ভূমিকাভিনয় কি? ভূমিকাভিনয়ের বৈশিষ্ট্য? এর সুবিধা ও অসুবিধা?

ভূমিকাভিনয় কি :-

আধুনিক অংশগ্রহণমূলক পদ্ধতির মধ্যে ভূমিকাভিনয় ও মাথা খাটানো পদ্ধতি দুটি শিখনবাজন এবং জনপ্রিয় পদ্ধতি।

শ্রেণিকক্ষে পাঠ্য বিষয়বস্তু আকর্ষণীয় করার জন্য অভিনয়ের মাধ্যমে উপস্থাপন করা হলে তাকে ভূমিকাভিনয় বলা হয়।

বাংলা সাহিত্যের অনেক বিষয়বস্তু উপস্থাপনে বিশেষ করে নাটকের পাঠ উপস্থাপনে ভূমিকাভিনয় ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। ভূমিকাভিনয়ের মাধ্যমে সার্থকভাবে সাহিত্যের পাঠ উপস্থাপন করা যায়। ভূমিকাভিনয়ের মাধ্যমে বিষয়বস্তু উপস্থাপিত হলে শিক্ষার্থীরা আনন্দের সাথে তা উপভোগ করে এবং শিক্ষা গ্রহণে আন্তরিক হয়।

আরও পড়ুন :- যোগ্যতা কাকে বলে?

ভূমিকাভিনয়ের বৈশিষ্ট্য :-

  • পাঠপূর্ণ অনুষঙ্গ হলো অভিনয়। এ পদ্ধতিতে বিষয়বস্তুর ধারাবাহিকতা বজায় রেখে অভিনয়ের মাধ্যমে তা শিক্ষার্থীদের সামনে উপস্থাপন করা হয়।
  • শিক্ষণীয় বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীর সামনে জীবন্ত হয়ে ওঠে।
  • বাংলা সাহিত্যের পাশাপাশি নিজের দেশ ও বিশ্বপরিচয়, ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়ের জন্য ভূমিকাভিনয় বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
  • প্রয়োজনীয় বিষয়ের রূপরেখা প্রণয়ন, অনুশীলন, অবস্থা ও পরিবেশ সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকতে হয়।
  • ব্যক্তি যে বিষয়ে অভিনয় করবেন সে বিষয় চরিত্র ও বিষয়বস্তু সম্পর্কে ধারণা থাকা জরুরি।
  • ভূমিকাভিনয়ে পাঠ সংশ্লিষ্ট সকল উপাদানের সমন্বয় সাধন করতে হয়।
  • আচরণ সম্পর্কে সচেতন থাকতে হয়।
  • সময়সূচি পূর্বেই ঠিক করে নিতে হয়।
  • দর্শকদের মতামত ও ফলাবর্তন নিতে হয়।
  • ভূমিকাভিনয়কে কার্যকর করতে অভিনীত অংশ ভিডিও ক্যামেরায় ধারণ করে দলীয় এবং একক ফলাবর্তন নেওয়া যেতে পারে।
  • মূর্ত এবং বিমূর্ত বিষয়কে মাঝে মাঝে জীবন্ত এবং দুর্বোধ্য বিষয়কে সহজবোধ্য করার ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়।
  • এতে সৃজনশীলতা ও শিল্পনৈপুণ্য আবশ্যক।
ভূমিকাভিনয় কি

ভূমিকাভিনয় পদ্ধতির সুবিধা :-

  • ঘটনা বা বিষয়বস্তু জীবন্ত করে শিক্ষার্থীদের অবগত করানো হয় বলে শিখন দ্রুত হয়।
  • খুব বেশি উপকরণ প্রয়োজন হয় না বিধায় এ পদ্ধতি সাশ্রয়ী।
  • সহজবোধ্য করে পাঠ উপস্থাপিত হওয়ার কারণে অনেক দিন পর্যন্ত মনে থাকে।
  • শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটে।
  • এ পদ্ধতির বাস্তবধর্মিতা শিক্ষার্থীদের প্রচুর আনন্দ দেয় এবং কর্মানুরাগী করে তোলে।
  • এ পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা সক্রিয় ও জড়তামুক্ত হয়।
  • শিক্ষার্থীরা ভাষা দক্ষতা (শোনা ও বলা দক্ষতা) আয়ত্ত করতে পারে।
  • দলগতভাবে অভিনয় করতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিকতা এবং পারস্পরিক সহযোগিতার মনোভাব বৃদ্ধি পায়।

ভূমিকাভিনয় পদ্ধতির অসুবিধা :-

  • দক্ষ ও অভিজ্ঞ না হলে এ পদ্ধতির পরিকল্পনা করা সম্ভব নয়।
  • এ পদ্ধতির প্রয়োগে যথেষ্ট সময়ের প্রয়োজন যা সীমিত সময়ের পিরিয়ডে অভিনয় যথার্থ না হলে পদ্ধতি প্রয়োগের উদ্দেশ্য বিফল হয়।
  • অভিনয় পাঠসংশ্লিষ্ট না হলে পুরো সময়টাই বৃথা নষ্ট হয়।
  • শিক্ষণীয় বিষয়ের পরিবর্তে পাঠ অনেক সময় নিছক বিনোদনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
  • অভিনয় অনেক সময় অতিরঞ্জনের পর্যায়ে চলে গেলে উদ্দেশ্য অর্জন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
  • সব বিষয়ের ক্ষেত্রে এ পদ্ধতি সমানভাবে কার্যকর নয়।

শিখন শিখানো কার্যক্রমে অনেক পুরনো পদ্ধতি হলেও বাস্তবে এর ব্যবহার অত্যন্ত সীমিত। সাহিত্য, ইতিহাস, দেশ ও বিশ্বপরিচয়-এর মতো কিছু বিষয়ের ক্ষেত্রে কেবল এ পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। প্রশিক্ষিত ও দক্ষ শিক্ষক দ্বারা এ পদ্ধতি প্রয়োগ করতে পারলে অনেক সুফল পাওয়া যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ