মালভূমি কাকে বলে? মালভূমির শ্রেণিবিভাগ? মালভূমির বৈশিষ্ট্য?

মালভূমি কাকে বলে :-

সমুদ্র সমতল হতে অপেক্ষাকৃত উচ্চে অবস্থিত খাড়া ঢালযুক্ত অসমতল এবং প্রশস্ত ভূমিভাগকে মালভূমি বলে।

তিব্বতের পামির মালভূমি একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ। মালভূমির উচ্চতা সমুদ্রপৃষ্ঠ হতে কয়েকশ মিটার থেকে কয়েক হাজার মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। ভূ-অভ্যন্তরস্থ ও ভূ-পৃষ্ঠস্থ বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার কারণে মালভূমি সৃষ্টি হতে পারে। পৃথিবীর মোট ভূমির শতকরা পাঁচভাগ: মালভূমি।

আরও পড়ুন :- সমভূমি কাকে বলে?

মালভূমির বৈশিষ্ট্য :-

মালভূমির প্রধানত তিনটি বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করা যায়। যথা

(ক) এটি বিস্তীর্ণ উচ্চভূমি,

খ) এর উপরিভাগ তরঙ্গায়িত ও অসমতল এবং

গ) এটি চারদিক থেকে নিম্নভূমিতে নেমে যায়।

মালভূমি সৃষ্টির কারণ :-

ভূ-অভ্যন্তরস্থ ও ভূ-পৃষ্ঠস্থ বিভিন্ন প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ার মধ্যে তিনটি প্রধান কারণ মালভূমি সৃষ্টির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যথা

১. ভূ-আন্দোলন ও পাত সঞ্চালন। উদাহরণ- তিব্বতের পামীর মালভূমি।

২. ভূ-পৃষ্ঠের ক্ষয়সাধন। উদাহরণ- সাইবেরিয়ার পূর্ব মালভূমি।

৩. ভূ-পৃষ্ঠে লাভা সঞ্চয় । উদাহরণ- ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমি ।
মালভূমি কাকে বলে

মালভূমির শ্রেণিবিভাগ :-

উৎপত্তির ভিত্তিতে মালভূমিকে প্রধানত পাঁচভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

১. মহাদেশীয় মালভূমি :

মহাদেশীয় প্রাচীন শিলাস্তূপ নগ্নীভবনের মাধ্যমে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে বিস্তৃত এলাকাব্যাপী যে ভূমি সৃষ্টি হয় তাকে মহাদেশীয় মালভূমি বলে।

এ ধরনের মালভূমিসমূহ উচ্চতা সাধারণত সমুদ্র সমতল থেকে ৫০-১০০ মিটার উচ্চতা বিশিষ্ট এবং কেলাসিত হয়।

উদাহরণ : কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার শিল্ড।

২. চ্যুতি মালভূমি :

ভূ-অভ্যন্তরস্থ প্রাকৃতিক কারণে ভূ-পৃষ্ঠে কোনো বিস্তৃত স্থান চ্যুতির সৃষ্টি হয়ে কোনো এলাকার বিরাট অংশ অসমানভাবে উপরে উঠে গিয়ে যে ভূমির সৃষ্টি করে তাকে চ্যুতি মালভূমি বলে।

আরও পড়ুন :- আকরিক লোহা কাকে বলে?

মূলত ভূ-আন্দোলনজনিত এবং পাত সঞ্চালনজনিত কারণে এই ধরনের মালভূমি সৃষ্টি হয় যা চ্যুতি সৃষ্টির কারণের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। যেমন - স্পেনের মেসেটা।

৩. পর্বত মধ্যবর্তী :

মালভূমি সংকোচনজনিত চাপের কারণে ভঙ্গিল পর্বতের মাঝে এ ধরনের মালভূমি সৃষ্টি হয়। যেহেতু ভঙ্গিল পর্বত গঠিত হওয়ার সময় পবর্তদ্বারা বেষ্টিত নিম্নস্থানসমূহ উঁচু হয়ে এই মালভূমি সৃষ্টি করে সেহেতু এ ধরনের মালভূমিকে পর্বত মধ্যবর্তী মালভূমি বলে।

এ ধরনের মালভূমির উচ্চতা সাধারণত ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার মিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। যেমন- তিব্বতের মালভূমি।

৪. ক্ষয়জাত মালভূমি :

কোনো পার্বত্য অঞ্চল বা উঁচু ভূ-খন্ড নদী, হিমবাহ, বৃষ্টিপাত, বায়ুপ্রবাহ প্রভৃতি প্রাকৃতিক শক্তি দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ভূমির উচ্চতা হ্রাস পেয়ে প্রায় সমতল ভূমিতে পরিণত হলে তাকে ক্ষয়জাত মালভূমি বলে।

মূলত এই মালভূমি পুরাতন উঁচু ভূ-ভাগ ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে সৃষ্টির ফলে শিলার প্রকৃতি এর বন্ধুরতা নিয়ন্ত্রণ করে।

উদাহরণ : দক্ষিণ ভারতের মালভূমি, সৌদি আরবের মালভূমি, সাইবেরিয়ার পূর্ব মালভূমি, আফ্রিকার দক্ষিণ মালভূমি ক্ষয়জাত মালভূমি। ইউরোপের ক্যালিডোনিয়ান পর্বতশ্রেণী ক্ষয়প্রাপ্ত হয়ে ফিজেন্ড মালভূমির সৃষ্টি করেছে।

ক্ষয়জাত মালভূমির বৈশিষ্ট্য :

১. ক্ষয় প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়।

২. সাধারণত এ মালভূমি স্বল্প উচ্চতা বিশিষ্ট হয়।

৩. সহজে ক্ষয়প্রাপ্ত শিলাসমূহ ক্ষয় হয়ে যাওয়ায় বিভিন্ন ক্ষয়জাত ভূমিরূপ দেখা যায়। যেমন মেসা, পিলার, বুটি, পিনাকল।

আরও পড়ুন:- মরুভূমি কাকে বলে?

৫. আগ্নেয় মালভূমি :

অগ্ন্যুৎপাতের ফলে ভূ-ত্বকের কোনো ফাটল বা আগ্নেয়গিরির ছিদ্র পথে ভূ-গর্ভ হতে লাভা প্রবাহ ভূ-পৃষ্ঠে ছড়িয়ে পড়ে এবং শীতলীকরণ প্রক্রিয়ায় ঠান্ডা হয়ে কঠিন অবস্থা ধারণ করে যে ভূমির সৃষ্টি হয় তাকে আগ্নেয়জাত মালভূমি বলে।

উদাহরণ : ভারতের দাক্ষিণাত্যের মালভূমি। উর্বর মৃত্তিকার কারণে এখানে ভারতের সবচেয়ে বেশী তুলা উৎপাদন হয়।

আগ্নেয় মালভূমির বৈশিষ্ট্য :

১. আগ্নেয় লাভা ভিত্তিক।

২. বিস্তীর্ণ এলাকায় লাভা ছড়িয়ে পড়ে এ ধরণের মালভূমির সৃষ্টি হয়।

৩. এ ধরণের মালভূমি বন্ধুর ভূ-প্রকৃতি সম্পন্ন।

8. শুষ্ক জলাবায়ুর আওতাভূক্ত থাকায় জনবসতি খুব কম। 

৫. আগ্নেয়জাত লাভা দ্বারা গঠিত তাই ক্ষয় ক্রিয়ার মাধ্যমে উর্বর মৃত্তিকা সৃষ্টি করে।

৬. এ প্রকার মালভূমিতে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ যেমন টিন, তামা পাওয়া যায় ।

৭. মালভূমির খরস্রোতা নদীতে বাঁধের মাধ্যমে পানিবিদ্যুৎ উৎপন্ন হয়।

আরও পড়ুন:- পর্বত কাকে বলে?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ