ পরিশোধ করবে মর্মে নিশ্চয়তা দিল। এক্ষেত্রে রীতা ট্রেডার্স এর প্রাপ্য হিসাবে টাকার পরিমাণ হবে ৫০,০০০ টাকা। এ প্রাপ্য হিসাবের টাকা রাঁতা ট্রেডার্স, নেত্র ট্রেডার্স এর নিকট থেকে ২ মাস পরে নগদে আদায় করবে। প্রাপ্য হিসাবকে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের তরল সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয়।

আরও পড়ুন :- জাবেদার কি?

প্রাপ্য হিসাব বা সমূহ কাকে বলে :-

অবশেষে বলা যায় যে, ধারে পণ্য বা সেবা বিক্রয় বা সরবরাহের জন্য ক্রেতা যখন বিক্রেতাকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পরিশোধের জন্য যে মৌখিক প্রতিশ্রুতি দেয়, তখন তাকে প্রাপ্য হিসাব (receivables) বলে।

প্রাপ্যসমূহ সম্পর্কে Smith and Skousen বলেন "The term receivables is applicable to all claims against others for money. goods or services" (অর্থাৎ, পণ্য অথবা সেবার জন্য অন্যপক্ষের নিকট যে দাবি তাই প্রাপ্যসমূহ হিসেবে বিবেচিত)

এ প্রসঙ্গে Kieso, Weygandt and Warfield তাদের Intermediate Accounting গ্রন্থে বলেন "Receivables are claims held against customers and others for money. goods, or services" (অর্থাৎ পরিন্দার বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের নিকট পণ্য বা সেবার বিপরীতে পাবিসমূহই হচ্ছে প্রাপ্যসমূহ।
প্রাপ্য হিসাব কাকে বলে

প্রাপ্য হিসাব কত প্রকার ও কি কি :-

প্রাপ্য হিসাবকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা যায় :

১. প্রাপ্য হিসাব (Account receivable),
২. প্রাপ্য নোট (Notes receivable),
৩. অন্যান্য প্রাপ্য হিসাব (Others receivable)।

১. প্রাপ্য হিসাবসমূহ বা দেনাদারবৃন্দ (Account Receivables) :-

ধারে পণ্য বিক্রয় বা সেবা প্রদানের ফলে অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট যে অর্থ প্রাপ্য হয় তাকে প্রাপ্য হিসাবসমূহ বা দেনাদারবৃন্দ বলে।

এ ধরনের প্রাপ্যতা বিক্রয় বা সেবা বাবদ প্রাপ্য অর্থের মৌখিক প্রতিশ্রুতি বা অঙ্গীকার হিসেবে গণ্য হয় এবং এর জন্য কোনো লিখিত দলিল বা অঙ্গীকার নামা থাকে না। এ ধরনের প্রাপ্যসমূহ সাধারণত ৩০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে আদায় করা যাবে বলে ধরে নেওয়া হয়। প্রাপ্য হিসাবসমূহ ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের চলতি বা তরল সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়।

আরও পড়ুন :- নগদ ও বকেয়ার মধ্যে পার্থক্য?

২. প্রাপ্য নোটসমূহ (Notes Receivable) :-

লিখিত অঙ্গীকারপত্রের সাহায্যে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট প্রাপ্য নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ভবিষ্যতে কোনো নির্দিষ্ট তারিখে পরিশোধের যে প্রতিশ্রুতি প্রদান করে তাকে প্রাপ্য নোটসমূহ বলে।

সচারাচর ধারে পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের ফলে এ ধরনের লেনদেন সৃষ্টি হয় তবে ব্যবসায়িক ক্রয়-বিক্রয়ের বাহিরে বিভিন্ন কারণে এ ধরনের লেনদেন সৃষ্টি হতে পারে। প্রাপ্য নোটসমূহের ক্ষেত্রে সাধারণত ৬০ থেকে ৯০ দিন বা তদুর্ধ্ব সময়ের মধ্যে অর্থ পরিশোধের প্রতিশ্রুতি থাকে।

৩. অন্যান্য প্রাপ্যসমূহ ( Others Receivable) :-

সকল প্রকার অকারবারি প্রাপ্যসমূহকে অন্যান্য প্রাপ্যসমূহ (Others Receivable) বলে।

যেমন: প্রাপ্য সুদ (Interest Receivable ), প্রাপ্য কমিশন (Commission Receivable), প্রাপ্য ভাড়া (Rental Receivable) ইত্যাদি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ