পণ্যের জীবনচক্র কাকে বলে? পণ্যের জীবন চক্রের স্তর কয়টি?

কোনো প্রতিষ্ঠান একটি নতুন পণ্য বাজারে ছাড়ার পর স্বভাবতই আশা করে যে পণ্যটির বিক্রয়ের পরিমাণ উত্তরোত্তর এবং বহুদিন যাবৎ এটি বাজারে টিকে থাকবে।

তবে কোনো পণ্যই চিরকাল একইভাবে বাজার দখল করে রাখতে পারে না। বিভিন্ন কারণে পণ্যের জীবনে উত্থান পতন ঘটে থাকে। অর্থাৎ প্রত্যেক পণ্যেরই একটি জীবনচক্র রয়েছে।

উদ্ভিদ এবং প্রাণির ক্ষেত্রে আমরা যেমন জন্ম, বৃদ্ধি এবং শেষ পরিণতি দেখতে পাই ঠিক তেমনি পণ্যের ক্ষেত্রেও জন্ম, বৃদ্ধি, পরিণতির এ গতিধারা দেখতে পাওয়া যায়।

পণ্যের জীবনচক্র কাকে বলে :-

একটি পণ্যের জীবদ্দশায় তাকে যেসব পর্যায় বা ধাপ অতিক্রম করতে হয় যে পর্যায়গুলোকে পণ্যের জীবনচক্র বলে।

এ প্রসঙ্গে দুটি গুরুত্বপূর্ণ উক্তি নিম্নে উদ্ধৃত হলো।

পণ্যের জীবন চক্র কি এ সম্পর্কে ফিলিপ কটলার (Philip Kotler) বলেন, “পণ্য বিক্রয় কার্যক্রমের বিভিন্ন স্তর চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়াকে একটি পণ্যের জীবনচক্র বলা হয়।"

আরও পড়ুন:- নিয়ন্ত্রণ কাকে বলে?

ম্যাকার্থি (McCarthy) এর মতানুযায়ী, “পণ্যের জীবনচক্র হলো কতকগুলো পর্যায় যা একটি নতুন পণ্যের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অতিক্রম করে।"

পণ্যের জীবনচক্র কাকে বলে? এ সম্পর্কে পরিশেষে আমরা বলতে পারি, একটি পণ্যকে উৎপাদনের পর থেকে আরম্ভ করে সম্পূর্ণ বিলীন হয়ে যাওয়া পর্যন্ত যেসব পর্যায়ের মধ্য দিয়ে ধাপে ধাপে অগ্রসর হতে হয় তাকে পণ্যের জীবন চক্র বলা হয়।

তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে এ ধাপগুলো কী? আসুন জেনে নিই এ ধাপগুলো সম্পর্কে।
পণ্যের জীবনচক্র কাকে বলে

পণ্যের জীবনচক্রের পর্যায়সমূহ :-

একটি পণ্যের জীবদ্দশায় একে যেসব পর্যায় বা ধাপ অতিক্রম করতে হয় সেই পর্যায়গুলোকে পণ্যের জীবনচক্র বলে।

পণ্যের জীবনচক্রকে পাঁচটি পর্যায়ে ভাগ করা যায়। পণ্যের জীবন চক্রের বিভিন্ন পর্যায়গুলো নিয়ে আলোচিত হলো:

১. পণ্য উন্নয়ন (Product development) :-

কোনো কোম্পানি যখন নতুন পণ্য ধারণা খুঁজে পায় এবং উন্নয়ন শুরু হয় তখন এ স্তরকে পণ্য উন্নয়ন স্তর বলে। এ পর্যায়ে বিক্রয়ের পরিমাণ শুণ্য থাকে এবং কোম্পানির বিনিয়োগ ব্যয় অধিক হয়।

২. প্রবর্তন (Introduction) :-

এ পর্যায়ে পণ্যকে সম্ভাব্য গ্রহকদের নিকট পরিচিত করানের জন্য প্রচারমূলক কার্য চালানো হয়। এ পর্যায়ে বিক্রয়ের পরিমাণ তেমন বেশি হয় না এবং প্রায় ক্ষেত্রে মুনাফাও অর্জিত হয় অতি সামান্য অনেক ক্ষেত্রে মুনাফা একেবারেই হয় না।

পণ্য প্রবর্তনজনিত বহুল খরচ এবং গ্রাহকের সংখ্যার অপ্রতুলতা মুনাফা না হওয়ার প্রধান কারণ। ভবিষ্যতে মুনাফার আশায় এ পর্যায়ে পণ্যের পেছনে বিস্তর টাকা-পয়সা খরচ করা হয়।

আরও পড়ুন:- বাণিজ্য কাকে বলে?

৩. প্রবৃদ্ধি (Growth) :-

পণ্যের জীবনচক্রের দ্বিতীয় পর্যায়ে পণ্যের বিক্রয় বাড়ে, গ্রাহকের মধ্যে পণ্যের কদর বৃদ্ধি পায়। ফলে মুনাফার পরিমাণও বাড়তে থাকে। ৫টি পর্যায়ের প্রতি লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, প্রবৃদ্ধির পর্যায়ে বিক্রয়ের পরিমাণ দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সেই গতিতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে।

পণ্যের চলমান জীবনের এ পর্যায়ে প্রতিযোগীরা উন্নতমানের কিংবা কম ব্যয়ের পণ্য নিয়ে বাজারে প্রবেশ করতে থাকে। কোম্পানির জন্য সর্বোচ্চ মুনাফার এটাই মুখ্য সময়, তবে প্রতিযোগিতার দরুন এটা মুনাফার অধোগতি শুরুরও সময়।

8. পূর্ণতা (Maturity) :-

এ পর্যায়ে প্রতিযোগিতা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে-ফলে বিক্রয়ের পরিমাণ সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌছেই আবার নিম্নমুখী হতে থাকে এবং তার সাথে মুনাফা রেখাও নিম্নগামী হয়। এ অবস্থায় প্রচারের পেছনে প্রচুর খরচ করতে হয় যাতে পণ্যকে প্রতিযোগিতার মুখে টিকিয়ে রাখা যায়।

আরও পড়ুন:- আমদানি কাকে বলে?

৫. বিক্রয় অবনতি (Sales decline) :-

পণ্যের জীবনচক্রের এটি শেষ ধাপ। এ পর্যায়ে বিক্রয়ের পরিমাণ আরও হ্রাস পেতে থাকে। ফলে শেষ পর্যন্ত মুনাফা অর্জন করা আর সম্ভব হয়ে ওঠে না। যদি পণ্যটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষাপটে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়া না হয়, তাহলে পণ্যটির পঞ্চত্বপ্রাপ্তি (মৃত্যু) ঘটে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ