বারিমণ্ডল কাকে বলে? বারিমন্ডল কত প্রকার?

আমাদের এই সুন্দর পৃথিবীর প্রায় তিন চতুর্থাংশ বারিমন্ডলের অন্তর্ভুক্ত। বারিমণ্ডল হলো ভূ-ত্বকের অবনমিত অংশে অবস্থিত বিশাল পানিরাশি। এই বিশাল পানিরাশির সবচেয়ে বড় আধার মহাসাগর এবং সাগর। এছাড়া রয়েছে অসংখ্য নদ-নদী, হ্রদ, খাল, বিল ও জলাশয়।

বারিমণ্ডল কাকে বলে :-

বারিমন্ডলের ইংরেজি প্রতিশব্দ Hydrosphere, Hydro' শব্দের অর্থ জল এবং 'sphere' শব্দের অর্থ মন্ডল। পৃথিবীর সকল স্থানেই বারিমন্ডলের অস্তিত্ব রয়েছে।

যেমন- বায়ুমন্ডলে পানি রয়েছে জলীয়বাষ্প হিসাবে, ভূ-পৃষ্ঠে পানি রয়েছে তরল ও কঠিন অবস্থায় এবং ভূ-গর্ভে রয়েছে ভূ-গর্ভস্থ তরল পানি বা জল হিসাবে।

আরও পড়ুন :- বৃষ্টিপাত কাকে বলে?  

সুতরাং বারিমণ্ডল বলতে ভূ-ত্বকের অবনমিত অংশে অবস্থিত যে বিশাল জলরাশি রয়েছে তাকে বুঝায়।

পৃথিবীর মোট জলরাশির শতকরা ৯৭ ভাগ রয়েছে সমুদ্রে। মাত্র ৩ ভাগ রয়েছে নদী, হিমবাহ, ভূ-গর্ভস্থ, হ্রদ, মৃত্তিকা জীবমণ্ডল ও বায়ুমণ্ডলে। মহাসাগর, সাগর ও উপসাগরের জলরাশি লবনাক্ত এবং নদী, হ্রদ ও ভূ-গর্ভের পানি, বৃষ্টির জল ও ঝর্ণার জল মিঠা।
বারিমণ্ডল কাকে বলে

বারিমন্ডল কত প্রকার :-

আয়তন এবং গভীরতার ভিত্তিতে বারিমন্ডলকে চারটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা :

১। মহাসাগর (Ocean)

২। সাগর ( Sea),

৩। উপসাগর (Bay),

৪। হ্রদ (Lake)।


মহাসাগর (Ocean) :

উন্মুক্ত বিস্তীর্ণ জলরাশি বা পানিরাশিকে মহাসাগর (Ocean) বলে। পৃথিবীতে মোট পাঁচটি মহাসাগর রয়েছে। যথা: প্রশান্তমহাসাগর (Pacific Ocean), আটলান্টিক মহাসাগর (Atlantic Ocean), ভারত মহাসাগর ( Indian Ocean), উত্তর মহাসাগর (North Ocean), দক্ষিণ মহাসাগর (South Ocean)। মহাসাগরসমূহের মধ্যে আয়তন এবং গভীরতার দিক থেকে প্রশান্তমহাসাগর সবচেয়ে বড়।

সাগর (Sea) :

সাগর হচ্ছে মহাদেশের উপকূলভাগে মহাসাগরের প্রান্তেঅবস্থিত জলভাগ যা প্রাকৃতিক ভূ-প্রকৃতি দ্বারা মহাসাগর থেকে আংশিকভাবে বিচ্ছিন্ন। সংক্ষেপে মহাসাগর অপেক্ষা স্বল্প আয়তন বিশিষ্ট জলরাশিকে সাগর (Sea) বলে। যেমন- জাপান সাগর, ক্যারিবিয়ান সাগর, লোহিত সাগর, ভূ-মধ্যসাগর।

উপসাগর (Bay) :

শুধুমাত্র একদিকে জল এবং বাকী তিনদিক স্থলভাগ দ্বারা পরিবেষ্টিত জলরাশিকে উপসাগর (Bay) বলে। যেমন- মেক্সিকো উপসাগর, পারস্য উপসাগর, বঙ্গোপসাগর।

হ্রদ (Lake):

চারদিকে স্থলভাগ দ্বারা বেষ্টিত বিস্তীর্ণ প্রাকৃতিক জলরাশিকে হ্রদ (Lake) বলে। যেমন- রাশিয়ার বৈকাল হ্রদ, আফ্রিকার ভিক্টোরিয়া হ্রদ। যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডার সীমান্তে অবস্থিত সুপিরিয়র হ্রদ।


বারিমণ্ডলের গুরুত্ব :-

বারিমণ্ডল প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে সম্পর্কিত। বারিমণ্ডল বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদের রসায়নাগার, মানবজাতির কাছে বারিমণ্ডলের গুরুত্ব অপরিসীম। বারিমণ্ডলের গুরুত্ব নীচে আলোচনা করা হলঃ

১) জীবদেহ গঠনে জল অপরিহার্য। জীবদেহ গঠনকারী উপাদানগুলির মধ্যে জলের পরিমাণই ৭০ শতাংশ।

২) জীবমণ্ডলে জলের সমতা রক্ষা হয় জলচক্রের মাধ্যমে যা বারিমণ্ডলের উপস্থিতির উপর নির্ভরশীল।

৩) বারিমণ্ডল জীবের প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের ভাণ্ডার। বিভিন্ন ধরনের সামুদ্রিক মাছ, চিংড়ি, কিল, ফার্ণ ইত্যাদি যথেষ্ট পরিমাণে সমুদ্রে জন্মায়।

৪) বারিমণ্ডল বিভিন্ন খনিজ দ্রব্য ও জ্বালানি দ্রব্যের ভাণ্ডার।

৫) চিরাচরিত ও অচিরাচরিত বিদ্যুৎ শক্তির উৎসও বারিমণ্ডল।

৬) জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ ও বায়ুদূষণ প্রতিরোধ করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বারিমণ্ডলের ভূমিকা অবর্ণনীয়।

৭) জলপথে সুলভে পণ্যদ্রব্য পরিবহণ করা যায় বলে হ্রদ, নদী, সাগর, মহাসাগরগুলিতে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক জনপরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।

৮) বারিমণ্ডল মানুষের কর্মসংস্থানের একটি প্রধান কেন্দ্র হিসাবে গড়ে উঠেছে। নাতিশীতোত্মমণ্ডলে বহুলোক সমুদ্র থেকে মৎস্য আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ