তথ্য উপস্থাপন কৌশল পরিসংখ্যানের একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। এ পোস্টে আমরা তথ্য উপস্থাপন কৌশল সম্পর্কে বিষদভাবে আলোচনা করব।
তথ্যকে সহজভাবে এবং সকলের নিকট বোধগম্য ও আকর্ষণীয় করার বিভিন্ন পদ্ধতি যেমন শ্রেণীকরণ, ছককরণ, চিত্র ইত্যাদির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
সংগৃহীত তথ্যসমূহকে প্রথমে শ্রেণীবদ্ধ করে এবং পরে সারণির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এগুলোকে আরও সংক্ষিপ্ত, সহজবোধ্য ও অর্থবহ করার জন্য লেখচিত্রের মাধ্যমে তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
সুতরাং তথ্যভিত্তিক অনুষ্ঠানে পূর্বনির্ধারিত উদ্দেশ্যে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। যে ব্যক্তি তথ্য সংগ্রহ করেন তাঁকে বলে তথ্য সংগ্রাহক।
এ পোস্টে বিভিন্ন পাঠে তথ্য ও তার বৈশিষ্ট্য, তথ্য সংগ্রহ, তথ্য উপস্থাপন, ঘটনসংখ্যা ও ঘটনসংখ্যার বিন্যাস, লেখচিত্রের মাধ্যমে তথ্য উপস্থাপন ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
তথ্য হল যেকোন তরঙ্গরূপে প্রকাশিত বা সংরক্ষিত উপাদান যা কোন বিষয়ের সম্পর্কে জ্ঞান, বোঝা বা প্রতিনিধিত্ব করে।
তথ্য হতে পারে -
1. লিখিত বা মৌখিক
2. ছবি বা ভিডিও রূপ
3. সাইন বা সংকেত
4. ডিজিটাল বা কম্পিউটারাইজড
5. সংখ্যাগত বা পরিসংখ্যানগত
যেকোন বিষয়ের সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমাণে তথ্য না থাকলে সেই বিষয়টি সম্পর্কে ভাল ধারণা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সুতরাং, তথ্য জ্ঞান অর্জনে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
পরিসংখ্যান গবেষণায় প্রধান কাঁচা উপাদান হলো তথ্য। তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই পরিসংখ্যানিক বিশেষণের মাধ্যমে তথাবিশ্ব সম্পর্কে জানা যায়।
উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের গড় বয়স জানতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউটোরিয়াল কেন্দ্র থেকে কিছু সংখ্যক ছাত্র- ছাত্রীর বয়স সংগ্রহ করে গড় বয়স সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।
সেক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের বয়স পরিমাপ করলে যে পরিমাপকগুলো পাওয়া যাবে সেগুলোই তথ্য। যে কোন পরিসংখ্যান ভিত্তিক অনুসন্ধানে প্রথমেই দরকার সঠিক ও সুষ্ঠু তথ্য।
গুণবাচক তথ্য :-
কোন অনুসন্ধানে গবেষণাকারী কোন বস্তু বা ব্যক্তির বিশেষ কোন বৈশিষ্ট্যকে আছে বা নেই দ্বারা চিহ্নিত করে এবং ঐ বৈশিষ্ট্য কত বাকি বা বস্তুর মধ্যে আছে বা নেই নির্ণয় করলে যে তথ্য পাওয়া যায় তাকেই গুণবাচক তথ্য বলা হয়।
উদাহরণস্বরূপ, কোন কৃষিবিদ ক্ষেতের পোকা-মাকড় মারার জন্য ঔষধ ছিটিয়েছেন এবং লক্ষ্য করেছেন ঐ ঔষধ কার্যকরী কি না। এক্ষেত্রে কার্যকর বা কার্যকর নয়, এমন তথ্যকে গুণবাচক তথ্য বলে।
আবার কোন অনুসন্ধানে যদি জানতে চাওয়া হয় যে কত লোকের চুল সাদা বা কতজনের অন্য রঙের চুল আছে এ সমস্ত ক্ষেত্রে যে তথ্য পাওয়া যায় সেগুলোকে বলে গুণবাচক তথ্য বলে।
পরিমাণবাচক তথ্য :-
যখন কোন গবেষক কোন ব্যক্তি বা বস্তুর বৈশিষ্ট্যকে পরিমাণগতভাবে পরিমাপ করে তখন সে তথ্যকে পরিমাণবাচক তথ্য বলে।
উদাহরণস্বরূপ, বিভিন্ন লোকের বয়স আরা, পারিবারিক জরিপে পরিবারের লোক সংখ্যা, আবাদী জমির পরিমাণ, গৃহপালিত পশুর পরিমাণ, উৎপন্ন ফসলের পরিমাণ ইত্যাদি পরিমাপযোগ্য তথ্যগুলোকে পরিমাণবাচক তথ্য বলে।
পরিমাপযোগ্য তথ্যগুলোর মানের একটি সীমা আছে তাই এ তথ্যগুলোকে চলক (variable) বলে।
চলক দুই ধরনের
• বিচ্ছিন্ন চলক (Discrete variable).
• অবিচ্ছিন্ন চলক (Continuous variable)
উৎসের উপর নির্ভর করে তথ্য বা উপাত্তকে দুইভাগে ভাগ করা হয়।
প্রাথমিক তথ্য কাকে বলে :-
যে তথ্য প্রথমবার সংগ্রহ করা হয় তাকে প্রাথমিক তথ্য বলা হয়। এ ধরনের তথ্য অনেকটা আলোচিত। বিভিন্ন ধরনের জরিপের মাধ্যমে কোন প্রতিষ্ঠান কিংবা কোন ব্যক্তি এ ধরনের তথ্য সংগ্রহ করে থাকে।
মাধ্যমিক তথ্য কাকে বলে:-
অন্যদিকে যে তথ্য প্রাথমিক অবস্থায় সংগৃহীত না হয়ে প্রকাশিত অথবা অপ্রকাশিত অন্য উৎস থেকে সংগৃহীত হয়ে থাকে তাকে মাধ্যমিক তথ্য বলা হয়।
মাধ্যমিক তথ্য বা উপাত্ত গোছানো অবস্থায় থাকে।
উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরো বিভিন্ন জরীপের মাধ্যমে অথবা আদমশুমারীর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো যে তথ্য সংগ্রহ করে তাকে প্রাথমিক তথ্য বলে আবার অন্য কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি যখন পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত তথ্য ব্যবহার করে তখন সে তথ্যকে বলা হয় মাধ্যমিক তথ্য।
২. প্রকাশনাযোগ্যতা: তথ্যকে যে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়, যেমন - কাগজ, বই, সংবাদপত্র, রেডিও, টিভি, ইন্টারনেট ইত্যাদি।
৩. প্রসারণযোগ্যতা: তথ্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সহজেই ছড়িয়ে পড়ে।
৪. বহুমুখী: তথ্য একাধিক উপায়ে উপস্থাপন করা যায়, যেমন লেখা, ছবি, শব্দ, ভিডিও।
৫. বিশ্বস্ততা: তথ্যের উৎস, তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি ইত্যাদিতে ভিত্তি করে তথ্যের বিশ্বস্ততা বিবেচনা করা হয়।
৬. অসীমতা: তথ্যের পরিমাণ অসীম। নতুন নতুন তথ্য অবিরত সংযোজন ঘটছে।
৭. দ্রুত প্রসারণ: আধুনিক যুগে তথ্য দ্রুত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।
৮. ক্ষয়শীলতা: তথ্য কালক্রমে ক্ষয় বা হ্রাস পায়।
৯. বিনিময়যোগ্যতা: তথ্য বিনিময় করা যেতে পারে।
এসব বৈশিষ্ট্যের কারণেই তথ্য এতটা গুরুত্বপূর্ণ।
সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রাসঙ্গিক তথ্য প্রয়োজন। যেমন,
2. সমস্যা সমাধান:
কোন সমস্যা সমাধানের জন্য সেই সমস্যার উৎপত্তি, কারণ ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য প্রয়োজন। এছাড়া সমাধানের বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে তথ্য থাকা দরকার।
3. পরিকল্পনা প্রণয়ন:
কোন কাজ বা প্রকল্পের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হলে সংশ্লিষ্ট সকল তথ্য প্রয়োজন হয়। যেমন বাজেট, সময়, মানবসম্পদ ইত্যাদি।
4. গবেষণা ও উদ্ভাবন:
গবেষণা ও নতুন কিছু উদ্ভাবনের জন্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে পূর্ব-পরবর্তী গবেষণা ও তথ্যাদি প্রয়োজন হয়।
5. শিক্ষাগত উন্নয়ন:
শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য পাঠ্যপুস্তক, রেফারেন্স বই, ইন্টারনেট ইত্যাদি থেকে উপযুক্ত তথ্য প্রয়োজন।
এভাবে সকল ধরনের কাজেই প্রাসঙ্গিক তথ্য ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়। বিভিন্ন কাজ সম্পাদনে উপযুক্ত তথ্য অত্যন্ত জরুরি। তথ্য ছাড়া কোন কাজই সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। তাই তথ্যকে সবসময়ই গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
তথ্য সংগ্রহ করার সময় কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয় যাতে করে তথ্য নির্ভুল হয়। নির্ভুল তথ্যের মাধ্যমেই কেবলমাত্র কোন বিষয়ের সঠিক তথ্য পাওয়া যায়। সাধারণত দুটি উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
১। প্রত্যক্ষ ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার,
২। পরোক্ষ মৌখিক জিজ্ঞাসাবাদ,
৩। প্রশ্নরের মাধ্যমে এবং
৪। স্থানীয় সংস্থা বা যোগাযোগকারীর মাধ্যমে।
উপরের পদ্ধতিসমূহ নিচে আলোচনা করা হলো।
প্রত্যক্ষ ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার:
এ পদ্ধতিতে অনুসন্ধানকারী সরাসরি উত্তরদাতার সাথে সাক্ষাৎ করে জরীপের নির্ধারিত প্রশ্নপত্র জিজ্ঞাসা করার পর ইদিত তথ্য সংগ্রহ করে থাকে।
উদাহরণস্বরূপ যদি কোন ব্যক্তি কোন কারখানার শ্রমিকদের কাজের অবস্থা সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করতে চান তবে তাকে ঐ কারখানায় গিয়ে সরাসরি শ্রমিকদের সাথে সাক্ষাৎ করে কাংখিত তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।
পরোক্ষ মৌখিক জিজ্ঞাসাবাদ:
এ পদ্ধতিতে যখন কোন উত্তরদাতা কোন তথ্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে সংকোচবোধ কিংবা অপারগতা প্রকাশ করে তখন তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্য বা উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়।
উদাহরণস্বরূপ কোন খারাপ অভ্যাস যেমন- মদ খাওয়া, জুয়া খেলা ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য জানতে হলে কোন ব্যক্তি সরাসরি তার নিজের খারাপ অভ্যাসের তথ্য প্রকাশ করে না সেক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষ যেমন প্রতিবেশি, বন্ধু-বান্ধব ইত্যাদির নিকট থেকে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করতে হয়।
প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ:
এ পদ্ধতির মাধ্যমে কোন অনুসন্ধান সম্পর্কিত পরিমিত সংখ্যক প্রশ্নের একটি তালিকা তৈরি করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এধরনের পদ্ধতির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা সবচেয়ে বেশি উপযোগী এবং এ পদ্ধতির সাহায্যেই কোন গবেষক, সরকারি বেসরকারি সংস্থা তথ্য সংগ্রহ করে তাকে। প্রশ্নের তালিকাকে প্রশ্নপত্র বলে।
প্রশ্নপত্র ডাকযোগে অথবা কোন সংগ্রাহকের (informers ) মাধ্যমে পাঠানো হয় এবং উত্তরদাতাকে প্রশ্নপত্রের সকল প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।
সুবিধা-
(ক) প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা সবচেয়ে বেশি উপযোগী এবং সাধারণত এ পদ্ধতির মাধ্যমেই কোন গবেষক কিংবা কোন প্রতিষ্ঠান তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন।
(খ) অনুসন্ধান ক্ষেত্র যদি খুবই ব্যাপক হয় এবং বিভিন্ন ভৌগোলিক স্থানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে সেক্ষেত্রে এ পদ্ধতি ব্যবহার করা বেশি উপযোগী।
(গ) এ পদ্ধতিতে তথ্য সপ্তাহ করা অন্য যে কোন পদ্ধতি অপেক্ষা কম সময় লাগে।
অসুবিধা-
(ক) উত্তরদাতা যদি অশিক্ষিত হয় অর্থাৎ যদি পড়তে এবং লিখতে না জানেন সেক্ষেত্রে এ পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
(খ) এ পদ্ধতিতে অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও উত্তরদাতার সংখ্যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কম থাকে এবং দেখা যায় যে, যারা কেবলমাত্র অধিকতর উৎসাহী তাদের নিকট থেকেই তথ্য সংগ্রহ করা যায়।
(খ) এ পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহে কিছু বেশি খরচ লাগে কারণ ডাকমাশুল লাগে এবং সংগ্রাহক নিয়োগ করতে বেশ খরচ হয়।
স্থানীয় সংস্থা বা যোগাযোগকারীর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ:
এ পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় যোগাযোগকারী বা স্থানীয় সংস্থাকে নিয়োগ করা হয়। এধরনের সংস্থা বা যোগাযোগকারী স্থানীয়ভাবে তথ্য সংগ্রহ করে প্রধান অফিসে পাঠিয়ে দেয়। সংবাদপত্র অফিস সাধারণত এ ধরনের স্থানীয় যোগাযোগকারী নিয়োগ করে থাকে।
সুবিধা-
(ক) এ পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ অনেকটা নির্ভরযোগ্য এজন্য যে যোগাযোগকারী বা সংগ্রাহক মাঠপর্যায়ে থাকে এবং বিভিন্ন উপায়ে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করতে পারে ।
অসুবিধা-
(ক) এ পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে খরচের পরিমাণ বেশি হয় কারণ যোগাযোগকারী কিংবা তথ্য সংগ্রাহক সাধারণত বেতনভূক্ত কর্মচারী হয়।
(খ) যোগাযোগকারী বা তথ্য সংগ্রাহক সৎ এবং নিষ্ঠাবান না হলে নির্ভুল তথ্য সংগ্রহ সম্ভব নয়।
অর্থাৎ মাধ্যমিক তথ্য সরাসরি কোন প্রকাশিত কিংবা অপ্রকাশিত তথ্যের উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয়।
মাধ্যমিক তথ্য নিম্নের পদ্ধতির মাধ্যমে সংগ্রহ করা যেতে পারে।
প্রকাশিত তথ্য উৎস:
অনেক সময় রাষ্ট্র বা কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিবিশেষ নিজেদের প্রয়োজনে বিভিন্ন বিষয়ের উপর নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ এবং প্রকাশ করে থাকেন। প্রকাশিত তথ্য উৎসের মধ্যে আছে-
(ক) বিভিন্ন সরকারী সংস্থা থেকে প্রকাশিত রিপোর্ট যেমন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন রিপোর্ট।
(খ) আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন, বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা ইত্যাদি থেকে স্বায়ত্তশাসিত বা আধা সরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রকাশনা ও রিপোর্ট যেমন, বিশ্ববিদ্যালয়, সিটি কর্পোরেশন ইত্যাদি।
অপ্রকাশিত তথ্য উৎস:
অনেক সময় কোন সংস্থার অপ্রকাশিত তথ্য উৎস থেকেও মাধ্যমিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়। বিভিন্ন সরকারী ও আধা-সরকারী প্রতিষ্ঠান অনেক সময় তথ্য প্রকাশ না করে রেকর্ডভুক্ত করে রাখে এবং প্রয়োজনবোধে এ উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা যায়।
(ক) যখন প্রাথমিক উৎস থেকে কোন সংখ্যা কপি করা হয় এটা অনেক সময় ভুল কপি করাও হতে পারে।
(খ) উৎসে অনেক সময় বিভিন্ন তথ্যের সঠিক সংজ্ঞা সম্পর্কে ধারণা করা যায় না।
(গ) উৎসে প্রাথমিকভাবে কিভাবে এবং কি উপায়ে নমুনা নিয়ে তথ্য সপ্তাহ করা হয়েছে তার বর্ণনা থাকে না। সরকারী বা অন্যসূত্রে প্রকাশিত তথ্য ব্যবহার করার আগে সেগুলোর নির্ভরযোগ্যতা সম্বন্ধে নিঃসন্দেহ হওয়া প্রয়োজন।
(ক) অনেক খরচ কম হয়
তথ্যকে সহজভাবে এবং সকলের নিকট বোধগম্য ও আকর্ষণীয় করার বিভিন্ন পদ্ধতি যেমন শ্রেণীকরণ, ছককরণ, চিত্র ইত্যাদির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়।
সংগৃহীত তথ্যসমূহকে প্রথমে শ্রেণীবদ্ধ করে এবং পরে সারণির মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়। এগুলোকে আরও সংক্ষিপ্ত, সহজবোধ্য ও অর্থবহ করার জন্য লেখচিত্রের মাধ্যমে তথ্য উপস্থাপন করা হয়।
সুতরাং তথ্যভিত্তিক অনুষ্ঠানে পূর্বনির্ধারিত উদ্দেশ্যে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। যে ব্যক্তি তথ্য সংগ্রহ করেন তাঁকে বলে তথ্য সংগ্রাহক।
এ পোস্টে বিভিন্ন পাঠে তথ্য ও তার বৈশিষ্ট্য, তথ্য সংগ্রহ, তথ্য উপস্থাপন, ঘটনসংখ্যা ও ঘটনসংখ্যার বিন্যাস, লেখচিত্রের মাধ্যমে তথ্য উপস্থাপন ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।
তথ্য কি :-
তথ্য বলতে কোন বিষয়, ঘটনা, বা কাজের সম্পর্কে যে সমস্ত উপাদান বা বিবরণ থাকে, তাকেই তথ্য ( Data) বলা হয়।তথ্য হল যেকোন তরঙ্গরূপে প্রকাশিত বা সংরক্ষিত উপাদান যা কোন বিষয়ের সম্পর্কে জ্ঞান, বোঝা বা প্রতিনিধিত্ব করে।
তথ্য হতে পারে -
1. লিখিত বা মৌখিক
2. ছবি বা ভিডিও রূপ
3. সাইন বা সংকেত
4. ডিজিটাল বা কম্পিউটারাইজড
5. সংখ্যাগত বা পরিসংখ্যানগত
যেকোন বিষয়ের সম্পর্কে যথেষ্ট পরিমাণে তথ্য না থাকলে সেই বিষয়টি সম্পর্কে ভাল ধারণা পাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। সুতরাং, তথ্য জ্ঞান অর্জনে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
পরিসংখ্যান গবেষণায় প্রধান কাঁচা উপাদান হলো তথ্য। তথ্যের ওপর ভিত্তি করেই পরিসংখ্যানিক বিশেষণের মাধ্যমে তথাবিশ্ব সম্পর্কে জানা যায়।
উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের গড় বয়স জানতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউটোরিয়াল কেন্দ্র থেকে কিছু সংখ্যক ছাত্র- ছাত্রীর বয়স সংগ্রহ করে গড় বয়স সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যাবে।
সেক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীদের বয়স পরিমাপ করলে যে পরিমাপকগুলো পাওয়া যাবে সেগুলোই তথ্য। যে কোন পরিসংখ্যান ভিত্তিক অনুসন্ধানে প্রথমেই দরকার সঠিক ও সুষ্ঠু তথ্য।
তথ্য কত প্রকার ও কি কি :-
তথ্যের বৈশিষ্ট্যের ওপর তথ্য কত প্রকার ও কি কি :-
তথ্যের বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে তথ্যকে সাধারণত দুভাগে ভাগ করা যায়-- গুণবাচক (Qualitative) তথ্য
- পরিমাণবাচক (Quantitative) তথ্য
গুণবাচক তথ্য :-
কোন অনুসন্ধানে গবেষণাকারী কোন বস্তু বা ব্যক্তির বিশেষ কোন বৈশিষ্ট্যকে আছে বা নেই দ্বারা চিহ্নিত করে এবং ঐ বৈশিষ্ট্য কত বাকি বা বস্তুর মধ্যে আছে বা নেই নির্ণয় করলে যে তথ্য পাওয়া যায় তাকেই গুণবাচক তথ্য বলা হয়।
উদাহরণস্বরূপ, কোন কৃষিবিদ ক্ষেতের পোকা-মাকড় মারার জন্য ঔষধ ছিটিয়েছেন এবং লক্ষ্য করেছেন ঐ ঔষধ কার্যকরী কি না। এক্ষেত্রে কার্যকর বা কার্যকর নয়, এমন তথ্যকে গুণবাচক তথ্য বলে।
আবার কোন অনুসন্ধানে যদি জানতে চাওয়া হয় যে কত লোকের চুল সাদা বা কতজনের অন্য রঙের চুল আছে এ সমস্ত ক্ষেত্রে যে তথ্য পাওয়া যায় সেগুলোকে বলে গুণবাচক তথ্য বলে।
পরিমাণবাচক তথ্য :-
যখন কোন গবেষক কোন ব্যক্তি বা বস্তুর বৈশিষ্ট্যকে পরিমাণগতভাবে পরিমাপ করে তখন সে তথ্যকে পরিমাণবাচক তথ্য বলে।
উদাহরণস্বরূপ, বিভিন্ন লোকের বয়স আরা, পারিবারিক জরিপে পরিবারের লোক সংখ্যা, আবাদী জমির পরিমাণ, গৃহপালিত পশুর পরিমাণ, উৎপন্ন ফসলের পরিমাণ ইত্যাদি পরিমাপযোগ্য তথ্যগুলোকে পরিমাণবাচক তথ্য বলে।
পরিমাপযোগ্য তথ্যগুলোর মানের একটি সীমা আছে তাই এ তথ্যগুলোকে চলক (variable) বলে।
চলক দুই ধরনের
• বিচ্ছিন্ন চলক (Discrete variable).
• অবিচ্ছিন্ন চলক (Continuous variable)
তথ্যের সংগ্রহ ওপর তথ্য কত প্রকার ও কি কি :-
সাধারণত দুই ভাবে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। প্রথমটি হল প্রাথমিক (Primary) উৎস থেকে এবং দ্বিতীয়টি হল মাধ্যমিক (Secondary) উৎস থেকে।উৎসের উপর নির্ভর করে তথ্য বা উপাত্তকে দুইভাগে ভাগ করা হয়।
- প্রাথমিক তথ্য এবং
- মাধ্যমিক তথ্য।
প্রাথমিক তথ্য কাকে বলে :-
যে তথ্য প্রথমবার সংগ্রহ করা হয় তাকে প্রাথমিক তথ্য বলা হয়। এ ধরনের তথ্য অনেকটা আলোচিত। বিভিন্ন ধরনের জরিপের মাধ্যমে কোন প্রতিষ্ঠান কিংবা কোন ব্যক্তি এ ধরনের তথ্য সংগ্রহ করে থাকে।
মাধ্যমিক তথ্য কাকে বলে:-
অন্যদিকে যে তথ্য প্রাথমিক অবস্থায় সংগৃহীত না হয়ে প্রকাশিত অথবা অপ্রকাশিত অন্য উৎস থেকে সংগৃহীত হয়ে থাকে তাকে মাধ্যমিক তথ্য বলা হয়।
মাধ্যমিক তথ্য বা উপাত্ত গোছানো অবস্থায় থাকে।
উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশের পরিসংখ্যান ব্যুরো বিভিন্ন জরীপের মাধ্যমে অথবা আদমশুমারীর মাধ্যমে প্রথমবারের মতো যে তথ্য সংগ্রহ করে তাকে প্রাথমিক তথ্য বলে আবার অন্য কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি যখন পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত তথ্য ব্যবহার করে তখন সে তথ্যকে বলা হয় মাধ্যমিক তথ্য।
তথ্যের বৈশিষ্ট্য :-
১. সংগ্রহযোগ্যতা: তথ্য সংগ্রহ করা যায় এবং পরবর্তীতে ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করা যায়।২. প্রকাশনাযোগ্যতা: তথ্যকে যে কোন মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়, যেমন - কাগজ, বই, সংবাদপত্র, রেডিও, টিভি, ইন্টারনেট ইত্যাদি।
৩. প্রসারণযোগ্যতা: তথ্য এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সহজেই ছড়িয়ে পড়ে।
৪. বহুমুখী: তথ্য একাধিক উপায়ে উপস্থাপন করা যায়, যেমন লেখা, ছবি, শব্দ, ভিডিও।
৫. বিশ্বস্ততা: তথ্যের উৎস, তথ্য সংগ্রহের পদ্ধতি ইত্যাদিতে ভিত্তি করে তথ্যের বিশ্বস্ততা বিবেচনা করা হয়।
৬. অসীমতা: তথ্যের পরিমাণ অসীম। নতুন নতুন তথ্য অবিরত সংযোজন ঘটছে।
৭. দ্রুত প্রসারণ: আধুনিক যুগে তথ্য দ্রুত এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছড়িয়ে পড়ে।
৮. ক্ষয়শীলতা: তথ্য কালক্রমে ক্ষয় বা হ্রাস পায়।
৯. বিনিময়যোগ্যতা: তথ্য বিনিময় করা যেতে পারে।
এসব বৈশিষ্ট্যের কারণেই তথ্য এতটা গুরুত্বপূর্ণ।
তথ্যের প্রয়োজনীয়তা :-
1. সিদ্ধান্ত নেওয়া:সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য প্রাসঙ্গিক তথ্য প্রয়োজন। যেমন,
- - কোন পণ্য কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য ঐ পণ্যের মূল্য, গুণ, ব্র্যান্ড ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য প্রয়োজন।
- - ব্যক্তিগত জীবনে যেমন চাকরি, বিয়ে, আবাসন ইত্যাদি সিদ্ধান্তের জন্য প্রাসঙ্গিক তথ্য প্রয়োজন।
- - ব্যবসায়ে পণ্য উৎপাদন, মার্কেটিং সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বাজার, গ্রাহক, প্রতিযোগিতা সম্পর্কে তথ্য লাগে।
- - রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে আইন, নীতি গঠনে প্রয়োজনীয় তথ্য থাকতে হবে।
2. সমস্যা সমাধান:
কোন সমস্যা সমাধানের জন্য সেই সমস্যার উৎপত্তি, কারণ ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য প্রয়োজন। এছাড়া সমাধানের বিভিন্ন উপায় সম্পর্কে তথ্য থাকা দরকার।
- - চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগীর লক্ষণ, রিপোর্ট ইত্যাদি তথ্য দরকার।
- - পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে বিজ্ঞানীদের গবেষণার তথ্য প্রয়োজন।
3. পরিকল্পনা প্রণয়ন:
কোন কাজ বা প্রকল্পের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হলে সংশ্লিষ্ট সকল তথ্য প্রয়োজন হয়। যেমন বাজেট, সময়, মানবসম্পদ ইত্যাদি।
- - শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠক্রম প্রণয়নে বিষয়ভিত্তিক তথ্য লাগে।
- - সড়ক, রেল নির্মাণের জন্য ভৌগলিক তথ্য গুরুত্বপূর্ণ।
4. গবেষণা ও উদ্ভাবন:
গবেষণা ও নতুন কিছু উদ্ভাবনের জন্য প্রাসঙ্গিক বিষয়ে পূর্ব-পরবর্তী গবেষণা ও তথ্যাদি প্রয়োজন হয়।
- - নতুন চিকিৎসা পদ্ধতি উদ্ভাবনে পূর্বের গবেষণা ও চিকিৎসার তথ্য ব্যবহার করা হয়।
- - কৃষির ক্ষেত্রে জমির ধরণ, আবহাওয়ার তথ্য নতুন ফসল চাষে কাজে আসে।
5. শিক্ষাগত উন্নয়ন:
শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বৃদ্ধির জন্য পাঠ্যপুস্তক, রেফারেন্স বই, ইন্টারনেট ইত্যাদি থেকে উপযুক্ত তথ্য প্রয়োজন।
এভাবে সকল ধরনের কাজেই প্রাসঙ্গিক তথ্য ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়। বিভিন্ন কাজ সম্পাদনে উপযুক্ত তথ্য অত্যন্ত জরুরি। তথ্য ছাড়া কোন কাজই সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। তাই তথ্যকে সবসময়ই গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
তথ্যের উৎস কত প্রকার ও কি কি :-
যে কোন অনুসন্ধানে পূর্ব নির্ধারিত উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। অর্থাৎ কোন বিষয়ে কোন কিছু জানার জন্য পরিসংখ্যান পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করতে হয়। পরিসংখ্যান পদ্ধতির প্রাথমিক স্তর হচ্ছে তথ্য সংগ্রহ।তথ্য সংগ্রহ করার সময় কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয় যাতে করে তথ্য নির্ভুল হয়। নির্ভুল তথ্যের মাধ্যমেই কেবলমাত্র কোন বিষয়ের সঠিক তথ্য পাওয়া যায়। সাধারণত দুটি উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
- প্রাথমিক (Primary) উৎস। এবং
- মাধ্যমিক (Secondary) উৎস।
প্রাথমিক তথ্যের উৎস কি কি :-
তথ্য সংগ্রহের সকল পদ্ধতিরই কিছু না কিছু সীমাবদ্ধতা থাকে। কোন একক পদ্ধতিই সম্পূর্ণভাবে ত্রুটিযুক্ত নয়। একই তথ্য সংগ্রহের জন্য অনেক সময় একাধিক পদ্ধতি ব্যবহার করার প্রয়োজন হতে পারে। প্রাথমিক তথ্য নিম্নের যে কোন একটি পদ্ধতির মাধ্যমে সংগ্রহ করা যেতে পারে।১। প্রত্যক্ষ ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার,
২। পরোক্ষ মৌখিক জিজ্ঞাসাবাদ,
৩। প্রশ্নরের মাধ্যমে এবং
৪। স্থানীয় সংস্থা বা যোগাযোগকারীর মাধ্যমে।
উপরের পদ্ধতিসমূহ নিচে আলোচনা করা হলো।
প্রত্যক্ষ ব্যক্তিগত সাক্ষাৎকার:
এ পদ্ধতিতে অনুসন্ধানকারী সরাসরি উত্তরদাতার সাথে সাক্ষাৎ করে জরীপের নির্ধারিত প্রশ্নপত্র জিজ্ঞাসা করার পর ইদিত তথ্য সংগ্রহ করে থাকে।
উদাহরণস্বরূপ যদি কোন ব্যক্তি কোন কারখানার শ্রমিকদের কাজের অবস্থা সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করতে চান তবে তাকে ঐ কারখানায় গিয়ে সরাসরি শ্রমিকদের সাথে সাক্ষাৎ করে কাংখিত তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।
পরোক্ষ মৌখিক জিজ্ঞাসাবাদ:
এ পদ্ধতিতে যখন কোন উত্তরদাতা কোন তথ্য সম্পর্কে সঠিক ধারণা দিতে সংকোচবোধ কিংবা অপারগতা প্রকাশ করে তখন তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় তথ্য বা উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়।
উদাহরণস্বরূপ কোন খারাপ অভ্যাস যেমন- মদ খাওয়া, জুয়া খেলা ইত্যাদি সম্পর্কে তথ্য জানতে হলে কোন ব্যক্তি সরাসরি তার নিজের খারাপ অভ্যাসের তথ্য প্রকাশ করে না সেক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষ যেমন প্রতিবেশি, বন্ধু-বান্ধব ইত্যাদির নিকট থেকে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করতে হয়।
প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ:
এ পদ্ধতির মাধ্যমে কোন অনুসন্ধান সম্পর্কিত পরিমিত সংখ্যক প্রশ্নের একটি তালিকা তৈরি করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। এধরনের পদ্ধতির মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা সবচেয়ে বেশি উপযোগী এবং এ পদ্ধতির সাহায্যেই কোন গবেষক, সরকারি বেসরকারি সংস্থা তথ্য সংগ্রহ করে তাকে। প্রশ্নের তালিকাকে প্রশ্নপত্র বলে।
প্রশ্নপত্র ডাকযোগে অথবা কোন সংগ্রাহকের (informers ) মাধ্যমে পাঠানো হয় এবং উত্তরদাতাকে প্রশ্নপত্রের সকল প্রশ্নের উত্তর দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়।
সুবিধা-
(ক) প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা সবচেয়ে বেশি উপযোগী এবং সাধারণত এ পদ্ধতির মাধ্যমেই কোন গবেষক কিংবা কোন প্রতিষ্ঠান তথ্য সংগ্রহ করে থাকেন।
(খ) অনুসন্ধান ক্ষেত্র যদি খুবই ব্যাপক হয় এবং বিভিন্ন ভৌগোলিক স্থানের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে সেক্ষেত্রে এ পদ্ধতি ব্যবহার করা বেশি উপযোগী।
(গ) এ পদ্ধতিতে তথ্য সপ্তাহ করা অন্য যে কোন পদ্ধতি অপেক্ষা কম সময় লাগে।
অসুবিধা-
(ক) উত্তরদাতা যদি অশিক্ষিত হয় অর্থাৎ যদি পড়তে এবং লিখতে না জানেন সেক্ষেত্রে এ পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
(খ) এ পদ্ধতিতে অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও উত্তরদাতার সংখ্যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে কম থাকে এবং দেখা যায় যে, যারা কেবলমাত্র অধিকতর উৎসাহী তাদের নিকট থেকেই তথ্য সংগ্রহ করা যায়।
(খ) এ পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহে কিছু বেশি খরচ লাগে কারণ ডাকমাশুল লাগে এবং সংগ্রাহক নিয়োগ করতে বেশ খরচ হয়।
স্থানীয় সংস্থা বা যোগাযোগকারীর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ:
এ পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় যোগাযোগকারী বা স্থানীয় সংস্থাকে নিয়োগ করা হয়। এধরনের সংস্থা বা যোগাযোগকারী স্থানীয়ভাবে তথ্য সংগ্রহ করে প্রধান অফিসে পাঠিয়ে দেয়। সংবাদপত্র অফিস সাধারণত এ ধরনের স্থানীয় যোগাযোগকারী নিয়োগ করে থাকে।
সুবিধা-
(ক) এ পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ অনেকটা নির্ভরযোগ্য এজন্য যে যোগাযোগকারী বা সংগ্রাহক মাঠপর্যায়ে থাকে এবং বিভিন্ন উপায়ে সঠিক তথ্য সংগ্রহ করতে পারে ।
অসুবিধা-
(ক) এ পদ্ধতিতে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে খরচের পরিমাণ বেশি হয় কারণ যোগাযোগকারী কিংবা তথ্য সংগ্রাহক সাধারণত বেতনভূক্ত কর্মচারী হয়।
(খ) যোগাযোগকারী বা তথ্য সংগ্রাহক সৎ এবং নিষ্ঠাবান না হলে নির্ভুল তথ্য সংগ্রহ সম্ভব নয়।
মাধ্যমিক তথ্যের উৎস কি কি :-
যে তথ্য প্রাথমিকভাবে অন্য কোন সংস্থা বা গবেষক সংগ্রহ করে ব্যবহার করেছে এবং প্রকাশ করেছে সেই প্রকাশিত তথ্য থেকে যে তথ্য সংগ্রহ করা হয় তাকে মাধ্যমিক তথ্য বলা হয়।অর্থাৎ মাধ্যমিক তথ্য সরাসরি কোন প্রকাশিত কিংবা অপ্রকাশিত তথ্যের উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয়।
মাধ্যমিক তথ্য নিম্নের পদ্ধতির মাধ্যমে সংগ্রহ করা যেতে পারে।
প্রকাশিত তথ্য উৎস:
অনেক সময় রাষ্ট্র বা কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিবিশেষ নিজেদের প্রয়োজনে বিভিন্ন বিষয়ের উপর নিয়মিত বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ এবং প্রকাশ করে থাকেন। প্রকাশিত তথ্য উৎসের মধ্যে আছে-
(ক) বিভিন্ন সরকারী সংস্থা থেকে প্রকাশিত রিপোর্ট যেমন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন রিপোর্ট।
(খ) আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন, বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা ইত্যাদি থেকে স্বায়ত্তশাসিত বা আধা সরকারী প্রতিষ্ঠানের প্রকাশনা ও রিপোর্ট যেমন, বিশ্ববিদ্যালয়, সিটি কর্পোরেশন ইত্যাদি।
অপ্রকাশিত তথ্য উৎস:
অনেক সময় কোন সংস্থার অপ্রকাশিত তথ্য উৎস থেকেও মাধ্যমিক তথ্য সংগ্রহ করা হয়। বিভিন্ন সরকারী ও আধা-সরকারী প্রতিষ্ঠান অনেক সময় তথ্য প্রকাশ না করে রেকর্ডভুক্ত করে রাখে এবং প্রয়োজনবোধে এ উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা যায়।
মাধ্যমিক তথ্যের সীমাবদ্ধতা ও সতর্কতা :-
পূর্বেই বলা হয়েছে মাধ্যমিক তথ্য হল সেই তথ্য যেটা প্রাথমিকভাবে অন্য কেউ সংগ্রহ করে প্রকাশ করেছে। এই প্রকাশিত উৎস বা মাধ্যমিক উৎসের অনেক সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। যেমন-(ক) যখন প্রাথমিক উৎস থেকে কোন সংখ্যা কপি করা হয় এটা অনেক সময় ভুল কপি করাও হতে পারে।
(খ) উৎসে অনেক সময় বিভিন্ন তথ্যের সঠিক সংজ্ঞা সম্পর্কে ধারণা করা যায় না।
(গ) উৎসে প্রাথমিকভাবে কিভাবে এবং কি উপায়ে নমুনা নিয়ে তথ্য সপ্তাহ করা হয়েছে তার বর্ণনা থাকে না। সরকারী বা অন্যসূত্রে প্রকাশিত তথ্য ব্যবহার করার আগে সেগুলোর নির্ভরযোগ্যতা সম্বন্ধে নিঃসন্দেহ হওয়া প্রয়োজন।
মাধ্যমিক তথ্যের গুরুত্ব :-
কোন অনুসন্ধান করতে গেলে এর প্রকৃতি এবং প্রয়োগ, খরচের প্রাপ্যতা, সময় ইত্যাদি বিবেচনা করে কোন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে তা নির্ধারণ করা হয়। সাধারণত যে কোন পরিসংখ্যানিক গবেষণায় মাধ্যমিক উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। এতে করে-(ক) অনেক খরচ কম হয়
(খ) সময় কম লাগে
(গ) শ্রম কম লাগে এবং
(ঘ) সংগ্রাহক নিয়োগ করতে হয় না, গবেষক কিংবা অনুসন্ধানকারী নিজেই তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।
অনেক ক্ষেত্রেই অনুসন্ধানকারী তার ইতি তথ্যের জন্য মাধ্যমিক তথ্য ব্যবহার করতে পারেন কারণ আজকাল বিভিন্ন সরকারী, আধা-সরকারী এবং বিভিন্ন স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ক্ষেত্রের তথ্য সংগ্রহ করে নিয়মিত প্রকাশ করে থাকে।
(গ) শ্রম কম লাগে এবং
(ঘ) সংগ্রাহক নিয়োগ করতে হয় না, গবেষক কিংবা অনুসন্ধানকারী নিজেই তথ্য সংগ্রহ করতে পারে।
অনেক ক্ষেত্রেই অনুসন্ধানকারী তার ইতি তথ্যের জন্য মাধ্যমিক তথ্য ব্যবহার করতে পারেন কারণ আজকাল বিভিন্ন সরকারী, আধা-সরকারী এবং বিভিন্ন স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ক্ষেত্রের তথ্য সংগ্রহ করে নিয়মিত প্রকাশ করে থাকে।
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.