বায়ুমণ্ডল কাকে বলে? বায়ুমন্ডলের স্তর কয়টি? বায়ুমন্ডলের উপাদান ও গুরুত্ব?

বায়ুমন্ডলের ইংরেজি প্রতিশব্দ Atmosphere। বায়ুমন্ডল পৃথিবীর অপরিহার্য অংশ। এটি আমরা দেখতে পাইনা কিন্তু অনুভব করতে পারি। বায়ুমন্ডল মাধ্যাকর্ষণ শক্তির ফলে পৃথিবীর গায়ের সাথে লেগে থাকে এবং আবর্তন করে। তবে বায়ু কঠিন ভূমির সাথে সমানভাবে চলতে না পারার সামান্য পশ্চাতে পড়ে থাকে।

বিজ্ঞানীগণের ধারণা, বায়ুমণ্ডলের বয়স প্রায় ৩৫০ কোটি বছর। বায়ুমণ্ডল ভূ-অভ্যন্তরের নির্গত গ্যাস থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে মাত্র ৩০ কিলোমিটারের মধ্যে বায়ুমন্ডলের ৯০ শতাংশ অবস্থান করছে। ভূ-পৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে প্রায় ১০,০০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বায়ুমণ্ডল বিস্তৃত।

বায়ুমণ্ডল কাকে বলে :-

পৃথিবী পৃষ্ঠের চারপাশে বেষ্টন করে যে অদৃশ্য বায়বীয় আবরণ রয়েছে তাই হলো বায়ুমণ্ডল।

সহজ ভাষায় বায়ুমণ্ডল কাকে বলে? এর উত্তরে বলা হয়, ভূ-পৃষ্ঠের চারপাশ যে বায়বীয় আবরণ দ্বারা বেষ্টিত রয়েছে তাকেই সহজ ভাষায় বলা হয় বায়ুমণ্ডল।

বায়ুমণ্ডলের উপাদান :-

বায়ুমণ্ডল বিভিন্ন প্রকার গ্যাসীয় পদার্থ ও জলীয়বাষ্পের সংমিশ্রনে গঠিত। বায়ুমন্ডলের প্রধান দুটি উপাদান হলো নাইট্রোজেন (৭৮.০২%) এবং অক্সিজেন (২০.৭১%), যা মোট উপাদানগুলোর প্রায় ৯৯%। অবশিষ্ট ১% অন্যান্য উপাদান।

ভূ-পৃষ্ঠ থেকে উপরের দিকে প্রায় ৯০ কিলোমিটার পর্যন্ত বায়ুমন্ডলের উপাদানগুলো প্রায় একই রকম থাকে যা সমমন্ডল (Homosphere) নামে পরিচিত।

আরও পড়ুন :- বায়ু দূষণ কাকে বলে?  

আর ভূ-পৃষ্ঠ সংলগ্ন এই ৯০ কিলোমিটারের ঊর্ধ্বে বায়ুমণ্ডলের যে অংশ রয়েছে সেখানে বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত সমান থাকে না বলে তাকে বিষমমণ্ডল (Heterosphere) বলে।

বায়ুমন্ডল গঠনকারী উপাদানগুলোকে তিনটি ভাগে ভাগ করা করা যায়। যথা
  • গ্যাসীয়
  • জলীয়বাষ্প
  • ধূলিকণা
বায়ুমণ্ডল কাকে বলে

বায়ুমন্ডলের স্তর বিন্যাস :-

বায়ুমণ্ডল বিভিন্ন স্তরে স্তরে সজ্জিত। বায়ুমন্ডলের স্তরসমূহের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তর থেকে উপরের দিকে ক্রমশ লঘু হয়। উলম্বভাবে (Vertically) বায়ুর তাপমাত্রার বিন্যাসের ভিত্তিতে বায়ুমন্ডলকে পাঁচটি ভাগে ভাগ করা যায়।
  1. ট্রেপোমণ্ডল, 
  2. স্ট্রাটোমন্ডল,
  3. মেসোমণ্ডল,
  4. তাপমণ্ডল ও
  5. এক্সোমণ্ডল।

বায়ুমণ্ডলের উপরিউক্ত ওরগুলোর মধ্যে প্রথম তিনটি ট্রেপোমণ্ডল, স্ট্রাটোমন্ডল ও মেসোমণ্ডল) সমমন্ডলের অন্তর্ভুক্ত এবং শেষের দুইটি (তাপমণ্ডল ও এক্সোমণ্ডল) বিষমমণ্ডলের অন্তর্ভুক্ত।

বায়ুমণ্ডলের গুরুত্ব :-

পৃথিবী সৌরজগতের সব থেকে আদর্শ ও বাসযোগ্য গ্রহ এবং বায়ুমন্ডল এই গ্রহে জীবজগতের বেঁচে থাকার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল।

বায়ুমন্ডলের বিভিন্ন স্তরে নানা রকম গ্যাসীয় উপাদান, জলীয়বাষ্প ও ধূলিকণার উপস্থিতির জন্য স্তরভেদে নানা পার্থক্য দেখা যায়। বায়ুমণ্ডলের গুরুত্বসমূহ এখানে আলোচনা করা হলো

১. বায়ুমণ্ডল প্রধানত উদ্ভিদ ও প্রাণিকূলের জীবন রক্ষায় পূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি শুষে নেয় এবং এর বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদান যেমন- অক্সিজেন ও কার্বন ডাই-অক্সাইড উদ্ভিদ ও প্রাণিকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করে।

২. বায়ুমণ্ডলে জলীয়বাষ্প আছে বলেই মেঘ সৃষ্টি হতে পারে। ফলে বৃষ্টি হয় এবং জীবজগৎ রক্ষা পায়।


৩. মানুষ তার নানা প্রয়োজনে প্রকৃতিকে ব্যবহার করতে গিয়ে পরিবেশের ক্ষতি করছে। যেমন- প্রচুর পরিমানে গাছ পালা ও বন-জঙ্গল নিধন, প্রাকৃতিক গ্যাস, কয়লা ইত্যাদি পোড়ানো এবং তা থেকে নির্গত কালো ধোঁয়া, যানবাহনের কালো ধোঁয়া ও বিষাক্ত গ্যাস বায়ুমণ্ডলের জন্য ক্ষতিকর। তাই প্রাকৃতিক পরিবেশ অর্থাৎ জীবজগতের বেঁচে থাকার জন্য বায়ুমণ্ডলের বিশুদ্ধতা বজায় রাখা জরুরি।

৪. বায়ুমণ্ডলকে বিশুন্ধ না রাখলে উদ্ভিদ ও প্রাণির শুধু জীবন বিপর্যয় হবে না, সেই সাথে ভবিষ্যতের প্রাকৃতিক পরিবেশ হুমকির সম্মুখীন হবে।

৫. বায়ুর নানা গ্যাসীয় উপাদান যেমন- কার্বন ডাই-অক্সাইড এর সাহায্যে উদ্ভিদ খাদ্য প্রস্তুত করে, জলীয়বাষ্প নিয়ন্ত্রণ করে । এছাড়াও চুনা জাতীয় খনিজ পদার্থ গঠন ও পৃথিবীতে তাপের বন্টন ও প্রতিফলনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।

৬. বায়ুমণ্ডল না থাকলে কোনো শব্দতরঙ্গ স্থানান্তরিত হয় না। কারণ পৃথিবী হতে পাঠানো বেতার তরঙ্গ আয়নমণ্ডলে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে ফিরে আসে।

৭. বায়ুমণ্ডলের নানা স্তরে বায়ুর চাপের পার্থক্য দেখা যায়। তাই বায়ুমণ্ডলে বায়ুর ওজন ও চাপ এর ভারসাম্য সঠিক না হলে আমরা চলাফেরা করা বা দাঁড়াতে পারতাম না।

৮. বায়ুমন্ডলের মধ্যে ওজোন স্তর আছে বলে সূর্য হতে আগত অতিবেগুনী রশ্মির হাত হতে পৃথিবীর জীবজগৎ রক্ষা পায়। এমনকি বায়ুমন্ডলের স্তরে উল্কাপিন্ড বিধ্বস্ত না হলে তা সরাসরি পৃথিবীতে আঘাত হানতো।

৯. বায়ুমণ্ডল মূলত একটি তাপনিরোধক আবরণ যা জীবজগৎকে সৌরতাপ শক্তি হতে রক্ষা করে।

১০. বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেন এর মাত্রা বেশি থাকায় এর দ্বারা উদ্ভিদজগৎ প্রোটিন জাতীয় খাদ্য প্রস্তুত করে এবং জীবজগৎ ঐ উদ্ভিদ থেকে প্রয়োজনীয় প্রোটিন গ্রহণ করতে পারে।

১১. ট্রপোমণ্ডল না থাকলে আবহাওয়া সৃষ্টি হতো না এবং মেঘ-বৃষ্টি, তুষার, কুয়াশা ইত্যাদি না থাকলে শস্য ও বনভূমির জন্য বৃষ্টিপাত পাওয়া যেত না।

আরও পড়ুন :- দূষণ কাকে বলে?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ