উপাত্ত কাকে বলে? উপাত্ত কত প্রকার ও কি কি?

পরিসংখ্যানের বিশ্লেষণ এবং গবেষণায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাঁচা উপাদান হলো উপাত্ত। উপাত্ত ছাড়া কোনো পরিসংখ্যানিক বিশ্লেষণ বা গবেষণা সম্ভব নয়।

উপাত্ত হলো যে পরিমাপকগুলোর ওপর ভিত্তি করে পরিসংখ্যানিক বিশ্লেষণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, যদি আমরা বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের গড় বয়স বের করতে চাই, তাহলে প্রথমেই বিভিন্ন ছাত্র-ছাত্রীদের বয়স পরিমাপ করতে হবে। সেই পরিমাপকগুলোই হলো উপাত্ত। এই উপাত্তগুলোর উপর ভিত্তি করেই আমরা গড় বয়স বের করতে পারবো।

সুতরাং, উপাত্ত ছাড়া কোনো পরিসংখ্যানিক গবেষণা বা বিশ্লেষণ সম্ভব নয়। উপাত্ত হলো পরিসংখ্যানীর জন্য সবচেয়ে জরুরি কাঁচা উপাদান।

সঠিক ও নৈতিক উপায়ে উপাত্ত সংগ্রহ ছাড়া কোনো গবেষণাই বৈধ হতে পারে না। এই ব্লগ পোস্টে উপাত্ত কাকে বলে ও তার বৈশিষ্ট্য, উপাত্ত সংগ্রহের পদ্ধতি, উপাত্ত উপস্থাপন, উপাত্ত বিশ্লেষণ ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে।

উপাত্ত কাকে বলে :-

উপাত্ত বলতে বোঝায় পরিসংখ্যানিক বিশ্লেষণ ও গবেষণায় ব্যবহৃত প্রাথমিক তথ্য বা ডাটাকে।

কোন পরিসংখ্যানিক গবেষণা বা বিশ্লেষণের জন্য প্রথমেই প্রয়োজন হয় উপাত্ত সংগ্রহের। উদাহরণস্বরূপ:
  • - কোন শহরের মোট জনসংখ্যা জানতে হলে প্রথমেই সেই শহরের প্রতিটি পরিবারের সদস্য সংখ্যা নিয়ে উপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে।
  • - কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের গড় বয়স জানতে হলে প্রথমেই সেখানের ছাত্রদের বয়সের উপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে।

সুতরাং, উপাত্ত হলো পরিসংখ্যানিক বিশ্লেষণ ও গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় প্রাথমিক তথ্য বা ডাটা।

আরও সহজ ভাবে বললে, উপাত্ত হলো কোন নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য বা চরিত্রের সংখ্যাভিত্তিক পরিমাপ। পরিসংখ্যান বলতে বোঝায় সংখ্যাভিত্তিক তথ্য। আর সেই সংখ্যাভিত্তিক তথ্যে যে সংখ্যাগুলো থাকে সেগুলোই হলো উপাত্ত।

আর যে ব্যক্তি উপাত্ত সংগ্রহ করেন তাঁকে বলে উপাত্ত সংগ্রাহক।

উপাত্ত কত প্রকার ও কি কি :-

উপাত্তের বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে উপাত্তকে সাধারণত দুভাগে ভাগ করা যায়-
  1. গুণবাচক (Qualitative) উপাত্ত এবং
  2. পরিমাণবাচক (Quantitative) উপাত্ত।

পরিমাণবাচক উপাত্ত আবার দুই প্রকার। যথা -
  1. বিচ্ছিন্ন চলক (Discrete variable)
  2. অবিচ্ছিন্ন চলক (Continuous variable)

উপাত্ত সংগ্রহের ওপর ভিত্তি করে উপাত্তকে সাধারণত দুভাগে ভাগ করা যায়-
  1. প্রাথমিক (Primary) উৎস
  2. মাধ্যমিক (Secondary ) উৎস।

গবেষণার ক্ষেত্রে উপাত্তকে প্রধান দু'টি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
  1. সাংখ্যিক উপাত্ত এবং
  2. গুণগত উপাত্ত। (Categorical/ Qualitative Data)

সাংখ্যিক উপাত্তকে আবার দু'ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা,
  1. অবিচ্ছিন্ন উপাত্ত এবং
  2. বিচ্ছিন্ন উপাত্ত।

শ্রেণিগত বা গুণগত উপাত্ত আবার দু'ধরনের।
  1. নামবাচক উপাত্ত এবং
  2. ক্রমজ উপাত্ত।

এগুলো সম্পর্কে নীচে আলোচনা করা হলো -

গুণবাচক উপাত্ত কাকে বলে :-

যখন কোন গবেষক কোন ব্যক্তি বা বস্তুর বৈশিষ্ট্যকে গুণগতভাবে পরিমাপ করে তখন তাকে গুণবাচক উপাত্ত বলে।

উদাহরণস্বরূপ, কোন কৃষিবিদ ক্ষেতের পোকা-মাকড় মারার জন্য ঔষধ ছিটিয়েছেন এবং লক্ষ্য করেছেন ঐ ঔষধ কার্যকরী কি না। এক্ষেত্রে কার্যকর বা কার্যকর নয়, এমন উপাত্তকে গুণবাচক উপাত্ত বলে।

আবার কোন অনুসন্ধানে যদি জানতে চাওয়া হয় যে কত লোকের চুল সাদা বা কতজনের অন্য রঙের চুল আছে এ সমস্ত ক্ষেত্রে যে উপাত্ত পাওয়া যায় সেগুলোকে বলা হয় গুণবাচক উপাত্ত।

পরিমাণবাচক উপাত্ত কাকে বলে :-

যখন কোন গবেষক কোন ব্যক্তি বা বস্তুর বৈশিষ্ট্যকে পরিমাণগতভাবে পরিমাপ করে তখন সেই উপাত্তকে পরিমাণবাচক উপাত্ত বলে ।

উদাহরণস্বরূপ, বিভিন্ন লোকের বয়স, আয়, পারিবারিক জরিপে পরিবারের লোক সংখ্যা, আবাদী জমির পরিমাণ, গৃহপালিত পশুর পরিমাণ, উৎপন্ন ফসলের পরিমাণ ইত্যাদি পরিমাপযোগ্য উপাত্তগুলোকে পরিমাণবাচক উপাত্ত বলে।

পরিমাপযোগ্য উপাত্তগুলোর মানের একটি সীমা আছে তাই এ উপাত্তগুলোকে চলক (variable) বলে।

বিচ্ছিন্ন চলক কাকে বলে:-

যে চলক শুধু গোটা গোটা মানের রাশি হয় তাকে বিচ্ছিন্ন চলক বলে।

যেমন, কোন পরিবারের সদস্য সংখ্যা, টিউটোরিয়াল কেন্দ্রর শিক্ষার্থীর সংখ্যা ইত্যাদি এ সমস্ত চলকের মান সাধারণত ভগ্নাংশ হয় না।

অবিচ্ছিন্ন চলক কাকে বলে :-

যে চলক কোন পরিসরের মধ্যে বা কোন মান নিতে পারে তাকে অবিচ্ছিন্ন চলক বলে।

যেমন, মানুষের উচ্চতা, কোন শস্যের উৎপাদন ইত্যাদি মানগুলো যা কোন পরিসরের ভিতর অবস্থান করে এবং ভগ্নাংশ আকারে থাকে। তাই এ চলককে অবিচ্ছিন্ন চলক বলে।

প্রাথমিক উপাত্ত কাকে বলে :-

যে উপাত্ত প্রথম বার সংগৃহীত হয় তাকে প্রাথমিক উপাত্ত বলে।

এ ধরনের উপাত্ত অশোধিত। বিভিন্ন ধরনের জরীপের মাধ্যমে, সরকার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে গবেষক প্রাথমিক উপাত্ত সংগ্রহ করে থাকেন।

মাধ্যমিক উপাত্ত কাকে বলে :-

যে উপাত্ত প্রারম্ভিকভাবে সংগৃহীত না হয়ে প্রকাশিত বা অপ্রকাশিত অন্য উৎস থেকে সংগৃহীত হয়ে থাকে তাকে মাধ্যমিক উপাত্ত বলে।

মাধ্যমিক উপাত্ত পরিমার্জিত অবস্থায় থাকে। উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো আদমশুমারী বা অন্য কোন জরীপে প্রথমবারের মত যে উপাত্ত সংগ্রহ করে তাকে প্রাথমিক উপাত্ত বলে আবার অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা গবেষক যখন বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রকাশিত উপাত্ত ব্যবহার করে তখন সে উপাত্তকে বলা হয় মাধ্যমিক উপাত্ত।

সাংখ্যিক উপাত্ত কাকে বলে:-

সাংখ্যিক গবেষণায় সাধারণত চলকের সাংখ্যিক পরিমাপ উপাত্ত হিসেবে সংগ্রহ করা হয়। তাই একে সাংখ্যিক উপাত্ত বলে।

যেমন, বয়স একটি চলক এবং এটি সংখ্যা দ্বারা পরিমাপ করা হয়। যেমন, কারো বয়স হতে পারে ২০ বছর অথবা ২৫ বছর ২ মাস ইত্যাদি। তাই বয়সের উপাত্ত সাংখ্যিক।

তেমনই শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীর সংখ্যা যা একটি সংখ্যা দ্বারা প্রকাশ করা হয়। কাজেই এখানে বয়সের পরিমাপ, শিক্ষার্থীর সংখ্যা ইত্যাদি সাংখ্যিক উপাত্ত। অনুরূপভাবে উচ্চতা, পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বর ইত্যাদিও সাংখ্যিক উপাত্ত ।

শ্রেণিগত উপাত্ত কাকে বলে:-

শ্রেণিগত উপাত্ত হলো সংখ্যার পরিবর্তে শব্দ বা বর্ণনার মাধ্যমে প্রকাশিত উপাত্ত। যেখানে কোন একটি বৈশিষ্ট্য বা চরিত্রলক্ষণের জন্য একাধিক শ্রেণি বা দল রয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, প্রিয় রং হিসাবে নীল, লাল, সবুজ ইত্যাদি রংগুলো রয়েছে - এখানে প্রত্যেকটি রং হচ্ছে শ্রেণিগত উপাত্ত।

আবার লিঙ্গ হিসাবে পুরুষ ও মহিলা রয়েছে - এখানে পুরুষ ও মহিলা হচ্ছে শ্রেণিগত উপাত্ত।

সংক্ষেপে, যেকোন একটি চরিত্রের জন্য যে শ্রেণি বা দলগুলো রয়েছে, সেগুলোকেই বলা হয় শ্রেণিগত উপাত্ত।

নামবাচক উপাত্ত কাকে বলে:

যখন কোনো শ্রেণিগত উপাত্তের শ্রেণিসমূহের মধ্যে প্রকৃতিগত দিক থেকে কোনো ক্রম (অর্থাৎ, কোন ধরনের ছোট থেকে বড় বা বড় থেকে ছোট) থাকে না তখন তাকে নামবাচক উপাত্ত বলে।

যেমন, জেন্ডার, ধর্ম (ইসলাম, হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ) ইত্যাদি নামবাচক উপাত্ত।

ক্রমজ উপাত্ত কাকে বলে:

যখন শ্রেণিগত উপাত্তের শ্রেণিসমূহকে ক্রমধারায় প্রকাশ করা যায় তখন তাকে ক্রমজ উপাত্ত বলে।

যেমন, শিক্ষার স্তর (প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ শিক্ষা), আর্থ-সামাজিক অবস্থা (উচ্চ, মধ্যম ও নিম্ন আয়) ইত্যাদি।

উপাত্তের বৈশিষ্ট্য:-

উপাত্তের কিছু গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য নিম্নে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হল:

১) সংখ্যাভিত্তিক: উপাত্ত সংখ্যাভিত্তিক হয়। এর মান সংখ্যায় প্রকাশ পায়।

২) নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্যভিত্তিক: উপাত্ত কোন নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য বা চরিত্রের উপর ভিত্তি করে সংগৃহীত হয়।

৩) পরিমাপযোগ্য: উপাত্ত সংখ্যায় প্রকাশ পেলেও তা সরাসরি পরিমাপযোগ্য হতে হবে।

৪) প্রাথমিক তথ্য: উপাত্ত হলো প্রাথমিক তথ্য যা পরে বিশ্লেষণের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যে রূপান্তরিত হয়।

৫) সংগ্রহযোগ্য: উপাত্ত সরাসরি গবেষণার কাজে ব্যবহারযোগ্য নয়, এটি প্রথমে সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করতে হয়।

৬) বিশ্লেষণযোগ্য: উপাত্ত শুধু সংগ্রহ করার জন্যই নয়, এর উপর ভিত্তি করে পরবর্তী বিশ্লেষণ করা হয়।

৭) নির্ভুল ও বৈধ: উপাত্ত সংগ্রহের পদ্ধতি নির্ভুল ও বৈধ হতে হবে যাতে ভুল ফলাফল পাওয়া না যায়।

৮) প্রয়োজনীয় পরিমাণ: প্রয়োজনীয় পরিমাণ উপাত্ত সংগৃহীত হতে হবে যাতে ফলাফল বৈধ ও প্রতিনিধিত্বমূলক হয়।

উপাত্ত বিশ্লেষণ :-

গবেষণা প্রশ্ন বা উদ্দেশ্য বা অনুমিত সিদ্ধান্তের সাথে সম্পর্কযুক্ত সঠিক উপাত্ত সংগ্রহের পর গবেষকের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে উপাত্ত বিশ্লেষণ।

শাব্দিক অর্থে বিশ্লেষণ হলো কোনো সম্পূর্ণ ধারণা বা বস্তুকে এর বিভিন্ন অংশে পৃথক বা বিভাজন করা।

উপাত্ত বিশ্লেষণ হলো সংগৃহীত উপাত্ত থেকে অর্থপূর্ণ বা গঠনমূলক তথ্য বা ফলাফল লাভের প্রক্রিয়া যা গবেষণার উদ্দেশ্য অর্জনে বা গবেষণা প্রশ্নের জবাব দানে অথবা সিদ্ধান্ত নেওয়ার কাজে মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

অর্থাৎ, উপাত্ত বিশ্লেষণ গবেষককে তার গবেষণা প্রশ্নের উত্তর দান বা কোনো সমস্যার সমাধান বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে সহায়তা করে। কোনো গবেষণার উপাত্ত বিশ্লেষণ থেকে অনুসন্ধানের জন্য বিবেচিত চলকসমূহের অবস্থা জানা যায় অথবা একাধিক চলকের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক সুস্পষ্টভাবে অনুধাবন করা যায়।

যেমন, একজন গবেষক শ্রেণিকক্ষে সহযোগিতামূলক শিখন পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে শিক্ষার্থীদের শিখন মান কতটা উন্নত হয়েছে তা জানতে চান।

শিক্ষার্থীদের শিখন মান সম্পর্কে উপাত্ত সংগ্রহের একটি পদ্ধতি হলো উপযুক্ত অভীক্ষা প্রয়োগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিষয় সংশ্লিষ্ট জ্ঞান, বোধগম্যতা বা দক্ষতা মূল্যায়ন করা।

গবেষক অভীক্ষা প্রয়োগ করে শিক্ষার্থীদের শিখন মূল্যায়ন পরবর্তী নম্বরসমূহ সংগ্রহ করতে পারেন। এখানে সংগৃহীত নম্বরসমূহ হলো উপাত্ত।

এই নম্বরসমূহ থেকে শিক্ষার্থীদের শিখনমান সম্পর্কে ধারণা লাভের জন্য গবেষক নম্বরসমূহ নানাভাবে বিশ্লেষণ করতে পারেন। বহুল ব্যবহৃত একটি কৌশল হচ্ছে নম্বরগুলোর গড় মান নির্ণয় করা। এই গড় মানের ভিত্তিতে গবেষক শিক্ষার্থীদের শিখন মান উন্নয়নে সহযোগিতামূলক শিখন পদ্ধতির প্রভাব সম্পর্কে একটি প্রমাণভিত্তিক সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন।

সহজ কথায় অনুসন্ধানের বিষয় বা চলক সম্পর্কে সংগৃহীত উপাত্ত থেকে আমরা উক্ত বিষয়ে আমরা যা জানতে চাই (গবেষণার উদ্দেশ্য/ প্রশ্নের মাধ্যমে যা জানতে চাচ্ছি) - বিশ্লেষণের মাধ্যমে আমারা তা জানতে পারি।

ওপরের উদাহরণে গড়মান থেকে আমারা ঐ শ্রেণির অধিকাংশ শিক্ষার্থীর প্রাপ্ত নম্বর কিরূপ (কত বড় বা কত ছোট) তা জানতে পারি এবং এর ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের শিখন মান ও অগ্রগতি সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারি।

উপাত্ত সংগ্রহের পদ্ধতি:-

যে কোন অনুসন্ধানে পূর্ব নির্ধারিত উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে উপাত্ত সংগ্রহ করতে হয়। অর্থাৎ কোন বিষয়ে কোন কিছু জানার জন্য পরিসংখ্যান পদ্ধতিতে উপাত্ত সংগ্রহ করতে হয়।

পরিসংখ্যান পদ্ধতির প্রাথমিক স্তর হচ্ছে উপাত্ত সংগ্রহ। উপাত্ত সংগ্রহ করার সময় কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয় যাতে করে উপাত্ত নির্ভুল হয়।

নির্ভুল উপাত্তের মাধ্যমেই কেবলমাত্র কোন বিষয়ের সঠিক তথ্য পাওয়া যায়। সাধারণত দুটি উৎস থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়।

প্রাথমিক (Primary) উৎস এবং
মাধ্যমিক (Secondary) উৎস।

প্রাথমিক উপাত্ত সংগ্রহের পদ্ধতি :-

প্রাথমিক উপাত্ত সংগ্রহের কিছু প্রধান পদ্ধতি নিম্নে বর্ণিত:

১) প্রশ্নমালা দ্বারা:

এটি সবচেয়ে সহজ ও সাধারণ পদ্ধতি। নির্দিষ্ট বিষয়ে প্রশ্নমালা তৈরি করে উত্তরদাতাদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

২) সাক্ষাৎকার নেওয়া:

এতে উত্তরদাতার সাথে কথা বলে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। উভয়পক্ষের মধ্যে সাক্ষাৎ যোগাযোগের সুযোগ থাকে।

৩) পর্যবেক্ষণ পদ্ধতি:

এতে নির্দিষ্ট উপাদানগুলো পর্যবেক্ষণ করে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। যেমন রাস্তায় গাড়ির চলাচল পর্যবেক্ষণ করা।

৪) নথি-পত্র বিশ্লেষণ:

নিবন্ধন বই, হালনাগাদকৃত তথ্যাবলী ইত্যাদি থেকে উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়।

৫) প্রযুক্তি ব্যবহার করে উপাত্ত সংগ্রহ:

কম্পিউটার, ইন্টারনেট, সেন্সর ইত্যাদির সাহায্যে উপাত্ত সংগ্রহ করা।

৬) নমুনা পদ্ধতি:

বৃহত্তর জনসংখ্যা থেকে একটি নমুনা নির্বাচন করে উপাত্ত সংগ্রহ।

মাধ্যমিক উপাত্ত সংগ্রহের পদ্ধতি :-

আমরা আগেই আলোচনা করেছি মাধ্যমিক উপাত্ত হলো যে উপাত্ত যেটা প্রাথমিকভাবে অন্য কেউ সংগ্রহ করে প্রকাশ করেছে বা ব্যবহার করেছে। মাধ্যমিক উপাত্ত সরাসরি কোন প্রকাশিত কিংবা অপ্রকাশিত উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয়।

প্রকাশিত উপাত্ত উৎসের মধ্যে আছে-

১) সরকারি প্রকাশনা এবং রিপোর্ট:

ক) আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন, বিশ্ব ব্যাংক, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা, আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থা, আন্তর্জাতিক খাদ্য সংস্থা ইত্যাদি।

খ) সরকার এবং স্থানীয় সরকার থেকে প্রকাশিত রিপোর্ট।

২) আধা-সরকারি প্রকাশনা এবং রিপোর্ট যেমন- সিটি করপরেশন, জেলা কাউন্সিল থেকে প্রকাশিত রিপোর্ট।

৩) স্বায়ত্বশাসিত এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এর প্রকাশনা ও রিপোর্ট যেমন- বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যবসায়িক এবং পেশাগত সমিতি, গবেষক, অর্থনীতিবিদ ইত্যাদির প্রকাশিত রিপোর্ট।

অপ্রকাশিত উপাত্ত উৎস-

মাধ্যমিক উপাত্ত অপ্রকাশিত উপাত্ত থেকেও অনেক সময় সংগৃহীত হয়। পরিসংখ্যানিক সকল তথ্যই সবসময় প্রকাশিত থাকে না। অনেক সময় কিছু তথ্য অপ্রকাশিত থাকে। বিভিন্ন সরকারি এবং ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠান অনেক তথ্য বা উপাত্ত প্রকাশ না করে রেকর্ডভুক্ত করে রাখে এবং প্রয়োজন হলে এ উৎস থেকে উপাত্ত সরবরাহ করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ