ধ্বনি কি বা কাকে বলে :-
বাংলা ভাষার ক্ষুদ্রতম একটি একক ধ্বনি। যে কোনো ভাষার উচ্চারিত শব্দকে সূক্ষ্মভাবে বিচার বিশ্লেষণ করলে তার যে অবিভাজ্য ক্ষুদ্রতম অংশ পাওয়া যায়, তাই ধ্বনি।আবার ধ্বনি কাকে বলে? এর উত্তরে বলা যায় - মানুষের সঙ্গে মানুষের ভাব বিনিময়ের জন্য যেসব অর্থ যুক্ত শব্দ বাগযন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারণ করা হয় সেইসব শব্দের ক্ষুদ্রতম অংশকে বলা হয় ধ্বনি।
যেমন ভারত > ভ+আ+র+ত < এটি ৪টি ধ্বনি দিয়ে গঠিত । কুল > ক+উ+ল এখানে ৩টি ধ্বনি রয়েছে ।
মানুষের বাগযন্ত্রের সহায়তায় উচ্চারিত ধ্বনি থেকেই ভাষার সৃষ্টি। বস্তুত ভাষাকে বিশ্লেষণ করলে চারটি মৌলিক উপাদান পাওয়া যায়। এই উপাদানগুলো হলো— ধ্বনি, শব্দ, বাক্য ও অর্থ। মানুষ তার মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য 'কথা' বলে।
মানুষের 'কথা' হলো অর্থযুক্ত কিছু ধ্বনি। ব্যাকরণ শাস্ত্রে মানুষের কণ্ঠনিঃসৃত শব্দ বা আওয়াজকেই ধ্বনি বলা হয়। বস্তুত অর্থবোধক ধ্বনিসমূহই মানুষের বিভিন্ন ভাষার বাগ্ধ্বনি। ধ্বনিই ভাষার মূল ভিত্তি।
প্রতিটি ভাষার নিজস্ব ধ্বনিরাশির তাৎপর্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্য রয়েছে। অর্থাৎ প্রতিটি ভাষার ধ্বনিরাশি পরস্পরের সঙ্গে সহাবস্থান করে সুশৃঙ্খল ধ্বনিতাত্ত্বিক নিয়ম-কানুন মেনে চলে।
মূলত প্রতিটি ভাষাই একটি সুনির্দিষ্ট ধ্বনিশৃঙ্খলা বা ধ্বনি-সংগঠনের অধীন। ধ্বনি নির্গত হয় মুখ দিয়ে। ধ্বনি উৎপাদনে মুখ, নাসিকা, কণ্ঠ প্রভৃতি বাক্-প্রত্যঙ্গ ব্যবহৃত হলেও ধ্বনি উৎপাদনের মূল উৎস হলো ফুসফুস।
ফুসফুসের সাহায্যে আমরা শ্বাস গ্রহণ ও ত্যাগ করি। ফুসফুস থেকে বাতাস বেরিয়ে আসার সময় বিভিন্ন বাক্-প্রত্যঙ্গের সংস্পর্শে আসে। ফুসফুস থেকে বাতাস স্বরযন্ত্রের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে আসার সময় মুখের বিভিন্ন জায়গায় ঘষা খায়। এই ঘর্ষণের ফলে মুখে নানা ধরনের ধ্বনির সৃষ্টি হয়।
লক্ষণীয়, ধ্বনি উৎপাদনে ফুসফুস একটি মুখ্য উৎপাদক যন্ত্র হলেও ফুসফুস থেকে ধ্বনি উৎপন্ন হয় না— ফুসফুস থেকে কেবল নির্গত হয় বাতাস। আর এই বাতাসের সঙ্গে নানা বাক্-প্রত্যঙ্গের সংঘর্ষে ধ্বনির সৃষ্টি হয়।
অর্থাৎ ফুসফুস নির্গত বাতাস স্বরযন্ত্রের মধ্য দিয়ে মুখগহ্বরে প্রবেশের পর বিভিন্ন বাক্-প্রত্যঙ্গের সংস্পর্শে আঘাত লাগার দরুন ধ্বনি গঠিত বা তৈরি হয়। ধ্বনি গঠনে বিভিন্ন বাক্ প্রত্যঙ্গের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ধ্বনি কত প্রকার ও কি কি :-
'ধ্বনি'র সাধারণ অর্থ যেকোনো ধরনের আওয়াজ'। কিন্তু ব্যাকরণ ও ভাষাতত্ত্বের পারিভাষিক অর্থে মানুষের বাগ্যন্ত্রের সাহায্যে তৈরি আওয়াজকে ধ্বনি বলে। আর এই ধ্বনি দু-প্রকার যথা -- স্বরধ্বনি ও
- ব্যঞ্জনধ্বনি
এখন প্রশ্ন হলো স্বরধ্বনি ও ব্যঞ্জনধ্বনি কাকে বলে?
যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় মুখের ভেতরে কোথাও বাধা পায় না এবং যা অন্য ধ্বনির সাহায্য ছাড়া নিজেই সম্পর্ণভাবে উচ্চারিত হয় তাকে স্বরধ্বনি বলে।
আরও পড়ুন :- যৌগিক স্বরধ্বনি কি ও কয়টি?
স্বরধ্বনি কি বা কাকে বলে :-
যে সব ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে বাতাস বেরিয়ে যেতে মুখবিবরের কোথাও কোনো রকম বাধা পায় না, সেই সব ধ্বনিকে বলা হয় স্বরধ্বনি।যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় মুখের ভেতরে কোথাও বাধা পায় না এবং যা অন্য ধ্বনির সাহায্য ছাড়া নিজেই সম্পর্ণভাবে উচ্চারিত হয় তাকে স্বরধ্বনি বলে।
আরও পড়ুন :- যৌগিক স্বরধ্বনি কি ও কয়টি?
বাংলা ভাষায় মৌলিক স্বরধ্বনি ৭টি। যেমন- অ, আ, ই, উ, এ, ও, অ্যা।
ব্যঞ্জনধ্বনি কি বা কাকে বলে :-
যে সকল ধ্বনি উচ্চারণের সময় ফুসফুস থেকে বাতাস বেরিয়ে যেতে মুখবিবরের কোথাও না কোথাও কোনো প্রকার বাধা পায় কিংবা ঘর্ষণ লাগে, সেই সব ধ্বনিকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে।যে ধ্বনি উচ্চারণের সময় মুখের ভেতরে কোথাও না কোথাও বাধা পায় এবং যা স্বরধ্বনির সাহায্য ছাড়া স্পষ্টরূপে উচ্চারিত হতে পারে না তাকে ব্যঞ্জনধ্বনি বলে।
যেমন- ক (ক+অ), চ (চ+অ), ট, ত প ইত্যাদি। ব্যঞ্জনধ্বনির সংখ্যা ৩২টি।
👉 আমরা এখন স্বরধ্বনির প্রকারভেদ নিয়ে আলোচনা করব তবে, অন্য একটি পোস্টে ব্যঞ্জনধ্বনি কি ও তার প্রকার ভেদ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
স্বরধ্বনির প্রকারভেদ :-
উচ্চারণের তারতম্যের জন্য স্বর ধ্বনিগুলোকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা -১ - হ্রস্ব স্বরধ্বনি ও
২ - দীর্ঘ স্বরধ্বনি।
গঠনগত দিক থেকে স্বরধ্বনিতে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যেমন-
১ - মৌলিক স্বরধ্বনি ও
২ - যৌগিক স্বরধ্বনি ।
জিহবার অবস্থান অনুযায়ী স্বরধ্বনিকে পাঁচটি শ্রেণীবিভাগে ভাগ করা যায়। যেমন –
১ - সম্মুখস্থ বা প্রসারিত স্বরধ্বনি,
২ - পশ্চাৎ ভাগস্থ স্বরধ্বনি,
৩ - কুঞ্চিত স্বরধ্বনি,
৪ - সংবৃত স্বরধ্বনি এবং
৫ - বিকৃত স্বরধ্বনি।
উচ্চারণের স্থান অনুযায়ী স্বরধ্বনি আবার ছয় প্রকার । যেমন –
১ - কণ্ঠ্যধ্বনি
২ - তালব্যধ্বনি
৩ - ওষ্ঠ্যধ্বনি
৪ - কণ্ঠ্যতালব্যধ্বনি
৫ - কণ্ঠৌষ্ঠ্যধ্বনি
৬ - মূর্ধন্যধ্বনি
নিন্মে এই সব স্বরধ্বনির সংজ্ঞা আলোচনা করা হলো।
বিভিন্ন প্রকার স্বরধ্বনির সংজ্ঞা :-
হ্রস্ব স্বরধ্বনি কাকে বলে :-যে সমস্ত স্বরধ্বনি উচ্চারণ করতে অল্প কম সময় লাগে তাকে হ্রস্ব স্বরধ্বনি বলে। যেমন - অ, ই, উ, ঋ।
দীর্ঘ স্বরধ্বনি কাকে বলে :-
যে স্বরধ্বনি উচ্চারণ করতে একটু বেশি সময় লাগে, তাকে দীর্ঘ স্বরধ্বনি বলে। যেমন - এ, ঐ, ও, ঔ।
মৌলিক স্বরধ্বনি কাকে বলে :-
যে ধ্বনিগুলোকে বিশ্লেষণ করা যায় না তাদেরকে মৌলিক স্বরধ্বনি বলে।
এদের সংখ্যা সাত টি যথা- অ, আ, ই, উ, এ, ও অ্য।
আরও পড়ুন :- শব্দ কাকে বলে? উদাহরণ দাও?
যৌগিক স্বরধ্বনি কাকে বলে :-
যে ধ্বনিগুলোকে বিশ্লেষণ করা যায় তাদেরকে যৌগিক স্বরধ্বনি বলে।
যেমন- ঐ (অ+ই), ঔ (অ+উ)। এইজন্য যৌগিক স্বরকে আবার সন্ধ্যক্ষর, যুগ্ম স্বর বা দ্বিস্বর বলা হয়।
সম্মুখস্থ বা প্রসারিত স্বরধ্বনি কাকে বলে :-
যে সমস্ত স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বা সামনে চলে আসে, তাকে সম্মুখস্থ বা প্রসারিত স্বরধ্বনি বলে। যেমন- ই, এ, অ্যা।
পশ্চাৎভাগস্থ স্বরধ্বনি কাকে বলে :-
যে সব স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় জিহ্বা পিছনের দিকে পিছিয়ে যায়, তাকে পশ্চাৎ ভাগস্থ স্বরধ্বনি বলে। যেমন- উ, ও, অ।
কুঞ্চিত স্বরধ্বনি কাকে বলে :-
যে সব স্বর ধ্বনিগুলো উচ্চারণের সময় ঠোঁট দুটি গোলাকার কুঞ্চিত হয়, তাকে কুঞ্চিত স্বরধ্বনি বলা হয়। যেমন- অ, উ, ও।
সংবৃত স্বরধ্বনি কাকে বলে :-
যে সমস্ত স্বর ধ্বনি সমূহ উচ্চারণের সময় সবচেয়ে কম প্রসারিত ও উন্মুক্ত হয়, তাদেরকে সংবৃত স্বরধ্বনি বলে। যেমন- ই, উ।
বিবৃত স্বরধ্বনি কাকে বলে :-
যে সমস্ত স্বরধ্বনি উচ্চারণের সময় মুখদ্বার পুরোপুরি প্রসারিত হয়, সেসব স্বরধ্বনি গুলিকে বিবৃত স্বরধ্বনি বলে। যেমন আ।
কণ্ঠ্যধ্বনি কি :-
যে সমস্ত ধ্বনির উচ্চারণ স্থান কণ্ঠনালির উপরিভাগ বা জিহ্বামূল, তাদের কণ্ঠ্যধ্বনি বলে। যেমন- অ, আ।
তালব্যধ্বনি কি :-
যে সমস্ত ধ্বনির উচ্চারণ স্থান তালু, তাদের তালব্য ধ্বনি বলে। যেমন - ই, ঈ, তালব্যধ্বনি।
ওষ্ঠ্যধ্বনি :-
যে সমস্ত ধ্বনির উচ্চারণ স্থান ওষ্ঠ, তাদের ওষ্ঠ্যধ্বনি বলে। যেমন:- উ, ঊ, ।
কণ্ঠ্যতালব্যধ্বনি :-
যে সমস্ত ধ্বনির উচ্চারণ স্থান কণ্ঠ এবং তালু উভয়ই, তাদের কণ্ঠ্যতালব্য ধ্বনি বলে। যেমন- এ, ঐ কণ্ঠ্যতালব্য ধ্বনি।
কণ্ঠৌষ্ঠ্যধ্বনি :-
যে সমস্ত ধ্বনির উচ্চারণ স্থান কণ্ঠ ও ওষ্ঠ, তাদের কণ্ঠৌষ্ঠ্য ধ্বনি বলে। যেমন- ও, ঔ কণ্ঠৌষ্ঠ্য ধ্বনি।
মূর্ধন্য ধ্বনি :-
যে সমস্ত ধ্বনির উচ্চারণ স্থান মূর্ধা বা তালুর অর্থভাগ, তাদের মূর্ধন্য ধ্বনি বলে। যেমন - ঋ।
বিস্তারিত জানুন :- মূর্ধন্য ধ্বনি কি? উদাহরণ দাও?
0 মন্তব্যসমূহ
Please do not enter any spam link in the comment box.