বাণিজ্য কী বা কাকে বলে? বাণিজ্য কত প্রকার? বাণিজ্যের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা?

বিভিন্ন প্রকার পণ্যদ্রব্য উৎপাদিত হয়। কিন্তু পণ্য উৎপাদিত হলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যায় না। উৎপাদিত পণ্য যতক্ষণ না ব্যবহারকারী বা ভোক্তার হাতে পৌঁছাবে ততক্ষণ পর্যন্ত সেই পণ্য কোনো কাজে লাগবে না। ফলে শিল্পের অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়বে।

শিল্পকে এ বিপন্ন অবস্থা থেকে উদ্ধার করার জন্য উদ্ভব হয়েছে বাণিজ্যের। বাণিজ্য শিল্প কারখানা অর্থাৎ উৎপাদকের নিকট থেকে উৎপাদিত পদ্যসামগ্রী ব্যবহারকারী বা ভোক্তার নিকট পৌঁছিয়ে দেওয়ার কাজে নিয়োজিত থাকে।
এ জন্যই বলা হয় যে, বাণিজ্য হলো এমন কতিপয় প্রক্রিয়ার (বা কার্যাবলির) সমষ্টি যা পণ্য বিনিময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট। এখন প্রশ্ন হলো বানিজ্য কাকে বলে? এ সম্পর্কে জানা।

বাণিজ্য কী বা কাকে বলে :-

বাণিজ্য ব্যবসায়ের একটি প্রধান শাখা। পণ্যদ্রব্য বিনিময়ের সাথে বাণিজ্য পুরোপুরি সম্পর্কিত। শিল্পে বিভিন্ন প্রকার পণ্যদ্রব্য উৎপাদিত হয়। বাণিজ্য শিল্প কারখানা অর্থাৎ উৎপাদকের নিকট থেকে পণ্যসামগ্রী ব্যবহারকারী বা ভোক্তার নিকট পৌঁছে দেবার গুরুত্বপূর্ণ কাজটি করে থাকে।

সুতরাং পণ্য বিশিষয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট কার্য প্রক্রিয়াই হচ্ছে বাণিজ্য। সর্ব প্রকার পণ্যসামগ্রী জনগণের নিকট পৌঁছে দেওয়ার পদ্ধতিই হলো বাণিজ্য। বাণিজ্যকে পণ্যসামগ্রীর বিনিময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট কার্যাবলির সমষ্টি হিসেবেও অভিহিত করা যায়।

বাণিজ্য সম্পর্কে বিভিন্ন গ্রন্থকার বিভিন্ন প্রকার বাণিজ্যের সংজ্ঞা দিয়েছেন। এখানে আমরা যুগোপযোগী দুটি সংজ্ঞা তুলে ধরলাম।
বাণিজ্য কী বা কাকে বলে
বানিজ্য কী এ সম্পর্কে জেমস স্টিফেনসন (James stephenson) বলেন - পণ্য বিনিময়কালে উদ্ভুত ব্যক্তিগত, স্থানগত, ঝুঁকিগত, সময়গত ও অর্থগত প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য যে সব প্রক্রিয়া জড়িত সেগুলো সামগ্রিকভাবে বানিজ্য নামে পরিচিত।

এম. সি. (M.C Shukla) বানিজ্য কী এসম্পর্কে বলেছেন - ঐসব কাজ যা শুদামজাতকরণ শ্রেবিদ্ধ করন, মোড়কীকরণ, অর্থসংস্থান, বিমাকরণ, পরিবহণ ইত্যাদি সুবিধা প্রদান করে পণ্য বিনিময়ে সাহায্য করে।

গ্রন্থকারদ্বয়ের সংজ্ঞা দুটির আলোকে এবং উপরিউক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে আমরা বলতে পারি, বাণিজ্য এমন কতিপয় প্রক্রিয়ার সমষ্টি যা পণ্য বিনিময়কালে সৃষ্ট বিভিন্ন বাধাসমূহ দূরীভূত করে এবং পণ্যসামগ্রী উৎপাদকের নিকট থেকে ব্যবহারকারীর নিকট পৌঁছে দেয়।

আরও পড়ুন :- ব্যবসায় কাকে বলে?

বানিজ্য কত প্রকার ও কি কি :-

উৎপাদিত পণ্যদ্রব্য বা সেবাসামগ্রী উৎপাদকের নিকট থেকে ভোক্তার নিকট পৌঁছাবার যাবতীয় কার্যাবলিই বাণিতা। বাণিজ্যের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দূর করার জন্য ট্রেড, পরিবহন, গুদামজাতকরণ, বিমা, ব্যাংক ও বিজ্ঞাপনের সাহায্য নেয়া হয়। এগুলোকে বাণিজ্যের বিভিন্ন শাখা বা প্রকারভেদ হিসেবে অভিহিত করা হয়ে থাকে। নিম্নের বর্ণনায় এগুলো তুলে ধরা হলো।
বাণিজ্য কতপ্রকার ও কি কি

১. পণ্য বিনিময় বা ট্রেড (Trade) :-

বাণিজ্যের প্রধান শাখা হচ্ছে ট্রেড বা পণ্য বিনিময়। পণ্য বণ্টনের ক্ষেত্রে উৎপাদনকারী ও ভোগকারীর মধ্যে ব্যক্তি সংক্রান্ত বাধা অপসারণ করাই এর প্রধান কাজ। পণ্য বিনিময় বা ট্রেড আবার দুইপ্রকার-

i) অভ্যন্তরীণ বাপিষ্ঠ্য (Home trade) :-

দেশের অভ্যন্তরে সংঘটিত ক্রয় বিক্রয় কার্যকে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য বলে। এটি আবার দুভাবে সংঘটিত হয় -

(ক) পাইকারি ব্যবসায় (Wholesale trade) :-

এ ক্ষেত্রে উৎপাদনকারীর নিকট থেকে অধিক পরিমাণ পণ্য ক্রয় করে তা পুচরা ব্যবসায়ীর নিকট বিক্রয় করা হয়।

(খ) খুচরা ব্যবসায় (Retail trade) :-

যখন সরাসরি অল্প পরিমাণ পণ্য ভোক্তার নিকট বিক্রয় করা হয় তখন তাকে খুচরা ব্যবসায় বলে।

ii) বৈদেশিক বাণিজ্য (Foreign trade) :-

দুটি দেশের মধ্যে সম্পাদিত বাণিজ্যিক কার্যক্রমকে বৈদেশিক বাণিজ্য বলে। এ ধরনের বাণিজ্য আবার তিন প্রকার

(ক) আমদানি বাণিজ্য ( Import trade) :-

দেশের চাহিদা পূরণের জন্য যখন অন্য কোন দেশ থেকে পণ্য জন্য করা হয় তখন তাকে আমদানি বাণিজ্য বলে।

(খ) রপ্তানি বাণিজ্য (Export trade) :-

কোনো দেশ অন্য দেশে পণ্য সামগ্রী বিক্রয় করলে এ বিক্রয় কার্যই রপ্তানি বাণিজ্য।

(গ) পুনঃরপ্তানি বাণিজ্য (Re-export trade) :-

পণ্য সামগ্রী বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করার পর তা ভিন্ন কোনো দেশে রপ্তানি করা হলে তাকে পুনঃরপ্তানি বাণিজ্য বলে।

২. বিমা (Insurance) :-

পণ্য বিনিময়ের ক্ষেত্রে বিমা ঝুঁকিগত প্রতিবন্ধকতা দূর করে। মানুষের সৃষ্ট কিংবা দৈব দুর্বিপাকের কারণে পণ্যদ্রব্যের যে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বিমা ব্যবস্থা তা দূরীভূত করে।

বিমা এমন একটি ব্যবস্থা যার মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা দুর্ঘটনার জন্য (যেমন- অগ্নিকাধ, নৌ-দুর্ঘটনা, চুরি ডাকাতি ইত্যাদি) বিমা কোম্পানি থেকে চুক্তি অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ পায়।

আরও পড়ুন :- শিল্প কাকে বলে?

৩. গুদামজাতকরণ (Warehousing) :-

গুদামজাতকরণ পণ্যের সময়গত প্রতিবন্ধকতা নিরান করে। ভবিষ্যত প্রয়োজনের সময় পণ্যের ব্যবহার নিশ্চিত করা এবং পণ্যের গুনগত উৎকর্ষতা বজায় রাখা কিংবা বিনষ্টের হাত থেকে পণ্য রক্ষা করার নিমিত্তে গুদাম ঘরে পণ্যদ্রব্যকে সংরক্ষণ করে রাখা হয়।

৪. পরিবহন (Transportation) :-

পরিবহন ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে স্থানগত প্রতিবন্ধকতা অপসারিত হয়। উৎপাদকের নিকট থেকে ভোক্তার নিকট পণ্যদ্রবা পৌঁছানোর জন্য কেবল ব্যবসায়ীর উপস্থিতিই যথেষ্ট নয়। এ ক্ষেত্রে উৎপাদক ও ভোক্তার মধ্যে পরিবহন ব্যবস্থার মাধ্যমেই সংযোগ রক্ষা করার দরকার হয়। পরিবহন পণ্যের এ স্থানগত উপযোগ দূর করে।

৫. ব্যাংকিং (Banking) :-

ব্যাংক পণ্য বণ্টনের ক্ষেত্রে অর্থগত প্রতিবন্ধকতা দূর করে। ব্যবসার চালানোর জন্য প্রচুর মূলধন প্রয়োজন হয়। ব্যাংক ব্যবসায়ীদেরকে ঋণ প্রদান করে। ফলে ব্যবসায়ীর আর্থিক সংকট দূর হয়। ব্যাংকিং ব্যবস্থার ফলে ব্যাবসা-বাণিজ্যের আর্থিক প্রতিবন্ধকতা অপসারিত হয়। অর্থ সংস্থান করে ব্যাংক আর্থিক সমস্যার সুরাহা করে।

৬. বিজ্ঞাপন ( Advertising) :-

বিজ্ঞাপন প্রচার সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা অপসারণ করে। বিজ্ঞাপন পণ্য সংক্রান্ত খবরাদি ক্রেতার গোচরে আনয়ন করে পণ্যের বাজার সম্প্রসারণ করার প্রয়াস পায়। তাই দেখা যায়, বিজ্ঞাপন ব্যবস্থার প্রচলনের মাধ্যমে পণ্যের প্রচার সংক্রান্ত অসুবিধা দূরীভূত হয়েছে।

বাণিজ্যের পরিধি বা আওতা :-

উৎপাদক ও ভোক্তা যা ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে যোগাযোগ গড়ে তোলার জন্য কতিপয়া অনুষঙ্গিক কার্যাবলি সম্পাদন করতে হয়। এরূপ কার্যাবলির সবগুলোই বাণিজ্যের আওতাভুক্ত।

এককালে বাণিজ্যের পরিধি সীমিত ছিল। সভ্যতার ঊষালগ্নে বাণিজ্য শুধু পণ্য হাত বদলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকত। কিন্তু সভ্যতার অগ্রপতির সঙ্গে সঙ্গে উৎপাদনমূলক কার্যাবলির জটিলতা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে তেমনি এর সাথে সাথে বাণিজ্যের আওতাও সম্প্রসারিত হয়েছে।

এখন বাণিজ্য শুধু পণ্য লেনদেনের মধ্যেই সীমিত নয়-এর আওতা আরও বহুদূর বিস্তৃত। কী কী বিষয় বর্তমানে বাণিজ্যের আওতাভুক্ত তা এক এক করে নিম্নে বর্ণনা করা হলো:

১. শিল্পে উৎপাদন শুরু হওয়ার পূর্বে প্রয়োজনীয় মালামাল সরবরাহ করা।

২. শিল্পে উৎপাদিত পণ্যদ্রব্য ক্রেতার নিকট পৌঁছিয়ে দেওয়া।

৩: ক্রেতার নিকট পণ্য বণ্টনকালে বিভিন্ন প্রকার উপযোগিতা সৃষ্টি করা।

৪. পণ্যের বণ্টনে সহায়তাকারী বিভিন্ন মুনাফা অর্জনমূলক কার্যাবলি যথা-ব্যবসায় পরিবহন, গুদামজাতকরণ, বিমা, ব্যাংকিং ইত্যাদি।

৫. কারবারের লক্ষ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে আরও কতিপয় কার্যাবলি সম্পাদন করতে হয়; যথা-বিজ্ঞয়িকতা ও বিজ্ঞাপন, পণ্যের মান-নির্ধারণ ইত্যাদি। এগুলোও বাণিজ্যের আওতাভুক্ত।

৬. বাণিজ্য, পণ্যের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের মাধ্যমে বাজারে মূল্যের ভারসাম্য বজায় রেখে জনকল্যাণ সাধন করে। তাই এভাবে জনকল্যাণ সাধনও বাণিজ্যের আওতাভুক্ত।

বাণিজ্যের আওতা বর্তমান যুগে শুধু দেশের সীমানার মধ্যেই আবদ্ধ নয়। এর পরিধি আন্তর্জাতিক সীমানা অতিক্রম করে সাগর-মহাসাগর পেরিয়ে আরও দূরদূরান্তে ছড়িয়ে পড়েছে। বাণিজ্য আজ বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে বিনা-সূতির মালায় আবদ্ধ করে একসূত্রে গ্রথিত করে বিশ্ব ভ্রাতৃত্বে এর নব-দিগন্তের উন্মোচন করেছে।

আরও পড়ুন:- আমদানি কাকে বলে?

বাণিজ্যের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা :-

বাণিজ্য মানব দেহের শোণিত ধারার মত অর্থনীতির রুগ্ন দেহে প্রাণ সঞ্চার করে। পণ্য দ্রব্যের বণ্টন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, পণ্যের উৎকর্ষ সাধন, উৎপাদন ও ভোগের সমন্বয় সাধন ইত্যাদির মাধ্যমে বাণিজ্য একটি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নিম্নের আলোচনা থেকে বিষয়টি সহজেই স্পষ্ট হয়ে ওঠবে।

১. পণ্য ক্রয় এবং বিক্রয় (Buying and selling of goods) :-

উৎপাদন স্থান থেকে পণ্যদ্রব্য রপ্তানি করে ভোগের স্থানে পৌঁছে দিয়ে বাণিজ্য মানুষের প্রভূত কল্যাণ সাধন করে। বাণিজ্যিক কার্যে নিয়োজিত ব্যক্তিরা এক স্থান থেকে পণ্য জন্য করে অন্যস্থানে সেগুলো বিক্রয়ের ব্যবস্থা করে এবং এভাবে পণ্যের লেনদেনে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

২. অর্থের প্রচলনে সহায়তা (Helping to introduce money) :-

বাণিজ্য আধুনিকরূপে প্রকাশিত হয়েই সরাসরি পণ্য বিনিময় ব্যবস্থা অপসারণ করে অর্থের মাধ্যমে সেদেনের সুযোগ সৃষ্টি করছে। বাণিজ্যের উদ্ভব না হলে অর্থের ব্যবহার সীমিত হতে বাধ্য হতো।

৩. শিল্পোৎপাদন সহায়তা (Helping in industrial production) :-

বাণিজ্য দুভাবে শিল্পের উৎপাদন কার্যে সাহায্য করে। প্রথমত, প্রয়োজনীয় কাঁচামাল, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি সরবরাহ করে শিল্পের উৎপাদন কার্য অব্যাহত রাখে। দ্বিতীয়ত, শিল্পে প্রস্তুত পণ্যসামগ্রী ভোক্তাদের নিকট বিক্রয় করে এসব পণ্য বিক্রয়ের অসুবিধা দূর করে।

৪. পণ্য বিনিময়ে প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণ (To remove hindrance in exchange of commodities) :-

পন্য বিনিময় কালে বিভিন্ন প্রকার সমস্যা (যেমন- সময়গত, ঝুঁকিগত, স্থানগত ইত্যাদি) দেখা দিতে পারে। বাণিজ্য যথোপযুক্ত উপায়ে এসব সমস্যা দুরীভূত করে ব্যবসায়িক কার্যাবলিতে গতিময়তার সৃষ্টি করে।

৫. পণ্যের উৎকর্ষ বৃদ্ধি (Developing quality of goods) :-

বাণিজ্য বিভিন্ন ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে পণ্যের উৎকর্ষ বা শুণগত মান বৃদ্ধির প্রয়াস পায়। মান নির্ধারণ, পর্যায়িতকরণ, মোড়কীকরণ, ব্যান্ড নির্ধারণ ইত্যাদি বাণিজ্যিক কার্যকলাপ পণ্যের মান বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

৬. বাজার সম্প্রসারণ (Expansion of market) :-

বাণিজ্য দেশে ভেতরে এবং বাহিরে চাহিদা বৃদ্ধি করে এবং একই সাথে প্রয়োজনানুসারে পণ্য যোগান দিয়ে শিল্পজাত পণ্যের বাজারের পরিধি বিস্তৃত করে। বিক্ৰয়িকতা ও বিজ্ঞাপন এক ধরনের বাণিজ্যিক কার্যকলাপ। এ দুটি ক্রিয়াকলাপের মাধ্যমে বাজারে চাহিদা সৃষ্টি করা হয়।

৭. উৎপাদন ও ভোগের সমন্বয় সাধন (Coordination between production and consumption) :-

চাহিদা অনুসারে পণ্য উৎপাদন করার লক্ষ্যে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানসমূহ উৎপাদকের নিকট ভোক্তার রুচি সম্পর্কিত তথ্যাদি সরবরাহ করে। ফলে উৎপাদকের পক্ষে ভোক্তার আকাঙ্ক্ষা ও চাহিদা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন করা সম্ভব হয়। এভাবে বাণিজ্যের মাধ্যমে পণ্যের উৎপাদন ও ভোগের মধ্যে সমন্বয় সাধিত হয়।

৮. কর্মসংস্থান (Employment) :-

বাণিজ্যে বহুবিধ কার্য সম্পাদন করার প্রয়োজন হয় এবং এসব কার্য সুষ্ঠুভাবে প্রতিপালন করার জন্য অসংখ্য লোক নিয়োজিত। এতে কমর্কসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পায় এবং দেশের লোকজনের আয়ও বৃদ্ধি পায়। আর আয় বৃদ্ধি নিঃসন্দেহে জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির সহায়ক।

৯. ব্যবসায়ে গতির সঞ্চার (Speeding up business) :-

বাণিজ্য মুনাফা অর্জনের পথ প্রশস্ততার করে। ফলে ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যে আরও বেশি পরিমাণে পুঁজি বিনিয়োগে উৎসাহিত হয়। বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার দরুন বাণিজ্যিক কার্যাবলিতে অধিকতর তৎপরতা ও গতি সঞ্চার হয়।

১০. চাহিদার পরিপুরণ (Fulfilment of demand) :-

বাণিজ্য উৎপাদকের নিকট থেকে ভোক্তার নিকট পণ্য পৌঁছে দিয়ে ভোক্তার ভোগ চাহিদার পরিতৃপ্তি সাধন করে। বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার দরুন বাণিজ্যিক কার্যাবলিতে অধিকতর তৎপরতা ও গতি সঞ্চার হয়।

১১. আয় বৃদ্ধি (Increase of income) :-

বাণিজ্য একদিকে যেমন মুনাফা অর্জনের মাধ্যমে ব্যবসায়ীর আয় বৃদ্ধি করে অন্যদিকে বহু লোকের কর্মের সুযোগ সৃষ্টি করে তাদের জীবিকা নির্বাহের ব্যবস্থা করে। আয় বৃদ্ধি পাওয়ার দরুন জনগণের সুখ সমৃদ্ধিও বৃদ্ধি পায়।

১২. বিশ্ব আর্থনীতির সমৃদ্ধি সাধন (Growth in world economy) :-

বাণ্যিজ্য দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশের অর্থনীতিকেও প্রভাবিত করছে। ফলে উদ্ভব হয়েছে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের দরুন বিশ্ব অর্থনীতি দিন দিন সমৃদ্ধতর হচ্ছে।

১৩. আন্তর্জাতিক সম্পর্কের উন্নয়ন (Developing international relation) :-

আস্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রচলিত হওয়ার পূর্বে বিভিন্ন দেশ প্রায় বিচ্ছিন্নভাবে অবস্থান করত। কিন্তু বাণিজ্যের সম্প্রসারণশীল হস্ত পৃথিবীকে অনেক কাছে টেনেছে এবং আন্তজাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রেও এক যাগান্তকারী পরিবর্তন সাধন করেছে

১৫. অর্থনৈতিক উন্নয়ন (Eeonomic development) :-

জনগণের আয় বৃদ্ধি, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, পণ্যের স্থানান্তর, চাহিদা ও সরবরাহের সমস্বয় সাধন, চাহিদার পরিতৃ্তি সাধন ইত্যাদির মাধ্যমে বাণিজ্য দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা পালন করে।

বস্তুত, বাণিজ্য যে কোনাে দেশের অর্থনীতির সর্বাঙ্গে সঞ্জীবনী শক্তির সৃষ্টি করে। ব্যবসায়ের সকল প্রতিবন্ধকতা নিরসন করে পণ্য ব্যবহারকারী বা ভােক্তার চাহিদে পুরণে বাণিজ্য এক অত্যাবশ্যকীয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।

বাণিজ্যের প্রতিবন্ধকতা বা সমস্যাসমূহ :-

পণ্যদ্রব্য উৎপাদকের নিকট থেকে ভোক্তার নিকট প্রেরণকালে বিভিন্ন প্রকার প্রতিবন্ধকতার বা বাধার সৃষ্টি হতে পারে। এ সব প্রতিবন্ধকতাসমূহ ব্যক্তি, স্থান, সময়, ঝুঁকি, অর্থ ও প্রচার সম্পর্কিত। নিম্নে বাণিজ্যের প্রতিবন্ধকতাসমূহের ওপর আলোকপাত করা হলো।

১. ব্যক্তিগত প্রতিবন্ধকতা (Hindrances relating to person) :-

পণ্যের উৎপাদক ও ভোক্তার মধ্যে প্রত্যক্ষ সম্পর্ক না থাকার ফলে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। পদদ্রেব্য যে স্থানে উৎপাদিত হয় সে স্থানে এর সবগুলোর চাহিদা না-ও থাকতে পারে। তাই যেখানে উষ্ণ পণ্যগুলো উৎপাদিত হয় না সেখানে এগুলোকে প্রেরণ করা অপরিহার্য। পণ্য-বিনিময়ের (Trade) মাধ্যমে উৎপাদক ও ভোক্তার মধ্যে সংযোগ সৃষ্টি করে ব্যক্তিগত প্রতিবন্ধকতা দূর করা যায়।

২. স্থানগত প্রতিবন্ধতা (Hindrances relating to place) :-

উৎপাদন স্থান ও ভাগ স্থানের মধ্যে দূরত্ব বিরাজ করলে স্থানগত প্রতিবন্ধকতা দেখা দেয়। উদাহরণস্বরূপ- বাংলাদেশের উৎপাদিত খন্দর কাপড়ের চাহিদা যদি ভারতে থাকে তাহলে উভয় স্থানের মধ্যে পণ্য প্রেরণে অসুবিধা দেখা দেয়। এ ধরনের প্রতিবন্ধকতাকে স্থানগত প্রতিবন্ধকতা বলে। পরিবহনের (Transportation) মাধ্যমে উৎপাদকের নিকট থেকে ভোক্তার নিকট পণ্য পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে স্থানগত প্রতিবন্ধকতা দূরীভূত করা যায় ।

৩. সময়গত প্রতিবন্ধকতা (Hindrances relating to time) :-

পণ্যদ্রব্য উৎপাদিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সব বিক্রয় হয়ে যায় না। আবার কিছু কিছু পণ্য রয়েছে যেগুলো একটি বিশেষ মৌসুমে উৎপাদিত হয় কিন্তু এগুলোর চাহিদা থাকে সারা বছর। এরূপ উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণ করে রাখা অপরিহার্য। উৎপাদনের সময় থেকে আরম্ভ করে ভোক্তার হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত যে সময়গত ব্যবধান সৃষ্টি হয় তাকেই সময়গত প্রতিবন্ধকতা বলে। গুদামজাতকরণ (Warehousing) এর মাধ্যমে সময়গত প্রতিবন্ধকতার নিরসন করে।

৪. ঝুঁকিগত প্রতিবন্ধকতা (Hindrances relating to risk) :-

এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পণ্য পরিবহনকালে কিংবা গুদামে থাকাকালে অগ্নিকাণ্ড, চুরি-ডাকাতি, ঝড়তুফান, যুদ্ধবিগ্রহ ইত্যাদি কারণে পণ্য বিনষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে। এররূপ অনিশ্চয়তামূলক পরিবেশ থেকেই ঝুঁকিগত প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। পণ্য বিনিময়ের ক্ষেত্রে বিমা ঝুঁকিগত প্রতিবন্ধকতা দূর করে।

৫. অর্থ সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা (Hindrances relating to finance) :-

একজন ব্যবসায়ীর পক্ষে সব সময় প্রয়োজনীয় অর্থ যোগাড় করা সম্ভব হয় না। আবার ধারে মাল বিক্রয় করলে সময়মত টাকা পাওয়া যায় না। দ্বিবিধ কারণে ব্যবসায়ীরা অর্থ সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হন। অর্থের সংস্থানের মাধ্যমে ব্যাংকিং (banking) ব্যবস্থা অর্থসংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা দূর করে।

৬. প্রচার সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা (Hindrances relating to publicity) :-

তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ বাণিজ্যিক জগতে একজন ব্যবসায়ীকে তার উৎপাদিত বা বিক্রয়যোগ্য পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির জন্য সম্ভাব্য ক্রেতাদের গোচরে পণ্যের উৎকর্ষতা তুলে ধরার প্রচেষ্টা চালাতে হয়। এ প্রচেষ্টা থেকেই প্রচার সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। পণ্য উৎপাদনের পর ক্রেতার নিকট সঠিক তথ্য পৌঁছিয়ে দিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা নিরসন করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ