পদ ও শব্দের মধ্যে ৫ টি পার্থক্য

বাংলা ব্যাকরণে শব্দ ও পদের মধ্যে পার্থক্য করে বলা হয় পদ হলো শব্দের বিভক্তি যুক্ত চেহারা। প্রবাল দাশগুপ্তের কথায় শব্দকে শব্দ হিসেবে শব্দকোষের ভিতর দেখা যায়। আর শব্দ কোষ থেকে বেরিয়ে শব্দ যদি বাক্যে কাজ করতে আসতে চায় তাহলে সে উপযুক্ত বাইরের পোশাক পরে আসে। এই পোশাকের নাম বিভক্তি। বিভক্তি পরা শব্দকে বলে পদ।

বলাবাহুল্য, বিভক্তি-পরা শব্দ জটিল শব্দও বটে। তাই ব্যাকরণের আলোচনায় প্রায়শই শব্দ ও পদ নাম দুটি সমার্থে ব্যবহৃত হয়।

আরও পড়ুন :- শব্দ কি ও কয় প্রকার? বিভিন্ন প্রকার শব্দের সংজ্ঞা

এখন আমরা বাংলা ব্যাকরণে বহুল আলোচিত শব্দ ও পদের পার্থক্য নিয়ে আলোচনা করব।

শব্দ ও পদের পার্থক্য :-

শব্দপদ
অর্থবোধক ধ্বনি বা ধ্বনি সমষ্টির নাম শব্দ। অর্থাৎ শব্দ বিভক্তিহীন। যেমন - নীলা, এক, বাগান ইত্যাদি।বাক্যে ব্যবহৃত প্রত্যেকটি বিভক্তিযুক্ত শব্দকে পদ বলে। অর্থাৎ পদ বিভক্তিযুক্ত। যেমন - নীলার একটি বাগান আছে।
শব্দ হতে গেলে বাক্যের প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ শব্দ থাকে অভিধানে।পদ ব্যবহারের জন্য বাক্যের প্রয়োজন হয়। অর্থাৎ পদ থাকে বাক্যে।
শব্দে শূন্য ছাড়া আর কোনো বিভক্তি যুক্ত হতে পারে না। যেমন - লাল, নীল, হলুদ, আকাশ, নদী, পাখি, জল, ফুল, মূল, রঙ, ঢঙ, সঙ ইত্যাদি।
পদে যে-কোনো বিভক্তি যুক্ত হতে পারে। যেমন - ঘর (শূন্য বিভক্তিযুক্ত), ঘরে (সপ্তমী বিভক্তিযুক্ত)
সব শব্দই অর্থ প্রকাশ করতে পারে। যেমন - কেশ, কালি, ফুল, ফাল্গুন, রথ, পথ, নদী, পাখি, ঘাস, ইত্যাদি।সব পদই অর্থ প্রকাশ করতে পারে না। যেমন- মন, দেশ, ডালি (শূন্য বিভক্তিযুক্ত ও অর্থপূর্ণ) মনে, দেশের (দ্বিতীয়া বিভক্তিযুক্ত ও অর্থহীন)
শব্দের আকার অপেক্ষাকৃত ছোট।পদের আকার অপেক্ষাকৃত বড়। যেমন - লাভের, পথে।
শব্দ হল অবিধানবদ্ধ রূপ।পদ হল বাক্যবদ্ধ রূপ।
শব্দ বাক্য-বিচ্ছিন্ন ।
আর পদ বাক্যে বিন্যস্ত ভাষাবস্তু।

শব্দ ও অর্থের সম্পর্ক :-

শব্দ কোনো বস্তু বা ভাব সম্পর্কে আমাদের চেনাকে নির্দিষ্ট এবং স্পষ্ট করে। কোনা শব্দকে তার ব্যুৎপত্তি অনুযায়ী বিশ্লেষণ করলে, কোন অর্থ বোঝাবার জন্য তার উৎপত্তি তা বুঝতে পারা যায়।
শব্দ ও পদের পার্থক্য
কখনও কখনও দেখা যায় একটি শব্দ একাধিক অর্থ প্রকাশ করতে সক্ষম। যেমন—'রাগ' শব্দটি ক্রোধ অর্থে, প্রণয় অর্থে বা গানের নির্দিষ্ট স্বরসমন্বয় বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। আবার এর বিপরীত প্রক্রিয়াও লক্ষ্যণীয়।

আরও পড়ুন :- পদ কাকে বলে? কয় প্রকার? উদাহরণ দাও?

একটি বস্তু বা একটি ভাব একাধিক শব্দের দ্বারা প্রকাশিত হতে পারে। যেমন নদী বোঝাতে তটিনী, স্রোতস্বিনী, গাড় নানাধরনের শব্দ প্রযুক্ত হয়। এর থেকে একটি বিষয় আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে শব্দ ও অর্থের সম্পর্ক একেবারে জ্যাশী কোনো ব্যাপার নয়।

শব্দ সময়ে সময় পোষাক বদলের মত অর্থানুষ বদল করে। আসলে সভ্যতার বিবর্তনের অমোঘ এ নিয়মে ভাষার ধ্বনিগত গঠনের দিকটি যেমন প্রভাবিত ও পরিবর্তিত হয়েছে, সেই একই অনিবার্য কারণে অর্থের সঙ্গে শব্দের সম্পর্কসূত্রও শিথিল হয়ে উঠেছে।

কালের অগ্রগতির সাথে সাথে মানুষের জ্ঞানের সীমানা প্রসারিত হয়েছে, তার পরিচিত বস্তুজগৎ ও ভাবজগৎ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা বেড়েছে, যার ফলে অনেক সময়ই একটি শব্দ বা শব্দমূল একাধিক বস্তু বা ভাবের বোধক হয়ে দাঁড়িয়েছে যার প্রত্যক্ষ ফল—শব্দ ও তার অর্থের নির্দিষ্ট সম্পর্ক বন্ধন থেকে মুক্তি।

শব্দের অর্থ পরিবর্তনও এরই ফলশ্রুতি। মোটের উপর আমরা বলতে পারি অর্থ শব্দের এমন এক শক্তি যা পরিবর্তনশীল। সময়ের গতির সাথে সাথে, সভ্যমানুষ মনের ভাব প্রকাশ করতে চেয়ে, শব্দের এই বিশেষ শক্তিকে নানাভাবে রূপান্তরিত করেছে।

শব্দ ও পদ :-

আমরা জানি যে সাধারণত জটিল শব্দের মূল অর্থ প্রকাশক প্রধান অংশটি হল ধাতু। ধাতুর সঙ্গে প্রত্যয় যোগে শব্দ গঠিত হয়। প্রত্যয় পরাধীন রূপতল্প। ঋতুও পরাধীন রূপকল্প, কারণ শুদ্ধ ধাতুর স্বাধীন ব্যবহার বাক্যে নেই।

ধাতুর সঙ্গে প্রত্যয় যোগে শব্দ গঠিত হলেও কিছু কিছু ধাতুর সঙ্গে প্রত্যয় যোগের আগে আরেকটি রূপকল্প যোগ করে তারপর শেষে প্রত্যয়টি যোগ করতে হয়। এই ধাতু মধ্যবর্তী রূপকল্পটি মিলে তৈরি হয় প্রাতিপাদিক।


মধ্যবর্তী রূপকল্পটিকে বলা হয় বিকরণ। অর্থাৎ ধাতু + বিবরণ = প্রতিপাদিক এবং প্রাতিপাদিক + প্রত্যয় শব্দ। যেমন হরণ শব্দটিতে হু ধাতু থেকে প্রাতিপাদিক তৈরি হয়েছে হর তার সঙ্গে অনট প্রত্যয় যোগ হয়ে শব্দ হয়েছে হরণ। এখানে সবই পরাধীন রূপকল্প।

শব্দে সর্বশেষ যে প্রত্যয় যুক্ত হয়ে শব্দকে পদে পরিণত করে তাকে বিভক্তি বলে। অর্থাৎ সকল বিভক্তিই প্রত্যয়। এখানে বিভক্তি অর্থে বিভক্তি ও প্রত্যয় দুটি নামই ব্যবহার করা হয়েছে।

এবার আসি পদের কথায়। বাংলা পদ পাঁচ শ্রেণিতে বিভক্ত-

১) নাম বা বিশেষ্য
২) সর্বনাম
৩) বিশেষণ
8) ক্রিয়া ও
৫) অব্যয়।

এর মধ্যে বিভক্তি যোগে বিশেষ্য, সর্বনাম এবং ক্রিয়াপদেরই কেবল রূপবৈচিত্র্য ঘটে।

সাধারণত বিভক্তি এবং ক্রিয়া ধাতু পরাধীন রূপকল্প : বিশেষ্য ও সর্বনাম শ্রেণির শব্দ হল স্বাধীন রূপকল্প। বিশেষ্য ও সর্বনামের সঙ্গে যে বিভক্তি যোগ হয় তাকে বলে শব্দ বিভক্তি। আর ক্রিয়া বা ধাতুর সঙ্গে যে বিভক্তি যোগ হয় তাকে বলে ক্রিয়া বিভক্তি বা ধাতু বিভক্তি অর্থাৎ বিভক্তি দু রকম-

১ - শব্দ বিভক্তি ও
২ - ধাতু বা ক্রিয়া বিভক্তি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ