বায়ুচাপ বলয় কাকে বলে? পৃথিবীতে কয়টি চাপ বলয় আছে ও কি কি?

বায়ুচাপ বলয় কাকে বলে :-

বায়ুর নিজের ওজোন রয়েছে। বায়ুর এ ওজোনের জন্য যে চাপ তৈরি হয় তাকে বায়ুচাপ বলা হয়।

বায়ুচাপ সর্বত্র সমান নয়। কারণ ভূ-পৃষ্ঠের একেক অক্ষাংশে একেক ধরনের তাপমাত্রা লক্ষ্য করা যায়। বর্তুলাকার পৃথিবী যখন ক্রমাগত ঘুরতে থাকে তখন বায়ুমন্ডলের সবচেয়ে নিচের স্তরে যে চাপমণ্ডল সৃষ্টি হয় সেগুলোকে বলা হয় চাপমণ্ডল বা চাপবলয়।

বায়ুর চাপবলয়গুলোকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- উচ্চচাপ বলয় এবং নিম্নচাপ বলয়। যে সকল অঞ্চলে বায়ুর চাপ বেশি সে অঞ্চলকে উচ্চচাপ বলয় এবং যে অঞ্চলে বায়ুর চাপ কম সে অঞ্চলকে নিম্নচাপ বলয় বলে।

বায়ুর এ চাপ বলয়গুলো পৃথিবীর এক একটি অংশে ভূ-পৃষ্ঠকে বলয়ের ন্যায় পূর্ব-পশ্চিমে আবৃত করে অবস্থান করছে। এ ধরনের ৭টি চাপ বলয় রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি নিম্নচাপ বলয় এবং চারটি উচ্চচাপ বলয়।


পৃথিবীতে কয়টি চাপ বলয় আছে ও কি কি :-

পৃথিবীতে প্রধানত ৭টি চাপ বলয় আছে।

১. নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়;

২. উপক্রান্তীয় উষ্ণ উচ্চচাপ বলয়;

৩. উপক্রান্তীয় দক্ষিণ উচ্চচাপ বলয়;

৪. উপমেরু উত্তর নিম্নচাপ বলয়;

৫. উপমেরু দক্ষিণ নিম্নচাপ বলয়;

৬. মেরুদেশীয় উত্তর উচ্চচাপ বলয় এবং

৭. মেরুদেশীয় দক্ষিণ উচ্চচাপ বলয়।

এগুলো সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হলো -
চাপ বলয় কাকে বলে

নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় :

নিরক্ষীয় অঞ্চলে অর্থাৎ নিরক্ষরেখার উভয় পার্শ্বে ০°-২৫″ উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে সূর্য প্রায় সারা বছর লম্বাভাবে কিরণ দেয় বলে তাপমাত্রা বেশি। তাপমাত্রা বাড়লে

বায়ু হালকা ও উত্তপ্ত হয়ে ওপরে ওঠে যায় এবং ওপরের শীতল ও ভারী বায়ু নিচের দিকে চাপ দেয় এবং স্থায়ীভাবে এ অঞ্চলে নিম্নচাপ বলয়ের সৃষ্টি হয়।

উপক্রান্তীয় উত্তর ও দক্ষিণ উচ্চচাপ বলয় :

নিরক্ষীয় অঞ্চলের উষ্ণ জলীয় বাষ্পপূর্ণ হালকা বায়ু যথাক্রমে উত্তর ও দক্ষিণে ২৫-৩৫ ডি: উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশে প্রবাহিত হয়ে ক্রমশ শীতল ও প্রসারিত হয়ে উচ্চ চাপ রায়ের সৃষ্টি করে আংশিকভাবে নিচে নেমে আসে এবং বাকি অংশ মেরু প্রদেশের দিকে প্রবাহিত হয়। আবার মেরু প্রদেশের শীতল ও ভারী বায়ুর চাপ অধিক বলে ক্রান্তীয় প্রদেশের দিকে আসতে থাকে। ফলে উভয় মেরুতে ক্রান্তীয় প্রদেশে বায়ুচাপের আধিক্য থাকে এবং উচ্চ চাপ বলয়ের সৃষ্টি করে।


উত্তর ও দক্ষিণ মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় :

উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের ৬০-৬৫° অক্ষাংশের মধ্যে স্থায়ী নিম্নচাপ বলয়কে উত্তর ও দক্ষিণ মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় বলে। মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়টি পৃথিবীর আবর্তন তথা গতিজনিত কারণে সৃষ্টি হয়েছে। বায়ু যখন বৃত্তাকার বা অর্ধবৃত্তাকার পথে আবর্তিত হয় তখন কেন্দ্রবিমুখী শক্তি বায়ুকে বাইরের দিকে তথ্য মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের দিকে ঠেলে দেয়। ফলে এই অঞ্চলে স্থায়ী নিম্নচাপ বলয়ের সৃষ্টি করে।

বৃত্তাকার পথের ব্যাসার্ধ ছোটো হলে বায়ুর গতিবেগ অধিক হয় অর্থাৎ কেন্দ্র থেকে বর্হিমুখী শক্তি ততো প্রবল হয়। এই কেন্দ্রবিমুখী শক্তির পরিমাণ পৃথিবীর উভয় মেরুর নিকটে সর্বাধিক। এই কারণে এখানে তাপমাত্রা কম হলেও বায়ু মেরুর দিকে, উর্ধ্বদিকে বিক্ষিপ্ত হয় ও সারাবছর এখানে গভীর নিম্নচাপ বিরাজ করে।

উত্তর ও দক্ষিণ মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় :

উভয় মেরুতে সারাবছর তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে এবং বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প কম থাকে। শীতল ভারী বায়ুর কারণে এখানে উচ্চ চাপ বলনের সৃষ্টি হয়। মূলত উভয় গোলার্ধে মেরু অঞ্চলে তাপজনিত শীতল তাপমাত্রা ও গতিজনিত কারণে উচ্চ চাপ বলয়ের সৃষ্টি হয়েছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ