সূচক সংখ্যা কাকে বলে? সূচক সংখ্যার প্রকারভেদ, ব্যবহার ও বৈশিষ্ট্য?

দ্রব্যের উৎপাদন ও মূল্যের হ্রাস বৃদ্ধি সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে পরিবর্তন হয়, যা নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যের সাথে সম্পৃক্ত। সূচক সংখ্যা কোন দেশের চলতি অর্থনৈতিক অবস্থা প্রকাশ করে। তাই সূচক সংখ্যাকে অর্থনৈতিক ভাষায় বলা হয় অর্থনৈতিক ব্যারোমিটার।

সুতরাং আমরা সূচক সংখ্যার সংজ্ঞা এভাবে বলতে পারি -

যে সংখ্যার সাহায্যে কোন নির্দিষ্ট বৎসর বা সময়ের সাথে অন্য কোন বৎসর বা সময়ে কোন প্রব্যের মূল্য বা উৎপাদনের আপেক্ষিক পরিবর্তন পরিমাপ করা হয় তাকে সূচক সংখ্যা বলে।

কোন একটি বার বা সময়কে ভিত্তি হিসেবে ধরে নেই বৎসর বা সময়কে কতকগুলো দ্রব্যের মূল্যের বা উৎপাদনের সাথে অন্য কোন বৎসর বা সময়ে উক্ত দ্রব্যগুলো মূল্য বা উৎপাদনের পরিমানের তুলনা করার জন্য পরিসংখ্যানে এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।

Wheldon এর মতে "An index number is a device which shows by its variation the changes in a magnitude which is not capable of accurate measurement in itself or of direct valuation in practice"

সূচক সংখ্যার প্রকারভেদ :-

সূচক সংখ্যার জন্য ব্যবহৃত তথ্যের প্রকৃতি অনুসারে সূচক সংখ্যাকে প্রধানত তিন ভাগে ভাগ করা হয়।

মূল্য সূচক সংখ্যা (Price Index Number)

পরিমাণ সূচক (Quantity Index Number)

মূল্যমান সূচক সংখ্যা (Value Index Number)

আরও পড়ুন :- পরিসংখ্যান কাকে বলে?

সূচক সংখ্যার ব্যবহার :-

সূচক সংখ্যা মূলত সময়ের পরিবর্তনের সাথে দ্রব্যমূল্য বা উৎপাদনের পরিমাণের পরিবর্তনের হার নির্দেশ করে। এটি মজুরী, মুদ্রামান, জীবনযাত্রার মান, শিল্প ও বাণিজ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন অর্থনৈতিক পরিবর্তনের মান নির্ণয় করতে ব্যবহৃত হয়।

১. অর্থনীতির ব্যারোমিটার :

সূচক সংখ্যা কোন দেশের শিল্প উৎপাদন, আমদানী রফতানির গতি, অর্থনীতির উত্থান-পতন, ব্যবসা বাণিজ্যের ধরন ইত্যাদি পরিমাপ করে তাই একে অর্থনীতির ব্যারোমিটার।

২. নীতি সহায়ক :

এটি সরকারী, বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের পরিকল্পিত এ ব্যবস্থাপনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কারণ কোন প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত দ্রব্যের পরিমাণ, মূল্য, আয়-বায় ইত্যাদির সূচক সংখ্যা জানা থাকলে ভবিষ্যত কর্ম নেয়া সহজ হয়।

৩. তুলনামূলক পরিমাপ :

সূচক সংখ্যার প্রধান উদ্দেশ্য হলো সময় স্থান ভেদে কোনো চলকের পরিবর্তন পরিমাপ করা। এটি এমন সব ক্ষেত্রে পরিবর্তন তুলনা করে যেগুলো সরাসরি সম্ভব নয় যেমন: জীবন-যাত্রার ব্যয়, মূল্যের মাত্রা ইত্যাদি।
সূচক সংখ্যা কাকে বলে

৪. গতিধারা বুঝতে সাহায্য করে :

দ্রব্যমূল্যের হ্রাস-বৃদ্ধি বিশ্লেষণের মাধ্যমে কোন ব্যবসায়ী দ্রব্যমূল্যের ভবিষ্যৎ প্রবণতা সম্বন্ধে পূর্ব ধারণা পেতে পারে।

৫. বেতন স্কেল নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে :

বর্তমান কালে অনেক দেশে জীবনযাত্রার ব্যয় সূচক করে প্রতি বৎসর বেতন সংশোধন করে।

৬. সূচক সংখ্যার সাহায্যে মুদ্রার মান সংকোচন করা হয়। মুদ্রার মান সংকোচন করার ক্ষেত্রে এবং ব্যবসার মুদ্রাস্ফীতির ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

৭. বিভিন্ন দ্রব্যের মূল্যের ক্ষেত্রে :

বিভিন্ন দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে সূচকসংখ্যা ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

৮. শিল্পে উৎপাদিত দ্রব্যের ক্ষেত্রে :

শিল্পে উৎপাদিত দ্রব্যের পরিমাণ নির্ণয় করার ক্ষেত্রে সূচক সংখ্যা ব্যবহার পরিলক্ষিত হয়।

আরও পড়ুন :- ভূগোল কি?

৯. বিতরণ দ্রব্যের ক্ষেত্রে :

বিজ্ঞানলব্ধ দ্রব্যের মূল্য নির্ধারণ ও এর পরিমাণ নির্ণয় করার ক্ষেত্রে সূচকসংখ্যা ব্যবহৃত হয়।

১০. আমদানী ও রফতানি যোগ্য দ্রব্যের ক্ষেত্রে :

দ্রব্যের পরিমাণ ও রপ্তানী দ্রব্যের পরিমাণ নির্ণয় এবং পূর্ববর্তী বছরের আমদানি ও রপ্তানী দ্রব্যের পরিমাণ নির্ধারিত হয় সূচক সংখ্যার মাধ্যমে।

১১. জীবনযাত্রার মান :

জীবনযাত্রার মান নির্ধারণে সূচক সংখ্যার ব্যবহার ব্যাপক। এর মাধ্যমে পূর্ববর্তী বছরের জীবনযাত্রার মানের সাথে বর্তমান বছরের জীবনযাত্রার মান নির্ধারিত হয়।

সূচক সংখ্যার বৈশিষ্ট্য :-

* সূচক সংখ্যা এক ধরনের গড়।

* সূচক সংখ্যা শতকরা হারে প্রকাশ করা হয়।

* সূচক সংখ্যা এককবিহীন সংখ্যা।

* যে সব বৈশিষ্ট্য সরাসরি পরিমাপ করা যায় না তাদের তুলনামূলক পরিবর্তন পর্যালোচনা করে।

* স্থান-কাল ভেদে কোন চলকের পরিবর্তন তুলনা করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

Please do not enter any spam link in the comment box.