বিক্রয় প্রসার কাকে বলে? বিক্রয় প্রসার-এর গুরুত্ব ও কৌশল

বিক্রয় প্রসার (Sales promotion) হচ্ছে ব্যক্তিক বিক্রয়, বিজ্ঞাপন ও প্রচার ছাড়া বিপণনের সেসকল প্রসারমূলক কার্যাবলি যা স্বল্পসময়ে পণ্য বেশি বিক্রয়ের জন্য অনিয়মিতভাবে ব্যবহার করা হয়। অন্যান্য প্রসার কার্যক্রমের পরিপূরক/সহায়ক হিসেবে বিক্রয় প্রসার কাজ করে এবং ক্রেতা ও ডিলারদের পণ্য ক্রয় বিক্রয়ে সাময়িকভাবে উদ্বুদ্ধ করে। সাবানের মূল্যে ২ টাকা ছাড় দেওয়া হলে অথবা ১০টি নুডুলস কিনলে একটি টিফিন বক্স ফ্রি দেয়া হলে এগুলোকে বিক্রয় প্রসারের উদাহরণ হিসেবে গণ্য করা যাবে।

বিক্রয় প্রসার কাকে বলে :-

এককথায় বিক্রয় প্রসার কাকে বলে? তা বললে, ভোক্তা বাজারে স্বল্প সময়ে বিক্রয় বৃদ্ধির নিমিত্তে গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপকে বিক্রয় প্রসার বলা হয়।

যেমন: অনেক ক্ষেত্রে কুপন দেওয়া হয়। অনেক ক্ষেত্রে বিনা মূল্যে রেজিস্ট্রেশন আবার মূল্যছাড় ইত্যাদি। এক্ষেত্রে প্রতিটি উপাদানের স্থায়িত্ব স্বল্পকালীন এবং বিশেষ উদ্দেশ্য অর্জনই মূল লক্ষ্য।

নিম্নে বিক্রয় প্রসারের কিছু সংজ্ঞা উল্লেখ করা হলো

Evans & Berman এর প্রসারের যে সংজ্ঞা প্রদান করেছেন তা হলো, "Sales promotion involves the marketing activities, other than advertising, publicity or personal selling that stimulate consumer purchases and dealer effectiveness.

অর্থাৎ বিক্রয় প্রসার হলো বিজ্ঞাপন, প্রচার বা ব্যক্তিক বিক্রয় ছাড়াও সে সকল বিপণন কার্যক্রম যা ভোক্তার ক্রয়কে ও ডিলারের কার্যকারিতাকে উদ্দীপ্ত করে।

Philip Kolter & Gary Armstrong এর মতে, "Sales promotion is short-term incentive to encourage purchase or sale of a product or service.

অর্থাৎ বিক্রয় প্রসার হচ্ছে পণ্য বা সেবা ক্রয় বা বিক্রয়ে উৎসাহিত করার স্বল্পকালীন উদ্দীপনা।
বিক্রয় প্রসার কাকে বলে

বিক্রয় প্রসারের বৈশিষ্ট্য :-

বিপণন প্রসারের কার্যক্রম হিসেবে বিক্রয় প্রসারের মধ্যে নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্যসমূহলক্ষ করা যায়ঃ
  • বিপণন প্রসারের জন্য সাময়িকভাবে বিক্রয় প্রসার ব্যবহৃত হয়।
  • পণ্য বা সেবার বিক্রয় দ্রুত বৃদ্ধির জন্য বিক্রয় প্রসার ব্যবহার করা হয়।
  • নতুন পণ্য প্রবর্তন করা হলে বা চাহিদা কমে গেলে পণ্যের বিক্রয় বাড়ানোর জন্য বিক্রয় প্রসারের কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়।
  • কোন না কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান এই বিক্রয় প্রসার কার্যক্রম শুরু করবে।
  • এই প্রসারের ব্যয়ভার কোন একজন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বহন করে।

বিক্রয় প্রসার-এর গুরুত্ব :-

প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য অনুযায়ী বিপণন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য বিক্রয় প্রসার কার্যক্রমের গুরুত্ব অপরিসীম। নিম্নে বিক্রয় প্রসারের গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-

১. চাহিদা সৃষ্টি (Creating Demand) :-

পণ্য প্রাথমিক পর্যায়ে বাজারে আনার পর চাহিদা কম থাকে বলে পণ্য সংক্রান্ত তথ্যাবলি জনগণের নিকট উপস্থাপন করে চাহিদা সৃষ্টির চেষ্টা করতে হয়। এভাবে অর্থনৈতিক চাহিদা পূরণ এবং বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে বিক্রয় প্রসার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।


2. বিক্রয় বৃদ্ধি (Increasing Sales) :-

বিক্রয় প্রসার কার্যাবলির দ্বারা পণ্যের স্বল্পমেয়াদে বিক্রয় বৃদ্ধির প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়। বিক্রয় বৃদ্ধির ফলে উৎপাদনের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং সেই সঙ্গে একক প্রতি উৎপাদন ব্যয় হ্রাস পায়। উৎপাদন ব্যয় হ্রাসের ফলে পণ্যের মূল্যও হ্রাস পায়।

৩. মুনাফা বৃদ্ধি (Increasing Profit) :-

বিক্রয় প্রসার কার্যাবলির ফলে বিক্রয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। ফলে মুনাফার পরিমাণও বেড়ে যায়।

৪. চাহিদার স্থিতিশীলতা রক্ষা (Maintaining Elasticity of Demand) :-

বিক্রয় প্রসার কার্যক্রমের সময়মত এবং সঠিকভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে চাহিদার হ্রাস-বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। কোন পণ্যের চাহিদা কম থাকলে এর মাধ্যমে চাহিদার সাঞ্জস্যতা আনা হয়।

৫. প্রতিযোগিতা (Competition) :-

প্রতিযোগীদের পণ্য বা সেবার সাথে দৃঢ়ভাবে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য বিক্রয় প্রসার বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রমের সাথে জড়িত থাকে।

৬. পণ্যের উন্নয়ন ( Product Improvement) :-

পণ্যের গুণাগুণ, আকৃতি, মোড়ক ইত্যাদি উন্নয়নের মাধ্যমে বিক্রয় বৃদ্ধি করা বিক্রয় প্রসারের অন্যতম দায়িত্ব। এরূপ কার্যাবলি ক্রেতাদের সন্তুষ্টি বিধানের মাধ্যমে পণ্য উদ্বুদ্ধ করে যা পণ্যের মান উন্নয়নের সহায়ক।

৭. ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা (Establishing Image) :-

প্রতিষ্ঠান বা পণ্য সম্পর্কে বিশেষ ভাবমূর্তি প্রতিষ্ঠা করা এবং প্রতিষ্ঠানের অবস্থান সুসংহত করা ছাড়াও বিক্রয় প্রসার বিক্রয় বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়।

৮. পণ্যের সংবাদ উপস্থাপন ( Presenting Product Information) :-

বিক্রয় প্রসার কার্যক্রম দ্বারা পণ্য সংক্রান্ত তথ্যাবলি উপস্থাপন করা হয়। ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে দূরত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং প্রতিযোগিতা বৃদ্ধির কারণে পণ্যের তথ্যাবলি প্রচার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পরিশেষে বলা যায়, বিপণন প্রসারের বিভিন্ন উপাদানের মধ্যে বিক্রয় প্রসার স্বল্পমেয়াদে পণ্য বিক্রয় করে প্রতিষ্ঠানের মুনাফা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বিক্রয় প্রসার-এর কৌশল :-

বিক্রয় প্রসার কর্মসূচির মুখ্য উদ্দেশ্যেই হলো পণ্যের বিক্রয় বৃদ্ধি করা। তাই উদ্দেশ্যের সাথে সঙ্গতি রেখে বিক্রয় প্রসারেরকৌশল বা পন্থাগুলোকে দু'ভাবে বিভক্ত করা হয়। যথা-

(i) ভোক্তাকেন্দ্রিক বিক্রয় প্রসার ও
(ii) ব্যবসায়িক বিক্রয় প্রসার।

নিম্নে উক্ত প্রকারভেদ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো:

(i) ভোক্তাকেন্দ্রিক বিক্রয় প্রসার (Consumer Sales Promotion) :-

উৎপাদক বা মধ্যস্থব্যবসায়ী কর্তৃক চূড়ান্ত ভোক্তাদেরকে নির্দিষ্ট পণ্য বা সেবা ক্রয়ে উদ্বুদ্ধ করার জন্য গৃহীত বিক্রয় প্রসার পন্থাকে ভোক্তাকেন্দ্রিক বিক্রয় প্ৰসাৱ বলে।

সাধারণত কোনো নতুন পণ্য উপস্থাপন অথবা ক্রমহ্রাসমান চাহিদাসম্পন্ন পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি অথবা প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের প্রতিযোগিতা মোকাবিলা করার জন্য এর প্রসারমূলক পন্থা গৃহীত হয়ে থাকে।

নিম্নে ভোক্তাকেন্দ্রিক বিক্রয় প্রসারের পন্থাগুলো আলোচনা করা হলোঃ

ক) নতুন পণ্য উপস্থাপন (Introducing a New Product) :-

কোনো নতুন পণ্য বাজারে উপস্থাপন এবং পণ্যের বিক্রয় বৃদ্ধির জন্য বিপণনকারী প্রতিষ্ঠান নিম্নোক্ত পদ্ধতিগুলো গ্রহণ করতে পারে।

১. সৌজন্য পণ্য বিতরণ (Giving Complimentary Product) :-

যদি কোনো প্রতিষ্ঠান নতুন ব্র্যান্ডের পণ্য বাজারে উপস্থাপন করতে চায়, তাহলে উক্ত প্রতিষ্ঠান নতুন ব্র্যান্ডের পণ্যের সাথে সম্পর্কিত কোনো পছন্দসই পণ্য বিনামূল্যে ক্রেতাদেরকে প্রদান করতে পারে। এতে নতুন পণ্য সম্পর্কে ক্রেতাদের মনে আগ্রহের সৃষ্টি হয়। যেমন, নতুন টুথব্রাশ-এর বিক্রয় বৃদ্ধির জন্য ট্রুথপেস্টের সাথে বিনামূল্যে টুথব্রাশ প্রদানের ব্যবস্থা করা যায়।

২. নমুনা পণ্য বিতরণ ( Giving Product Sample) :-

ভোক্তাদেরকে নির্দিষ্ট পণ্য সীমিতভাবে বিনামূল্যে প্রদানের ব্যবস্থাকে নমুনাপণ্য বিতরণ পদ্ধতি বলে। যদি উৎপাদক নিশ্চিত থাকে যে, ক্রেতারা পণ্য গ্রহণ করবে এবং পছন্দ করলে পুনরায় ব্যবহার করবে, তাহলেই নমুনা বিতরণ পদ্ধতির ব্যবহার করা হয়।

আরও পড়ুন :- ইকমার্স কি?

৩. অর্থ ফেরত (Money Refund) :-

ভোক্তা এবং খুচরা ব্যবসায়ী উভয় ক্ষেত্রেই ভোক্তারা মোড়কে উল্লিখিত মূল্যে পণ্য ক্রয় করে এবং ক্রয়ের নিশ্চয়তাস্বরূপ পণ্যের লেবেল বা মোড়ক উৎপাদকের নিকট ফেরত দেয়। উৎপাদক মোড়কের উল্লিখিত মূল্যের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ ভোক্তাদেরকে ফেরত প্রদান করে।

৪. মেয়াদি গ্যারান্টি প্রদান (Time Bound Guarantee) :-

নতুন পণ্য উপস্থাপনের ক্ষেত্রে মেয়াদি গ্যারান্টি অত্যন্ত ফলদায়ক পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে উৎপাদক নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য পণ্যের স্থায়িত্ব বা কর্মক্ষমতা বিষয়ে নিশ্চয়তা প্রদান করে। এর মধ্যে পণ্যের কোনো ত্রুটি দেখা গেলে বা পণ্য বিনষ্ট হলে উৎপাদক পণ্যটি ফেরত নিয়ে আরেকটি নতুন পণ্য ক্রেতাকে প্রদান করে অথবা মেরামত করে দেয়। এ ধরনের গ্যারান্টি ক্রেতাদের মনে পণ্য সম্বন্ধে আস্থার সৃষ্টি করে এবং তারা পণ্য ক্রয়ে উদ্বুদ্ধ হয়। ইলেকট্রনিক্স দ্রব্য বিপণনের ক্ষেত্রে এরূপ পদ্ধতির ব্যবহার লক্ষণীয়।

খ) প্রতিযোগিতা মোকাবেলা (Counter Balancing the Competition) :-

বাজারে প্রতিযোগিতায় সাফল্যের সাথে টিকে থাকার জন্য প্রতিষ্ঠানসমূহ সাধারণত নিম্নোক্ত বিক্রয় প্রসার পন্থাগুলো ব্যবহার করে।

১. মূল্যহ্রাস কুপন (Price off Coupons) :-

প্রচলিত মূল্য অপেক্ষা কিছুটা মূল্য ছাড় দিয়ে নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য কুপন প্রদান প্রচলিত পণ্যের বিক্রয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এক্ষেত্রে পণ্যের উৎপাদক সংবাদপত্র বা ম্যাগাজিনে বিজ্ঞাপন প্রদানের মাধ্যমে কুপন প্রদান করে এবং ক্রেতারা কুপন জমা দিয়ে কুপনে উল্লিখিত কম মূল্যে পণ্য সংগ্রহ করে।

২. মূল্য হ্রাস মোড়কিকরণ (Price off Packaging) :-

এ পদ্ধতি মূল্যহ্রাস কুপন পদ্ধতির অনুরূপ। তবে এক্ষেত্রে কুপনের পরিবর্তে পণ্যের মোড়কে মূল্য ছাড়-এর পরিমাণ উল্লেখ থাকে। ক্রেতারা নির্দিষ্ট মেয়াদের জন্য পণ্যের নির্ধারিত মূল্য অপেক্ষা কম মূল্যে পণ্য ক্রয় করতে পারে। আমাদের দেশে বিশেষ করে সাবান, ওয়াশিং পাউডার, টুথপেস্ট ইত্যাদির ক্ষেত্রে এরূপ পদ্ধতির ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।

৩. বিক্রয়োত্তর সেবা (After Sales Service) :-

সেবামূলক পণ্যের বিক্রয় বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ও প্রতিযোগিতা মোকাবেলায় ভোক্তাকে পণ্য বা সেবা ক্রয়ের পর বিনামূল্যে বিক্রয়োত্তর সেবা প্রদানের নিশ্চয়তা দেয়া হয় এক্ষেত্রে মেয়াদি গ্যারান্টির ন্যায় কোনো মেয়াদ নির্দিষ্ট থাকে না। যেকোনো সময়ে ক্রেতারা এরূপ সেবাগ্রহণ করতে পারে। টিভি, রেফ্রিজারেটর ইত্যাদি পণ্যের ক্ষেত্রে বিক্রয়োত্তর সেবা অপরিহার্য বলে বিবেচিত হয়।

৪. প্রদর্শনী এবং মেলা (Exhibition and Shows) :-

পণ্যের বাজার বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন সময়ে দেশের অভ্যন্তরে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রদর্শনী ও মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এসব প্রদর্শনী ও মেলার স্পন্সর হয়েও প্রতিষ্ঠানের পরিচিতি তুলে ধরা যায়। এ ছাড়া প্রদর্শনী ও মেলাতে স্টল খুলে পণ্যের প্রতি ভোক্তাদের আগ্রহ বৃদ্ধি এবং সেই সঙ্গে বিক্রয়ের পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব হয়।

গ) ভোক্তাদের মনে অনুকূল মনোভাব সৃষ্টি (Creating Favorable Attitudes in Consumers Minds) :-

পণ্যের প্রতি ক্রেতাদের অনুকূল মনোভাব সৃষ্টির জন্য প্রতিষ্ঠান অনেক সময় বিভিন্ন বিক্রয় প্রসার কর্মসূচি গ্রহণ করে। এগুলো নিম্নে আলোচনা করা হলোঃ

১. উপহার প্রদান (Offering Gifts) :-

ক্রেতাদের মনে পণ্য সংক্রান্ত বিষয়ে অনুকূল মনোভাব সৃষ্টির জন্য ক্রেতাদেরকে বিভিন্ন জিনিস উপহার হিসেবে প্রদান করা যায়। উপহার-সামগ্রীর গায়ে উৎপাদনকারি প্রতিষ্ঠানের নাম এবং ঠিকানা মুদ্রিত থাকে। যেমন ক্যালেন্ডার, কলম, চাবির রিং ইত্যাদি।

২. শুভেচ্ছা জ্ঞাপন (Greetings) :-

বিভিন্ন ধর্মীয় সামাজিক অনুষ্ঠানে এবং নববর্ষের আগমন উপলক্ষে বর্তমান এবং সম্ভাব্য ক্রেতাদের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন বিক্রয় প্রসারের একটি অন্যতম কৌশল। সুপ্রতিষ্ঠিত প্রতিষ্ঠান গুলো গণমাধ্যমগুলোর সাহায্যে অথবা গ্রাহকদেরকে ব্যক্তিগত চিঠি প্রদানের মাধ্যমে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে থাকে। আমাদের দেশে বড় স্বর্ণালঙ্কার ব্যবসায়ীদের এরূপ বিক্রয় প্রসার কার্যক্রম গ্রহণ করতে দেখা যায়।

(ii) ব্যবসায়িক বিক্রয় প্রসার (Trade Sales Promotion) :-

মধ্যস্থব্যবসায়ীদেরকে প্রতিষ্ঠানের পণ্য বিক্রয়ে উদ্বুদ্ধ করার জন্য গৃহীত বিক্রয় প্রসার পন্থাকে ব্যবসায়িক বিক্রয় প্রসার বলে। এক্ষেত্রে গৃহীত বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করা হলো:

ক) বিক্রয় প্রসার কার্যক্রমে অংশগ্রহণে উৎসাহ দান (Motivating to Participate in Sales Promotion Activities) :-

মধ্যস্থব্যবসায়ীরা যাতে নিজেই উদ্যোগ নিয়ে নির্দিষ্ট পণ্যের বিক্রয় প্রসারে ভূমিকা রাখে এজন্য নিম্নোক্ত বিক্রয় প্রসার কার্যক্রম গ্রহণ করা যেতে পারেঃ

১. বিশেষ পুরস্কার (Special Offer) :-

যে সকল মধ্যস্থব্যবসায়ী প্রথম বারের মতো অথবা একত্রে অধিক পরিমাণে পণ্যের অর্ডার প্রদান করবে তাদের জন্য বিশেষ আকর্ষণীয় পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।

২. ব্যবসায়িক ছাড় (Merchandising Allowances) :-

মধ্যস্থব্যবসায়ীরা যাতে নির্দিষ্ট উৎপাদনকারীর পণ্য বিশেষভাবে প্রদর্শন করে এবং পণ্য বিক্রয়ের জন্য বিশেষ প্রচেষ্টা গ্রহণ করে, সেজন্য তাদেরকে বিশেষ ব্যবসায়িক ছাড় প্রদান করা হয়। যেমন, মধ্যস্থব্যবসায়ীদের জন্য ৫% কমিশন বৃদ্ধি।

৩. সহযোগিতামূলক বিজ্ঞাপন (Cooperative Advertising) :-

পণ্য বিক্রয়ে উৎসাহিত করার জন্য বিজ্ঞাপন ব্যয়ের নির্দিষ্ট অংশ উৎপাদনকারী বহন করে। এরূপ সহযোগিতা প্রদানের ফলে খুচরা ব্যবসায়ীরা অধিক পণ্য বিক্রয়ের প্রচেষ্টা গ্রহণ করে থাকে।

আরও পড়ুন :- বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা কি?

খ) অধিক পণ্য ক্রয়-বিক্রয় (Buying and Selling with Greater Quantity) :-

মধ্যস্থব্যবসায়ীরা যাতে অধিক পরিমাণে পণ্য ক্রয় করে এবং সেগুলো বিক্রয়ের প্রচেষ্টা গ্রহণ করে, সেজন্য নিম্নোক্ত পদ্ধতিগুলো গ্রহণ করা হয়ে থাকে।

১. বিনামূল্যে পণ্য প্রদান (Free Giving) :-

মধ্যস্থব্যবসায়ীরা যাতে অধিক পরিমাণে পণ্য ক্রয় করে সে জন্য অতিরিক্ত পণ্য ক্রয়ের ওপর কিছু পণ্য তাদেরকে বিনামূল্যে প্রদান করা হয়। এরূপ কার্যক্রম উৎপাদকদের পণ্যের বিক্রয় বৃদ্ধির সহায়ক হয়।

২. প্রতিযোগিতা (Competition) :-

মধ্যস্থব্যবসায়ীদের মধ্যে বা কোম্পানির নিজস্ব বিক্রয়কর্মীদের মধ্যে পণ্য-বিক্রয় প্রতিযোগিতার আয়োজন বিক্রয় প্রসারে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের বিশেষ পুরস্কার প্রদানের ব্যবস্থা করা হলে প্রতিষ্ঠানের পণ্য বিক্রয়ের প্রতি ব্যবসায়ীদের অধিক আগ্রহের সৃষ্টি করে।

গ) মধ্যস্থব্যবসায়ীদের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় সহযোগিতা (Assisting Middlemen to Operate Effectively) :-

উৎপাদনকারী কর্তৃক প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা ভালোভাবে অবহিত না থাকায় খুচরা ব্যবসায়ীরা পণ্যসামগ্রী সুষ্ঠুভাবে বিক্রয় করতে পারে না। এক্ষেত্রে উৎপাদকগণ নিম্নোক্ত পদ্ধতি অবলম্বন করে সুফল পেতে পারে:

১. প্রশিক্ষণ কার্যক্রম (Training Program) :-

মধ্যস্থব্যবসায়ীরা যাতে বিক্রয় কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারে সেজন্য তাদেরকে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করা যেতে পারে। এরূপ প্রশিক্ষণ বিক্রয়কর্মীদের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির সাথে বিক্রয়ের পরিমাণও বৃদ্ধি করে। আমাদের দেশে ওষুধ কোম্পানিসমূহ গ্রামের ডাক্তারদের প্রশিক্ষণের জন্য বিশেষ প্রোগ্রাম নিয়ে বিক্রয় বৃদ্ধির চেষ্টা চালায়।

২. পণ্য তথ্য (Product Information) :-

পণ্যের সংবাদ, পণ্য সম্বন্ধে সম্পাদকীয় মন্তব্য, পণ্যের ছবি, পোস্টার ইত্যাদি খুচরা ব্যবসায়ীদেরকে সরবরাহের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এরূপ কার্যক্রম খুচরা ব্যবসায়ীদের বিক্রয় প্রসারে ভূমিকা রাখতে উৎসাহিত করে।

উপসংহারে বলা যায়, ভোক্তা বা ক্রেতাদের কোনো পণ্য ক্রয়ে উৎসাহদানের জন্য বিজ্ঞাপন ও ব্যক্তিক বিক্রয়ের বাইরে বৈষয়িক বিভিন্ন সহযোগিতা বা সাময়িক কোনো কার্যক্রম গ্রহণের মাধ্যমে বিক্রয় প্রসার ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে কোন্ পদ্ধতি ব্যবহার করা হবে তা বিশেষভাবে পণ্যের প্রকৃতি ও পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ