ভাঁজ কাকে বলে? ভাঁজ কত প্রকার ও কি কি?

ভাঁজ কাকে বলে :-

পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগ অত্যন্ত উত্তপ্ত। ফলে প্রতিনিয়ত তাপ বিকিরণ করে শীতল হয়ে সঙ্কুচিত হচ্ছে। এতে বৃহত্তম ভূ-ত্বক ক্ষুদ্রতম অভ্যন্তরের সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করতে না পেরে ফলের খোসার মতো কুঞ্চিত হয়ে যায়। এতে ভূ-ত্বকের নিচের অংশে চাপের পার্থক্য হয়ে ভূ-গর্ভে প্রবল আলোড়ন ঘটে। এ ভূ-আলোড়নের ফলে কোনো স্থান উপরে উঠে যায় আবার কোনো স্থান নিচু হয়ে আঁকাবাঁকা হয়। এরূপ আঁকাবাঁকা অংশকে ভাঁজ বলে।

ভাঁজ এক ইঞ্চি থেকে কয়েক মাইল পর্যন্ত হতে পারে।
ভাঁজ কাকে বলে

ভাঁজের প্রকারভেদ :-

আকৃতি ও অবস্থানের উপর ভিত্তি করে ভাঁজ কয়েক প্রকার হতে পারে। নিম্নে বিভিন্ন প্রকার ভাঁজ বর্ণনা করা হলো:

১. খোলা বা সরল ভাঁজ (Open Fold) :

সঙ্কোচনের গতি যদি শুধুমাত্র একদিক থেকে চাপ দেয় তাহলে ভূ-ত্বক ভাঁজ হয়ে অতি সাধারণ চূড়া ও খাদের সৃষ্টি হয়। এর ফলে একটি অগ্রবর্তী কোণ ও অবনমিত ভূ-ভাগ সৃষ্টি হয়, একে খোলা বা সরল ভাঁজ বলে।

আরও পড়ুন :- পর্বত কাকে বলে?

২. প্রতিসম ভাঁজ কাকে বলে (Systemetrical Fold) :

যে ভাঁজের দুই পার্শ্বস্থ বাহু সমান কোণে দুই দিকে হেলে থাকে, তাকে সুষম ভাঁজ বলে। একে প্রতিসম ভাঁজও বলা হয়।

৩. অপ্রতিসম ভাঁজ কাকে বলে (Asymmetrical Fold) :

কোনো ভাঁজের এক পার্শ্বস্থ বাহু যদি অপর পার্শ্বস্থ বাহু অপেক্ষা অধিক খাড়া হয় তখন তাকে বিষম ভাঁজ বলে। এটি অপ্রতিসম ভাঁজ নামেও পরিচিত। সুইজারল্যান্ডের জুরা পর্বতে এ ধরনের ভাঁজ দেখা যায়।

৪. হেলান ভাঁজ কাকে বলে (Isoclinal Fold) :

কোনো ভাঁজের চাপ অধিক হলে ভাঁজগুলো পরস্পর গায়ে গায়ে লেগে যায় এবং যে পার্শ্বে চাপের পরিমাণ কম সেদিকে ভাঁজগুলো হেলে যায়। এ ধরনের ভাজগুলোই হেলান ভাজ।

৫. শায়িত কাকে বলে (Recumbent Fold):

একটি ভাঁজের উপর অন্য একটি ভাঁজ শায়িত বা আনুভূমিক অবস্থায় থাকলে তাকে শায়িত বা আনুভূমিক ভাঁজ বলে। সাধারণত আনুভূমিক চাপ প্রবল হলে শিলান্তর অধিক সংকুচিত হয়ে একটি ভাঁজের উপর আরেকটি ভাঁজ উঠে গিয়ে এ ধরনের ভাজ তৈরি করে।

৬. সান্নিধ্য ভাঁজ (Closed Feld) :

অনেকগুলো ঊর্ধ্ব ভাজ যখন পাশাপাশি অবস্থান করে তখন তাকে সান্নিধ্য ভাঁজ বলে।

৭. উপভাঁজ কাকে বলে (Fan Fold) :

যখন একটি বৃহত্তর ভাঁজের উপর অসংখ্য ক্ষুদ্রাকৃতির ভাঁজ থাকে তখন তাকে উপভাজ বলে। আল্পস পর্বতে এ ধরনের উপভাঁজ রয়েছে।

৮. উদ্‌ঘট্র ভাঁজ (Overthrust Fold) :

কোনো শায়িত ভাঁজের উপর আনুভূমিক চাপ অধিক হলে ঐ ভাঁজটির মধ্যভাগের শিলাসমূহ ফেটে গিয়ে একটি অংশ অপর অংশ থেকে বেশ কিছু দূরে স্থানান্তরিত হয়। এ ধরনের ভাজকে উদ্‌ঘট্র ভাঁজ বলে।

৯. পেরিক্লাইন ভাঁজ (Pericline Fold) :

এ ভাঁজ অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ্রাকৃতির ভাঁজ। কোনো বড় ভাঁজ যদি তার আক্ষিক রেখা বরাবর কোনো কারণে নিচে অবনমিত হয়ে যে ভাঁজের সৃষ্টি হয় তাকে পেরিক্লাইন ভাঁজ বলে।

১০. এন্টিক্লাইনোরিয়াম ও সিনক্লাইনোরিয়াম (Anticlinorium and Synclinorium) :

বড় আকারের উর্ধ্বভাজ ও অধঃভাঁজের উপরও কখনো কখনো ছোট ছোট ঊর্ধ্ব ও অধভাঁজ থাকতে পারে। ঊর্ধ্বভাঁজের উপর অবস্থিত এই ভাঁজকে এন্টিক্লাইনোরিয়াম এবং অধ্যভাঁজের উপর অবস্থিত ভাঁজকে সিনড্রাইনোরিয়াম বলে।

আরও পড়ুন :- চুত্যি কি?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ