তাপ বলয় বা তাপমন্ডল কাকে বলে? পৃথিবীর তাপমন্ডল কয়টি ও কি কি?

পৃথিবীর তাপবলয় কি :-

সূর্যালোক বা সৌরশক্তি থেকে আগত যে তাপ বায়ুমন্ডলকে উত্তপ্ত করে, তাকেই বায়ুর তাপ বলা হয়।

বর্তুলাকার পৃথিবীর উষ্ণতার তাপ অঞ্চলসমূহ সমগ্র ভূ-পৃষ্ঠে বলয়ের ন্যায় অবস্থান করে। এরূপ বলয়কে তাপবলয় বা তাপমন্ডল বলে।

সমতাপবিশিষ্ট অঞ্চলগুলোকে একই রেখা দিয়ে দেখানো যায়। এরূপ রেখার ক্ষেত্রে সমুদ্র সমতল থেকে ঊর্ধ্বদিকে সমতাপ বিশিষ্ট স্থানকে একটি কাল্পনিক রেখা দ্বারা অংকন করা হয়, যাকে সমোষ্ণরেখা বলে। এই রেখা দ্বারা কোনো স্থানের তাপের বিন্যাস ও বৈশিষ্ট্য দেখানো হয়।

বায়ুর তাপের উৎস :-

সূর্যরশ্মি সকল তাপের উৎস। সূর্য থেকে আগত সৌরশক্তি বায়ুমন্ডলকে উত্তপ্ত করে এবং বায়ুমন্ডলের জলীয়বাষ্প, কৃত্রিম উপাদান ও ধূলিকণার সাথে মিশে যায়। এই সকল উপাদান সৌরশক্তিকে আংশিকভাবে শোষণ করে এবং বায়ুমন্ডলকে উত্তপ্ত করে।

আরও পড়ুন:- জলবায়ু কাকে বলে?

পৃথিবীর স্থলভাগ ও জলভাগ যে তাপ গ্রহণ করে তা রাতের বেলায় তাপ বিকিরণ পদ্ধতিতে বায়ুমন্ডলে তাপ বৃদ্ধি করে। এ জন্যই পৃথিবীর সর্বত্র তাপ একই রকম হয় না।
তাপমন্ডল কাকে বলে

তাপের তারতম্য :-

বায়ু তাপের প্রধান উৎস সূর্য। দিনের দৈর্ঘ্য বেশি হলে বায়ুমন্ডল সূর্যরশ্মি থেকে বেশি তাপ গ্রহণ করে এবং উত্তপ্ত হয়। নিরক্ষীয় অঞ্চলে সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পতিত হওয়ায় সেখানে তাপমাত্রা বেশি হয়। এসব স্থানে সূর্যালোক কম স্থান জুড়ে বিস্তৃত হয় এবং অপেক্ষাকৃত কম বায়ুস্তর ভেদ করে।

আবার বিপরীত রূপটি দেখা যায় যেসব স্থানে সূর্যালোক তির্যকভাবে পড়ে সেখানে।

এছাড়া যে বায়ুতে জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি তাতে বায়ুর তাপমাত্রাও বেশি। সমুদ্রতল থেকে উপরের দিকে বায়ুর তাপ ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে। প্রতি ৩০০ ফুট উপরে উঠলে ১° ফারেনহাইট কমে যায়। অর্থাৎ ১০০০ ফুট উঠলে ৩.৩° ফারেনহাইট কমে যায়। কখনও কখনও উপরে উঠলে তাপ বৃদ্ধি পায়। একে তাপ উৎক্রম বলে। অর্থাৎ স্বাভাবিক তাপ হ্রাসের হারের ঠিক বিপরীত হচ্ছে তাপমাত্রার ব্যতিক্রম বা উৎক্রম। তাপের এ উৎক্রম কখনও বায়ুপ্রাচীরজনিত কারণে সংঘঠিত হয়।

পৃথিবীর তাপমন্ডল কয়টি :-

বায়ুমণ্ডলের তাপমন্ডল বা তাপবলয়কে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা

১. উষ্ণমন্ডল
২. উত্তর নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডল
৩. দক্ষিণ নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডল
৪. উত্তর হিমমণ্ডল এবং
৫. দক্ষিণ হিমমণ্ডল

আরও পড়ুন :- চাপবলয় কাকে বলে?

১. উষ্ণমণ্ডল :

নিরক্ষরেখা থেকে উভয় দিকে ক্রান্তীয় অঞ্চল পর্যন্ত তাপমাত্রা বেশি থাকায় একে উষ্ণমণ্ডল বা গ্রীষ্মমণ্ডল বলে।

কারণ সূর্য বছরে মোট দু'বার নিরক্ষরেখার উপর লম্বভাবে কিরণ দেয়। কর্কটক্রান্তি ও মকরক্রান্তিড়তে সূর্য লম্বভাবে কিরণ দেয় বলে এই অঞ্চলে তাপ বেশি থাকে। এ অঞ্চলে বছরের অধিকাংশ সময় সূর্যরশ্মি খাড়াভাবে পতিত হয় এবং কোনো সময়ই দিন-রাত্রির দৈর্ঘ্যের ব্যবধান খুব বেশি হয় না।

২. উত্তর নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডল :

কর্কটক্রান্তি হতে সুমেরুবৃত্ত ও মকরক্রান্তি থেকে কুমেরু বৃত্ত পর্যন্ত ২৩ ১/২° উত্তর অক্ষাংশ হতে ৬৬ ১/২° উত্তর পর্যন্ত সূর্যরশ্মি কখনো সরাসরি কখনোবা তির্যকভাবে পতিত হয়। এই দুই অঞ্চলে তখন শীত ও গ্রীষ্মের তাপের পার্থক্য হয় না। উত্তর গোলার্ধে এই মন্ডলকে বলা হয় উত্তর নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডল।

৩. দক্ষিণ নাতিশীতোষ্ণমন্ডল :

দক্ষিণে ২৩ ১/২° হতে ৬৬ ১/২° দক্ষিণ অক্ষাংশ পর্যন্ত এলাকাটি দক্ষিণ নাতিশীতোষ্ণমন্ডল বলে পরিচিত। এখানে সারা বছরই মধ্যম উষ্ণতা থাকে। এখানকার গড় তাপমাত্রা ০-২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে।

৪. উত্তর হিমমণ্ডল :

সুমেরুবৃত্ত থেকে সুমেরু পর্যন্ত এবং কুমেরুবৃত্ত থেকে কৃমেরু পর্যন্ত ৬৬ ১/২° উত্তর অক্ষাংশ হতে ৯০° উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত সূর্যলোক তির্যকভাবে পতিত হয়। এই এলাকায় বছরে প্রায় ছয় মাস সূর্যালোক পৌঁছায় না বলেই প্রচন্ড শীত অনুভূত হয় এবং সারা বছরই বরফে আবৃত থাকে। উত্তর গোলার্ধের এই অংশকে বলা হয় উত্তর হিমমণ্ডল।

৫. দক্ষিণ হিমমণ্ডল :

উত্তর গোলার্ধে যখন প্রচন্ড শীতকাল বিরাজ করে তখন দক্ষিণ গোলার্ধে অনুরূপ অবস্থা বিরাজ করে যাকে দক্ষিণ হিমমণ্ডল বলে।

এখানেও সারা বছর বরফে আবৃত থাকে। দক্ষিণ হিমমন্ডলের অবস্থান ৬৬ ১/২° দক্ষিণ অক্ষাংশ থেকে ৯০° দক্ষিণ অক্ষাংশ পর্যন্ত।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ