জলবায়ু অঞ্চল কাকে বলে? জলবায়ু অঞ্চল কত প্রকার ও কি কি?

জলবায়ু, প্রাকৃতিক পরিবেশ, ভূ-প্রকৃতি, মৃত্তিকা ইত্যাদির বিভিন্নতার কারণে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ ও মানুষের যাবতীয় কার্যাবলীর মধ্যে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। একারণেই একই দেশের দু'টি ভিন্ন এলাকার মধ্যেও জলবায়ুগত বা প্রাকৃতিক পরিবেশগত পার্থক্য সুস্পষ্ট।

যেমন- বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোর ভেতর সুস্পষ্ট জলবায়ুগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। আবার এই ভালবায়ুগত সামঞ্জস্যের কারণেই পৃথিবীর দুই প্রান্তে অবস্থিত দু'টি দেশের মানুষের উপজীবিকার ভেতর যথেষ্ট সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

জলবায়ু অঞ্চল কাকে বলে :-

পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের এরূপ সাদৃশ্য বা বৈসাদৃশ্য এবং অন্যান্য বিষয়ের ওপর সামগ্রিক প্রভাব বিবেচনা করে সময় পৃথিবীকে যে কয়েকটি অঞ্চলে ভাগ করা হয় তাদের প্রত্যেকটিকে প্রাকৃতিক বা জলবায়ু অঞ্চল বলা হয়।

এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক হার্বার্টসন বলেন, "প্রাকৃতিক অঞ্চল হলো পৃথিবীর এরূপ একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ অঞ্চল যেখানে জীবনযাত্রার উপর প্রভাব বিস্তারকারী প্রাকৃতিক পরিবেশের উপাদানগুলোও সামঞ্জস্যপূর্ণ।"

অর্থাৎ, আমরা একথা বলতে পারি যে, মানুষের জীবনযাত্রা ও উপজীবিকার উপর প্রভাব বিস্তারকারী প্রাকৃতিক উপাদানসমূহের সামঞ্জস্যতার ভিত্তিতে পৃথিবীকে যে কয়টি অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে এদের প্রত্যেকটিকে এক একটি প্রাকৃতিক বা জলবায়ু অঞ্চল বলা হয়।


জলবায়ু অঞ্চলের শ্রেণীবিন্যাস :-

পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন প্রকার জলবায়ু বিদ্যমান রয়েছে। বিভিন্ন ধরনের জলবায়ুগত অবস্থার উপর ভিত্তি করে যে বিভিন্ন জলবায়ু অঞ্চল গড়ে উঠেছে তা মানুষের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে যথেষ্ট প্রভাবিত করে।

মানুষের অর্থনৈতিক কার্যকলাপ তথা অর্থনৈতিক উন্নয়ণ তৎপরতা পর্যালোচনা করার জন্য “জলবায়ু অঞ্চল” সম্পর্কেও ধারণা থাকা প্রয়োজন। ভূগোলবিদগণ আলোচনার সুবিধার্থে পৃথিবীকে প্রধান চারটি জলবায়ু অঞ্চলে বিভক্ত করেছেন। পরবর্তীতে বৃষ্টিপাত, উষ্ণতা, অবস্থান ইত্যাদির উপর ভিত্তি করে এদেরকে পুণরায় কতকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অঞ্চলে বিভক্ত করা হয়।
জলবায়ু অঞ্চল কাকে বলে

ক) উষ্ণ জলবায়ু অঞ্চল :-

কর্কট ক্রান্তি ও মকর ক্রান্তির মধ্যবর্তী অঞ্চলকে উষ্ণ জলবায়ু অঞ্চল বলা হয়। নিরক্ষরেখার উভয় পাশে ৫-৩০° উত্তর এবং দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে উষ্ণ জলবায়ু দেখা যায়। পৃথিবীর মোট ভূখন্ডের প্রায় এক তৃতীয়াংশ এ জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্ভুক্ত। এর গড় তাপমাত্রা প্রায় ২১° সে. এর উপরে। এ অঞ্চলের বিভিন্ন অংশের মধ্যে জলবায়ুগত ও প্রাকৃতিক উপাদানের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে। এই পার্থক্যের ভিত্তিতে উষ্ণ জলবায়ু অঞ্চলকে নিম্নলিখিত পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়।
  1. নিরক্ষীয় অঞ্চল
  2. মৌসুমী অঞ্চল
  3. ক্রান্তীয় সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল
  4. ক্রান্তীয় মহাদেশীয় অঞ্চল
  5. ক্রান্তীয় মরুদেশীয় অঞ্চল।

আরও পড়ুন :- রূপান্তরিত শিলা কাকে বলে?

(খ) নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল :-

পৃথিবীর যেসব এলাকায় খুব বেশী শীত বা গরম আবহাওয়া থাকে না তাকে নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু অঞ্চল বলে। উভয় গোলার্ধে ২৩.৫ থেকে ৬৬.৫ অক্ষাংশ পর্যন্ত এ অঞ্চল অবস্থিত। এই নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের এক পার্শ্বে উষ্ণ মন্ডল এবং অপর পার্শ্বে হিম মন্ডল অবস্থিত। এই উভয় জলবায়ু অঞ্চলের প্রভাব নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের ভেতর কিছুটা বিদ্যমান রয়েছে। তাই নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলকে উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাতের তারতম্য অনুযায়ী নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যায়-

১. মৃদু উষ্ণ নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল :-

উভয় গোলার্ধে উষ্ণ অঞ্চলের কাছাকাছি অবস্থিত নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলকে মৃদু উষ্ণ নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল বলা হয়। অবস্থান, উষ্ণতা ও বায়ুর প্রকৃতি অনুযায়ী এ অঞ্চলকে আবার দুইভাগে ভাগ করা যায়।

১.১. ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চল এবং 

১.২. পূর্ব উপকূলীয় অঞ্চল।

২. মৃদু শীতল নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু অঞ্চল :-

হিমমন্ডলের পাশে যে অঞ্চলে কিছুটা মৃদু শীতল আবহাওয়া বিরাজ করে তাকে মৃদু শীতল নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু অঞ্চল বলে।

আরও পড়ুন :- বৃষ্টিপাত কাকে বলে?

এ অঞ্চলে তাপমাত্রা গ্রীষ্মকালে সাধারনত: ১০°-২১° সেঃ এবং শীতকালে ৭" সে এর নিচে অবস্থান করে। সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় বছরের অধিকাংশ সময় বৃষ্টিপাত হয়, তবে মহাদেশসমূহের অভ্যন্তরভাগে ক্রমেই বৃষ্টিপাত এর পরিমান কমতে থাকে।

অবস্থান, উচ্চতা ও বৃষ্টিপাত ইত্যাদির ভিত্তিতে এর অঞ্চলকে নিম্নোক্ত ভাগে ভাগ করা যায়:

২.১. সামুদ্রিক জলবায়ু অঞ্চল।

২.২. মহাদেশীয় অঞ্চল এবং 

২.৩. মরুদেশীয় জলবায়ু অঞ্চল।

৩. শীত প্রধান নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চল :-

উভয় মেরু বৃত্তের সন্নিকটে যে অঞ্চলে শীতের প্রাধান্য বিরাজ করে তাকে শীতপ্রধান নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু অঞ্চল বলে।

এ অঞ্চলের গড় তাপমাত্রা গ্রীষ্মকালে ২১° সে. এবং শীতকালে প্রায়ই হিমাঙ্কের নীচে এই তাপমাত্রা বিরাজ করে। এ অঞ্চলে শীতের তীব্রতা বেশী দেখা যায়।

অবস্থান, বায়ুর প্রকৃতি, বৃষ্টিপাত ইত্যাদির ভিত্তিতে এ জলবায়ুকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়।

৩.১. সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চল

৩.২. নাতিশীতোষ্ণ মহাদেশীয় অঞ্চল

(গ) মেরু দেশীয় জলবায়ু অঞ্চল :-

পৃথিবীর উভয় মেরু অর্থাৎ উত্তর ও দক্ষিণ মেরু অঞ্চলের জলবায়ুকে মেরুদেশীয় জলবায়ু অঞ্চল বলে।

এ জলবায়ু অঞ্চলে বছরের অধিকাংশ সময়ই শীত পড়ে এবং বরফ দ্বারা আচ্ছাদিত থাকে। শীতের তীব্রতা ও অবস্থান অনুযায়ী এ জলবায়ু অঞ্চলকে দু'ভাগে পৃথক করা যায়।

১. মেরু দেশীয় তুন্দ্রা অঞ্চল

২. চির তুষারাবৃত্ত মেরু দেশীয় তুন্দ্রা অঞ্চল

(ঘ) পার্বত্য অঞ্চল :-

পৃথিবীর বিভিন্ন উচ্চভূমি ও পার্বত্য অঞ্চল এর ভূ-প্রকৃতিগত কারনে যে মিশ্র ধরনের জলবায়ু সৃষ্টি হয় তা পার্বত্য জলবায়ু অঞ্চল নামে অভিহিত।

অবস্থান ও উচ্চতার ওপর ভিত্তি করে এ জলবায়ু অঞ্চলকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়।

১. ক্রান্তীয় উচ্চভূমি এবং 

২. মধ্য অক্ষাংশীয় উচ্চভূমি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ