কেন্দ্রীয় প্রবণতা কাকে বলে? কেন্দ্রীয় প্রবণতা কত প্রকার ও কি কি?

কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিসংখ্যানের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। আজকের পোস্টে আমরা আলোচনা করব কেন্দ্রীয় প্রবণতা কাকে বলে এ সম্পর্কে। স্কোর বা ডাটার বিশ্লেষণে কেন্দ্রীয় প্রবণতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কেন্দ্রীয় প্রবণতা বলতে বোঝায় ডাটা সেটের মাঝারি মান বা সাধারণ অবস্থান। এটি দিয়ে আমরা সমষ্টির সাধারণ পারদর্শিতা সম্পর্কে ধারণা পাই।

কেন্দ্রীয় প্রবণতার জন্য ব্যবহৃত হয় গড়, মধ্যমান এবং সর্বাধিক প্রাপ্তিকৃত মান বা মোড। আজকের পোস্টে আমরা এই মাপগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।

কেন্দ্রীয় প্রবণতাকে সংজ্ঞায়িত করার পূর্বে আসুন এ বিষয়ে একটি উদাহরণ নিয়ে আলোচনা করি।

আমরা নানা ধরনের কৌশল এবং হাতিয়ার ব্যবহার করে শিক্ষার্থীর বা অন্যান্য কাজের বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য পরিমাপ করে থাকি। পরিমাপের ফলাফলকে সাধারণত প্রকাশ করি নম্বর বা স্কোর দিয়ে।

কোন একটি শিক্ষার্থীদলের স্কোরগুলো যখন ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে তখন তা থেকে দলের কোন সদস্য বা সমগ্র দলটির পারদর্শিতা সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোন ধারণা পাওয়া যায় না।

যে কোন শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত অগ্রগতি এবং সেই সঙ্গে দলগত অগ্রগতি সম্বন্ধে অবহিত হওয়া প্রয়োজন।

কারণ প্রত্যেক শিক্ষার্থী একটি আলাদা ব্যক্তিসত্তা এবং একটি শ্রেণীতে রয়েছে এরকম ৫০/৬০ টি পৃথক ব্যক্তিসত্তার সমাবেশ।

প্রতিটি শিক্ষার্থী তার সহপাঠীদের তুলনায় কোন অবস্থানে রয়েছে তা প্রতিনিয়ত যাচাই করতে হয়।

এ সমস্ত কারণে পরিসংখ্যান পদ্ধতি প্রয়োগ করে শিক্ষার্থীদের প্রাপ্ত স্কোরগুলোকে বিশ্লেষণ করার প্রয়োজন দেখা দেয়। স্কোরগুচ্ছের তাৎপর্য নির্ণয়ের জন্য প্রধানত যে দুই প্রকার পরিমাপের প্রয়োজন হয় তা হচ্ছে :
  • কেন্দ্রীয় প্রবণতা ও
  • বিষমতা

উল্লিখিত দুই প্রকার পরিমাপ মধ্যে এখানে কেন্দ্রীয় প্রবণতা বলতে কি বুঝায়, কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপগুলো কি কি, কোন পরিমাপের বৈশিষ্ট্য কি? এছাড়া প্রত্যেক প্রকার কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপ পদ্ধতির ব্যবহার সম্বন্ধে দক্ষতা অর্জন করব।

কেন্দ্রীয় প্রবণতা কাকে বলে:-

কোনো পরিসংখ্যা বিভাজনে রাশিতথ্যের মানসমূহ একটি কেন্দ্রীয় মানের চারিদিকে বিস্তৃত হয়ে থাকে। যে কেন্দ্রীয় মানের চারিদিকে রাশিতথ্যমালার মানসমূহ বিস্তৃত থাকে তার সংখ্যাগত পরিমাণকে কেন্দ্রীয় প্রবণতা বলে।

অর্থাৎ যে একক সাংখ্যমানকে একগুচ্ছ সাংখ্যমানের প্রতিনিধি হিসাবে ব্যবহার করা হয় তাকে কেন্দ্রীয় প্রবণতা বলে।

এলিসন ও অন্যান্যদের (Elifson) মতে কেন্দ্রীয় প্রবনতা হল কোনো পরিসংখ্যা বন্টনের কেন্দ্রীয় অবস্থানের সূচক (Index of central location used in the description of frequency distribution)। এই সূচকটি একটি মান নির্দেশ করে যেটি এ. ফ. জে. গ্রাভেটার এবং এল. বি. ওয়ালানো'র (Gravetter & Wallnau) মতে ঐ বন্টনের প্রতিনিধিত্ব মূলক হয়ে থাকে (Single most representative score for an entire distribution)।

সহজ ভাবে বললে, কেন্দ্রীয় প্রবণতা হল কোনো পরিসংখ্যা বন্টনের একক কেন্দ্রীয় মান যা সংশ্লিষ্ট প্রাপ্তাঙ্ক বন্টনটির প্রতিনিধিত্বমূলক হয়ে থাকে।

কেন্দ্রীয় প্রবণতার উদাহরণ :-

যেমন কোনো একটি বিদ্যালয়ে কোনো একটি শ্রেণিতে তিনটি Section রয়েছে। এই তিনটি Section এ বিজ্ঞান বিষয়ে পারদর্শিতার অভীক্ষা প্রয়োগ করা হবে।

যদি তিনটি Section-এ পারদর্শিতার তুলনা বিচার করতে চাওয়া হয়, তাহলে একটি উপায় হল তিনটি পরিসংখ্যা বিভাজনকে পাশাপাশি রেখে বিচার করা। তবে এইভাবে বিচার অত্যন্ত কষ্টসাধ্য ও এইভাবে যে সিদ্ধান্তে আসা যাই, তা কখনোই নির্ভরযোগ্য হতে পারে না।

কিন্তু যদি পরিসংখ্যা বিভাজনের অনেকগুলি সাংখ্যমানের পরিবর্তে এমন একটি মান থাকে যার দ্বারা নির্দিষ্ট তিনটি Section-এর অগ্রগতি প্রকাশ করা সম্ভব হয়, তাহলে কাজ সহজ হয়।

এক্ষেত্রে ওই বিদ্যালয়ের তিনটি শ্রেণির প্রত্যেক Section-এ পারদর্শিতা ব্যাখ্যা করার জন্য একটি করে সাংখ্যমান নির্ণয় করা যেতে পারে। এই সাংখ্যমান প্রাপ্ত সাংখ্যমান গুচ্ছের প্রতিনিধি হিসাবে কাজ করতে পারে। এই প্রতিনিধি স্থানীয় মানই হল রাশিবিজ্ঞানে কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপ।

কেন্দ্রীয় প্রবণতা কত প্রকার ও কি কি:-

কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপের জন্য কতকগুলো বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে। পদ্ধতিগুলো নিরূপ-

১। গড় (Mean) গড় আবার তিন ধরনের। যথা-
  1. যোজিত গড় (Arithmetic Mean)
  2. গুণিতক গড় (Geometric Mean)
  3. উল্টন গড় (Harmonic Mean)

২। মধ্যক (Median)

৩। প্রচুরক (Mode)

এগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হল নীচে -

গড় (Mean) কাকে বলে :-

সাধারণ অর্থে গড় বলতে সমজাতীয় রাশিমালার অন্তর্ভুক্ত রাশিগুলির সমষ্টিকে রাশির সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে যে ভাগফল পাওয়া যায় তাকেই বোঝায়। (Mean is the sum of the separate scores or measures divided by their numbers)

গড় নির্ণয়ের পদ্ধতি :

গড় নির্ণয়ের দুটি পদ্ধতি রয়েছে। এগুলো হলো -
  1. দীর্ঘ পদ্ধতি (Long method)
  2. সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি (Short method) বা কল্পিত গড় পদ্ধতি (Assumed Mean Method).

গড়ের ধর্ম :-
  • গড় রাশিমালার যে কোনো একটি রাশির মান দ্বারা প্রভাবিত হয় অর্থাৎ যে কোনো একটি স্কোরের পরিবর্তনের ফলে রাশিমালার গড়ের পরিবর্তন হয়।
  • গড় হল রাশিমালার প্রকৃত সাম্যবিন্দু (Balance point) অর্থাৎ £(X-M) = 0 [X = স্কোর; M = গড়]।
  • কোনো রাশিমালার প্রতিটি রাশির সঙ্গে নির্দিষ্ট মান যোগ করলে বা প্রতিটি থেকে নির্দিষ্ট মান বিয়োগ করলে বা তাদেরকে একই সংখ্যা দিয়ে গুণ করলে বা ভাগ করলে, রাশিমালার গড় মান অনুরূপ ভাবে প্রভাবিত হয়।
  • অসমাপ্ত বণ্টনের গড় নির্ণয় করা যায় না।

গড় সুবিধা :-
  • এটি খুব সহজে নির্ণয় করা যায়।
  • এটি নির্ণয়কালে রাশিতথ্যমালার প্রতিটি রাশিই ব্যবহৃত হয়। এই জন্য একে রাশিতথ্যমালার প্রতিনিধি হিসাবে গণ্য করা যেতে পারে।এর সাহায্যে সমজাতীয় দুই বা ততোধিক রাশিতথ্যমালার বৈশিষ্ট্য তুলনা করা সম্ভব হয়।
  • এটি নির্ণয় করবার সময় বীজগাণিতিক নিয়মাবলি প্রয়োগ করা যায়।
  • এর মান নির্ণয়ের জন্য রাশিতথ্যমালাকে ক্রমবর্ধমান সারিতে সাজানোর প্রয়োজন হয় না।
  • এর মান নির্ণয়ে রাশিতথ্যমালার প্রতিটি রাশি ব্যবহৃত হয়। সেজন্য এর মান নমুনা বিচ্যুতি (Sampling Fluctuation) দ্বারা প্রভাবিত হয় না।
  • কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাণ হিসেবে এটি সর্বপেক্ষা নির্ভরযোগ্য।
  • এটি পরিসংখ্যান শাস্ত্রের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়।

গড়ের অসুবিধা :-
  • রাশি তথ্যমালার পর্যবেক্ষণ দ্বারা এর মান নির্ধারণ করা যায় না।
  • এর মান রাশিতথ্যমালার কোনো রাশির সমান হয় না।
  • রাশিতথ্যমালার যদি একটি বা দুটি রাশির মান অতি উচ্চ বা অতি নিম্ন হয়, তাহলে তাদের দ্বারা এর মান বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়।
  • মুক্ত প্রান্ত শ্রেণি বিশিষ্ট (Open Ended Classes) শ্রেণিবদ্ধ পরিসংখ্যা বিভাজনের ক্ষেত্রেও গড়ের সঠিক মান নির্ধারণ করা যায় না।

গড়ের ব্যবহার :-

গড় (Mean) ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় তখনই যখন-
  • কেন্দ্রীয় মানের চারদিকে স্কোরগুলি প্রতিসমভাবে বিন্যস্ত অবস্থায় থাকে।
  • প্রকৃত কেন্দ্রীয় প্রবণতা নির্ণয় করতে চাই।
  • যখন অন্যান্য পরিসংখ্যান যথা SD, coefficient of Correlation নির্ণয় করার প্রয়োজন হয়।
  • যখন আমরা প্রত্যেকটি স্কোরের ওজন (Weight) একই বলে ধরে নিই।
  • যখন বন্টনটি প্রায় স্বাভাবিক থাকে।
  • পরিবর্তিত স্কোর (Z-স্কোর, আদর্শ স্কোর, T-স্কোর) নির্ণয়ে ব্যবহার করা হয়।

গড়ের প্রকারভেদ :-

যোজিত গড় (Arithmetic Mean)

কোন পর্যবেক্ষণে কতকগুলো রাশির সমষ্টিকে রাশিগুলোর সংখ্যা দ্বারা ভাগ করলে যে ভাগফল পাওয়া যায় তাকে ঐ রাশিগুলোর যোজিত গড় বলে।

যোজিত গড়ের সুবিধা:
  • সার্বিকভাবে সংগায়িত এবং সহজে হিসাব করা যায়।
  • সহজবোধ্য হওয়ায় এটি যোজিত ও বীজগণিতের প্রক্রিয়ায় আরোপের উপযোগী। ফলে পরিসংখ্যান তথ্য বিশ্লেষণের ব্যবহার সর্বাধিক।
  • যোজিত গড় নির্ণয় করতে হলে পর্যবেক্ষণের সব কয়টি রাশিকে বিবেচনায় আনতে হয়।
  • এটি সহজবোধ্য হওয়ার কারণে সাধারণভাবে কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপক হিসাবে সর্বাধিক ব্যবহৃত হয়।
  • অনুক্রমের রাশিগুলোর প্রত্যেকটির প্রকৃত মান দেয়া না থাকলেও কেবলমাত্র এর সমষ্টি এবং সংখ্যা জানা থাকলেই যোজিত গড় নির্ণয় করা যায়।
  • নমুনার তারতম্য দ্বারা কম প্রভাবিত হয়।

যোজিত গড়ের অসুবিধা :-
  • প্রান্তিক বা চরম মানসমূহ দ্বারা যথেষ্ট প্রভাবিত হয়।
  • যদি ঘটনসংখ্যা বিন্যাসের চরম শ্রেণিসমূহের প্রান্ত খোলা হয়। তবে যোজিত গড় হিসেব করা যায় না।
  • যোজিত গড়ের মানসমূহ সিরিজ আকারে ঘটে না।

যোজিত গড়ের বৈশিষ্ট্যসমূহ:

যোজিত গড় কেন্দ্রীয় প্রবণতার একটি পরিমাপক। তথ্য অনুক্রমের কেন্দ্রস্থলে এর অবস্থান। ফলে এর কতগুলো যোজিত বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বৈশিষ্ট্যগুলো হলো-
  • কোন একটি পরিসংখ্যান তথ্যসারির গড় থেকে প্রতিটি সংখ্যামানের বিচ্যুতি নির্ণয় করলে সমস্ত বিচ্যুতির সমষ্টি শূন্য হয়।
  • একটি তথ্য অনুক্রমের প্রতিটি তথ্যের বদলে গড় ব্যবহার করলে তাদের যোগফল তথ্যসারির সংখ্যামানসম হের সমষ্টির সমান।
  • N সংখ্যক ধ্রুবক মান a এর গড় a।
  • যোজিত গড় থেকে তথ্য অনুক্রমের প্রতিটি সংখ্যামানের বিচ্যুতির বর্গের সমষ্টি সর্বনিম্ন।

যোজিত গড়ের ব্যবহার :-

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা বিভিন্ন বক্তব্য যেমন, কোন দ্রব্যের গড় ক্রয়মূল্য, কোন পণ্যের গড় আমদানি, মাসিক গড় আয়, শিল্প পণ্যের গড় চাহিদা ইত্যাদি বিষয়ক ধারণার সম্মুখীন হই। এক্ষেত্রে প্রকৃতপক্ষে যোজিত গড় ব্যবহৃত হয়।

কোন বিষয়ের সময়ের ভিত্তিতে সাজানো তথ্যকে সুষম করার জন্য অর্থাৎ বিভিন্ন মাসে উৎপাদন বিভিন্ন রকম হলেও প্রতিমাসে একটি প্রতিনিধিত্বশীল উৎপাদন সম্পর্কে বুঝানোর ক্ষেত্রে যে গড় ব্যবহৃত হয়, তা হলো যোজিত গড়।

সূচক সংখ্যা পরিগণনায়ও যোজিত গড় ব্যবহৃত হয়। যোজিত গড় ছাড়া সম্মিলিত গড় বের করা সম্ভব নয়।

গুণিতক গড় (Geometric mean ) :-

কোন সিরিজের n সংখ্যক অশূন্য ধনাত্নক রাশিগুলোর গুণফলের n তম মূলকে গুণিতক গড় বলে।

গুণিতক গড়ের সুবিধা :-
  • গুণিতক গড়কে সার্বিকভাবে সংজ্ঞায়িত করা যায়।
  • এটি পর্যবেক্ষণের সকল মানের ওপর ভিত্তি করে করা হয়।
  • এটি নমুনার হ্রাসবৃদ্ধি দ্বারা প্রভাবিত হয় কম।
  • এটি ছোট পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে বেশি উপযোগী

গুণিতক গড়ের অসুবিধা :-
  • এটি সহজে বুঝা যায় না এবং গণিতের বিশেষ জ্ঞান না থাকিলে নির্ণয় করা সম্ভব হয় না।
  • যদি ঘটনসংখ্যা বিন্যাসের চরম শ্রেণিসমূহের প্রাপ্ত খোলা হয় তবে এটি হিসাব করা যায় না।
  • গুণিতকের মানসম হকে সিরিজ আকারে প্রকাশ করা যায় না।
  • গুণিতক গড়ের ক্ষেত্রে কোন একটি তথ্যমান শূন্য হলে নির্ণয় করা যায় না।

উল্টন গড় (Hermonic mean) :-

অশূন্য কোন সিরিজের উপন সংখ্যাগুলো ঘোষিত গড়ের উস্টনকে উল্টন গড় বলে।

উল্টন গড়ের সুবিধা:
  • এটি সার্বিকভাবে সংগায়িত করা যায়।
  • নির্ণয় করতে হলে পর্যবেক্ষণের সবকটি রাশিকে বিবেচনা করতে হয় ।
  • নমুনার হ্রাসবৃদ্ধি দ্বারা প্রভাবিত হয় না।
  • ছোট পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে এর গুরুত্ব অনেক।

উল্টন গড়ের অসুবিধা :
  • এটি সহজে বুঝা যায় না ও হিসাব করা যায় না।
  • ঘটনসংখ্যা বিন্যাসের চরম শ্রেণিসমূহের প্রাপ্ত খোলা হলে উল্টন গড় বের করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
  • উল্টন গড়ের মানসম হকে সিরিজ আকারে প্রকাশ করা যায় না।

ব্যবহারঃ

যখন পর্যবেক্ষণসম nকে হার, বেগ এবং মূল্য ইত্যাদিতে প্রকাশ করা হয় তখন উল্টন গড় ব্যবহার করা হয়।

মধ্যমমান (Median) বা মধ্যক:

মধ্যক কেন্দ্রীয় প্রবণতার অন্য একটি পরিমাপক। যেসব ক্ষেত্রে যোজিত গড় নির্ণয় করা সম্ভব নয় অথবা, যোজিত গড় কেন্দ্রীয় প্রবণতার পরিমাপক হিসাবে কম উপযোগী সেসব ক্ষেত্রে মধ্যক পরিমাপক ব্যবহার করা যেতে পারে।

মানের ঊর্ধ্ব অথবা নিম্নক্রম অনুসারে সাজানো কোন তথ্য অনুক্রমের যে সংখ্যাটি অনুক্রমটিকে সমান দুভাগে বিভক্ত করে তাকে মধ্যক বলে।

যদি রাশিমালার অন্তর্গত রাশিগুলিকে মনের ভ্রমানুসারে (বড়ো থেকে ছোটো অথবা ছোটো থেকে বড়ো) সাজানো হয়, তাহলে সজ্জিত রাশিমালার কেন্দ্রীয় বা মাঝের রাশিটির মানকে বলা হয় ওই রাশিমালার মিডিয়ান বা মধ্যমমান।

মধ্যক পরিসংখ্যান সারিকে সমান দুভাগে ভাগ করে, একদিকে থাকে মধ্যক থেকে কম মানের সব সংখ্যা এবং অন্যদিকে থাকে মধ্যক থেকে বৃহত্তর মানের সমস্ত সংখ্যা। তাই কোন তথ্যসারিকে সাজানোর পর সমান দুভাগে ভাগ করলে যে মধ্যবর্তী রাশিটি পাওয়া। যায় সে মানই হচ্ছে মধ্যক।

মধ্যকের ধর্ম (Properties of Median):
  • মধ্যক রাশিমালার প্রকৃত মান দ্বারা প্রভাবিত হয় না।
  • মধ্যক পরিমাপক স্কেলের একটি বিন্দু মাত্র, যে বিন্দুর উপরে ও নীচে কয়টি স্কোর আছে বলা যায়।
  • রাশিমালার প্রতিটি রাশির সঙ্গে নির্দিষ্ট সংখ্যা যোগ বা বিয়োগ বা গুণ বা ভাগ করলে মধ্যকও অনুরূপভাবে পরিবর্তিত হয়।
  • অসমাপ্ত বন্টনের মধ্যক নির্ণয় করা যায়।

মধ্যকের ব্যবহার (Uses of Median) :

মধ্যক ব্যবহার করা প্রয়োজন হয় তখনই যখন রাশিমালায়
  • কেবলমাত্র প্রকৃত মধ্যবিন্দুটি জানতে চাই
  • প্রান্তীয় রাশিগুলির (extreme scores) মধ্যে বিষমতা বেশি থাকে।
  • কেন্দ্রীয় মান আমরা অপেক্ষাকৃত তাড়াতাড়ি জানতে চাই।
  • যখন বণ্টনটি অসম্পূর্ণ থাকে ও গড় নির্ণয় করা সম্ভব হয় না।
  • যখন গৃহীত এককটি সর্বত্র সমান সে সম্বন্ধে আমরা নিশ্চিত নই। অর্থাৎ যখন স্কোরগুলি Ordinal Scale-এ বিন্যস্ত থাকে।
যখন বণ্টনটি অধিকমাত্রায় মিউড (Skewed) হয়।

মধ্যমমানের সুবিধা (Merits of Medians):

মধ্যমান ব্যবহারের সুবিধাগুলি হল—
  • এটি সহজে নির্ণয় করা যায়।
  • কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাশি তথ্যমালা পর্যবেক্ষণ করেও এটি নির্ণয় করা যায়।
  • এর মান রাশি তথ্যমালার কয়েকটি অতি উচ্চ বা অতি নিম্নমানের রাশির দ্বারা প্রভাবিত হয় না।
  • এর মান রাশি তথ্যমালার প্রসারের উপর নির্ভর করে না। যদি শ্রেণি বিভাজনের দৈর্ঘ্য পরস্পর সমান না হয় বা
  • প্রান্তীয় শ্রেণিবিভাগ মুক্ত থাকে তাহলে তার দ্বারা মধ্যমমানের মান প্রভাবিত হয় না।
  • যে সকল তথ্য সংখ্যার সাহায্যে প্রকাশ করা যায় না, তাদের বৈশিষ্ট্যের পরিমাপ নিরূপণে Median ব্যবহার সুবিধাজনক। যেমন বুদ্ধি, ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি।

মধ্যমানের অসুবিধা (Demerits of Medians):

মধ্যমান ব্যবহারের অসুবিধাগুলি হল—
  • Medians নির্ণয় করার সময় মানসমূহকে মানের ঊর্ধ্বক্রম অনুসারে সাজাতে হয়।
  • বীজগাণিতিক নিয়মাবলির সহজ প্রয়োগ সম্ভব নয়।
  • অনেক সময় সঠিক মান নির্ণয় করা যায় না, আনুমানিক মান নির্ণয় করা হয়।
  • এর মান নির্ণয়ে রাশি তথ্যমালার প্রত্যেকটি রাশি ব্যবহৃত হয় না।

প্রচুরক বা ভূমিষ্ঠক (Mode):

যে রাশিটি রাশিমালার মধ্যে সবচেয়ে বেশিবার পুনরাবৃত্তি হয় তাই হল রাশিমালার ভূমিষ্ঠ বা মোড। (Mode is that single measure or Score which occurs most frequently)

কোন পরিসংখ্যান তথ্যসারিতে যে সংখ্যাটি বা রাশিটি সর্বাধিক পরিলক্ষিত হয় তাকেই ঐ তথ্যরাশির প্রচুরক বা ভূমিষ্ঠক (Mode) বলা হয়।

প্রাপ্ত স্কোরগুলির মধ্যে যে স্কোরটির পুনরাবৃত্তির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি, সেই স্কোরটিকে বলা হয় প্রাপ্ত স্কোরগুচ্ছের মোড।

যদি কোনো পরিসংখ্যা বিভাজনে একটি সংখ্যা অধিকবার থাকে তাহলে তাকে এক সংখ্যা ভূয়িষ্ঠক সংবলিত পরিসংখ্যা বিভাজন (Unimodal frequency distribution) বলে।

আবার যদি কোনে পরিসংখ্যা বিভাজনে দুটি বা তার অধিক সংখ্যা বেশি বার থাকে তাহলে তাকে যথাক্রমে দুই বা বহুসংখ্য ভূমিষ্ঠক সংবলিত পরিসংখ্যা বিভাজন (Bimodal or multimodal frequency distribution) বলে।

যেমন -- 12, 15, 20, 18, 17, 16, 20 এখানে Mode = 20 অর্থাৎ এই পরিসংখ্যান বিভাজনটি unimodal আবার 12, 15, 18, 18, 20, 17, 22, 20, 18 20 উপরোক্ত পরিসংখ্যা বিভাজনের Mode এর মান 18 ও 20 কারণ দুটি সংখ্যাই ৩ বার করে রয়েছে। অর্থাৎ বণ্টনটি Bimodal।

ভূয়িষ্ঠক বা Mode-এর ধর্ম :-
  • Mode এ রাশিমালার একটি মাত্র মানের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
  • রাশিমালার সাধারণ প্রবণতা সম্পর্কে একটি প্রাথমিক ধারণা দেওয়া যেতে পারে।
  • যখন সর্বোচ্চ পরিসংখ্যা দুটি শ্রেণিতে থাকে তখন রাশিমালার দুটি ভূয়িষ্ঠক হতে পারে।
  • একটি বণ্টনে একাধিক ভূয়িষ্ঠক থাকতে পারে।

ভূয়িষ্ঠক বা Mode-এর সুবিধা :-
  • এটি সহজবোধ্য ও খুব সহজে এর মান নির্ণয় করা যায়।
  • এর মান রাশি তথ্যমালার বিস্তৃতির উপর নির্ভর করে না।
  • গড় বা Median-এর চেয়ে এর ব্যবহারিক প্রয়োগ বেশি।
  •  শিক্ষাতত্ত্ব, সমাজতত্ত্ব ও মনোবিজ্ঞানে এর গুরুত্ব যথেষ্ট রয়েছে।

ভূয়িষ্ঠক বা Mode-এর অসুবিধা (Demerits)
  • এর মান নির্ণয়ে বীজগাণিতিক নিয়মাবলি সহজে প্রয়োগ সম্ভব নয়।
  • যদি Frequency বণ্টনে মোট পরিসংখ্যা খুব অধিক না হয় তখন পরিসংখ্যাসমূহে চলকের একটি মান বারবার কেন্দ্রীভূত না হয় তবে Mode নির্ণয় করা অসুবিধাজনক।
  • এর মান নির্ণয়ে রাশিমালার প্রত্যেকটি রাশি ব্যবহৃত হয় না।
  • একটি রাশিমালায় দুই বা তার বেশি mode-এর মান হতে পারে। কিন্তু Mean বা Median এ কেবলমাত্র একটি মানই থাকে।

ভূয়িষ্ঠক বা Mode-এর ব্যবহার:
  • রাশিমালায় কোন স্কোরটি বা দৃষ্টান্তটি বণ্টনের মধ্যে বেশিবার আছে তা জানার জন্য।
  • যখন সবচেয়ে তাড়াতাড়ি একটি কেন্দ্রীয় প্রবণতা পরিমাপের দরকার পড়ে।
  • যখন কেন্দ্রীয় প্রবণতার মোটামুটি একটি পরিমাপ হলেই কাজ চলে যায়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ