বক্তৃতা পদ্ধতি কি? বক্তৃতার বৈশিষ্ট্য, এর সুবিধা ও অসুবিধা?

বক্তৃতা পদ্ধতি কি :-

সনাতন পদ্ধতির মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি হলো বক্তৃতা পদ্ধতি। পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় এখনও বক্তৃতা পদ্ধতি প্রচলিত। এ পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষক কেবল নিজের আয়ত্ত করা বিষয়গুলো তার মনের মাধুরী মিশিয়ে জলয়ের শতদল বিকশিত করে শ্রেণিকক্ষে কথা বা বক্তৃতার মাধ্যমে পরিবেশন করেন। এখানে মূল বক্তা শিক্ষক নিজেই এবং শিক্ষার্থীরা শ্রোতা হিসেবে বক্তৃতা শোনে এবং লিখে নেয়।

আমাদের দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় হতে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এ পদ্ধতিতে পাঠদান চলছে। এ পদ্ধতিতে নির্ধারিত সময়ে পাঠ শেষ করার তাগিদ বেশি কাজ করে। উচ্চ শ্রেণিতে এ পদ্ধতিটি কার্যকরী হলেও নিম্ন শ্রেণিতে তা কার্যকরী নয়। কারণ শিশুরা এ পদ্ধতিতে বিষয়বস্তু সহজে আয়ত করতে পারে না।
বক্তৃতা পদ্ধতি কি

বক্তৃতা পদ্ধতির বৈশিষ্ট্য :-

  • বক্তা নিজের কন্ঠ বা বাচনভঙ্গির মাধ্যমে এ পদ্ধতির প্রয়োগ করে থাকেন।
  • পর্যাপ্ত বিজ্ঞান এবং পূর্ব প্রস্তুতি নিয়ে বক্তাকে বক্তৃতা দিতে যেতে হয়।
  • এ পদ্ধতির সার্থক প্রয়োগের জন্য বক্তার যোগ্যতা, দক্ষতা ও বিষয়বস্তু সম্পর্কে ব্যাপক জ্ঞান থাকা প্রয়োজন।
  • মূল বিষয়ের সাথে মিল রেখে উপমা, উদাহরণ ও গল্প উপস্থাপন করার সুযোগ থাকে।
  • বক্তার কন্ঠস্বর অঙ্গভঙ্গি ও প্রকাশভঙ্গিও আকর্ষণীয় হতে হয়।
  • বক্তব্য মূল বিষয়ের সাথে সামঞ্চস্যপূর্ণ হতে হয়।
  • শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণ ও মনোযোগ অক্ষুণ্ণ রাখার দিকে সতর্ক থাকতে হয়।
  • যে কোনো পদ্ধতি প্রয়োগ করতে কম-বেশি বক্তৃতা পদ্ধতির আশ্রয় নিতে হয়।

বক্তৃতা পদ্ধতির সুবিধাসমূহ :-

এ পদ্ধতিতে পাঠ উপস্থাপনের সুবিধাসমূহ নিন্মরূপ -
  • এ পদ্ধতির বাস্তবায়নে আর্থিক খরচ নেই বললেই চলে।
  • অল্প সময়ে অধিক সংখ্যক শ্রোতাদের মাঝে অনেক তথ্য পরিবেশন করা যায়।
  • শিক্ষার যে কোনো স্তরে এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়।
  • নির্ধারিত সময়ে করা যায়।
  • শ্রেণিকক্ষের বাইরেও এ পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়।
  • বিষয়বয় সহজ ও সাবলীলভাবে উপস্থাপন করা যায়।
  • অন্যান্য পদ্ধতি প্রয়োগেও বক্তৃতা পদ্ধতির প্রয়োজন।
  • শ্রোতাদের পূর্বজ্ঞান জেনে নতুন বিষয়ের উপস্থাপন করা যায়।
  • বর্ণনামূলক বিষয়ের ক্ষেত্রে বক্তৃতা পদ্ধতি খুবই উপযোগী।

বক্তৃতা পদ্ধতির অসুবিধা :-

অনেক সুবিধা থাকা সত্ত্বেও বক্তৃতা পদ্ধতির কিছু অসুবিধা রয়েছে। অসুবিধাগুলো নিম্নরূপ -
  • বক্তা সক্রিয় বা সচল থাকায় শ্রোতারা বহুলাংশে নীরব শ্রোতা হিসেবে ভূমিকা পালন করে।
  • শুধু বক্তৃতার মাধ্যমে শ্রোতার মনোযোগ ধরে রাখা যায় না।
  • শিক্ষার্থীরা শিক্ষকনির্ভর হয়ে পড়ে যা তাদের প্রকৃত বিকাশের অন্তরায়। এ পদ্ধতিতে হাতে-কলমে কাজ করার সুযোগ কম।
  • গণিত ও বিজ্ঞান বিষয়ের বিষয়বস্তু উপস্থাপনে এ পদ্ধতি উপযোগী নয়।
  • শ্রেণিতে শিক্ষার্থীদের অর্জন যাচাইয়ের সুযোগ নেই।
  • স্বতঃস্ফূর্তভাবে ও মনোযোগ সহকারে শ্রোতারা অংশগ্রহণ করতে পারে না।
  • শ্রোতার মনোযোগ বেশি সময় ধরে রাখা যায় না এবং একঘেয়েমী চলে আসে।
  • বক্তৃতা তথ্যবহুল হলে মনে রাখা কষ্টকর।
  • বক্তৃতার ফলাফল ও প্রভাব পরিমাপ করা যায় না।
  • বক্তা এবং শ্রোতার মাঝে মতামত বিনিময়ের সুযোগ কম।
  • বক্তৃতা পদ্ধতি শ্রোতাদের নয়, বক্তার জ্ঞান প্রকাশক।
  • শ্রোতাদের মুক্ত চিন্তার বিকাশ ঘটে না। এটি মনোবিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি নয়।

বক্তৃতা পদ্ধতিকে কার্যকরী করার উপায় :-

শিক্ষক / প্রশিক্ষককে পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি নিয়ে ক্লাসে আসতে হবে।
বক্তৃতার ফাঁকে মনোযোগ আকর্ষণী প্রশ্ন করতে হবে এবং উত্তরের জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে যাতে শ্রোতারা
নিঃসংকোচে তাদের মনের অস্পষ্ট বিষয় সম্পর্কে জানতে পারে।
বক্তৃতা হতে হবে সহজবোধ্য, প্রাগুল এবং সাবলীল।
পাঠসংশ্লিষ্ট আকর্ষণীয় উপকরণ ব্যবহার করতে হবে।
সর্বোপরি পূর্ব থেকে পরিকল্পনা করে পাঠের বিষয়বস্তু উপস্থাপন করতে হবে।

কিছু দুর্বলতা থাকা সত্ত্বেও এ কথা অনস্বীকার্য যে, শিক্ষাদানের সকল ক্ষেত্রেই এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হচ্ছে। সাহিত্য, ইতিহাস ইত্যাদি বিষয়ের জন্য এ পদ্ধতি বহুল ব্যবহৃত। তাই এ পদ্ধতিটি ব্যবহার করার সময় এর সমস্যা দূরীকরণ, অসুবিধা কমানো এবং সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে ওঠার প্রতি সচেতন থাকতে হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ