শিলা কাকে বলে? শিলা কত প্রকার ও কি কি উদাহরণ সহ আলোচনা কর?

শিলা কাকে বলে :-

ভূ-ত্বক যেসব উপাদান দ্বারা গঠিত তাদের সাধারণ নাম শিলা। ভূ-তত্ত্ববিদগণের মতে, দুই বা ততোধিক খনিজ দ্রব্যের সংমিশ্রণে এসব শিলার সৃষ্টি হয়। ভূ-ত্বক গঠনকারী সকল কঠিন ও কোমল পদার্থই শিলা।

উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- মুড়ি, কাঁকর, গ্রানাইট, কাদা, বালি প্রভৃতি শিলা।

অন্যভাবে বলা যায় যে, এক বা একাধিক খনিজের একত্রিত রূপই হচ্ছে শিলা।

খনিজের এই মিশ্রণ প্রাকৃতিক অবস্থায় পাওয়া যায়। এক্ষেত্রে প্রতিটি শিলার গঠনকারী খনিজের বৈশিষ্ট্য বজায় থাকে। কোনো কোনো শিলা একটি মাত্র খনিজ পদার্থ দিয়েও গঠিত হতে পারে। এক্ষেত্রে খনিজ ও শিলা একই পদার্থ।

যেমন: কেলসাইট একটি খনিজ এবং শিলা হিসাবে এটি চুনাপাথর।

আরও পড়ুন :- খনিজ কাকে বলে?  

শিলার শ্রেণিবিভাগ :-

ভূ-ত্বক বিভিন্ন প্রকার শিলা দ্বারা গঠিত এবং আগ্নেয় শিলা প্রত্যেক ধরনের শিলা স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। কোনো শিলা কাঁদার মত নরম এবং কোনো শিলা গ্রানাইট পাথরের মত শক্ত। সব ধরনের শিলাই প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট।

উৎপত্তি ও গঠনের দিক থেকে শিলাকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যথা

ক) আগ্নেয় শিলা: উদাহরণ- গ্রানাইট।

খ) পাললিক শিলা উদাহরণ-চুনাপাথর।

গ) রূপান্তরিত শিলা উদাহরণ মার্বেল।

এগুলো সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হলো -
শিলা কাকে বলে

আগ্নেয় শিলা (Igneous rocks) :-

পৃথিবীর আদিম অবস্থার উত্তপ্ত ও গলিত লাভা কিংবা আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের সময় উত্থিত উত্তপ্ত গলিত লাভা ঠান্ডা হয়ে যে শিলার সৃষ্টি হয় তাকে আগ্নেয় শিলা বলে।

আগ্নেয় শিলার বৈশিষ্ট্য :-

উত্তপ্ত গলিত অবস্থা হতে ঠাণ্ডা হয়ে এ জাতীয় শিলার উৎপত্তি হয় বলে আগ্নেয় শিলায় কোন স্তর থাকে না।

উত্তপ্ত গলিত পদার্থের মধ্যে জীব-জন্তুর অস্তিত্ব অসম্ভব। বৃক্ষলতাও তাতে জন্মে না। এ কারণে আগ্নেয়শিলার ভিতর জীবাশ্ম দেখতে পাওয়া যায় না।

গলিত অবস্থা হতে তাপ বিকিরণ করে ক্ষেত্র বিশেষে এ জাতীয় শিলা কেলাসিত হয় বা নির্দিষ্ট আকার ধারণ করে।

বিস্তারিত জানতে:- পাললিক শিলা কাকে বলে?

উত্তপ্ত গলিত পদার্থ ভূ-পৃষ্ঠে ঠান্ডা হলে তাকে বহিঃজ আগ্নেয় শিলা (Extrusive igneous rocks) বলে। অপর পক্ষে উত্তপ্ত গলিত পদার্থ ভূ-পৃষ্ঠে আসতে না পেরে পৃথিবীর অভ্যন্তরেই ধীরে ধীরে তাপ বিকিরণ করে ঠান্ডা হয়ে কঠিন আকার ধারণ করে। এ রূপে গঠিত আগ্নেয় শিলাকে অন্তজ (Intrusive) আগ্নেয় শিলা বলে।

ব্যাসল্ট, পিউমিকস্টোন, লাপিলি ইত্যাদি হলো বহিঃজ আগ্নেয় শিলা। অন্যদিকে গ্র্যানাইট, গারো, সায়েনাইট, পরিফাইরি ইত্যাদি অন্ত্যজ আগ্নেয় শিলা।

পাললিক শিলা ( Sedimentary rocks) :-

তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ, হিমবাহ, সাগরতরঙ্গ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাবে আগ্নেয় শিলা ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ছোট ছোট নুড়ি, কাকর ও বালিতে পরিণত হয়। অতঃপর অংশসমূহ উল্লিখিত প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা বাহিত হয়ে সমুদ্র, হ্রদ বা উপমহাদেশের তলদেশে পলল বা তলানীরূপে স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয়। পরে তা বায়ুর চাপে জমে শক্ত ও দৃঢ় আকার প্রাপ্ত হয়। এ ধরনের শিলাকে পাললিক শিলা বলে।

পলন বা তলানী হতে এ শিলা গঠিত হয় বলে একে পাললিক শিলা বলে। আবার স্তরে স্তরে সঞ্চিত হয় বলে এ শিলাকে স্তরীভূত (Stratified) শিলা বলে।

পাললিক শিলার বৈশিষ্ট্য :-

১. এ শিলা মূল শিলার (Older rocks) ক্ষয়প্রাপ্ত অংশ হতে সৃষ্টি হয়।

২. পাললিক শিলা স্তরে স্তরে সৃষ্টি হয় বলে এর মধ্যে স্তর থাকে।

৩. এ শিলার মধ্যে জীবাশা দেখা যায়।

৪. এই শিলা উত্তপ্ত অবস্থা হতে সৃষ্ট নয় বলে অকেলাসিত ।

৫. এ শিলা গৌণ বা মাধ্যমিক (Secondary ) শিলা নামে পরিচিত।

৬. ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক প্রক্রিয়ায় উন্নত (Developed ) হতে পারে।

৭. বালিপাথর (Sand stone), শেল (Shale), ডলোমাইট (Dolomite), সিন্ট স্টোন (Siltstone), চুনাপাথর (Limestone) ইত্যাদি পাললিক শিলার উদাহরণ।

বিস্তারিত জানতে :- রূপান্তরিত শিলা কি?

রূপান্তরিত শিলা (Metamorphic rocks) :-

প্রচন্ড তাপ ও চাপের যৌথ প্রভাবে মূল আগ্নেয় ও পাললিক শিলা কালক্রমে পরিবর্তিত হয়ে অধিকতর কঠিন ও স্ফটিকাকার যে নতুন শিলার সৃষ্টি হয় তাকে রূপান্তরিত শিলা বলে।

এ ভাবে চুনাপাথর (পাললিক শিলা) রূপান্তরিত হয়ে মার্বেলে, বেলেপাথর (পাললিক শিলা) পরিবর্তিত হয়ে কোয়ার্টজাইট, কাদা পরিবর্তিত হয়ে শ্লেটে (Slate), গ্রানাইট (আগ্নেয় শিলা) পরিবর্তিত হয়ে গ্নিসে (Gneisses) পরিণত হয়।

আগ্নেয়শিলা পরিবর্তিত হয়ে রূপান্তরিত শিলায় রূপান্তরিত হলে তাকে আগ্নেয় রূপান্তরিত শিলা বলে। যেমন : গ্র্যানাইট নীসে ( Gneisses), পরিণত হওয়া।

অনুরূপভাবে পাললিক শিলা পরিবর্তিত হয়ে রূপান্তরিত শিলায় পরিণত হলে তাকে পাললিক রূপান্তরিত শিলা বলে। যেমনঃ বেলে পাথর পরিবর্তিত হয়ে কোয়ার্টজাইট পরিণত হওয়া।

রূপান্তরিত শিলার বৈশিষ্ট্য :-

১. আগ্নেয় ও পাললিক শিলা উভয় শিলা পরিবর্তিত হয়ে রূপান্তরিত শিলার সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ ইহা আগ্নেয় ও পাললিক শিলার জাতক।

২. প্রচন্ড তাপ ও চাপের যৌথ প্রভাবে এ নতুন প্রকৃতির শিলার সৃষ্টি হয়।

৩. ইহা কেলাসিত হয় বলে ইহাকে পাললিক শিলা থেকে পৃথক করা যায়।

৪. এ জাতীয় শিলার খনিজ উপাদানগুলি সমান্তরাল থাকে বলে আগ্নেয় শিলা থেকে সহজে পৃথক করা যায়।

আরও পড়ুন:- কয়লা কাকে বলে?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ