সমস্যা সমাধান পদ্ধতি কাকে বলে? সমস্যা সমাধান পদ্ধতির স্তর, সুবিধা ও অসুবিধা?

সমস্যা সমাধান পদ্ধতি কাকে বলে :-

সমস্যা সংকুল এ পৃথিবীতে নানাবিধ সমস্যার পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রেও আমরা বিভিন্ন সমস্যা দেখতে পাই। শেখার মূল অনুষঙ্গই হলো সমস্যা। মানুষ যখনই ঠেকে তখনই শেখে। বাংলা পাঠ উপস্থাপনের ক্ষেত্রে সমস্যা সমাধান একটি পুরাতন ও অন্যতম পদ্ধতি। শিক্ষাক্ষেত্রে এর যথেষ্ট উপযোগিতা রয়েছে। এ পদ্ধতিকে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিও বলা হয়।

কোনো সমস্যাকে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সমাধান করাই এ পদ্ধতির মূল কথা। এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীদের পূর্বজ্ঞান ও ধারনার ভিত্তিতে কোনো সমস্যা নির্বাচন করা হয়। পাঠ উপস্থাপনকালে শিক্ষক তাঁর বক্তৃতা ও আলাপ আলোচনার ফাঁকে শিক্ষার্থীদের সামনে অলক্ষ্যে সমস্যাটির অবতারণা করেন। এর সমাধান শিক্ষার্থীদের আগে থেকে জানা থাকে না। প্রত্যেক শিক্ষার্থী তার ব্যক্তিগত সামর্থ্য অনুযায়ী বিভিন্ন উপায়ে সমাধানের চেষ্টা করে।

আরও পড়ুন :-  প্রর্দশন পদ্ধতি কি?

সমস্যাটিকে সমাধানের একটি অনুকূল পরিবেশও শিক্ষক তৈরি করেন যাতে শিক্ষার্থীরা নিজেদের চেষ্টায় সমাধান করতে উদ্বুদ্ধ হয়। এ ক্ষেত্রে অবশ্য শিক্ষকের বুদ্ধি, যুক্তি, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা এবং পরিচালনা ক্ষমতার ওপর পদ্ধতির সাফল্য নির্ভর করে। শিক্ষক সুস্পষ্ট ভাষায় এবং শৃঙ্খলার সাথে সমস্যাটি শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করতে পারলেই এ পদ্ধতির দ্বারা পাঠ উপস্থাপন সত্যিকার অর্থে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।

সমস্যা সমাধান পদ্ধতিতে শিক্ষকের করণীয় :-

প্রধানত তিনটি করণীয়কে কেন্দ্র করে এ পদ্ধতি আবর্তিত। যথা:

১. সমস্যাটি শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করা।

২. নিজের জানা বিষয় শিক্ষার্থীদের জানানোর জন্য সার্বক্ষণিক প্রস্তুত থাকা।

৩. গৃহীত সমাধান মূল্যায়নে শিক্ষার্থীদের প্রেরণা যোগানো।
সমস্যা সমাধান পদ্ধতি কী

সমস্যা সমাধান পদ্ধতির স্তর বা ধাপ :-

সমস্যা সমাধান পদ্ধতিতে নিচের ধাপগুলো অনুসরণ করা হয়-

১. সমস্যা শনাক্তকরণ

২. সমস্যা বিশ্লেষণ

৩. তথ্য সংগ্রহ

৪. তথ্য গ্রহণ, বর্জন ও বিশ্লেষণ

৫. সমস্যা সমাধানের বিকল্প পন্থা উপস্থাপন

৬. প্রকল্প তৈরি (Hypothesis)/অনুমিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ

৭. প্রকল্প যাচাই

8. সমস্যা সমাধানের পন্থা নির্বাচন

৯. সিদ্ধান্ত গ্রহণ

১০. ফলাফল মূল্যায়ন

১১. ফলাফল গ্রহণ ও চূড়ান্তকরণ

আরও পড়ুন :- মূল্যায়ন পদ্ধতি কি? এর সুবিধা ও অসুবিধা?

সমস্যা সমাধান পদ্ধতির সুবিধা :-

অন্যান্য পদ্ধতির চেয়ে সমস্যা সমাধান পদ্ধতিতে সুবিধার দিকই বেশি। নিচে এ পদ্ধতির সুবিধাসমূহ উল্লেখ করা হলো-
  • মনোবিজ্ঞানসম্মত এ পদ্ধতিটি শিক্ষার্থীদের চিন্তাশীল ও সৃজনধর্মী করে তোলে।
  • শিক্ষার্থীরা বাস্তব পরিস্থিতির আলোকে সমস্যার সমাধান করে বলে শিখন দীর্ঘস্থায়ী হয়।
  • বয়ঃসন্ধিকালের নানা জটিল সমস্যাসহ ব্যক্তিগত অন্যান্য সমস্যা সমাধানে এ পদ্ধতি কাজে লাগাতে পারে।
  • শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে।
  • সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি রিপোর্ট তৈরিতে শিক্ষার্থীরা দক্ষ হয়ে ওঠে।
  • সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বাধীনতা ভোগ করে।
  • এ পদ্ধতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীর পর্যবেক্ষণ, পরীক্ষণ, পরিমাপন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
  • এ পদ্ধতিতে হাতে-কলমে শেখার সুযোগ রয়েছে। তাই পাঠ অনুশীলনে শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।
  • ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক মধুর হয়।
  • শিক্ষার্থীর স্মৃতি প্রখরতা এবং নেতৃত্ব দানের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়।
  • সমাজ জীবনে নানাবিধ সমস্যার মোকাবিলা করতে এ পদ্ধতির অভিজ্ঞতা কাজে লাগে।
  • তথ্য সংগ্রহ করতে হয় বলে শিক্ষার্থীর তথ্যভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়।
  • বিষয়ের প্রতি শিক্ষার্থীর অনুরাগ বৃদ্ধি পায়।
  • বিজ্ঞানের নীতি, তত্ত্ব ও সূত্রপ্রয়োগ অনুধাবন করতে পারে এবং বিশ্লেষণধর্মী ক্ষমতার বিকাশ ঘটে।

সমস্যা সমাধান পদ্ধতির অসুবিধা/সীমাবদ্ধতা :-

  • এ পদ্ধতিতে পাঠ উপস্থাপনে সময় বেশি লাগে, ফলে পাঠ্যসূচি শেষ করা যায় না।
  • উপকরণের অপ্রতুলতায় পাঠ্যবিষয়ের কমসংখ্যক বিষয়বস্তু এ পদ্ধতিতে উপস্থাপন করা যায়।
  • অনেক সময় বিষয়ের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা সম্ভব হয় না।
  • এ পদ্ধতিতে অনেক সময় একঘেয়েমীর সৃষ্টি হয়।
  • পূর্ব-পরিকল্পনা না থাকলে ব্যর্থতা অনিবার্য; ফলে উদ্দেশ্য অর্জন অসম্ভব হয়ে পড়ে।
  • অন্যান্য পদ্ধতির ন্যায় অধিক সংখ্যক শিক্ষার্থী সংবলিত শ্রেণিকক্ষে এর প্রয়োগ অসম্ভব।
  • মেধাবী শিক্ষার্থীর সমন্বয় না থাকলে এটির প্রয়োগ ফলপ্রসূ হয় না।

কিছু অসুবিধা থাকা সত্ত্বেও সমস্যা সমাধান পদ্ধতি একটি বাস্তবমুখী শিক্ষা পদ্ধতি হিসেবে বাংলা বিষয়ের পাঠ উপস্থাপনে যথেষ্ট কার্যকর।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ