সরণ কাকে বলে? সরণের বৈশিষ্ট্য?

আমাদের প্রতিদিনের জীবনে দূরত্ব ও সরণের ধারণা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদিও এই দুইটি শব্দের অর্থ মিলতে পারে, কিন্তু এরা পৃথক দুইটি ধারণা।

দূরত্ব বলতে বোঝায় দুটি বিন্দুর মধ্যে থাকা সরাসরি পথের দৈর্ঘ্য। অন্যদিকে, সরণ বলতে বোঝায় কোন বস্তুর এক বিন্দু থেকে অন্য বিন্দুতে সরানো।

একটি সাধারণ উদাহরণ দিই - ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব ২৭০ কিলোমিটার। কিন্তু যদি কেউ ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যায়, তাহলে সে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে ২৭০ কিলোমিটার সরেছে।

আশা করি এই ছোট্ট ভূমিকায় দূরত্ব ও সরণের পার্থক্য সম্পর্কে ধারণা পেয়েছেন। আমার এই পোস্টে সরণ কাকে বলে, সরণ এর সূত্র, একক, মাত্রা সম্পর্কে আরও বিস্তারিত আলোচনা করব।

সরণ কাকে বলে :-

দুটি বিন্দু দু যায়গায় হলে এদের মধ্যের পথের দৈর্ঘ্যকে আমরা বলি দূরত্ব। একটি বিন্দু থেকে কোন বস্তু অন্য একটি বিন্দুতে সরে গেলে আমরা বলে বস্তুটির সরণ হয়েছে।

একথায় সরণ কাকে বলে এর উত্তরে বলা যায়, সরণ বলতে বোঝায় কোনও বস্তুর এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যাওয়া।

কিন্তু দূরত্ব আর সরণ এক নয়। ধরা যাক আপনি আপনার বাড়ী থেকে সোজা পূর্ব দিকে 4 km গেলেন এর পর সোজা পশ্চিম দিকে 3 km গেলেন। আপনি মোট 7 km দূরত্ব অতিক্রম করলেন। কিন্তু আপনি আপনার বাড়ী থেকে কত টুকু সরেছেন? 7 km কি? না আপনি মাত্র 1 km সরেছেন।

অতিক্রান্ত দূরত্ব 7 km হলেও আপনার সরণ 1 km তাই দূরত্ব হচ্ছে প্রকৃত অতিক্রান্ত পথের পরিমাণ বা দৈর্ঘ্য। সরণ হচ্ছে নির্দিষ্ট দিকে অবস্থান পরিবর্তনের পরিমাণ। উপরের উদাহরণে অতিক্রান্ত দূরত্ব 7 km কিন্তু সরণ 1 km। পূর্ব দিকে সরণ ভেক্টর বা দিক রাশির দিক আছে। দূরত্বের দিক নাই। এটি স্কেলার বা অদিক রাশি।

কোন বস্তুর আদি অবস্থান ও শেষ অবস্থানের মধ্যবর্তী ন্যূনতম দূরত্ব বা কোন নির্দিষ্ট দিকে গতিশীল বস্তুর সোজা বা সরল রৈখিক দূরত্ব সরণের মান নির্দেশ করে। সরণের মানই হল দূরত্ব এবং নির্দিষ্ট দিকের দূরত্বই হল সরণ।

সরণকে ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে এর মান ও দিক দুটোই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এদের যে কোন একটির অথবা উভয়ের পরিবর্তনে সরণের পরিবর্তন হয়।

সরণের একক কি?

দূরত্ব বা সরণ পরিমাপের আন্তর্জাতিক একক হল মিটার (m)। ব্যবহারিক ক্ষেত্রে অনেক সময় কিলোমিটার (km) ব্যবহার করা হয়। কিন্তু সরণ প্রকাশে দূরত্বের এককের সঙ্গে দিক উল্লেখ করতে হয়। যেমন আগের উদাহরণে বলা হয়েছে সরণ ১ km পূর্ব দিকে।

সরণের উদাহরণ :-

নীচের চিত্রে একজন মানুষ A বিন্দু থেকে B, C বিন্দু হয়ে D বিন্দুতে পৌঁছেছেন। অতএব A থেকে D পর্যন্ত তার অতিক্রান্ত দূরত্ব হবে A থেকে B (AB), B থেকে C (BC) এবং C থেকে D (CD) দূরত্বের যোগফল। কিন্তু মানুষটির সরণ হবে, A থেকে D এর দিকে, A থেকে D পর্যন্ত সরল রৈখিক দূরত্ব AD।

সরণের মাত্রা কি?

সরণের মাত্রার একক হলো M0L1T0।

M0 - ম্যাস (Mass): সরণকারী বস্তুর ম্যাস

L1 - লেংথ (Length): সরণের দূরত্ব

T0 - টাইম (Time): সরণে কত সময় লেগেছে

সুতরাং, সরণের মাত্রার একক হলো M0L1T0।

এর অর্থ হলো, সরণের মাত্রা নির্ভর করে:

১) সরণকারী বস্তুর ওজন (M0)

২) সরণের দূরত্ব (L1)

৩) সরণে কত সময় লেগেছে (T0)

সুতরাং, উপরের বক্তব্য ঠিক যে সরণের মাত্রার একক হলো M0L1T0।

সরণ কি রাশি :-

সরণ একটি ভেক্টর রাশি বা ক্ষেত্রফল।

সরণ হলো একটি বস্তুর স্থান পরিবর্তন। স্থান পরিবর্তন হলো একটি ভেক্টর রাশি। সুতরাং সরণকে একটি ভেক্টর হিসেবে গণ্য করা যায়।

সরণের দিক ও পরিমাণ থাকায় এটি একটি ভেক্টর রাশি। সরণকে একটি ভেক্টর s দ্বারা প্রকাশ করা যেতে পারে, যেখানে s হলো সরণ ভেক্টর।

সংক্ষেপে, সরণ হলো একটি ভেক্টর রাশি যা s দ্বারা প্রকাশ করা হয়।

সরণের সূত্র :-

সরণের সূত্র নিম্নরূপ:

s = vt

এখানে,

s = সরণ (Displacement)
v = বেগ (Velocity)
t = সময় (Time)

সরণের একক:

s - মিটার (m)

v - মিটার/সেকেন্ড (m/s)

t - সেকেন্ড (s)

সুতরাং, সরণের সূত্র:

s = vt

অর্থাৎ, সরণ = বেগ × সময়

উদাহরণ:

গাড়িটির বেগ 60 কিমি/ঘন্টা

সময় = 2 ঘন্টা

তাহলে,

s = vt

s = 60 x 2

s = 120 কিমি

সুতরাং, গাড়িটির সরণ 120 কিমি।

সরণের বৈশিষ্ট্য :-

সরণের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ:
  • - সরণ হলো একটি ভেক্টর পরিমাণ যার দিক ও পরিমাণ থাকে।
  • - সরণের একক হলো মিটার (m)।
  • - সরণ ধনাত্মক, ঋণাত্মক বা শূন্য মানের হতে পারে।
  • - সরণ সরাসরি পথ নয়, বরং বস্তুর আসল পথ।
  • - সরণ সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল।
  • - সরণের সূত্র: s = vt
  • - সরণ বেগ ও সময়ের উপর নির্ভরশীল।
  • - সরণ বলতে বোঝায় বস্তুর আসল অবস্থান পরিবর্তন।
  • - সরণ স্কালার এবং ভেক্টর উভয় রাশির মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরে।

এগুলোই সরণের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।

সরণ ও দূরত্বের মধ্যে পার্থক্য :-

সরণ ও দূরত্বের মধ্যে প্রধান পার্থক্য নিম্নরূপ:

১) দূরত্ব হলো দুইটি বিন্দুর মধ্যে সরাসরি লাইনের দৈর্ঘ্য। সরণ হলো বস্তুর আসল পথের দৈর্ঘ্য।

২) দূরত্ব স্কালার পরিমাণ, সরণ হলো ভেক্টর পরিমাণ।

৩) দূরত্ব সবসময়ই ধনাত্মক হয়, সরণ ধনাত্মক বা ঋণাত্মক হতে পারে।

৪) দুই বিন্দুর মধ্যে দূরত্ব স্থির থাকে, সরণ পরিবর্তনশীল।

৫) দূরত্বের একক হলো মিটার, আর সরণের একক হলো মিটারের সঙ্গে সেকেন্ড এবং ম্যাসের সংমিশ্রণ।

সুতরাং সরণ ও দূরত্ব দুটি পৃথক ধারণা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ