নদীশাসন কাকে বলে? নদীশাসনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ?

নদীশাসন কাকে বলে :-

নদ-নদীর প্রভাব মানবজীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। প্রতিবছর নানাবিধ কারণে নদীভাঙ্গন দেখা যায়। যা অতি পরিচিত একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। নদীর এ ভাঙ্গন প্রক্রিয়া প্রতিরোধ ও নদীর পানি বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করার জন্য বাঁধ বা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করাই হলো নদীশাসন।

যেমন:- তিস্তা ব্যারেজ। বাংলাদেশের প্রায় সব নদ-নদীই সর্পিল। নদীভাঙ্গনের জন্য বিশেষভাবে অনুকূল ভূমিকা পালন করে সর্পিল নদী। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে কমবেশি নদীভাঙ্গন দেখা যায়। তবে নদীভাঙ্গনের ফলে সর্বোচ্চ ভূমিক্ষয় ঘটে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা অববাহিকায়।

নদীভাঙ্গনের ফলে নদীর পাড়ে বসবাসকারী মানুষের পালিত পশুসম্পদ, ফসলি জমি, জানমালের ব্যাপক ক্ষতি হয়। এ মহাবিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য নদীভাঙ্গন রোধ করা একান্ত প্রয়োজন।
নদীশাসন কাকে বলে

নদীশাসনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ :-

নদীভাঙ্গন প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে একটি ভয়াবহ দুর্যোগ। নদীভাঙ্গনের ফলে মানুষের যে ক্ষয়ক্ষতি হয় তা পুষিয়ে উঠা খুব কঠিন। নদীভাঙ্গন হাজার হাজার পরিবারকে করে গৃহহারা ও ভূমিহীন।

নদীভাঙ্গনের ফলে মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হয়। তাই নদীশাসনের জন্য ইতোমধ্যে সরকার অনেক নদীর তীরে বাঁধ দিয়ে নদীভাঙ্গন রোধের চেষ্টা করছে। নদীশাসনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো-


• উপকূলীয় অঞ্চলে বনায়নের মাধ্যমে সবুজ বেষ্টনী তৈরি করে এবং ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদী খনন করে নদীশাসন করা ।

• নদীশাসনের জন্য নদীর পাড় থেকে অপরিকল্পিতভাবে মাটি কাটা ও পাথর তোলা বন্ধ করে নদীভাঙ্গন রোধ করা সম্ভব।

• সমভূমি থেকে অতিরিক্ত বৃষ্টির পানি একই পথে নদীতে পতিত হওয়া রোধ করে পরিকল্পিতভাবে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করলে নদীভাঙ্গন রোধ করে নদীশাসন করা যায়।

• প্রতিবছর নদীর পাড় ও বাঁধ সংস্করণ, নদী খনন, নদীর নাব্যতা ধরে রাখা ইত্যাদির মাধ্যমে নদীভাঙ্গন রোধ করা যায়।

নদীশাসনের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপ :-

১. বালুচর : নদীর গর্ভে বালি, নুড়ি, কাঁকর, কর্দম প্রভৃতি সঞ্চিত হয়ে যে নতুন ভূমির সৃষ্টি হয় তাকে বালুচর বলে।

বাংলাদেশের প্রায় সব নদীতে এ ধরনের বালুচর দেখা যায়।

২. পশ্চাৎ জলাভূমি : প্রাকৃতিক বাঁধের পিছনে নদীর পলি সঞ্চয় ধীরে ধীরে কমে যায়। ফলে এ ভূমি নিম্নভূমিরূপে অবস্থান করে। বর্ষার পর বন্যার পানি সরে গেলে নিম্নভূমিতে পানি আবদ্ধ অবস্থায় থাকে। প্রাকৃতিক বাঁধের পশ্চাতে অবস্থিত এরূপ জলাবদ্ধ ভূমিকে পশ্চাৎ জলাভূমি বলে। 

যেমন- ঢাকা জেলার ধলেশ্বরী নদীর পশ্চিমে প্রাকৃতিক বাঁধের পশ্চাতে এক বৃহৎ জলাভূমি রয়েছে।

৩. জলাভূমি বা বিল : নদীর গতিপথ পরিবর্তন করলে প্লাবন ভূমির মধ্যস্থ পরিত্যক্ত গতিপথ ধীরে ধীরে ভরাট হয়ে যায়। কিন্তু যেসব স্থান ভরাট হয়না সেখানে পানি জমে জলাভূমি সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে প্লাবন ভূমির অভ্যন্তরে নিচু অঞ্চলে পানি জমে জলাভূমি সৃষ্টি হয়। এ ধরনের জলাভূমিকে বলা হয় বিল। যা নদীশাসনের ফলে সৃষ্টি হয়। রাজশাহীর চলনবিল, গোপালগঞ্জের বিল, সিলেটের বিল এর উদাহরণ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ