ব্যবসায়ের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা আলোচনা কর?

ব্যবসায়ের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা :-

যে কোনো দেশেই ব্যবসায় অর্থনৈতিক কাঠামো অন্যতম শক্তিশালী ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। অর্থনৈতিক ও সামাজিক উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবসায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। নিম্নে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যবসায়ের গুরুত্ব আলোচনা করা হলো।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব বা Economic importance :-

১. অর্থনৈতিক উন্নয়ন (Economic development) :-

প্রকৃতি প্রদত্ত বিভিন্ন সম্পদ আহরণ করে ব্যবসায় শিল্পের মাধ্যমে নতুন নতুন উপযোগ সৃষ্টি করে। দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করে ব্যবসায় অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

২. শ্রমবিভাগের সুফল (Merits of division of labour) :-

ব্যবসায়িক তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ার দরুন উৎপাদন ও অন্যান্য ব্যবসায়িক কার্যক্রমে শ্রমবিভাগ এবং বিশেষীকরণের উদ্ভব হয়েছে। এর ফলে পণ্যের মূল্য কম পড়ে এবং ভোক্তরা স্বল্প ব্যয়ে পণ্য ক্রয় করে তা ভোগ করতে সক্ষম হয়।


৩. পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন (Development of transport system) :-

উৎপাদন কাজের জন্য যেমন কারখানায় কাঁচামাল আনয়ন প্রয়োজন তেমনি চূড়ান্ত পণ্যও বিক্রয়ের নিমিত্তে ভোক্তার নিকট পৌঁছানো প্রয়োজন। উভাবিধ কাজেই পরিবহন অত্যাবশ্যক। তাই দেখা যায়, দেশে ব্যবসায়ী কার্যক্রম যতো বেশি হয় পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতিও ততো বেশি হয়। আর পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য।
ব্যবসায়ের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা

8. পুঁজি গঠন (Formation of capital) :-

দেশে পুঞ্জিগঠনের হার যতো বেশি হয়, অর্থনৈতিক উন্নয়নের হারও ততো বেড়ে যায়। ব্যবসায় ব্যাংকিং ব্যবস্থা, বিমা ব্যবস্থা ইত্যাদির মাধ্যমে দেশের ভেতরকার বিক্ষিপ্ত সঞ্চয় একত্রিত করে পুঁজি গঠনে সহায়তা করে এবং এ পুঁজি ব্যবসায়-বাণিজ্য ব্যবহার করে জাতীয় উৎপাদানশীলতা বৃদ্ধি করে। করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।

৫. প্রযুক্তিনা ব্যবহার ও অর্থনৈতিক কল্যাণ (Use of technology and economic welfare) :-

ব্যবসায় উন্নত ধরনের হুযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে নিত্য-নতুন পণ্য উৎপাদন করে মানুষের অতৃপ্ত চাহিদা পূরণ করার প্রয়াস পায়। প্রযুক্তি উপযুক্ত ব্যবহার সমাজে মানুষের কল্যাণ বয়ে আনে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রত্যক্ষভাবে সহায়তা করে।

৬. সরকারি আয় বৃদ্ধি (Increase of government income) :-

ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানগুলোর নিকট থেকে বিভিন্ন প্রকার কর ও শুদ্ধ বাবদ সরকার প্রচুর রাজস্ব আয় করে। এই অর্থ সরকার জনহিতকর কার্যে ব্যয় করে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি চাঙ্গা করে তোলে।

৭. সম্পদের ব্যবহার (Use of resources) :-

ব্যবসায়ী কার্যকলাপের মাধ্যমে দেশের ভেতরে প্রাপ্ত প্রাকৃতিক সম্পদের উপযুক্ত ব্যবহার সম্ভবপর হয়। খনি থেকে খনিজ সম্পদ উত্তোলন, সমুদ্র থেকে মৎস্য সম্পদ আহরণ, বন-জংগল থেকে বনজ সম্পদ সংগ্রহ ইত্যাদি সবই ব্যবসায়ের ফলশ্রুতি।

৮. চাহিদা পূরণের মাধ্যমে প্রয়োজন মেটানো (Satisfying the need by fulfillment of demand) :-

ব্যবসা আছে বলেই মানুষ বিভিন্ন প্রকার পণ্যসামগ্রীর চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয়। প্রয়োজনীয় সামী জেগের জন্য মানুষের মনের মধ্যে যে সুগ্ধ আকাঙ্ক্ষা থাকে, ব্যবসায় তা পরিতৃদ্ধ করে। ফলে মানুষের দৈনন্দিন জীবন সুখময় হয় এবং তা অর্থনীতির অঙ্গনেও প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টির সহায়ক।


৯. আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের উন্নয়ন (Development of financial institutions) :-

ব্যবসায় বাণিজ্যের উন্নয়নের সাথে সাথে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাও ব্যাপকভাপবে বৃদ্ধি পায়। এর দরুন দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ, যেমন-ব্যাংক, বিমা ইত্যাদির উন্নয়নও ত্বরান্বিত হয়।

সামাজিক গুরুত্ব বা Social Importance :-

১. কর্মসংস্থান (Employment) :-

একটি দেশে অসংখ্যা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে অবদান রাখে। এসব প্রতিষ্ঠানে শত শত লোকের কর্মসংস্থান হয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, ব্যবসায় কর্মসংস্থানের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নতির যাত্রাপথ নির্বিঘ্ন করার প্রয়াস পায়।

২. পণ্যের মান উন্নয়ন (Improvement of the quality of products) :-

ব্যবসায়ের আধুনিকায়নের সাথে সাথে উৎপাদিত পণ্যের মান বৃদ্ধির প্রচেষ্টা চালানো হয়। নির্ধারিত পণ্য গুণে-মানে উত্তম হলে ভোগকারীরা যথেষ্ট উপকৃত হয়। ভোগকারীদের উপকার সামাজিক কল্যাণেরই নামান্তর।

৩. পারস্পরিক নির্ভরতা (Inter-dependency) :-

ব্যবসায়ের প্রচলন বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠি বিশেষ করে ব্যবসায়ী সম্প্রাদয়কে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাঁচামাল, শক্তিসম্পদ কিংবা বিপণনের ব্যাপারে পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল থাকে। তাদের পারস্পরিক নির্ভরতা সমাজে একটি ঐক্যসূত্রের সৃষ্টি করে যা অর্থনৈতিক কর্মকাও এগিয়ে নিতে সাহায্য করে।

8. নগরায়ন (Urbanisation) :-

ব্যবসায়িক তৎপরতা না থাকলে বর্তমানকালের নগরীগুলো আদৌ বিকাশ লাভ করত কিনা সন্দেহ। ব্যবসায় তথা শিল্প-বাণিজ্যের প্রসারের ফলেই নগরের উৎপত্তি হয়েছে। নগরীতে বসবাসরত প্রতিটি মানুষই আধুনিক ভাবধারার সংস্পর্শে এসে জীবনকে উন্নত করছে।

৫. জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন (Improvement of standard of living) :-

ব্যবসায় একদিকে প্রচুর পণ্যদ্রব্য যেমন উৎপাদন করে এবং অন্যদিকে এসব সামগ্রী ব্যবহারকারীর পদপ্রান্তে এনে হাজির করে। এভাবে ব্যবসায় সামগ্রিকভাবে জনগণের সুখ-সমৃদ্ধি বয়ে আসে এবং এর ফলে জনগণের জীবনযাত্রার মানের উন্নয়ন ঘটে।

৬. আন্তর্জাতিক সম্পর্ক (International relation) :-

ব্যবসায় দিক দিগন্তে এর বাহু প্রসারিত করে বিভিন্ন জাতির মধ্যে সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্ব সৃষ্টি করে। আন্তর্জাতিক বাণিল ব্যবসায়ের একটি অঙ্গ হিসেবে বিভিন্ন দেশের মধ্যে পণ্যের লেনদেন ঘটিয়ে প্রত্যেক দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ইন্ধন যোগায়।

৭. সংস্কৃতির বিকাশ (Development of culture) :-

ব্যবসায় তথা শিল্প-বাণিজ্যের প্রসারের ফলেই পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের শিল্প কর্মের বিকাশ ঘটছে। ফলশ্রুতিতে ব্যবসায়ীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় দেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতির মান উন্নত হয়েছে।

আরও পড়ুন:- ব্যবসায় পরিবেশ আলোচনা কর?

পরিশেষে বলা যায় যে, ব্যক্তি, সামাজিক ও জাতীয় জীবনে প্রয়োজনীয় দ্রব্য সম্ভার আহরণ, উৎপাদন ও বিতরণ সংক্রান্ত কর্মপ্রক্রিয়ায় ব্যবসায়ের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। ব্যবসায় দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক বিকাশে যেমন সুদূর প্রসারী ভূমিকা রাখে তেমনি তা সামাজিক প্রগতি ও উন্নয়নের পথেও সুফল বয়ে আনে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ