ব্যক্তিক বিক্রয় কাকে বলে? এর বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব লিখ?

ব্যক্তিক বিক্রয় কাকে বলে :-

বিক্রেতা ও ভোক্তার মধ্যে বিনিময়ের উদ্দেশ্যে যখন দ্বি-মুখী যোগাযোগ হয় তখন তা হয় ব্যক্তিক বিক্রয় (Personal Selling)।

সুতরাং ব্যক্তিক বিক্রয়ে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের পণ্য ও সেবা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে বাক্তিগতভাবে সরাসরি ক্রেতার কাছে বিক্রয় আবেদন করা হয় ও ক্রয় করার জন্য আগ্রহী করে তোলা হয়। বিপণনকারী প্রযুক্তিনির্ভর পণ্য, বিমা, শিল্পপণ্য ইত্যাদির ক্ষেত্রে ব্যক্তিক বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করে। আবার নতুন পণ্য বিপণন করার সময়ও ব্যক্তিক বিক্রয়কে কাজে লাগিয়ে বিক্রয় প্রসারের প্রচেষ্টা চালানো হয়।

আরও পড়ুন :-  যোগাযোগ কাকে বলে?

আমেরিকার মার্কেটিং সমিতি যে সংজ্ঞা দিয়েছেন তা হলো 'বিক্রয় সংঘটনের উদ্দেশ্যে এক বা একাধিক সম্ভাব্য ক্রেতার সঙ্গে আলাপকালে মৌখিকভাবে পণ্যের উপস্থাপনই ব্যক্তিক বিক্রয়' (Personal selling is the oral presentation in a conversation with one or more prospective purchases for the purpose of making sales)।

এ সংজ্ঞার আলোকে দেখা যাচ্ছে যে, ব্যক্তিক বিক্রয়ে বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের পণ্য ও সেবা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগতভাবে সরাসরি ক্রেতার কাছে বিক্রয় আবেদন করে।
ব্যক্তিক বিক্রয় কাকে বলে

ব্যক্তিক বিক্রয়ের বৈশিষ্ট্যাবলী :-

একটা বিক্রয় তখনই ব্যক্তিক বিক্রয় হবে যখন তাতে নিন্মোক্ত উপাদানগুলো সংযুক্ত থাকবে -
  • সরাসরি আলাপ
  • মৌখিক উপস্থাপনা
  • পণ্য সম্পর্কিত উপস্থাপনা
  • ব্যক্তিগত প্ররোচনামূলক উপস্থাপনা
  • দ্বিপাক্ষিক যোগাযোগ
  • এক বা একাধিক ক্রেতার উপস্থিতি
  • বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে 

ব্যক্তিক বিক্রয়ের ব্যাপক ব্যবহার কেন হয় সে সম্পর্কে অবহিত হওয়া দরকার। তা হলে আপনার জন্য এই প্রকার কৌশল সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেয়া সহজতর হবে। তাই এবারে আমরা ব্যক্তিক বিক্রয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করব।

আরও পড়ুন :- ইকমার্স কি?

ব্যক্তিক বিক্রয়ের গুরুত্ব :-

বাজারজাতকরণ প্রসার কার্যক্রমের কতিপয় ক্ষেত্রে ব্যক্তিক বিক্রয় অপরিহার্য এবং অনেকে মনে করেন যে, ব্যক্তিক বিক্রয় অর্থনীতির গতিশীল উপাদানগুলোর একটা এবং অর্থনীতির গতিশীলতা বাজায় রাখার ক্ষেত্রে ব্যক্তিক বিক্রয় অতীব প্রয়োজনীয়ই।

জেরোমী ম্যাকার্থী উল্লেখ করেছেন যে, আদম শুমারীর পরিসংখ্যান অনুযায়ী আমেরিকার প্রতি দশ জনের একজন ব্যক্তিক বিক্রেতা। এ থেকে ব্যক্তিক বিক্রয়ের গুরুত্ব সম্পর্কে আর সন্দেহ থাকে না। আমরা এর গুরুত্ব ও ভূমিকা সম্পর্কে একটা আলোচনা আপনার কাছে তুলে ধরছি।

১. ক্রেতাদের পণ্য ক্রয়ে সহায়তা :-

ক্রেতাদের বিশেষ করে শিল্প পণ্যের ক্রেতাদের কাছে পণ্য সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সরবরাহ করার কাজটা ব্যক্তিক বিক্রেতা করে থাকেন। তাছাড়া, ক্রেতাদের বিভিন্ন সমস্যাও সমাধান করে থাকেন। ক্রেতারা অনেক সময় সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন। এমতাবস্থায় পণ্যের দোষ-গুণ তুলে ধরে ক্রেতাদের ক্রয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যক্তিক বিক্রেতা সহায়তা করে।

২. প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব :-

ব্যক্তিক বিক্রেতা বাইরের জগতে বিশেষ করে ক্রেতাদের কাছে প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হিসেবে বিবেচিত হন। তাঁরা পণ্য সম্পর্কিত তথ্য সরবরাহ করেন, কোম্পানির পলিসি ব্যাখ্যা করেন এবং দর কষাকষি করেন। তাছাড়া, কোম্পানির কাছে এরা ক্রেতাদেরও প্রতিনিধিত্ব করেন। পণ্য ও সেবা সম্পর্কে অভিযোগ তাঁরা কোম্পানি ব্যবস্থাপকদের কাছে নিয়ে আসেন।

৩. বাজারজাতকরণ গবেষণায় তথ্য সরবরাহ :-

কোম্পানির ব্যক্তিক বিক্রেতা সর্বপ্রথম প্রতিযোগী পণ্য, কৌশল, দর ইত্যাদি সম্পর্কে খবর পায়। তারা এ ধরনের সংবাদ কোম্পানি গবেষকদের সরবরাহ করেন। এভাবে প্রাপ্ত খবরের ভিত্তিতে বাজারজাতকারী যথাযথ বিচার বিশ্লেষণের পর যথাযথ ব্যবস্থা সুপারিশ করতে পারেন।

৪. কৌশলগত পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা :-

ব্যক্তিক বিক্রেতা স্থানীয় অবস্থা ভালভাবে জানে। সে কারণে তারা স্থানীয় বাজার দখলে বা রক্ষায় উপযুক্ত কৌশল সম্পর্কেও ভাল জানে। তাই এক এক জন বিক্ৰয়িক বিক্রয় কৌশলের এক একজন পরিকল্পনাকারী হিসেবে আবির্ভূত হয়। তারা স্থানীয় অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বাজারজাতকরণ কৌশল হিসেবে কি কি পদক্ষেপ কোন কোন ক্ষেত্রে গ্রহণ করা যায় তা বাজারজাতকরণ ব্যবস্থাপককে সঠিকভাবে জানাতে পারেন। এর ফলে বাজার প্রসার কৌশল নির্বাচন সঠিক হয় ও বাজারজাতকরণ দক্ষতা বাড়ে।

৫. পণ্য উদ্ভাবন ও উন্নয়নে সাহায্য :-

ভোক্তা বা ব্যবহারকারীদের সাথে সরাসরি আলাপ করে বলে বিক্রেতারা ক্রেতাদের পছন্দ, অপছন্দ, চাহিদা, অগ্রাধিকার ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে পারে। এসব তথ্য ব্যবস্থাপনার জানার ফলে সে মোতাবেক গবেষণা ও উন্নয়নমূলক কাজ শুরু করেন। এভাবে নতুন পণ্য উদ্ভাবনে ও পুরানো পণ্য উন্নয়নে ব্যক্তিক বিক্রেতা সাহায্য করেন।

আরও পড়ুন :- ব্রান্ডিং কি?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ