মূল্যায়ন কাকে বলে? মূল্যায়ন কত প্রকার ও কি? মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা

মূল্যায়ন কাকে বলে :-

মূল্যায়নের ইংরেজি প্রতিশব্দ Evaluation. ব্যাপক অর্থে Evaluation is the act of planing value of something.

মূল্যায়ন শব্দের সাধারণ অর্থ মূল্য আরোপ বা মূল্য বিচার। কোনো গুণ বা বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন ব্যক্তির মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় বা তাদের অর্থপূর্ণ মূল্যমান নির্ধারণ পদ্ধতি হলো মূল্যায়ন।

মূল্যায়ন বলতে বোঝায় শিক্ষার্থীর কৃতিত্বের গুণগত ও পরিমাণগত মাত্রা নিরূপণ। শিক্ষাবিশেষজ্ঞগণ মূল্যায়নকে বিভিন্নরূপে সংজ্ঞায়িত করেন।

Gronland & Limn-এর মতে,

শিক্ষা উদ্দেশ্যের কতটুকু শিক্ষার্থীরা অর্জন করতে পেরেছে তা নির্ণয়ের সংগ্রহ, বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যার ধারাবাহিক প্রক্রিয়া হলো মূল্যায়ন।

R.N.Patel বলেন-

যে ধারাবাহিক অবিচ্ছিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পূর্বে শনাক্তকৃত ও বর্ণিত শিক্ষার সুনির্দিষ্ট উদ্দেশ্যগুলো কতটুকু অর্জিত হয়েছে, শ্রেণিকক্ষে প্রদত্ত শিখন অভিজ্ঞতা বা পাঠদান কতটুকু কার্যকর হয়েছে এবং শিক্ষার লক্ষ্য কত উত্তমভাবে অর্জিত হয়েছে তা নির্ণয় করার পন্থাকেই মূল্যায়ন বলে।

শিক্ষা মনোবিজ্ঞানীদের -

Evaluation is the systematic process of determining the extent to which educational objectives are achieved by the learners.

অর্থাৎ মূল্যায়ন বলতে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থীরা শিক্ষার লক্ষ্যের পথে কতটুকু অগ্রসর হয়েছে তাকে বোঝায়।

অধ্যাপক মনোরো মূল্যায়ন সম্পর্কে একটি ধারণা প্রদান করেন। তিনি বলেন-

মূল্যায়ন দ্বারা কোনো ব্যক্তির/শিক্ষার্থীর শুধু বিষয়বস্তুর ওজনের পরিমাপ বোঝায় না, শিক্ষার্থীর ব্যক্তিত্বের ক্রমবিকাশ এবং শিক্ষার মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী পরিমাণে অর্জিত হয়েছে সে পরিমাপও বোঝায়।
মূল্যায়ন কাকে বলে

মূল্যায়ন কত প্রকার ও কি :-

শিক্ষার্থী মূল্যায়ন দুই ধরনের

১. ধারাবাহিক মূল্যায়ন / গঠনকালীন মূল্যায়ন (Formative Assessment)

২. চূড়ান্ত মূল্যায়ন / সামষ্টিক মূল্যায়ন (Summative Assessment)

ধারাবাহিক বা গঠনকালীন মূল্যায়ন :-

পাঠ চলাকালীন শিক্ষার্থীর অগ্রগতি যাচাই করে প্রয়োজনীয় নিরাময়মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য যে মূল্যায়ন তাই ধারাবাহিক মূল্যায়ন।

পাঠ চলাকালীন শ্রেণিকক্ষে এই মূল্যায়ন হয়ে থাকে এবং চূড়ান্ত মূল্যায়নের পূর্ব পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে এই মূল্যায়ন চলতে থাকে। এই মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর সবলতা ও দুর্বলতা চিহ্নিত করে ফিডব্যাক প্রদানের মাধ্যমে তাদের চূড়ান্ত মূল্যায়নের জন্যে উপযুক্ত করে গঠন করা হয়।

এ মূল্যায়নের উদ্দেশ্য হলো ভবিষ্যৎ শিখনকে আরো বেশি কার্যকর করা। এ ধরনের মূল্যায়নকে শিখনের জন্য মূল্যায়ন বা Assessment for Learning বলা হয়। এ মূল্যায়ন শ্রেণিকক্ষে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিক হতে পারে।

আরও পড়ুন :-সমস্যা সমাধান পদ্ধতি কী?

চূড়ান্ত মূল্যায়ন বা সামষ্টিক মূল্যায়ন :-

নির্দিষ্ট সময় বা পর্যায় সমাপ্তিতে শিক্ষার্থীর অগ্রগতি যাচাই করা হলো চূড়ান্ত মূল্যায়ন বা সামষ্টিক মূল্যায়ন।

এ মূল্যায়ন দ্বারা শিক্ষার্থীদের পাস বা ফেল নির্ধারণ করা হয়ে থাকে এবং তাদের সাফল্যের তুলনামূলক অবস্থা নির্ণয় করে মেড বা সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।

এ মূল্যায়ন শেষে শিক্ষার্থীদের ভুল-ত্রুটি সংশোধন করে শিখন সহায়তা দেওয়ার কোনো সুযোগ থাকে না। তাই এ মূল্যায়নকে শিখনের মূল্যায়ন বা Assessment of Learning বলা হয়।

মূল্যায়নের প্রয়োজনীয়তা :- 

ভাষা ও সাহিত্য শিক্ষার ক্ষেত্রে মূল্যায়নের প্রয়োজন আছে। কতকগুলো নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে ভাষা ও সাহিত্য শেখানো হয়। সেই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ কতটুকু অর্জিত হয়েছে তা পরিমাপ করা হয় মূল্যায়নের মাধ্যমে। ভাষা ব্যবহারে দক্ষতা অর্জন, সাহিত্যের রসানুভুতির আস্বাদন, বিষয়বস্তুর ভাব উপলব্ধিতে সক্ষমতা অর্জন, শিক্ষার্থীদের চিন্তন, মনন, লিখন, কখন ইত্যাদি বিষয়ে উন্নতি সাধনই হচ্ছে ভাষা ও সাহিত্য শিক্ষণের মূল উদ্দেশ্য।

শিক্ষার্থীর ভাষাজ্ঞান ও সাহিত্য চেতনার উৎকর্ষ সাধন মূল্যায়ন দ্বারাই সম্ভব। শিক্ষার্থীর শিখন অগ্রগতি, সফলতা ও ব্যর্থতা যাচাই করা হয় মূল্যায়নের দ্বারা। এটি একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে ভাষার বিভিন্ন দিক ও দক্ষতাগুলো শিক্ষার্থীরা কতটুকু অর্জন করেছে- তা নির্ণয় করা যায়।

আরও পড়ুন :- ভূমিকাভিনয় পদ্ধতি কি?

কোনো শিক্ষণীয় বিষয়ে শিক্ষার্থীর অগ্রগতি, সাফল্য ও দুর্বলতা জেনে তা প্রতিবিধান বা নিরাময়ের জন্য তাকে পরামর্শ প্রদান করা মূল্যায়নের উদ্দেশ্য। এছাড়াও -

মূল্যায়নের মাধ্যমে বিভিন্ন শিক্ষার্থীর বিশেষ ধরনের সামর্থ্য ও দক্ষতা আবিষ্কার করা যায় এবং কোন ধরনের শিক্ষা বা কাজ তার জন্যে উপযোগী তা নির্ধারণ করা যায়।

মূল্যায়নের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর আগ্রহ প্রবণতা, ইচ্ছা, রুচি, চিন্তাধারা, অভ্যাস ইত্যাদি সম্পর্কে অবহিত হয়ে প্রয়োজনীয় ফিডব্যাক দেওয়া সম্ভব।

শ্রেণি অনুযায়ী শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচির উপযোগিতা যাচাই করে ভবিষৎ কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা যায়।।

উপযুক্ত মূল্যযাচাই পদ্ধতির সাহায্যে শিক্ষার্থীর মানসিক শক্তির পরিমাপ করা যায় এবং বেশি উপযোগী শিক্ষা সম্পর্কে তাকে নির্দেশনা দেওয়া সম্ভব হয়।

শিক্ষার্থী সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে মূল্যায়ন সহায়তা করে।

শিক্ষার্থীর দৈহিক, মানসিক, আবেগিক ও ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যগুলো পরিমাপ করা যায় মূল্যায়নের মাধ্যমে।

মূল্যায়ন কোনো বিষয়ের তুলনামূলক ব্যাখ্যা করে।

কোনো সমস্যার বিজ্ঞানসম্মত সমাধান দেয় মূল্যায়ন।

ভাষা শেখায় মূল্যায়ন একটি ধারাবাহিক ও অবিরত প্রক্রিয়া। ধারাবাহিক ও চূড়ান্ত উভয় প্রকার মূল্যায়নই ভাষা শেখায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং শিখন অগ্রগতি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করে। তাই সামষ্টিকভাবে বলা যায়, 
  • মূল্যায়ন শিক্ষার্থীর গঠনকালীন অগ্রগতি যাচাই করে,
  • নির্দিষ্ট সময় শেষে শিক্ষার্থীর অগ্রগতি যাচাই করে,
  • গঠনকালে প্রয়োজনীয় নিরাময়মূলক ব্যবস্থা গ্রহণে সহায়ক,
  • সবল ও দুর্বল শিক্ষার্থী চিহ্নিতকরণে সহায়ক,
  • শিক্ষকের মানসম্মত পাঠদান নিশ্চিতকরণে কার্যকর,
  • পরবর্তী ধাপের জন্য পথপ্রদর্শক,
  • শিখনফল অর্জনের উপায়,
  • মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের গ্রেড নির্ধারণের উপায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ