তৎসম শব্দ কি বা কাকে বলে ? এর প্রকারভেদ | তৎসম শব্দের তালিকা

আজ আমরা তৎসম শব্দ কি? তৎসম শব্দের শ্রেনীবিভাগতৎসম শব্দের তালিকা নিয়ে আলোচনা করব আশা করি তোমাদের উপকারে আসবে।

তো, আমরা তৎসম শব্দ কি ভাবে বাংলা ভাষার প্রবেশ করলো তা দিয়ে শুরু করি।

আমরা জানি যে মানুষের কণ্ঠ নিঃসৃত অর্থবোধক ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টিকে শব্দ বলে। এই শব্দকে নানা দিক থেকে ভাগ করা যায়। যেমন
  • উৎপত্তির দিক থেকে
  • গঠনের দিক থেকে ও
  • অর্থের দিক থেকে।

উৎপত্তির দিক থেকে শব্দকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। তার মধ্যে তৎসম শব্দ একটি।

আরও পড়ুন :- শব্দ ও পদের মধ্যে পার্থক্য কোথায়?

বাংলা ভাষায় প্রচুর শব্দ রয়েছে যেগুলো সংস্কৃত ভাষা থেকে এসেছে। এদের মধ্যে কিছু শব্দ রয়েছে যেগুলো কোনো প্রকার পরিবর্তন ছাড়াই বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত হচ্ছে। এদের বৈয়াকরণগণ 'তৎসম' বা তার (সংস্কৃতের) সমান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
তৎসম শব্দ কি
এক্ষেত্রে মনে করিয়ে দেওয়া প্রয়োজন যে, প্রায় সকল বৈয়াকরণই সংস্কৃতের প্রতি বিশেষভাবে দুর্বল ছিলেন। তাই হিন্দি কিংবা গুজরাটি থেকে আসা শব্দের সঙ্গে সংস্কৃতকে একই কাতারে রাখা যায়নি, যদিও এই তিনটি ভাষাই ইন্দো-ইরানীয় ভাষা-শাখারই অন্তর্গত। দীর্ঘদিন এরূপ ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত ছিল যে, বাংলা ভাষা সংস্কৃত ভাষার 'কন্যা সমান। আর সেই কারণেই সংস্কৃতের এমন প্রাধান্য বৈয়াকরণদের মাঝে রয়ে গেছে।

তৎসম শব্দ কাকে বলে :-

‘তৎ’ কথাটির অর্থ ‘তার' অর্থাৎ সংস্কৃতের এবং ‘সম' কথাটির অর্থ ‘সমান'। সুতরাং তৎসম কথার অর্থ তার অর্থাৎ সংস্কৃতের সমান।

যে সব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে কোনরূপ পরিবর্তন ছাড়াই যে সকল শব্দ বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে, সেগুলিকে তৎসম শব্দ বলে।

অথবা আমরা বলতে পারি, যে সমস্ত শব্দ প্রাচীন ভারতীয় আর্য বা সংস্কৃত ভাষা থেকে সরাসরি বাংলা ভাষায় এসেছে এবং অবিকৃত রূপে বাংলা ভাষায় টিকে আছে সেই সমস্ত শব্দ কে তৎসম শব্দ বলা হয়।

আরও পড়ুন :- পরিভাষিক শব্দ কি? এর তালিকা সমূহ।

তৎসম শব্দের উদাহরণ :- 

যেমন:- পিতা, মাতা, শিক্ষালয়, আচার্য, শিক্ষক, সকল, পদ, ঘাস প্রভৃতি হল বাংলা শব্দ ভান্ডারের তৎসম শব্দের উদাহরণ।

তৎসম শব্দের শ্রেনীবিভাগ :-

এই তৎসম শব্দ কে আবার অনেক ভাষাতাত্ত্বিক দুই ভাগে ভাগ করেছেন যথা-

১ - সিদ্ধ তৎসম শব্দ ও

২ - অসিদ্ধ তৎসম শব্দ।

সিদ্ধ তৎসম শব্দ কাকে বলে :-

যেসব শব্দ বৈদিক বা সংস্কৃত সাহিত্যে পাওয়া যায় এবং যেগুলি ব্যাকরণ সিদ্ধ বা ব্যবহৃত হয় সেই শব্দ গুলোকে সিদ্ধ তৎসম বলা হয়।

যেমন :- সূর্য, মিত্র, কৃষ্ণ, লতা, প্রভৃতি শব্দ।

অসিদ্ধ তৎসম শব্দ কাকে বলে :-

যে সকল শব্দ বৈদিক বা সংস্কৃত সাহিত্যে পাওয়া যায় না এবং সংস্কৃত ব্যাকরণ সিদ্ধ নয় অর্থাৎ লোক মুখে প্রচলিত, সেই শব্দ সমূহকে অসিদ্ধ তৎসম শব্দ বলে।

যেমন :- কৃষাণ, ঘর, চল, ডাল, প্রভৃতি শব্দ।


তৎসম শব্দের তালিকা :-

রামরাবণপুত্রমাতাপিতা
জননীপক্ষীনীড়নীরদীর্ঘ
বাতায়নভূমিকাউচ্চনিম্নআদেশ
বর্জনসূর্যচন্দ্রজলগৃহ
মৃত্তিকাঅলকমর্ত্যস্বর্গলোভ
সাধুঋষিপ্রত্যাঘাতকর্ষণবর্ষণ
বৃষ্টিকণাবাণীবণিকলৌহ
বীণারুদ্রচণ্ডালকৃষকদিবা
সৌর্যবীর্যকৃতিত্বআদিত্যনারায়ণ
দেবদেবীদর্শনবয়নগমন
রাত্রিমুষ্ঠিকপালত্বকজিহ্বা
নাসিকাআকরসমুদ্রনদীমেঘ
আলোকরাজ্যরাজধানীএকদশ
উদ্যানরাজারাণীরাজপুত্রবৃক্ষ
পশুলতানরনারীবেদ
পন্থাশুষ্কপুরস্কারআদেশঅনুরোধ
অনুবাদউদ্ধারউন্নতবেদান্তউপনিষদ
পুরাণইতিহাসকর্ণচক্ষুভারতবর্ষ
রাষ্ট্রমস্তকহস্তউদরজঠর

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ