ভোক্তার আচরন কাকে বলে? ভোক্তার আচরনের বৈশিষ্ট্য?

বর্তমান বাজারজাতকরণের মূল বিষয় হলো "ভোক্তাই রাজা"। ভোক্তাদের সন্তুষ্টি করতে না পারলে বাজারে টিকে থাকা যাবে না। ভোক্তারাই প্রতিষ্ঠানের স্বরূপ ও বাজারজাতকরণের প্রকৃতি নির্ধারণ করে দেয়। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের ভোগের মাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

নির্দিষ্ট পণ্য অর্জনের লক্ষ্যে মানুষের কর্ম প্রচেষ্ঠায় একটি বিরাট অংশ নিয়োজিত হয়। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলো এইরূপ পণ্য সরবরাহে সচেষ্ট থাকে। ফলে ভোক্তার আচরণ সামগ্রিক বাজারজাতকরণ ব্যবস্থার সাথে জড়িত তথা উৎপাদনকারী, মধ্যস্থকারবারী, ভোক্তা ইত্যাদির মধ্যে পারস্পরিক প্রভাব সৃষ্টি করে।

বাজারজাতকরণ কর্মসূচি সাফল্যজনকভাবে সম্পাদিত করার জন্য ভোক্তার আচরণ বিশেষণ করে কোন পণ্য ক্রয় করে, কেন ক্রয় করে, কিভাবে ক্রয় করে, কখন না করে ইত্যাদি বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়ার পূর্বশর্ত।

বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়ার এই সকল শর্তসমূহ ভোক্তার ব্যক্তিগত, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও মনস্তত্ত্বিক ইত্যাদি উপাদান দ্বারা প্রভাবিত হয়ে তাকে। তাছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারজাতকরণে অংশ গ্রহণের জন্য বিদেশি ক্রেতাদের ক্রয় আচরণ বিশ্লেষণ করা অপরিহার্য।

আরও পড়ুন :- ভোক্তা বাজার কাকে বলে?  

সামগ্রিকভাবে অর্থনীতির উপর ভোক্তা আচরণের প্রত্যক্ষ প্রভাব বিদ্যামান। এমতাবস্থায় বাজারজাতকারীকে প্রতিষ্ঠানের বাজারজাতকরণ কৌলশ সঠিক ও যথাযথভাবে প্রয়োগ করার জন্য ভোক্তা আচরণের সাথে সম্পৃক্ত বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে অবগত থাকা আবশ্যক।

ভোক্তার আচরন কাকে বলে :-

পণ্যসামগ্রী বা সেবাকর্ম ক্রয়ের সময় একজন ক্রেতা যে সকল কার্যাবলী সম্পাদন করে থাকে সে সকল কাজের সাথে সম্পর্কিত সকল আচরনকে ভোক্তার আচরন (Consumer Behaviour) বলে।

Philip Kotler & Gary Armstrong ভোক্তা আচরণকে সংজ্ঞায়িত করেছেন এভাবে, “Consumer buying behavior refers to the buying behavior of final consumers-individual and households who buy goods and services for personal consumption.”

অর্থাৎ ভোক্তার জন্ম আচরণ হলো চূড়ান্ত ভোক্তা নিজে এবং পরিবারের সদস্যদের ক্রয় আচরণ যারা ব্যক্তিগত ভোগের জন্য পণ্য ও সেবাসমূহ ক্রয় করে।

Skinner ভোক্তা আচরণের যে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন তা হলো, "Consumer behavior is the activity and decision process of people who purchase goods and services for personal consumption."

অর্থাৎ ভোক্তার আচরণ হলো সেসব ব্যক্তির কার্যক্রম ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া যারা ব্যক্তিগত ভোগের জন্য পণ্য ও সেবাসমূহ জন্য করে।
ভোক্তার আচরন কাকে বলে

সুতরাং ভোক্তা আচরণ সম্পর্কে বলা যায় যে, পণ্যদ্রব্য ও সেবা সামগ্রী নির্বাচন ক্রয়ের পরিকল্পনা গ্রহণ, বাস্তব ক্রয় এবং ভোগ বা ব্যবহারের সময় ভোক্তা যে আচরণ করে থাকে তাকেই ভোক্তা আচরণ বলা হয়।

যেমন: একজন ব্যক্তির কাছে মোবাইল ফোন ক্রয় করার সময় ফোনের মূল্যকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আবার অন্য কোনো ব্যক্তির কাছে মোবাইলের ফোনের মডেল ও ডিজাইন বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের প্রয়োজনের পার্থক্যের কারণে একই পণ্যের প্রতি দুইজন ব্যক্তির আচরণের পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়।

আরও পড়ুন :- ব্যক্তিক বিক্রয় কাকে বলে?

ভোক্তার আচরণের বৈশিষ্ট্যসমূহ :-

ভোক্তা আচরণ একটি জটিল মানষিক প্রক্রিয়া। বিভিন্ন উপাদান দ্বারা ভোক্তা আচরণ প্রবাবিত হয়ে থকে। এই সকল উপাদানের প্রভাবে ভোক্তার আচরণে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। ভোক্তার আরচণ বিশ্লেষণ করলে নিম্ন লিখিত বৈশিষ্ট্যসমূহ পাওয়া যায়।

১. প্রেষণাগত আচরণ (Motivational behaviour) :-

ভোক্তার আচরণ হলো প্রেষণাগত আচরণ। বিভিন্ন প্রকার বাজার উদ্দীপক ভোক্তার উপর প্রভাব বিস্তুর করে ফলে ভোক্তার মনে একটি সংগঠনের সৃষ্টি হয় এবং ভোক্তা বিভিন্ন ভাবে তার প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে।

২. অর্জিত আচরণ (Learned behaviour) :-

ভোক্তার বেশির ভাগ আচরণ হলো শিক্ষালব্ধ। ভোক্তা বিভিন্ন পরিবেশ থেকে এবং তাদের নানাবিধ কার্যক্রম থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে থাকে। ভোক্তার এই অর্জিত শিক্ষা তার ক্রয় আচরণের উপর প্রভাব বিস্তার করে।

৩. অভ্যন্তরীন উপাদানের প্রভাব (Influence of internal factors) :-

ভোক্তার আচরণ তার অভ্যন্তরীন উপাদান দ্বারা প্রভাবিত হয়। ভোক্তা তার প্রত্যক্ষণ, শিক্ষন, আবেগ, অনুভূতি, ব্যক্তিত্ব, মনোভাব ইত্যাদি দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থকে।

৪. বাহ্যিক উপাদানের প্রভাব (Influence of external factors) :-

বিভিন্ন প্রকার বাহ্যিক উপাদান দ্বারা ভোক্তার আচরণ প্রভাবিত হয়ে তাকে। সাংস্কৃতি, উপ-সাংস্কৃতি, সামাজিক শ্রেণী, পরিবার, গ্রুপ, নির্দেশক দল ইত্যাদি উপাদান ভোক্তা আচরনের উপর প্রভাব বিস্তার করে থাকে।

৫. পরিবর্তনশীল (Dynamic) :-

সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে ভোক্তার আচরনের পরিবর্তন সাধিত হয়। এটা কোন সময় স্থির প্রক্রিয়া নয়। আয়, রুচি, চাহিদা, শিক্ষা, প্রযুক্তি, ধারনার পরিবর্তনের সাথে সাথে ভোক্তার আচরণে পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়।

৬. একাধিক ভূমিকা (Different roles) :-

ভোক্তা আচরণ বিশ্লেষণে দেখা যায় একই ব্যক্তি একাধিক ভূমিকা পালন করছে। একজন ভোক্তা কোন সময় প্রভাবকারী, উদোগী, সিদ্ধান্তদাতা, ক্রেতা অথবা ভোক্তার ভূমিকা পালন করছে।

৭. ভোক্তা ভেদে ভিন্ন আচরণ (Varied behavior) :-

একই পরিবেশে একজন ভোক্তার আচরণ অন্য একজন ভোক্তার আচরণ অপেক্ষা ভিন্ন হয়ে থাকে। কোন ভোক্তা পণ্যের দাম দর করতে পছন্দ করেন আবার অনেকে এই বিষয়টি অপছন্দ করেন।

৮. বিভিন্ন কার্যক্রমের সমষ্টির (Combination of various activities) :-

পণ্য ক্রয়ের পূর্বে ভোক্তাকে অনেকগুলো বিষয় সম্পর্কে অবহিত হতে হয়। বিক্রয় পরিকল্পনা, পণ্য তথ্য সংগ্রহ, পণ্য বিকল্প মূল্যায়ন, মার্কেটিং মিশ্রণের উপাদানসমূহ ইত্যাদি বিষয়সমূহের সমন্বয় করে ভোক্তাকে পণ্য ক্রয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে হয়।

৯. মানসিক প্রক্রিয়া (Mental process) :-

ভোক্তা আচরণকে বলা হয়ে থাকে জটিল মানসিক প্রক্রিয়া। ক্রয় সিদ্ধান্তের প্রত্যেকটি স্থরে অনেকগুলো ক্রমাগত এবং আন্তঃক্রিয়াশীল কার্যক্রম বর্তমান থাকে। ফলে এটা একটি মানসিক প্রক্রিয়া।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ