স্থূলতা কাকে বলে? স্থূলতার কারণ ও প্রতিকার?

স্থূলতা কাকে বলে :-

মানব দেহে অপরিমিত খাদ্যাভ্যাস ও অনিয়মতান্ত্রিক জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত অস্বাভাবিক মেদ সঞ্চিত হয়ে স্বাস্থ্যের জন্য যে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা সৃষ্টি করে তাকে স্থূলতা (Obesity) বলে।

দেহে শক্তি গ্রহণ এবং ব্যয়ের মধ্যে অসামঞ্জস্যতা ঘটলেই স্থূলতার সৃষ্টি হয়। দেহের বিপাকীয় চাহিদা ও শক্তি গ্রহণ সামঞ্জস্য পূর্ণ হলে ওজনও স্থিতিশীল হয়।

স্থূলতা হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে এক ধরনের পুষ্টিগত অস্বাভাবিক অবস্থা। দেহে অতিরিক্ত বা অস্বাভাবিক মেদ সঞ্চিত হয়ে স্বাস্থ্যের যদি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার সৃষ্টি করে তাকে স্থূলতা বলে।

প্রকৃতপক্ষে এটি এক ধরনের পুষ্টিগত অস্বাভাবিক অবস্থা। দেহে অতিরিক্ত শক্তি গ্রহণ এবং বায়ের অসামঞ্জস্যতা থাকলেই স্থূলতার সৃষ্টি হয়। দেহের স্বাভাবিক ওজন অপেক্ষা ২০% ও এর অধিক বৃদ্ধি পেলে দেহ স্থূল বলে বিবেচিত হয়।

পরিমাপক হিসেবে স্থূলতা পরিমাপের জন্য সামগ্রিক ওজন সূচক (Body Mass Index) BMI ধরা হয়। কোন ব্যক্তির সামগ্রিক জন সূচক (BMI) ৩০ বা তার চেয়ে বেশি হয় সেক্ষেত্রে স্থূল হিসেবে ধরা হয়।

আরও পড়ুন:- সহজাত আচরণ কাকে বলে?

স্বাভাবিক ওজন অপেক্ষা ৫০% থেকে ১০০% ওজন বৃদ্ধি পেলে তাকে ব্যাধিগ্রস্থ স্থূল বলে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ২০-৪০ বছর বয়সের মধ্যে অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধির প্রবণতা দেখা যায়। তবে মধ্য বয়সে বৃদ্ধির হার সর্বাধিক হয়। দেহের বিপাকীয় চাহিদা ও শক্তি গ্রহণ সাম্যাবস্থায় থাকলে ওজনও স্থিতিশীল অবস্থায় থাকে।

স্থূলতার কারণ :-

সাধারণত: অস্বাভাবিক পুষ্টিগত অবস্থা ছাড়াও বিভিন্ন কারণে স্থূলতা বিবেচনায় থাকা প্রয়োজন। যেমন-

কায়িক শ্রমহীন জীবনযাত্রার মান: বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে স্থূলতার প্রধান কারণ হিসেবে শ্রমহীন কর্মজীবনকে বিবেচনা করা হয়।

অতিরিক্ত চর্বি বা স্নেহ জাতীয় খাদ্য গ্রহণ: স্বাভাবিক খাবারের পাশাপাশি অতিরিক্ত তেল বা চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণে দেহের ওজন বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থূলতা বৃদ্ধি পায়।

শক্তিবহুল খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ: পরিমিত পরিমাণ ক্যালরি অপেক্ষা অধিক ক্যালরিভুক্ত খাদ্য ও পানীয় গ্রহণের ফলে স্থূলতা বৃদ্ধি পায়।

মদ্যপান : মদ্যপানকারীদের ক্ষেত্রে প্রোটিন জাতীয় খাদ্য গ্রহণের প্রবণতা বেড়ে যাওয়ার ফলে দেহে স্নেহ পদার্থ অস্বাভাবিকভাবে সঞ্চিত হয়ে স্থূলতা সৃষ্টি হয়।

জিনগত বিষয়: জিনগতভাবে স্থূলতা অনেকাংশে পরিলক্ষিত হয়। যেমন- পিতা-মাতা স্থূল হলে সেক্ষেত্রে সন্তানাদিও স্থূল হয়। পিতা-মাতা যদি চিকন হয় তবে ৭৫% ক্ষেত্রে সন্তানাদি চিকন হয়ে থাকে।

আরও পড়ুন:- সাইটোপ্লাজম কাকে বলে?

বয়স: বয়স বৃদ্ধির পাশাপাশি অতিমাত্রায় খাদ্য গ্রহণ করলে ২০ বছরের পর থেকেই ৪০ বছর বয়সে স্থূলতা দেখা দেয়।

অলসতা: অতিমাত্রায় খাদ্য গ্রহণের পাশাপাশি কায়িক পরিশ্রম না করে অধিকক্ষণ বসে বা শুয়ে থাকার ফলে ওজন বৃদ্ধির পাশাপাশি স্থূলতা দেখা যায়।
স্থূলতা কাকে বলে

লিঙ্গ: যে সব দেশে পুরুষদের দৈহিক পরিশ্রম স্ত্রী অপেক্ষা বেশি সে সব দেশে স্ত্রীদের স্থূলতার হার বেশি। স্ত্রীদের রজঃনিবৃত্তি পরেও দেহের ওজন বৃদ্ধি ঘটে।

মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার : মনস্তাত্ত্বিক বিষয় ও খাদ্যাভাস প্রকৃতিতে প্রভাবিত করে ও স্থূলতা সৃষ্টি করে।

পীড়া : বিভিন্ন ধরনের পীড়া যেমন- হরমোন ও থাইরয়েডজনিত সমস্যা, বিষণ্ণতা প্রভৃতি কারণে স্থূলতা বৃদ্ধি পায়।

ঔষধ: কিছু ঔষধ এবং বিষণ্ণতা বিরোধী ঔষধ অনেক সময় ওজন বৃদ্ধি করে এবং স্থূলতা বাড়ায়।

পরিমিত খাদ্যাভ্যাস: অতিরিক্ত খাদ্যাভ্যাস স্থূলতা এবং দৈহিক বৃদ্ধির সৃষ্টি হয়।

বয়সের সাথে তুলনামূলকভাবে দেহের ওজন বৃদ্ধি ও স্থূলতা দেখা দেয়। বয়সের অনুপাতে দেহের ওজন বৃদ্ধি এবং স্থূলতার কারণে মানবদেহে নানা ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ রোগের উপসর্গ দেখা দেয়।

আরও পড়ুন:- স্ত্রী প্রোজনন তন্ত্র কি?

যেমন- করোনারি হার্ট ডিজিজ, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, যকৃত ও পিত্তথলির রোগ, অনিদ্রা, শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা, অস্টিওআথ্রাইটিস, মহিলাদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে স্ত্রীরোগ, তল পেট বেড়ে যাওয়া, কর্মে অনীহা সৃষ্টি ইত্যাদি।

স্থূলতা প্রতিরোধ ব্যবস্থা :-

স্বাভাবিক জীবনযাপনে স্থূলতা একটি প্রতিবন্ধকতা হিসেবে কাজ করে। এর প্রতিরোধে আত্মসচেতনতার পাশাপাশি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা আবশ্যক। উচ্চ রক্তচাপ, মদ্যপান, ধুমপান, ডায়াবেটিস প্রভৃতি স্থূলতার সাথে জড়িত বলে স্বতন্ত্রভাবে চিকিৎসা করা সম্ভব হয়ে উঠে না।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে বেশি ওজন সম্পন্ন ও স্থুল রোগীদের ওজন হ্রাসের জন্য কতক পদক্ষেপ ও পরামর্শ দেওয়া হয়। বিষয়গুলো হলো-

• তুলনামূলকভাবে কম শক্তিসম্পন্ন ও পরিমিত খাদ্য গ্রহণ।

• ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চর্বি জাতীয় ও উত্তেজক খাদ্য পরিহার করা।

• নিয়মিতভাবে শরীর চর্চা করা।

• একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা ।

• প্রতিদিন কমপক্ষে ২-৩ কিলোমিটার হাঁটার অভ্যাস করা।

• খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে ফল, শাক-সব্জি, দানাদার খাদ্য উপাদান খাদ্য তালিকায় থাকা আবশ্যক।

• মিষ্টি জাতীয় খাদ্য, আইসক্রীম, ফাস্টফুড ইত্যাদি খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।

• নির্দিষ্ট নিয়ম-শৃঙ্খলা মেনে চললে অত্যন্ত ফলপ্রসূ ফলাফল পাওয়া যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ