বাংলা মজার সহজ কঠিন হাসির নতুন ধাঁধা প্রশ্ন ও উত্তর সহ | ধাঁধা কাকে বলে, শ্রেনীবিভাগ ও বৈশিষ্ট্য

ধাঁধা লোকসাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান কেননা তা জীবন-ভিত্তিক রচনা। “দ্বন্দ্ব' শব্দ থেকে ধাঁধা শব্দের উৎপত্তি বলে মনে হয়। বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় ধাঁধাকে বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। যেমন

সংস্কৃত 'প্ৰহেলিকা' বা 'প্রভালিকা শব্দটি ধাঁধা শব্দের সমর্থক বলে ধরা হয়। পালিতে পাঞ্চহা; গুজরাটে 'উত্থানো’, ওড়িয়া ভাষায় ‘পাজড়িকা, বিহারে 'বাহা', উর্দুতে 'পহেলিয়া' বলা হয়। পুরুলিয়ায় 'বাতকথা', কোচবিহারে ‘ছিলকা”; বাংলাদেশে 'দিস্তান', কুমিল্লায় 'শিলুক' ময়মনসিং-এ 'ঠল্লক' প্রভৃতি নানান নামে ধাঁধাকে উল্লেখ করা হয়।


ইংরেজিতে ধাঁধাকে বলা হয় 'Riddle' । অ্যাংলো স্যাকসন শব্দ 'Readin' থেকে ইংরেজী Riddle' শব্দটি এসেছে। "Riddle' শব্দটির অর্থ to give advice অর্থাৎ উপদেশ বা পরামর্শ দেওয়া। জার্মান ভাষায় ধাঁধাকে বলা হয় 'Rat(h)sel', গ্রীকভাষায় 'ainigma' ল্যাটিন ভাষায় 'nenigma' এবং ফরাসী ভাষায় ধাঁধাকে 'enigma' বলা হয়।

প্রাচীন কাল থেকে ধাঁধা প্রচলন হয়ে আসছে। ধর্মীয় আচার, মৃত্যুকাল, কৃষিকাজ, অনাবৃষ্টি প্রভৃতি ক্রিয়াকর্মের সময়ের ধাঁধায় প্রচলন ছিল। আবার বিবাহ এর অনুষ্ঠানে বর ও কন্যা পক্ষের মধ্যে ধাঁধার লড়াই চলত।
বাংলা মজার সহজ কঠিন হাসির নতুন ধাঁধা প্রশ্ন ও উত্তর সহ | ধাঁধা কাকে বলে, শ্রেনীবিভাগ ও বৈশিষ্ট্য
আসলে বাঁধা একাকি বলা যায় না। ধাঁধার উত্তর দেওয়ার জন্য এক বা একের বেশী মানুষের প্রয়োজন। কেননা এক পক্ষ প্রশ্ন করবেন, আর অন্যপক্ষ তার উত্তর দেবেন। সর্বোপরি ধাঁধার উত্তর মনের কৌতূহল ও রহস্যময়তা প্রকাশের মধ্যে দিয়ে।


ধাঁধা মূলত মৌখিক সৃষ্টি। ধাঁধা হচ্ছে প্রশ্ন বাচক, গূঢ় অর্থবাহক রহস্যময় শব্দসম্ভারে পরিপূর্ণ।

ধাঁধা কাকে বলে বা কি :-

ধাঁধা কাকে বলে এ প্রসঙ্গে লোক শ্রুতিবিদ Durga Bhagwat বলেছেন -
“The riddle incorporates a question primarily and an answer secondarily”


লোক সাহিত্যিক Friedreich তাঁর "Geschichte des Rathscts" গ্রন্থে ধাঁধা কি এসম্পর্কে বলেছেন -
“an indirect presentation of an unknown object in order that the ingenuity of the hearer or reader may be exercised in Finding in out”

অনেকেই বলেছেন “a sort of ,verbal puzzle

আবার আমরা বলতে পারি, যে বাক্যে, একটি মাত্র ভাব বা বিষয়কে রূপকের দ্বারা প্রশ্নের আকারে প্রকাশ করা হয়, তাকে এককথায় ধাঁধা বলা যেতে পারে।

ধাঁধার শ্রেনীবিভাগ :-

ধাঁধার শ্রেনীবিভাগ হিসেবে ধাঁধাকে মূলত চারটি শ্রেনীতে ভাগ করা হয়া থাকে। যথা-

(ক) সাহিত্যিক ধাঁধা (Literary Riddle)

(খ) আধ্যাত্মিক ধাঁধা (Mystic Riddle)

(গ) আচারমূলক ধাঁধা (Ritualistic Riddle)

(ঘ) লৌকিক (Folk Riddle)

তবে ড. আশুতোষ ভট্টাচার্য বিষয় অনুসারে বাংলা ধাঁধাঁকে দুটি প্রধান ভাগে বিভক্ত করেছেন। এই ভাগগুলো হচ্ছে :

ক. প্রকৃতি বিষয়ক ধাঁধা এবং

খ. গার্হস্থ্য জীবন বিষয়ক ধাঁধা।

ধাঁধার বৈশিষ্ট্য :-

১ - ধাঁধার মধ্যে একটি পরিণত শিল্পরস বোধের প্রকাশ সূক্ষ্ম বুদ্ধি ও চিন্তার প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়।

২ - ধাঁধা কখনো এককভাবে উপভোগ করা সম্ভবপর নয়।

আরও পড়ুন :- বাগধারার তালিকা সমূহ?

৩ - ধাঁধার মধ্যে যে প্রশ্ন থাকে তার উত্তর ও ধাঁধার মধ্যে প্রচ্ছন্নভাবে লুকায়িত থাকে।

8 - ধাঁধার মধ্যে রূপকের ব্যবহার সুস্পষ্ট।

৫ - ধাঁধার মধ্যে সম্বোধন মূলক এবং আক্রমণাত্মক ভঙ্গী উভয়ই লক্ষ্য করা যায়।

৬ - ধাঁধায় মূলত হাস্যরসের প্রকাশ পেতে দেখি।

৭ - ধাঁধার আলোচনাতে আঞ্চলিক বৈশিষ্ট্যের জায়গায় জাতীয় বৈশিষ্ট্য বেশি।

৮ - ধাঁধা মূলত ছড়ার আকারে রচিত হয়।

হাসির মজার ধাঁধা প্রশ্ন ও উত্তর সহ :-

এখন আমরা কিছু বাংলা কঠিন সহজ হাসির মজার নতুন ধাঁধা প্রশ্ন ও উত্তর সহ আলোচনা করবো। আশা করি তোমাদের ভালো লাগবে।

প্রশ্ন :-ফুল নয় ফলও নয় গন্ধ তার ভারী
রাজাও নয় বাদশাও নয় শত শত নারী।
উত্তর :-ভোগ্রাপাঠা (ছাগল)

প্রশ্ন :-রাজার বাড়ির মেনা গাই মেনমেনাইয়া চায় । 
হাজার টাকার মরিচ খাইয়া আরও খাইতে চায়।
উত্তর :-শিলনোড়া 

প্রশ্ন :-মাটির তলে থাকে বেটি
তেনা পিন্ধে আঁটি আঁটি
নাপিতে না ছোঁয়, ধোপায় না ধোয়
তেও বেটি সাফ রয়।
উত্তর :-রসুন

প্রশ্ন :-খুললে ঘর, বন্ধ করলে লাঠি।
উত্তর :-ছাতা।

প্রশ্ন :- কোন ড্রাইভার গাড়ী চালায় না।
উত্তর :-  সক্রু ড্রাইভার।

প্রশ্ন :-  ঘরের মধ্যে ঘর,তার মধ্যে পরমেশ্বর।
উত্তর :- মশারি

প্রশ্ন :- কোন চিল উড়ে না।
উত্তর :- আঁচিল/পাঁচিল।

প্রশ্ন :-  জঙ্গল দিয়া উড়িয়া চলে, পিছন দিয়া আগুন জ্বলে।
উত্তর :- জোনাকি

প্রশ্ন :- দু'পুকুর মামাদের জল টলটল পড়িলে একটি ফুটা উপচায় জল।
উত্তর :- চোখ।

প্রশ্ন :- একটুখানি গাছে রাঙা বৌটি নাচে।
উত্তর :-  পাকা লঙ্কা

প্রশ্ন :- দেশ রয়েছে তো মানুষ নেই, সমুদ্রের মধ্যে জল নেই,
পাহাড়ে তে পাথর নেই, রেল লাইনে ট্রেন নেই,
বন্দরেতে জাহাজ নেই।
উত্তর :- মানচিত্র

প্রশ্ন :- সারাদিন মাটি যায়, সন্ধ্যা হলে ঘরে যায়।
উত্তর :- লাঙ্গল

প্রশ্ন :- মাঠে ঘাটে জল নেই, গাছের মাথায় জল
উত্তর :- ডাব

প্রশ্ন :- একটুখানি পুস্কুনি কইয়ে ভুর ভুর করে
রাজা আইলে প্রজা আইলে তুইল্যা সেলাম করে।
উত্তর :- হুঁকা

প্রশ্ন :- দোল দোল দোলানি,
ছোটবেলার খেলানি।
পাকলে সুন্দর হয়,
ন্যাংটা হয়ে হাটে যায়।
উত্তর :- তেঁতুল।

প্রশ্ন :- কথায় আছে, কাজে নাই।
উত্তর :- ঘোড়ার ডিম।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ