শিল্প ও বাণিজ্যের মধ্যে পার্থক্য ও সম্পর্ক আলোচনা কর?

ব্যবসায়ের সাথে শিল্প ও বাণিজ্যের পার্থক্য ও সম্পর্ক :-

ব্যবসায় একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ। মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে বা সেবা উৎপাদন থেকে শুরু করে ভোক্তার হাতে পৌঁছানো পর্যন্ত সকল অর্থনৈতিক কার্যকলাপই ব্যবসায়ের অন্তর্ভুক্ত।

শিল্প ও বাণিজ্য উভয়ই ব্যবসায়ের দুটো শাখা। সুতরাং ব্যবসায়ের সাথে শিল্প ও বাণিজ্য গভীরভাবে সম্পর্কিত। ব্যবসায়ের সাথে শিল্প ও বাণিজ্যের সম্পর্ককে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ব্যাখ্যা করা হলো।

১. সংজ্ঞাগত সম্পর্ক (Definitional relationship) :-

পণ্যদ্রব্য ও সেবাসামগ্রী উৎপাদন, বণ্টন, ক্রয়বিক্রয় এবং এতদসংশ্লিষ্ট সকল অর্থনৈতিক কার্যকলাপই ব্যবসায়। শিল্প হচ্ছে পণ্যের রূপগত উপযোগ সৃষ্টির একটি প্রক্রিয়া। অন্যদিকে বাণিজ্য হচ্ছে পণ্য ও সেবাকর্ম বণ্টন ও বিনিময়ের সাথে সংশ্লিষ্ট কার্যাবলির সমষ্টি।

আরও পড়ুন :- শিল্প কাকে বলে?

২. সহায়ক সম্পর্ক (Facilitating relationship) :-

ব্যবসায় অত্যন্ত বিস্তৃত বিষয়। শিল্প ও বাণিজ্য ব্যবসায়েরই দুটো গুরুত্বপূর্ণ শাখা। কৃষিজাত শিল্প, শিল্প, নিষ্কাশন শিল্প, উৎপাদান শিল্প, সেরা পরিবেশক শিল্প, নির্মাণ শিল্প ইত্যাদি শিল্পের শাখা। বাণিজ্যের শাখা হচ্ছে পন্য বিনময় ট্রেড, পরিবহন, গুদামজাতকরণ, বিমা, ব্যাংকিং ও বিজ্ঞাপন।
ব্যবসায়ের সাথে শিল্প ও বাণিজ্যের সম্পর্ক

৩. কার্যগত সম্পর্ক (Functional relationship) :-

পণ্যদ্রব্য উৎপাদান থেকে শুরু করে বণ্টন পর্যন্ত সকল কাজই ব্যবসায়ের অন্তর্ভূক্ত। শিল্প উৎপাদনের কাজ করে এবং বাণিজ্য বন্টনের কাজ করে থাকে।

৪. আওতাগত সম্পর্ক (Purview relationship) :-

ব্যবসায়ের আওতা ব্যাপক। শিল্প, বাণিজ্য, প্রত্যক্ষ সেবাকর্ম এবং শিল্প বাণিজ্যের সহায়ক কার্যাবলি সবই ব্যবসায়ের আওতাভুক্ত।

৫. উপযোগ বিষয়ক সম্পর্ক (Utility relationship) :-

মুনাফা অর্জনের লক্ষ্য নিয়ে বিভিন্ন প্রকার উপযোগ সৃষ্টি করা ব্যবসায়ের কাজ। এদের মধ্যে শিল্প রূপগত উপযোগ সৃষ্টি করে থাকে। আর বাণিজ্য ব্যক্তিগত, অর্থগত, সময়গত, ঝুঁক্তিগত, স্থানগত উপযোগ সৃষ্টি করে থাকে।

৬. লক্ষ্যগত সম্পর্ক (Objective oriented relationship) :-

জনগণের মনে পণ্যের যে চাহিদা সুপ্ত থাকে, তা পরিপুরণ করার মাধ্যমে মুনাফা অর্জনই হলো ব্যবসায়ের মূল লক্ষ্য। একই রূপ লক্ষ্যকে সামনে রেখে শিল্প ও বাণিজ্য পরিচালিত হয়।


৭. আন্তঃনির্ভরতার সম্পর্ক (Relationship of interdependence) :-

ব্যবসায় এবং শিল্প-বাণিজ্য পরস্পর নির্ভরশীল। একটিকে ছাড়া অপরটি চলতে পারে না। শিল্পে পণ্য উৎপাদিত হয়। আর বাণিজ্য সেই উৎপাদিত পণ্য বণ্টনের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে। পক্ষান্তরে, শিল্প ও বাণিজ্যের সচলতা ব্যবসায়ের গতিময়তা বৃদ্ধি করে।

৮. অবস্থানগত সম্পর্ক (Positional relationship) :-

ব্যবসায় হলো প্রকৃতপক্ষে একের মধ্যে তিন। শিল্প, বাণিজ্য ও পণ্য বিনিময়- এ তিনটি নিয়েই ব্যবসায়ের সৃষ্টি।

৯. উন্নয়নমূলক সম্পর্ক (Developmental relationship ) :-

শিল্প ও বাণিজ্য পণ্য উৎপাদন ও বণ্টনের মাধ্যমে ব্যবসায়ের সম্প্রসারণ ঘটায়। আর ব্যবসায় তার ক্রমপ্রসারমান শক্তির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে।

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, ব্যবসায় হচ্ছে একটি বিস্তৃত ক্ষেত্র। শিল্প ও বাণিজ্য ব্যবসায়ের শাখা হিসেবে ব্যবসাদেরই দুটি গুরুত্বপূর্ণ কার্যে ব্যাপুত রয়েছে। সুতরাং আমরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, ব্যবসায়ের সাথে শিল্প ও বাণিজ্য নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ