সুনামি কাকে বলে? সুনামি সৃষ্টির কারণ? সুনামির ফলাফল বা প্রভাব?

সুনামি শব্দের অর্থ :-

সুনামি (Tsunami) জাপানি শব্দ। এর শাব্দিক অর্থ পোতাশ্রয়ের ঢেউ। এখানে 'tsu' অর্থ বন্দর বা harbour এবং 'nami' অর্থ সামুদ্রিক ঢেউ। সুনামির উৎপত্তি সমুদ্রতলে।

সুনামি কাকে বলে :-

সমুদ্র তলদেশে প্রবল ভূমিকম্প সংঘটিত হলে সমুদ্রপৃষ্ঠে বিশাল যে ঢেউয়ের সৃষ্টি হয় তাকে সুনামি বলে। সর্বপ্রথম সুনামির কথা লিপিবন্ধ হয় খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ অব্দে।

সুনামি সৃষ্টির কারণ ও সুনামির গতিবিধি :-

সমুদ্রতলে জিও টেকটোনিক (Geo-tectonic) প্রক্রিয়ার দরুণ ভূ-আন্দোলনের ফলে যে কম্পন হয় তা প্রধানত দু'ভাবে হয়ে থাকে। যথা: সমান্তরালভাবে ও উলম্বভাবে। সুনামির সময় সমুদ্রতলে উলম্ব আলোড়ন হয়। এর ফলে সমুদ্রতলের ভূ-পৃষ্ঠের কোনো স্থান বিশাল অঞ্চলজুড়ে বসে যায় বা কোনো স্থান খাড়াভাবে ওপরে উঠে আসে ও সমুদ্রতলে ফাটলের সৃষ্টি করে যার ফলে তলদেশের সমতা নষ্ট হয়।

আরও পড়ুন :- টর্নেডো কাকে বলে?

দ্রুত সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির সমতা রক্ষার জন্য পানিরাশির প্রচন্ড উলম্বচাপের সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে উপরিভাগের পানির সমতা রক্ষার জন্য সুনামি সৃষ্টি হয়।

সুনামির সৃষ্টির প্রধান কারণ সমুদ্রের তলদেশের ভূমিকম্প। আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের কারণেও সুনামি সৃষ্টি হয়ে থাকে। এছাড়া পারমানবিক বিস্ফোরণ, ভূমিধ্বস, উল্কাপিন্ডের পতন ইত্যাদি কারণেও সুনামি হতে পারে।

সমুদ্র তলদেশে ভূমিকম্পের ফলে যে ঢেউয়ের সৃষ্টি করে তা প্রবলবেগে উপকূলের দিকে অগ্রসর হয়। সুনামির একেকটি ঢেউ ঘন্টায় ৬৪০ ৯৬০ কি.মি বেগে প্রবাহিত হয়। সুনামির ঢেউ উপকূলের দিকে আসতে থাকলে ঢেউয়ের গতির প্রচন্ডতা কমলেও ঢেউয়ের উচ্চতা বেড়ে যায় বহুগুণে। গভীর সমুদ্রে সুনামির উৎপত্তিস্থলে সুনামির উচ্চতা মাত্র কয়েক সে.মি. উঁচু কিন্তু উপকূলে সুনামির ঢেউয়ের উচ্চতা ৩০-৫০ মিটার উঁচু আকার ধারণ করে।
সুনামি কাকে বলে

সুনামির ফলাফল :-

সুনামির ফলে সমুদ্রের বিশাল ঢেউ উপকূলের তীরবর্তী অঞ্চলে ভয়াবহ ক্ষতিসাধন করে। যেমন- ১৯৪৬ সালে ১ এপ্রিল সুনামির আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছিল জাপানের হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জের হিলো দ্বীপ। ঐ সুনামিটি আলাস্কা উপদ্বীপ হতে ৭০ মাইল দূরে গভীর সমুদ্রে সৃষ্টি হয়েছিল। মুহূর্তের মধ্যে সুনামিটি ১০০ ফুট উঁচু হয়ে ৫ ঘন্টায় ২০০ মাইল অতিক্রম করে হিলো দ্বীপের উত্তর উপকূলে আঘাত হানে এবং ঐ জনপদ ভেসে যায়।

১৯৯৩ সালে সুনামি জাপানের উত্তরাংশে হোক্কাইডো দ্বীপ সংলগ্ন সমুদ্রে আঘাত হেনেছিল। এছাড়া ২০০৫ সালে শ্রীলংকা, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে সুনামির আঘাতে লক্ষাধিক মানুষ মারা যায়, বহু শহর ও নগর ধ্বংস হয়।

এছাড়া ২০১১ সালের ১১ মার্চ জাপানের উত্তর উপকূলে ১০ মিটার উঁচু সুনামির উৎপত্তি হয় এবং প্রায় ১৬ হাজার লোকের মৃত্যু হয় এবং নিখোজ হয় কয়েক হাজার। প্রাণি সম্পদেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ